Banner Advertiser

Sunday, December 23, 2012

[mukto-mona] Fw: হ্যাকিংয়ের অপরাধে ইংল্যান্ডে সম্পাদক সাংবাদিক জেল খেটেছেন, বাংলাদেশে কেন নয়?


----- Forwarded Message -----
From: SyedAslam <syed.aslam3@gmail.com>
To: Khobor <khabor@yahoogroups.com>; notun Bangladesh <notun_bangladesh@yahoogroups.com>; chottala@yahoogroups.com
Sent: Sunday, December 23, 2012 1:26 PM
Subject: হ্যাকিংয়ের অপরাধে ইংল্যান্ডে সম্পাদক সাংবাদিক জেল খেটেছেন, বাংলাদেশে কেন নয়?


সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১২, ১০ পৌষ ১৪১৯
হ্যাকিংয়ের অপরাধে ইংল্যান্ডে সম্পাদক সাংবাদিক জেল খেটেছেন, বাংলাদেশে কেন নয়?
মহিউদ্দিন আহমদ
আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর সদ্য পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সঙ্গে ব্রাসেলসে বসবাসরত আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাগরিক আহমেদ জিয়াউদ্দিনের 'স্কাইপি' এবং ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগকে একটি বড় ইস্যু বানিয়ে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার কাজ প্রলম্বিত করার একটি অপচেষ্টা, অপতৎপরতা, দেশ-বিদেশের অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিএনপির দলীয় পত্রিকা 'আমার দেশ' এই কথোপকথনের কয়েক কিস্তি ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে; আরও কয়েক কিস্তি হয়ত তারা প্রকাশ করত; কিন্তু আদালতের নির্দেশে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ইতোমধ্যে পত্রিকাটির সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান নিজেকে স্বেচ্ছায় 'আমার দেশ' অফিসে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আর দেশ দুনিয়ার কাছে 'শহীদ' সম্পাদক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার অপচেষ্টাও চালাচ্ছেন।
বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের জোটভুক্ত অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও 'আমার দেশ' তার এই সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং পত্রিকাটির প্রকাশক হাসমত আলীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে। তাদের দাবি এই কথোপকথন প্রকাশ করে এই পত্রিকা 'আমার দেশ' এবং তার সম্পাদক এবং প্রকাশক কোন অপরাধ করেননি। তারা মাত্র মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করেছেন।
কিন্তু অতি সম্প্রতি ব্রিটেনের মতো দেশেও এই একই অপরাধের কারণে সম্পাদক সাংবাদিক জেল খেটেছেন, কয়েকজনের বিচার এখনও চলছে। এবং অপরাধী পত্রিকাটিকে পত্রিকাটির মালিক বন্ধও করে দিয়েছেন। মাত্র গত দেড় বছরের এই ঘটনাগুলো সারা দুনিয়াতেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, এখনও সেই ঝড় বইছে। কিন্তু শুধু এই এক বাংলাদেশের গণমাধ্যমেই সাড়া জাগানো এই খবরগুলোকে প্রায় সম্পূর্ণভাবেই 'ব্ল্যাকআউট' করা হয়েছে। একমাত্র ইংরেজী দৈনিক 'ডেইলী স্টার'-এ এই খবরগুলোর একটু হাল্কা উল্লেখ দেখেছি। দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলো কি কারণে এই খবরগুলোকে 'সাপ্রেস' করল তার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না। 
কোন্টি খবর কোন্টি খবর নয় এই নিউজসেন্স আমাদের সম্পাদক, বার্তা সম্পাদকদের মধ্যে দিন দিন লোপ পাচ্ছে বলেই মনে হয়। 
খবরের নামে বড় বড় পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলোতেও আবর্জনা দেখতে পাই। এক ঢাকা শহরেই আমাদের আছে ২১২টি দৈনিক পত্রিকা, আর দেশে আছে ব্যক্তি মালিকানায় ২৬টি টিভি চ্যানেল। সুতরাং তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে পত্রিকার পৃষ্ঠা ভরানোর জন্য- আর্বজনাকেও খবর হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। মাত্র তিন চারটি বাদে বাকি টিভি চ্যানেলগুলো-আর্থিক সঙ্কটে পড়ে বিজ্ঞাপন 'সন্ত্রাস' চালাচ্ছে। এক টিভি চ্যানেল মালিক, জাতীয়ভাবে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত, মাত্র দুই মাস আগে রূপসী বাংলা হোটেলে আমাকে বলেছেন, তারা পাঁচ শ' টাকা পেলেও বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকেন।' টিকে থাকার জন্যই তারা এমন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

