Banner Advertiser

Monday, October 12, 2009

[mukto-mona]



হালে পানি নেই প্রধানমন্ত্রীরঃ হুকুম-নির্দেশ উপেক্ষিত

সিরাজুর রহমান

�ইচ্ছা যদি মণ্ডা-মিঠাই হতো তাহলে কেউ উপোস থাকতো না।� শেখ হাসিনার মুখের কথাগুলো যদি তার মনের কথা হতো তাহলে বাংলাদেশের কারো অকল্যাণ হতো না। শাসক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠক হয়ে গেল গত ৩ অক্টোবর। দলের সদস্য এবং মিডিয়ার লোকেদের নিশ্চয়ই অনভ্যস্ত মনে হয়েছে এ বৈঠক। শেখ হাসিনার পিতার যুগ থেকে যারা দলের প্রথম কাতারের নেতা ছিলেন, তাদের কেউ আর ওয়ার্কিং কমিটিতে নেই। সত্যি বলতে চেনা মুখ তেমন ছিল না এ কমিটিতে। শুধু সভানেত্রী শেখ হাসিনার দুয়েকজন আত্মীয় ছাড়া। দলের নীতি ও কার্যক্রমে পারম্পর্য ছিন্ন হয়ে গেল। এ আওয়ামী লীগ আর সে আওয়ামী লীগ নয়।

জুন মাসে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল নতুন ওয়ার্কিং কমিটি মনোনয়নের ভার দিয়েছিল শেখ হাসিনাকে। তিনি অতীতের সাথে কোনো যোগসূত্র বজায় রাখেননি� যেমন তিনি তার মন্ত্রিসভায় পরিপক্ব বুদ্ধির কোনো নেতাকে স্থান দেননি। তার প্রতি ব্যক্তিগতভাবে যারা অনুগত, আর যারা পা ছুঁয়ে তাকে সালাম করেন, তাদের নিয়ে তিনি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছেন। এককালে আমরা দেখতাম সোভিয়েত নেতারা রাষ্ট্রের নির্বাহী সংগঠনগুলোর জন্য অনুগত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিতেন এবং পরে ঘোষণা করা হতো, তাদের সবাই হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, নয়তো বিপুল ভোটাধিক্যে বিজয়ী হয়েছেন।

বড় কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের, বিশেষ করে সে দল ক্ষমতাসীন হলে, তাদের ওয়ার্কিং কমিটিতে নীতি এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিষয়াদি নিয়ে জোর বিতর্ক হয়; সদস্যরা নীতি ও কর্মপন্থাগুলো যাচাই-বাছাই করে তার পরে সেসব বিষয়ে দলের অবস্থান নির্ণয় করেন। আমার মনে আছে মুসলিম লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল দলের ওয়ার্কিং কমিটির সভাগুলোতে প্রায়ই উত্তেজক বিতর্ক হতো। আওয়ামী লীগের নতুন ওয়ার্কিং কমিটির সভায় সে রকম কোনো আলোচনা কিংবা উত্তেজনা ঘটেছে বলে জানা যায়নি। অবশ্য সেটা আশাও করা যায়নি, একটি মনোনীত আজ্ঞাবহ কমিটির কাছ থেকে।
তবে বৈঠকের সাথে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর বরাত দিয়ে মিডিয়া খবর দিয়েছে� �দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে মূল দল, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যাপক ভূমিকার দরুন সরকার ও দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে।� এ ধরনের কার্যকলাপে লিপ্ত নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, এসব কার্যকলাপ এ মুহূর্তেই বন্ধ করা না হলে সরকার ও দলকে (আওয়ামী লীগ) চড়া মূল্য দিতে হবে।

দুষ্ট লোকের সন্দেহ হতে পারে, দলনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার গালভরা সদিচ্ছা-শুভেচ্ছা কথাগুলো আরো একবার আওড়ানোর �কিউ� সৃষ্টি করার জন্যই ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা সমালোচনা ও হুঁশিয়ারির কথাগুলো উচ্চারণ করেছেন। অবশ্য শেখ হাসিনা সব সময় �কিউ�র তোয়াক্কা করেন না, মাঝে মাঝেই তিনি এসব কথা বলে যান, যদিও সেসব কথা যে কাজ করার আন্তরিক নির্দেশ নয় সেটা তার মন্ত্রীরা ও দলের নেতাকর্মীরা ঠিকই জানেন। নইলে অন্তত দুয়েকটি ব্যাপারেও এই নয় মাসে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হতো, কিছু কথা বাস্তবে পরিণত হতো। যা হোক, দলের প্রবক্তা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বয়ান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী �চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।�

