কর্নেল গুলজার শেষ সাক্ষাৎকারে যা বলেছিলেন নাশরাত চৌধুরী: জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বিডিআরের সিলেট সেক্টর কমান্ডার কর্নেল গুলজার জঙ্গি দমনে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালাসহ দু'টি রিপোর্টে সরকারের কাছে জমা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বাস্তবায়ন কঠিন হলেও তা করতে হবে। নিহত হওয়ার আগে মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, সরকার আমার দেয়া রিপোর্ট বাস্তবায়ন করলে জঙ্গি নির্মূল সম্ভব হবে। বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা বললেও আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলা করার মতো সুদৃঢ় নেটওয়ার্ক জঙ্গিদের নেই। ২১শে ফেব্রুয়ারি গাজীপুর থেকে র্যাব ও পুলিশ বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড ও গোলাবারুদ উদ্ধারের পর তিনি মানবজমিনকে এ সাক্ষাৎকার দেন। জীবনের এ শেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঠিকমতো সমন্বয় হচ্ছে না। এর বড় কারণ সঠিক ও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব। র্যাবের সিইওসহ বিভিন্ন বাহিনীতে বদলি আতঙ্ক কাজ করছে। সেজন্যই দুঃসাহসিক কাজে এগোচ্ছেন না আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তারা। ২১শে ফেব্রুয়ারি গাজীপুর থেকে গ্রেনেড ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, জঙ্গিরা দীর্ঘদিন ধরেই সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন স্থানে হামলার পরিকল্পনাও করছে। তবে আগেই তা জানাজানি হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, বড় ধরনের হামলার জন্য গাজীপুরে সম্ভবত গ্রেনেড ও গোলাবারুদ মজুত করা হয়েছিল। জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক এখনও মজবুত। মাওলানা সাইদুরের নেতৃত্বে তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। বর্তমান নেটওয়ার্কে তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনবহুল স্থানে হামলা করতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী যে নিরাপত্তার মধ্যে থাকেন সেখানে জঙ্গি হামলা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীকে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় ভীত না হয়ে কঠোর হাতে তা দমন করতে হবে। দেশ থেকে জঙ্গি দমনের উপায় প্রসঙ্গে কর্নেল গুলজার বলেছিলেন, এ ব্যাপারে করণীয় ঠিক করতে বর্তমান সরকারকে আমি দু'টি রিপোর্ট দিয়েছি। তাতে জঙ্গিদের বর্তমান অবস্থা, নেটওয়ার্ক, ক্ষমতার উৎস, সহায়তা, কিভাবে তাদের দমন করা যায় ইত্যাদি প্রসঙ্গে বিস্তারিত তুলে ধরেছি। স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুল করিম স্যারের মাধ্যমে আমার রিপোর্ট দু'টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গেছে। তিনি জানান, সরকারের সঙ্গে জঙ্গি দমনে কাজ করতে চেয়েছিলাম। তবে সরকার আমার সহযোগিতা নেয়নি। বিডিআরে বদলি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আমি এর কারণ জানি না। আমাকে কোন কারণও জানানো হয়নি। তবে শুনেছি আমাকে বদলি করার ফাইলটি এক ঘণ্টায় প্রসেস হয়েছে। এরপর বদলির অর্ডার দেয়া হয়েছে। আমি বিডিআরে বদলি হয়েছি। আমার বদলি হওয়ার ফাইলের ব্যাপারে সেনা সদর দপ্তরও কিছু জানতো না। কর্নেল গুলজার বলেছিলেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে র্যাবের কাজের গতি অনেক বেশি ছিল। কারণ ওই সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজেই যে কোন ব্যাপারে সরাসরি সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন। তার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল। ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধীরগতিতে যেতে বলেছিল। র্যাবের কর্মকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনেরও চাপ ছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলে তারা সরকারের ওপর চাপ দিতো। তিনি বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নিলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ওনারা কেউ আমাদের ডাকেননি। যতদিন ছিলাম আমাকে কখনও কোন নির্দেশও দেননি। ডিজি সাহেব মন্ত্রীর কাছে যেতে ইতস্তত করছেন। মুখে সরকার নির্দেশ দিলেও কি করতে হবে তার নির্দেশনা দিতো না। বিডিআরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস করেছেন একদিন। বিডিআরে তার প্রথম দিন কেমন কাটলো জানতে চাইলে বলেছিলেন, এই তো অবস্থা বুঝতেছি। সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে হবে। বিডিআরে যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেন এমবিএ ডিগ্রি নেবেন। এই জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার আর এমবিএ করা হলো না। বলেছিলেন, র্যাব ছাড়ার পর হাতে যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে, তাই ভাবছি এমবিএ করে ফেলবো। সামনে কাজে লাগবে।
Has Bangladesh Army paid enough price for making wrong headed(declared by court) PM or will have to pay more? How much people will have to pay if she remains five year? |