শনিবার, ৩ নভেম্বর ২০১২, ১৯ কার্তিক ১৪১৯
যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ বাচ্চু রাজাকার ২৫ হিন্দুকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করে
অভিযোগপত্র-২
বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পলাতক আসামি বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ধর্মান্তরিত করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। ফরিদপুর জেলার পূর্ব সালথা গ্রামে বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে ৫/৬ জন রাজাকার ৪ মে বলাই বাবুর বাড়িতে প্রবেশ করে। সেখানে ২০ থেকে ২৫ জন হিন্দুকে কাচারি ঘরে আটক করে তাদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করে। এ ছাড়া বাচ্চু রাজাকার হামামদিয়া ও ময়েনদিয়া বাজারে গণহত্যার নেতৃত্ব প্রদান করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরদের অভিযোগপত্র উপস্থাপনে এ সমস্ত তথ্য পাওয়া গেছে। প্রসিকিউশন পক্ষের অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৬ মে সকাল ৮টার দিকে বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী সালথা সাহা পাড়ায় প্রবেশ করে। সেখানে গিয়ে বাচ্চু রাজাকার বলাই বাবুর কাচারি ঘরে ২০ থেকে ২৫ জন হিন্দুকে ধরে নিয়ে আসে। তাদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের হুমকি দেয়। বাচ্চু রাজাকার সকলকে একটি করে সাদা টুপি দেয়। কলেমা পড়িয়ে সিদ্ধেশ্বর চন্দ্র সাহা, হরিদাশ পোদ্দার, দুলাল সাহা, অভি সাহা, পজু সাহা, বিনয় সাহা, নন্দ সাহা, বিশু ভুইয়া ও কালিপদ সাহাসহ উৃপস্থিত সকলকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করে।
এ ছাড়া বাচ্চু বলাই বাবুর কাচারি ঘরে হিন্দু ছেলেমেয়েদের আরবি পড়তে বাধ্য করে। ১৯৭১ সালের ১৬ মে সকাল ১০টার দিকে বাচ্চু রাজাকার তার সহযোগী ১০/১২ জন রাজাকার নিয়ে পুনরায় বলরাম সাহা ওরফে বলাই বাবুর বাড়িতে এসে লুটপাট করে। তার মেয়ের জামাই খগেন্দ্র নাথ সাহা কর্তৃক রক্ষিত ১১টি কাপড়ের গাইট লুট করে নিয়ে যায়। একই দিন বেলা অনুমান ১১টার দিকে বাচ্চু রাজাকার তার দলবল নিয়ে হরেন্দ্র নাথ বকসী ওরফে মন্টু বকসী ও অশ্বিনা ম-লের বসত বাড়িতে প্রবেশ করে। সেখানে বাচ্চু রাজাকার এ বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে। লুটপাটের পর মন্টু বকসী ও অশ্বিনা ম-লের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, মন্টু বকসী ও অশ্বিনা ম-ল আওয়ামী লীগ করায় ও স্বাধীনতা পক্ষের লোক বিধায় বাচ্চু রাজাকার তার দলবল নিয়ে তাদের বাড়ি ঘর লুটপাট করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
গণহত্যা
বাচ্চু রাজাকার ফরিদপুরের গণহত্যার নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৭ মে সকাল ৬টার দিকে বাচ্চু রাজাকার তার বাহিনী ৩০/৩২ জন পাকিস্তানী সেনাসহ বড় নৌকা নিয়ে ফরিদপুর জেলার হাসামদিয়া হিন্দু পাড়ায প্রবেশ করে। গ্রামে ঢুকেই শরৎ চন্দ্র পোদ্দার, সুরেশ পোদ্দার, শ্যমাপদ সাহা, যতীন্দ্র মোহন সাহা, নীলরতন সমাদ্দারকে গুলি করে হত্যা করে। তারা সুবল কয়াল ও মল্লিক চক্রবর্তীকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর বাচ্চু রাজাকার তার দলবল নিয়ে হীরালাল সাহা, সূর্য কুমার, নীল রতন সমাদ্দার ও ডা. ননী গোপাল সাহাদের বাড়ি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেয়ার আগে বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বাচ্চু রাজাকার তাঁর দলবলসহ পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে অসিত বরণ সাহা, সত্য রজ্ঞন সাহা, সুবল সাহা, মাখন লাল সাহা, যতীন্দ্র নাথ সাহা, নারায়ণ চন্দ্র সাহা, কালিপদ সাহা, ডা. মুকুন্দ লাল সাহা ও রাম কানাই বাবুর গুদামঘরসহ ৫০/৬০টি দোকানঘরে মালামাল লুটপাট করে পরে দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়