হাইকমান্ডের লক্ষ্য
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা গত নয় মাসে কী কী অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত আছেন, তার একটা স্যাম্পল দেখা যাক গোড়াতেই। গত ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সময় থেকেই আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা (এই সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর পত্তন করেছিলেন শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচনে জয়ের পরেই) দেশের সর্বত্র বিএনপি�র তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে; শতাধিক নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে, অনেকের ব্যবসায় ও সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে তারা। হাসিনা বরাবরই বিএনপিকে পথের কাঁটা বিবেচনা করেন। তার প্রথম সরকারের আমলে এই ক্যাডাররা বিএনপিকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করার সব চেষ্টা করেছে। বিএনপি�র মিছিলের ওপর ড. ইকবালের অনুচরদের গুলিবর্ষণ অজস্র দৃষ্টান্তের মাত্র একটা। মনে হয় এবারেও সেটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের লক্ষ্য।
সে জন্যই নির্বাচনের পরে পরে �প্রতিশোধ না নেয়ার জন্য কর্মীদের প্রতি হাসিনার নির্দেশ� সত্ত্বেও উপরোল্লিখিত হত্যা-নির্যাতনগুলো হয়েছে এবং হচ্ছে। বিদেশী প্রভুদের চোখ ঠারার জন্য মাঝে মাঝে বিএনপিকে সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। অন্য দিকে এমন কতগুলো কাজ করা হয়েছে, যাতে সংসদে যাওয়ার প্রবৃত্তি বিএনপি নেতাদের না হয়। আর এসব করা হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারে হাসিনার কতগুলো �মহৎ উদ্দেশ্য� ঘোষণার পর� যাতে তিনি বলেছিলেনঃ প্রতিহিংসার নয়, সহযোগিতার এবং দিনবদলের রাজনীতি করবেন তিনি ক্ষমতা পেলে।

আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের সময় থেকেই ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর আবাসিক হল দখলের অভিযান শুরু করে। ছাত্রদল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সমর্থক ছাত্রদের পিটিয়ে, এমনকি দুয়েক ক্ষেত্রে খুন করে, তারা সব হল দখল করেছে। ক্ষমতা এবং আর্থিক লাভের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অংশের মধ্যেও সংঘর্ষ, খুন-জখম হয়েছে এবং হচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ, মেরামত ইত্যাদি যাবতীয় কাজের বেলায় ছাত্রলীগ টেন্ডারবাজি আগে থাকতেই করে এসেছে। এবারে তারা বৃহত্তর ভাবে দেশের সব কাজকর্মের টেন্ডারের ওপর �চাঁদা� আদায় করছে। তাদের দেখাদেখি যুবলীগ, শ্রমিক লীগ আর স্বেচ্ছাসেবক লীগও এই কামধেনু দোহনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সে প্রতিযোগিতায় তাদের নিজেদের মধ্যেও মারপিট-সংঘর্ষ হচ্ছে।