॥ দুই ॥
হ্যাকিংয়ের অপরাধে ইংল্যাণ্ডে সম্প্রতি কি ঘটেছে এখন তার একটু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। মিলি ডাউলার (গরষষু উড়ষিবৎ) নামটি আমাদের আজকের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনাটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। দয়া করে নামটি মুখস্থ করুন। ২০০২ সালের মার্চ মাসে ১৩ বছর বয়সী এই কিশোরী মেয়েটি স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে খুন হয়। সারা যুক্তরাজ্যবাসী এই কিশোরী মিলি ডাউলারের মৃত্যুতে প্রত্যাশিতভাবেই এবং প্রবলভাবেই বিক্ষুব্ধ হয়। তার এই মৃত্যুকে নিয়ে অনেক ধরনের খবর প্রকাশিত হতে থাকে। এসব কিছুই অপ্রত্যাশিত, অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু গত বছর ২০১১- এর ৫ জুলাই প্রভাবশালী লিবারেল দৈনিক 'গার্ডিয়ান' পত্রিকায় এই মেয়েটির ওপর প্রকাশিত এক রিপোর্ট 'সুনামি' সৃষ্টি করল সারা যুক্তরাজ্যে তো বটেই, এই সুনামির আছাড় গিয়ে পড়ল দুনিয়ায় প্রায় সকল দেশে। দৈনিক 'গার্ডিয়ান' এই রিপোর্টে জানাল যে, মিলি ডাউলারের হত্যার খবর সংগ্রহের জন্য 'নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড' নামের ইংরেজী সাপ্তাহিক পত্রিকাটির সাংবাদিকরা মেয়েটির মৃত্যুর পর তার মোবাইল টেলিফোন হ্যাক করেছিল। এই 'হ্যাকিং'-এ প্রাপ্ত খবর প্রকাশে তখন ব্রিটেনের মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছিল, মিলি ডাউলারের বাবা মা ভাবতে থাকেন, ভাবতে থাকে ব্রিটিশ মানুষজনও যে, মেয়েটি বেঁচে আছে। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসে যে মেয়েটিকে আসলে মেরে ফেলা হয়েছে, মেয়েটি আর বেঁচে নেই। কিন্তু ঐ দেশের মানুষজন তখনও জানে না যে 'নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড' পত্রিকাটি 'হ্যাকিং' করে বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার করেছে। তারা তা জানল প্রায় ৯ বছর পর 'গার্ডিয়ান' পত্রিকার রিপোর্ট পড়েই গত বছরের মার্চ মাসে। আর প্রতিক্রিয়াটি হলো 'সুনামি' যেমন একটু আগেই বলেছি। 'নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড' এর মালিক ছিলেন রুপার্ট মারডক (জঁঢ়বৎঃ গঁৎফড়পয), নামের মিডিয়া মোঘল। জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ান এখন মার্কিন নাগরিক এই রুপার্ট মারডকের দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে কয়েক শ' দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকা আছে; আছে রেডিও, টিভি চ্যানেলও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কট্টর ডানপন্থী, ইসলাম মুসলমানবিরোধী, ফক্স টিভি 'চ্যানেলটি'ও তার। ৮০ বছর বয়সী এই রুপার্ট মারডক শুধু সংবাদ মাধ্যমেরই ব্যবসা করেন। আর কোন ব্যবসায়ে তার আগ্রহ নেই। বিভিন্ন দেশে তার এসব গণমাধ্যমে বোধ হয় ৫০ হাজার সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন।
দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত 'হ্যাকিং' এর রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট 'সুনামির মোকাবেলায় তিনি ১৬৮ বছরের পুরনো তার এই 'নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড' সাপ্তাহিক পত্রিকাটি বন্ধই করেদিলেন; 'গার্ডিয়ান'এ প্রকাশিত রিপোর্টের মাত্র দু'দিনের মাথায় ২০১১- এর ৭ জুলাই। (আমার ল-ন প্রবাসী বড় মেয়ে অরুর সাহায্যে 'নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড'-এর ৬৮ পৃষ্ঠার শেষ কপিটি জোগাড় করেছি তখনই, এটি এখন আমার সংগ্রহে আছে।)
'নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড' বন্ধ করেছিলেন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রুপার্ট মারডক। কিন্তু তখনও 'সুনামির' আরও অনেক কিছু বাকি। জঘন্য একটি অপরাধ করেছেন তার সাংবাদিক-সম্পাদকরা একটি খুন হওয়া কিশোরী মেয়ের টেলিফোন 'হ্যাকিং' করে। রুপার্ট মারডক তার পত্রিকা বন্ধ করে বাঁচতে চাইলেন। কিন্তু অপরাধ তাঁকেও ধাওয়া করতে থাকল। মালিক হিসেবে আপনি কি এসব অপরাধের কথা জানতেন না? জেনে থাকলে প্রতিকারমূলক আপনি কি করেছেন; আর যদি না জেনে থাকেন, তাহলে পত্রিকায় মালিক হওয়ার, মালিক থাকার যোগ্যতাটি কি আপনার আছে? 
ব্রিটিশ সাংবাদিকতার ধরন প্রকৃতি নিয়েও বড় বড় প্রশ্ন উঠে এল আলোচনা-সমালোচনায়। আরও জানা গেল তখন, সাংবাদিকদের কেউ কেউ পুলিশকে ঘুষ দিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করে থাকে। সাংবাদিকরা রাজনীতিবিদদেরও খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে, এমন তো চলতে পারে না, দাবি জোরালো হতে থাকল ব্রিটেনে। জনমতকে সম্মান জানিয়ে ব্রিটিশ প্রেসের 'কালচার, প্র্যাকটিসেস এ্যান্ড ইথিকস' খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন-ব্রিটিশ 'হাউস অব কমনস'-এ ২০১১ সালের ১৩ জুলাই। দয়া করে আবার লক্ষ্য করুন, তারিখগুলো, ২০১১- এর ৫ জুলাই দৈনিক 'গার্ডিয়ান' উন্মোচন করে সাপ্তাহিক 'নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড' এর অপসাংবাদিকতা অবৈধ কর্মকা-; ৭ জুলাই রুপার্ট মারডক ঘোষণা দেন তার পত্রিকা বন্ধের, আর ১৩ জুলাই গঠিত হয় তদন্ত কমিশন। অস্বাভাবিক দ্রুততায় ঘটতে থাকে একটির পর একটি ঘটনা। আরও লক্ষ্য করুন, একটি পত্রিকার অবৈধ 'হ্যাকিং' উন্মোচন করেছে আর একটি পত্রিকা।

