ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের শুনানি
সাকার বিরুদ্ধে ৭৭ অভিযোগ
একাত্তরের মানবতা-বিরোধী অপরাধ গণহত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, লুণ্ঠন ও ধর্মান্তরকরণের অভি-যোগের মামলায় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৯ ধরনের ৭৭টি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ২৫টি ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রসিকিউটর বলেন, তার বিরুদ্ধে ১৫টি গণহত্যা, ৮টি হত্যা, ১টি ধর্ষণ, ৭টি অপহরণ, ১১টি অগি্নসংযোগসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, এসব অপরাধ ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সংঘটিত হয়েছে। প্রসিকিউটরের বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হলো। ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী শুনানির জন্য ২৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। একই সঙ্গে সালাহউদ্দিন কাদেরের আবেদনে তার আইনজীবীও পরিবর্তন করা হয়।
গত ৪ অক্টোবর সাংসদ সালাহউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ৫৫ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে ১ হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার নথিপত্র এবং ১৮টি সিডি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রসিকিউশন বিভাগ। ২০১০ সালের ২৬ জুলাই সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।
গতকাল শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে অসংখ্য ঘটনার প্রমাণ মিলেছে।
সুনির্দিষ্ট ২৫টি ঘটনার ৭৭টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন-১৯৭৩-এর ৩(২) ধারায় মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও অপরাধে সহায়তা করার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাত্তরে চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গণহত্যায় মদদ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আইনজীবী পরিবর্তন :আইনজীবী নিয়োগ নিয়ে নানা 'নাটকের' পর গত ১৯ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে মোঃ বদিউজ্জামান তরফদারকে সাকার পক্ষে মামলায় লড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগ পর্যন্ত তিনি নিজেই শুনানি করে আসছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সাকার পক্ষ থেকে নতুন আইনজীবী নিয়োগের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানানো হয়। গতকাল অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান সাকার মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। শুনানির এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী নই। আমি তার 'প্রেতাত্মা'। শুনানি শেষে বিদায়ী আইনজীবীর ভূয়সী প্রশংসা করেন সাকা চৌধুরী। ট্রাইব্যুনাল বদিউজ্জামানের কাছে থাকা মামলার যাবতীয় নথিপত্র রেজিস্ট্রারের কাছে বুুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল চার্জ গঠনের জন্য ২৩ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেন। অ্যাডভোকেট আহসানুল হক তার হয়ে শুনানিতে অংশ নেবেন।
সাকাকে সতর্কতা :গতকাল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে সাকা চৌধুরী ও তার মনোনীত নতুন আইনজীবী আহসানুল হককে সতর্ক করেন ট্রাইব্যুনাল। তারা দু'জনে এজলাস কক্ষে উচ্চস্বরে কথা বলা শুরু করলে ট্রাইব্যুনাল সাবধান করে দিয়ে বলেন, তারা একটি ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আছেন। তাদের কথা বলার ভঙ্গি যথাযথ নয়। এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল সাকা চৌধুরীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এজলাস কক্ষের কাঠগড়ায় বসে এমন আচরণ করা হলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পর সাকা ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, তার কণ্ঠ স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি। তা ছাড়া আমি তো জেলখানায়ই আছি। আমার বিরুদ্ধে আর কী ব্যবস্থা নেবেন?
__._,_.___