ভূমি দখল
গণচীনে অর্থনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার পর থেকে কতগুলো অত্যাচার-দুর্নীতি আত্মপ্রকাশ করেছিল। সেগুলোর একটা হচ্ছে �প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট� এবং জবরদস্তি করে পরের জমি আত্মসাৎ করা। এই দুস্কৃতকারীরা আগেভাগেই ঘুষ দিয়ে পুলিশ এবং অন্যান্য স্থানীয় কর্মকর্তাদের হাত করে রাখে বলে ভুক্তভোগীরা সব সময় সুবিচার পায় না। বহু ক্ষেত্রে উপায়ান্তরবিহীন ভুক্তভোগীরা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে। এ রকম একটা ঘটনার খবর পাওয়া গেছে মাত্র গত সপ্তায়। নির্যাতিত একটি এলাকার এক যুবক ছুরিকাঘাত করে �ল্যান্ড-গ্র্যাবারকে� (জমি গ্রাসকারী) হত্যা করে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এলাকার ৩০ হাজার লোকের সবাই তাকে বেকসুর মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়ে আদালতে দরখাস্ত পেশ করেছে। বন্দী লোকটার বাবা বলেছেন, তার ছেলের প্রাণদণ্ড যদি হয় হবে, তবু তো গোটা এলাকার মানুষ ওই বদ লোকটার জুলুম থেকে বাঁচলো!
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ-লীগের নেতাকর্মীরা এখন পাইকারিভাবে পরের জমি গ্রাস করে �প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের� ব্যবসায় শুরু করেছে। কিছু কাল আগে ঢাকার শাঁখারী বাজারের এক পরিবারের ১১ সদস্যকে ছিনতাই করে এক প্রপার্টি ডেভেলপার ছাত্রলীগ নেতা তাদের বসত বাটি দখল করেছিল। এ পরিবার ভাগ্যবান। শক্তিমন্ত কারো সহায়তায় ক�দিন পরে তারা নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসতে পেরেছিলেন। কিন্তু সূত্রাপুরের ঋষিকেশ দাস রোডের পাশাপাশি একাধিক বাড়ির লোকজন তত ভাগ্যবান ছিল না। তাদের ছিনতাই করে নিয়ে গিয়ে তাদের সম্পত্তি দখল করা হয়। আরো জানা গেছে যে, এ ঘটনা যে ঘটবে পুলিশ আগেই জানতো; কিন্তু তারা প্রতিরোধ করেনি, এমনকি ভুক্তভোগীরা থানায় এজাহার করতে গেলে পুলিশ নাকি এজাহার নিতে অস্বীকার করেছে। শহর এলাকায় এসব ভূমি গ্রাসের ঘটনা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধেই ঘটছে বেশি।
দুষ্কর্মের সমানাধিকার
দুষ্কর্মের কাজে মহিলা আওয়ামী লীগও এখন �সমানাধিকার� নিতে চায় বলে মনে হয়। চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নয় নম্বর ওয়ার্ডে ১২.৭৭ একর জমি বরাদ্দ করেছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনকে। কিন্তু ক�দিন আগে ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগ সেখানে ছোট্ট একটা বাঁশের খুপরি তুলে তাদের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। এ জমি তারা দখল করতে চায়। গায়ের জোরে জমি দখলের ঘটনা বাংলাদেশে এখন প্রায় অহরহ ঘটছে। পুলিশ অভিযোগ নেয় না, অসহায় মানুষকে মুখ বুজে জোর-জুলুম সহ্য করতে হচ্ছে।

মধ্যযুগে একটা রীতি ছিল। বিজয়ী সেনাবাহিনী বিজিত দেশের নারীদের ধর্ষণ করার অধিকার দাবি করত। আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর এ দলের ক্যাডাররা সে রকমই আচরণ করে বলে মনে হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাসক দল ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর কর্মীরা নির্বিচারে নির্যাতন চালাচ্ছে বলে একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। হয়তো তারা মনে করে যে, �স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি� বলে সে অধিকার তাদের আছে।

সাম্প্রতিক একটা দৃষ্টান্ত দেখা গেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায়। শাসক দলের কয়েকজন কর্মী সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে। স্থানীয় দৈনিক সাথী পত্রিকার সংবাদদাতা গোফরান বিশ্বাস পলাশ এ ঘটনার রিপোর্ট করে। ঘটনার প্রতিকার দূরের কথা, স্থানীয় পুলিশ সংবাদদাতাকে ডেকে এনে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি আদায় করে যে তিনি আর এ ঘটনা সম্বন্ধে কোনো খবর পরিবেশন করবেন না। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাতেও সন্তুষ্ট হননি। তারা সংবাদদাতাকে নানা রকম হুমকি দেন এবং তাকে বরখাস্ত করার জন্য পত্রিকার সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে চাপ দিতে থাকেন। সম্পাদক বাধ্য হয়ে পত্রিকায় ঘোষণা প্রচার করেন যে সংবাদদাতা গোফরান বিশ্বাস পলাশকে তিনি বরখাস্ত করেছেন। এ বিষয়ে খবর প্রচার না করার জন্য অন্যান্য মিডিয়া প্রতিনিধিকেও হুশিয়ার করে দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