বাচ্চু রাজাকার তার কয়েক জন সহযোগী নিয়ে হরিপদ সাহা, প্রবীর কুমার সাহা ওরফে পুইট্টাকে ময়েনদিয়া বাজারে নদীর ঘাটে নিয়ে বাচ্চু রাজাকার নিজে গুলি করে উভয়কে হত্যা করে। এর পর তাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। বাচ্চু রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা লুণ্ঠনকৃত মালামাল নিয়ে নৌকাযোগে চলে যায়। উক্ত গ্রামে বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে দেশ ত্যাগে বাধ্য করলে তারা জীবন রক্ষার্থে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে।
গ্রামের পর গ্রামে আগুন
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী ফরিদপুরে গ্রামের পর গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন লাগিয়ে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভারতে প্রবেশ করতে বাধ্য করে। ১৯৭১ সালের ৫ মে সকাল অনুমানিক সাতটা। বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে একদল রাজাকার ফরিদপুর জেলার সালথা থানাধীন জয়কালি গ্রামে ঢোকে। একাত্তর সালে জয়কালি গ্রামটি নগরকান্দা থানার অধীনে ছিল।
১৯৭১ সালে দুলাল মৈত্র, পিতা মৃতÑ দধি বামন মৈত্র, তার বাবা-মা, ভাই-ভাতিজাসহ জয়কালি গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করত। এখনও দুলাল মৈত্র উক্ত গ্রামে বসবাস করেন। ২১ এপ্রিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ফরিদপুর শহরে অবস্থান নিয়ে তাদের দেসার খাড়দিয়ার আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুসহ বিভিন্ন গ্রামে আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের ওপর আক্রমণ শুরু করে। দুলাল মৈত্রসহ জয়কালি গ্রামের সংখ্যলঘু হিন্দু লোকজন জীবনের ভয়ে ঝোপঝাড়ে পালিয়ে থাকত। দুলাল মৈত্রের কাকাত ভাই মুকুল মৈত্র পুলিশের হাবিলদার পদে বরিশালে চাকরি করত। পাকিস্তানী আর্মিরা বাঙালীদের ওপর আক্রমণ শুরু করলে মুকুল মৈত্র পালিয়ে চলে আসেন।
১৯৭১ সালের মে মাসের ৫ তারিখ বাচ্চু রাজাকারসহ অস্ত্রধারী ৭/৮ জন পাকিস্তানী আর্মি সহযোগী সকাল অনুমান সাতটার দিকে জয়কালি গ্রামের দুলাল মৈত্রের বাড়িতে আসে। তার কাকাত ভাই মুকুল মৈত্রকে খোঁজাখুঁজি করে। দুলাল মৈত্রসহ তার বাবা ও চাচাকে আটক করে। এ সময় সুযোগ বুঝে দুলাল মৈত্র দৌড়ে পালায়।
এ সময় বাচ্চু রাজাকার ও তার দলবল দুলাল মৈত্রের বাড়ির অন্য শরিকদের ঘরের টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার ও বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল লুটপাট করে। উক্ত বাড়িতে থাকা বড় বড় টিনের ঘরসহ একটি পূজা ম-পে আগুন লাগিয়ে ৩০/৩২টি ঘর পুড়িয়ে ফেলে। পাকিস্তানী আর্মিরা দুলাল মৈত্রের বাড়ির কিছু পিতলের আসবাবপত্র প্রতিবেশী কাদের মাতব্বরের ঘরে ঘটনার পূর্ব থেকেই লুকিয়ে রেখেছিল। অতঃপর বাচ্চু ও তার দলবলসহ কাদের মাতব্বরের বাড়িতে প্রবেশ করে তার ঘরে থাকা পিতলের আসাবাপত্র লুট করে নিয়ে যায়। তাকে বাড়ির উঠানে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাইফেল দিয়ে বুকে আঘাত করে পাজরের হাড় ভেঙ্গে জখম করে চলে যায়।
একই দিন বাচ্চু রাজাকার ও তার দলবল জয়কালি গ্রামের মোহনবাসির বাড়িতে প্রবেশ করে লুটপাট করে। একটি পূজা ম-পসহ ১০/১২টি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। বাচ্চু রাজাকার ও তার সহযোগীদের ভয়ে জয়কালি গ্রামের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতে শরণার্থী হয়।
যে সমস্ত অভিযোগ
২ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান ট্রাইব্যুনালের রেজিষ্ট্রারের কাছে আনুষ্ঠানিক ফরমাল চার্জ দাখিল করেছেন। সেই ৬৪ পৃষ্ঠার ফরমাল চার্জে আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা, ধর্মান্তরিত করণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেদিন বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ১০টি ঘটনায় ২২টি অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৪৪৮ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করা হয়।
গত বছরের ১০ এপ্রিল আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটÑ এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষীর সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১৪টি হত্যাকা-, তিনটি ধর্ষণ, নয়টি অপহরণ, ১০ জনকে আটক, পাঁচটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ১৫টি বাড়িতে লুটপাট, নয়জনকে ধর্মান্তরিত করা, মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ অজ্ঞাত অনেক লোকের ওপর চালানো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
অত্যাচারো স্টাইল ভিন্ন
বাচ্চু রাজাকারের অত্যাচারের স্টাইল ছিল ভিন্ন। ফরিদপুর স্টেডিয়ামে মানুষ নিয়ে হত্যা করে মাটি চাপ দিয়ে রাখা হয়েছে। বাচ্চু রাজাকারের দল গ্রামের পর গ্রাম লুটপাট করেছে। মানুষ হত্যা করেছে। মেয়েদের ধরে নিয়ে পকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। বড়খারদিয়ার নিকটবর্তী হিন্দু গ্রাম ফুলবাড়িয়া, জগনন্দী, উজীরপুর, শ্রীনগর, হাশেমদিয়া ও ময়েনদিয়া গ্রামসমূহে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ছিল না বললেই চলে। কারণ সব মালামাল লুটপাট করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া বাচ্চু বলাই বাবুর কাচারি ঘরে হিন্দু ছেলেমেয়েদের আরবি পড়তে বাধ্য করে। ১৯৭১ সালের ১৬ মে সকাল ১০টার দিকে বাচ্চু রাজাকার তার সহযোগী ১০/১২ জন রাজাকার নিয়ে পুনরায় বলরাম সাহা ওরফে বলাই বাবুর বাড়িতে এসে লুটপাট করে। তার মেয়ের জামাই খগেন্দ্র নাথ সাহা কর্তৃক রক্ষিত ১১টি কাপড়ের গাইট লুট করে নিয়ে যায়। একই দিন বেলা অনুমান ১১টার দিকে বাচ্চু রাজাকার তার দলবল নিয়ে হরেন্দ্র নাথ বকসী ওরফে মন্টু বকসী ও অশ্বিনা ম-লের বসত বাড়িতে প্রবেশ করে। সেখানে বাচ্চু রাজাকার এ বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে। লুটপাটের পর মন্টু বকসী ও অশ্বিনা ম-লের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, মন্টু বকসী ও অশ্বিনা ম-ল আওয়ামী লীগ করায় ও স্বাধীনতা পক্ষের লোক বিধায় বাচ্চু রাজাকার তার দলবল নিয়ে তাদের বাড়ি ঘর লুটপাট করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
গণহত্যা
বাচ্চু রাজাকার ফরিদপুরের গণহত্যার নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৭ মে সকাল ৬টার দিকে বাচ্চু রাজাকার তার বাহিনী ৩০/৩২ জন পাকিস্তানী সেনাসহ বড় নৌকা নিয়ে ফরিদপুর জেলার হাসামদিয়া হিন্দু পাড়ায প্রবেশ করে। গ্রামে ঢুকেই শরৎ চন্দ্র পোদ্দার, সুরেশ পোদ্দার, শ্যমাপদ সাহা, যতীন্দ্র মোহন সাহা, নীলরতন সমাদ্দারকে গুলি করে হত্যা করে। তারা সুবল কয়াল ও মল্লিক চক্রবর্তীকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর বাচ্চু রাজাকার তার দলবল নিয়ে হীরালাল সাহা, সূর্য কুমার, নীল রতন সমাদ্দার ও ডা. ননী গোপাল সাহাদের বাড়ি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেয়ার আগে বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বাচ্চু রাজাকার তাঁর দলবলসহ পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে অসিত বরণ সাহা, সত্য রজ্ঞন সাহা, সুবল সাহা, মাখন লাল সাহা, যতীন্দ্র নাথ সাহা, নারায়ণ চন্দ্র সাহা, কালিপদ সাহা, ডা. মুকুন্দ লাল সাহা ও রাম কানাই বাবুর গুদামঘরসহ ৫০/৬০টি দোকানঘরে মালামাল লুটপাট করে পরে দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়
