Enter your message here.
গাফফার খান চৌধুরী ॥ গত ২৯ জানুয়ারি বিএনপির গণমিছিলে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা ছিল। গণমিছিলে বেপরোয়া হামলা করে দেশব্যাপী অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির ছক তৈরি করা হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল নিজ দলীয় কয়েক নেতাকর্মীর লাশ ফেলে দেয়ার। সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে গণমিছিল ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের বড় ধরনের সুযোগ। বড় ধরনের নাশকতা এড়াতেই গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। বাতিল গণমিছিল কর্মসূচীতে কুমিল্লা ও লক্ষীপুরে গুলিতে ৪ জনের মৃত্যু নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করার পরিকল্পনা ছিল। তবে নাশকতার আশঙ্কা শেষ হয়ে যায়নি। নাশকতার আশঙ্কায় সরকারদলীয় কর্মসূচীর চেয়ে বিরোধী দলের কর্মসূচীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে জামায়াত মরিয়া। একের পর এক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেনকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেয়া হয়েছিল। রাজধানীতে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে ৩৮ পুলিশসহ অন্তত শতাধিকজনকে আহত করা হয়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগেই ভোরে জামায়াত সিরিজ বোমা হামলা করে মতিঝিলে একজনকে হত্যা এবং সিলেটে চিত্রনায়িকা শাবনূরের পিতাকে পুড়িয়ে হত্যা করে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের গ্রেফতারের পর ঢাকায় পুলিশ ও সাধারণ পথচারীর ওপর চোরাগুপ্তা হামলা চালায়।
তবে গণমিছিল ছিল বিশেষ হামলার টার্গেটে। এমন আশঙ্কা থেকেই পুলিশ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল জামায়াত গণমিছিলে বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তরফ থেকে গণমিছিল কর্মসূচীতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। গণমিছিল পিছিয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। কিন্তু গত ২৯ জানুয়ারির বাতিল গণমিছিল কর্মসূচী পালনকালে চাঁদপুর ও লক্ষীপুরে গুলিতে ৪ জন নিহত হন। নিহতরা গণমিছিল আহানকারীদের নেতাকর্মী বলে পরে জানা গেছে। কর্মসূচীটি বাতিল না হয়ে বহাল থাকলে ৪ জনের মৃত্যু নিয়ে বড় ধরনের কর্মসূচী ঘোষণার কথা ছিল বিএনপি-জামায়াতের। কিন্তু সে জামায়াতী পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। গুলিতে নিহত হওয়ার নেপথ্য কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক বিশ্বাস আফজাল হোসেনকে প্রধান ও চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুর আলম মিনাকে সদস্য করে পুলিশ সদর দফতরের কমিটি করা হয়েছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমির জাফর, সদর সার্কেল এএসপি সাজ্জাতুল করিম এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর আতিক আহম্মেদের সমš^য়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
লক্ষীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান, সদর সার্কেল এএসপি কাজী হেলাল উদ্দিন এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলামের সমন্বয় একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি ৩টি কাজ করে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিরোধী দলের যেকোন কর্মসূচীতে কঠোর নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারদলীয় কর্মসূচীর চেয়েও অধিক নিরাপত্তা দেয়ার সরকারী নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেকোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি এড়াতেই এমন নির্দেশ জারি করা হয়েছে। নিজ দলীয় কর্মসূচীতে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে লাশ ফেলে যাতে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপানোর পরিকল্পনা সফল না হয় এ জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন নির্দেশ জারি করা হয়েছে বলে এক উর্ধতন গোয়েন্দা জানিয়েছেন। শুধু কর্মসূচী নয়, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাড়তি নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে সরকারের একটি বিশেষ কার্যালয় থেকে।