সর্বশেষ বিবর্তন হচ্ছে এই যে, আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের নেতৃত্বে আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) সংস্থার দু�জন আইনজীবী ও দু�জন তদন্তকারীর একটি প্রতিনিধি দল এ ঘটনা সম্বন্ধে তদন্ত করতে কলাপাড়া গিয়েছিল। সেখানে ফাঁকা দেওয়ালে তাদের মাথা ঠেকে গেছে বলেই মনে হয়। তারা অভিযোগ করেন যে, স্থানীয় পুলিশ কোনো প্রকারে তাদের সাথে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেছে। ধর্ষিত বালিকাকে উদ্ধার করেছিলেন পুলিশ অফিসার কবির হোসেন ২৬ সেপ্টেম্বর ভোরে। আসক�র প্রতিনিধি দল গিয়ে দেখে যে কবির হোসেনকে পটুয়াখালী রিজার্ভ আফিসে বদলি করে দেয়া হয়েছে। থানার কর্মকর্তারা এজাহার অথবা এ ঘটনা সম্পর্কিত কোনো নথিপত্র প্রতিনিধি দলকে দেখাতে অস্বীকার করেছেন। আগেই বলেছি এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।

কার নির্দেশ কে শোনে?
শেখ হাসিনা যদি অন্ধ কিংবা বধির না হন, তাহলে এসব পরিস্থিতি তার অজানা থাকার কথা নয়। তা হলে ঘনঘন �ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ� কেন তিনি উচ্চারণ করছেন এবং কেন এসব দুষ্কর্মের প্রতিকার হচ্ছে না? মাত্র দু�টি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে তার; হয় হাসিনা সত্যি সত্যি রাশ টেনে ধরতে, তার ক্যাডারদের সংযত করতে চান না, কেননা সব চ্যালেঞ্জ গুঁড়িয়ে দিয়ে তার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার পূর্ণ দায়িত্ব তিনি তাদের ওপর দিয়ে রেখেছেন; নয়তো শেখ হাসিনা তার পিতার শাসনকালের মতোই দেশের বাস্তবতার সাথে সংযোগ এবং দলীয় যন্ত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন।

প্রথম সম্ভাবনাটাই বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রী ও দলের প্রবক্তা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একটি উক্তি থেকে। তিনি বলেছেন, তদন্তের পর আমরা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।� শুভঙ্করের ফাঁকটা লক্ষ করছেন? প্রকৃত সমস্যাটা নিহিত আছে তদন্তের পরে শব্দ দুটোর মধ্যে। একের পর এক অজস্র ঘটনায় দেখা যাচ্ছে ভুক্তভোগী ও সংবাদদাতারা অভিযোগ করছেন যে, পুলিশ অভিযোগ নথিভুক্ত করতে চায় না, উল্টো তারা আওয়ামী লীগ কর্মীদের পক্ষে ভুক্তভোগীদেরই ভয় দেখায়। কলাপাড়ার ঘটনায় খবর পাওয়া গিয়েছিল যে সংবাদদাতা গোফরান বিশ্বাস পলাশ ও সাথী পত্রিকার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার জন্য স্থানীয় পুলিশ ধর্ষিত বালিকার পরিবারের ওপর চাপ দিচ্ছিল।

অর্থাৎ আওয়ামী লীগ কর্মীদের ভূমিগ্রাস, চাঁদা ও টেন্ডারবাজি, জোর-জুলুম, হত্যা-ধর্ষণের অভিযোগ বহু ক্ষেত্রে নথিভুক্তি হচ্ছে না, তদন্ত হচ্ছে না সেসব বিষয়ে, এবং হলেও সে তদন্ত নিরপেক্ষ হতে পারে না। এসব তদন্তের ওপর যদি দুর্বৃত্ত ও দুস্কৃতকারীদের শাস্তি নির্ভর করে তাহলে সেটাকে ন্যায়বিচার অস্বীকার করারই নামান্তর বলতে হবে। কোনো সন্দেহ নেই যে আওয়ামী ক্যাডারদের জোর-জুলুম-ধর্ষণের অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে দেশময় ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
আগের এক প্রবন্ধে শেখ হাসিনার ক্যাডারদের হিটলারের স্টর্ম ট্রুপার ও হিটলার ইয়ুথ বাহিনীর সাথে তুলনা করেছিলাম। নাৎসি নেতা এ দু�টি বাহিনীকে ব্যবহার করেছিলেন তার অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতৃত্ব নিশ্চিত করা এবং সব দ্বিমত ও প্রতিবাদ গুঁড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে। তাদের সংযত করার এবং তাদের কোনো অন্যায় কর্মের শাস্তি দানের কথা হিটলারের মনেও আসেনি। হয়তো শেখ হাসিনাও সে রকমেরই একটা স্ট্র্যাটেজি নিয়েছেন।