বাচ্চু রাজাকার তার কয়েক জন সহযোগী নিয়ে হরিপদ সাহা, প্রবীর কুমার সাহা ওরফে পুইট্টাকে ময়েনদিয়া বাজারে নদীর ঘাটে নিয়ে বাচ্চু রাজাকার নিজে গুলি করে উভয়কে হত্যা করে। এর পর তাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। বাচ্চু রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা লুণ্ঠনকৃত মালামাল নিয়ে নৌকাযোগে চলে যায়। উক্ত গ্রামে বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে দেশ ত্যাগে বাধ্য করলে তারা জীবন রক্ষার্থে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে।
গ্রামের পর গ্রামে আগুন
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী ফরিদপুরে গ্রামের পর গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন লাগিয়ে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভারতে প্রবেশ করতে বাধ্য করে। ১৯৭১ সালের ৫ মে সকাল অনুমানিক সাতটা। বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে একদল রাজাকার ফরিদপুর জেলার সালথা থানাধীন জয়কালি গ্রামে ঢোকে। একাত্তর সালে জয়কালি গ্রামটি নগরকান্দা থানার অধীনে ছিল।
১৯৭১ সালে দুলাল মৈত্র, পিতা মৃতÑ দধি বামন মৈত্র, তার বাবা-মা, ভাই-ভাতিজাসহ জয়কালি গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করত। এখনও দুলাল মৈত্র উক্ত গ্রামে বসবাস করেন। ২১ এপ্রিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ফরিদপুর শহরে অবস্থান নিয়ে তাদের দেসার খাড়দিয়ার আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুসহ বিভিন্ন গ্রামে আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের ওপর আক্রমণ শুরু করে। দুলাল মৈত্রসহ জয়কালি গ্রামের সংখ্যলঘু হিন্দু লোকজন জীবনের ভয়ে ঝোপঝাড়ে পালিয়ে থাকত। দুলাল মৈত্রের কাকাত ভাই মুকুল মৈত্র পুলিশের হাবিলদার পদে বরিশালে চাকরি করত। পাকিস্তানী আর্মিরা বাঙালীদের ওপর আক্রমণ শুরু করলে মুকুল মৈত্র পালিয়ে চলে আসেন।
১৯৭১ সালের মে মাসের ৫ তারিখ বাচ্চু রাজাকারসহ অস্ত্রধারী ৭/৮ জন পাকিস্তানী আর্মি সহযোগী সকাল অনুমান সাতটার দিকে জয়কালি গ্রামের দুলাল মৈত্রের বাড়িতে আসে। তার কাকাত ভাই মুকুল মৈত্রকে খোঁজাখুঁজি করে। দুলাল মৈত্রসহ তার বাবা ও চাচাকে আটক করে। এ সময় সুযোগ বুঝে দুলাল মৈত্র দৌড়ে পালায়।
এ সময় বাচ্চু রাজাকার ও তার দলবল দুলাল মৈত্রের বাড়ির অন্য শরিকদের ঘরের টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার ও বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল লুটপাট করে। উক্ত বাড়িতে থাকা বড় বড় টিনের ঘরসহ একটি পূজা ম-পে আগুন লাগিয়ে ৩০/৩২টি ঘর পুড়িয়ে ফেলে। পাকিস্তানী আর্মিরা দুলাল মৈত্রের বাড়ির কিছু পিতলের আসবাবপত্র প্রতিবেশী কাদের মাতব্বরের ঘরে ঘটনার পূর্ব থেকেই লুকিয়ে রেখেছিল। অতঃপর বাচ্চু ও তার দলবলসহ কাদের মাতব্বরের বাড়িতে প্রবেশ করে তার ঘরে থাকা পিতলের আসাবাপত্র লুট করে নিয়ে যায়। তাকে বাড়ির উঠানে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাইফেল দিয়ে বুকে আঘাত করে পাজরের হাড় ভেঙ্গে জখম করে চলে যায়।
একই দিন বাচ্চু রাজাকার ও তার দলবল জয়কালি গ্রামের মোহনবাসির বাড়িতে প্রবেশ করে লুটপাট করে। একটি পূজা ম-পসহ ১০/১২টি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। বাচ্চু রাজাকার ও তার সহযোগীদের ভয়ে জয়কালি গ্রামের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতে শরণার্থী হয়।