প্রয়োজন নাগরিক অভ্যুত্থান
সরকারের সম্প্রতি ঘোষিত দু�টি প্রকল্পে সব শান্তিকামী ও গণতন্ত্রমনা মানুষ আরো উদ্বিগ্ন না হয়ে পারবে না। প্রথম প্রকল্পটি হচ্ছে ছয় মাসের চাকরি দেয়ার যুব উন্নয়ন প্রকল্প। যুদ্ধকালে ব্রিটেনসহ ইউরোপের সব দেশেই �ন্যাশনাল সার্ভিস� স্কিম চালু ছিল। স্কুল ত্যাগের পর সব সুস্থ-সক্ষম পুরুষকে এ সার্ভিসে যোগ দিতে হতো। ইসরাইলসহ দুয়েকটি দেশে এখনো সে ব্যবস্থা চালু আছে। সাধারণত দু�বছর মেয়াদে এই �কনস্ক্রিপ্ট� সৈন্যদের পূর্ণ সামরিক শৃঙ্খলা ও কলাকৌশল শিক্ষা দেয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এবং পরবর্তীকালে ন্যাশনাল সার্ভিসের লাখ লাখ সৈন্য যুদ্ধ করেছে, শান্তির সময় আপৎ, ত্রাণ ইত্যাদি বহু সমাজকল্যাণমূলক কাজ করেছে তারা। সবচেয়ে বড় লাভ দেশের যুবসমাজকে শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ শেখানো।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে পরিকল্পনার ছক তৈরি করেছে, ন্যাশনাল সার্ভিসের ধারণার সাথে তার কোনো মিল দেখা যাচ্ছে না। বরং মনে হচ্ছে যে স্থানীয়ভাবে কিছু একপেশে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভিন্ন নামে এদের আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের কাতারে শামিল করাই উদ্দেশ্য। আপনাদের স্মরণ থাকতে পারে, কিছুকাল আগে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নিজেদের এলাকার বেকার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের তালিকা তার দফতরে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। শোনা যায় পাঁচ-ছয় লাখ নামের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জমা হয়েছে। ধারণা করা অসঙ্গত হবে না যে, সে তালিকা থেকেই এই �যুব উন্নয়ন প্রকল্পে� নিয়োগ দেয়া হবে। সেটা কার্যত হবে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীর কলেবর বাড়ানো� যেটা দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য একটা বিভীষিকার ব্যাপার হতে বাধ্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন তিন বছরের মধ্যেই আরো যে ৩২ হাজার পুলিশ নিয়োগের কথা বলেছেন, সম্ভবত তাদেরও নেয়া হবে উপরোল্লিখিত তালিকা থেকে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ আওয়ামীকৃত নতুন একটা পুলিশ বাহিনী গঠন করে একদলীয় পদ্ধতি পাকাপোক্ত করার আয়োজন এগিয়ে চলেছে বলেই মনে হয়। ইতোমধ্যেই পুলিশ ও প্রশাসনে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে বেছে বেছে আওয়ামী লীগের সমর্থক অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও শেখ হাসিনা নিরাপদ বোধ করতে পারছেন না।
দেশের সব মানুষের জন্যই সেটা উদ্বেগের কথা। আওয়ামী লীগের অশুভ পরিকল্পনাগুলো পাকাপাকি গেড়ে বসার আগেই একটা �নাগরিক অভ্যুত্থানের� প্রস্তুতি নেয়ার সময় এসেছে বলে আমি মনে করি।


__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___