যে সমস্ত অভিযোগ
২ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান ট্রাইব্যুনালের রেজিষ্ট্রারের কাছে আনুষ্ঠানিক ফরমাল চার্জ দাখিল করেছেন। সেই ৬৪ পৃষ্ঠার ফরমাল চার্জে আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা, ধর্মান্তরিত করণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেদিন বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ১০টি ঘটনায় ২২টি অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৪৪৮ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করা হয়।
গত বছরের ১০ এপ্রিল আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটÑ এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষীর সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১৪টি হত্যাকা-, তিনটি ধর্ষণ, নয়টি অপহরণ, ১০ জনকে আটক, পাঁচটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ১৫টি বাড়িতে লুটপাট, নয়জনকে ধর্মান্তরিত করা, মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ অজ্ঞাত অনেক লোকের ওপর চালানো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
অত্যাচারো স্টাইল ভিন্ন
বাচ্চু রাজাকারের অত্যাচারের স্টাইল ছিল ভিন্ন। ফরিদপুর স্টেডিয়ামে মানুষ নিয়ে হত্যা করে মাটি চাপ দিয়ে রাখা হয়েছে। বাচ্চু রাজাকারের দল গ্রামের পর গ্রাম লুটপাট করেছে। মানুষ হত্যা করেছে। মেয়েদের ধরে নিয়ে পকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। বড়খারদিয়ার নিকটবর্তী হিন্দু গ্রাম ফুলবাড়িয়া, জগনন্দী, উজীরপুর, শ্রীনগর, হাশেমদিয়া ও ময়েনদিয়া গ্রামসমূহে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ছিল না বললেই চলে। কারণ সব মালামাল লুটপাট করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
শনিবার, ৩ নভেম্বর ২০১২, ১৯ কার্তিক ১৪১৯
বাচ্চু রাজাকার- মৌলানা নামের আড়ালে কুৎসিত হায়েনা
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার
http://warcrimebd.blogspot.com/2012/04/blog-post_04.html
বাচ্চু রাজাকারের মতোই পালাতে চেয়েছিলেন সুবহান! |
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: একাত্তরের ঘাতক বাচ্চুরাজাকারের মতোই পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মওলানা আব্দুস সুবহান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে আটক করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। .......
Related:
বাচ্চু রাজাকার পাকিস্তানে
কাজ করছে যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে
Related:
আলবদর ॥ ১৯৭১ মুজাহিদের শেষ ভাষণ
মুনতাসীর মামুন
বাচ্চু রাজাকার
বাচ্চু রাজাকার
বাচ্চু রাজাকার - Amarblog.com: Bangla Blog ( আমারব্লগ )
3 এপ্রিল 2012 – এইদিকে বাচ্চু রাজাকারের নামও শুনেছি। যেদিন জানলাম এই মৌলানা আবুল কালাম আজাদই কুত্তার বাচ্চা বাচ্চু রাজাকার সেইদিন হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। মনে প্রশ্ন আসে সুফী চেহারার কোরানের আলেম মানুষ কি করে এত জঘন্য হয়,ভুল করে নি তো। জিজ্ঞাস করলাম আমার মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে। সেই নিশ্চিত করলো,এই সেইবাচ্চু। এরপর শ্রদ্ধার ...
বাচ্চু রাজাকার : উৎসর্গ সান্তর - অমি রহমান পিয়াল এর বাংলা ব্লগ ...
সান্তর একটা পোস্ট দিয়েছিলেন বাচ্চু রাজাকার সম্পর্কে জানতে চেয়ে । আমার তাৎক্ষণিক অক্ষমতায় আমি এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারিনি। এরপর শরন নিই একাত্তরের জীবন্ত অভিধান মাহবুবুর রহমান জালাল ভাইয়ের। উনি কিছু পেপার কাটিং পাঠিয়েছেন। সেগুলো তুলে দিলাম। সান্তর হয়তো তার জবাব পাবেন.
|