॥ তিন ॥ 
লর্ড জাস্টিস স্যার ব্রায়ান লেভেসন (Lord Justice Sir Brian Leveson) নামের এক সিনিয়র ব্রিটিশ বিচারকের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশন সারাদুনিয়াতে ইতোমধ্যে 'লেভেসন কমিশন' নামে খ্যাতি এবং পরিচিতি পেয়েছে। গত ২৯ নবেম্বর আমাদের বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাস্টিস লেভেসন এক প্রেস কনফারেন্সে তাঁর তদন্ত কমিশনের রিপোর্টটি প্রকাশ করেন। কমিশনের রিপোর্টটির গুরুত্ব বিবেচনা করে বিবিসি টিভি সরাসরি সম্প্রচার করে জাস্টিস লেভেসনের এই সংবাদ সম্মেলন। তবে তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তিনি সাংবাদিকদের কোন প্রশ্ন নেবেন না, পরেও কোথাও কোন আলোচনায় অংশ নেবেন না। কিন্তু তাই বলে পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল এবং 'হাউস অব কমনস'-এ আলোচনা-সমালোচনার এতটুকু ভাটা পড়েনি।
লর্ড জাস্টিস লেভেসনের এই রিপোর্টের সাইজ ১৯৮৭ পৃষ্ঠা। তার এই কমিশনের সামনে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, সাবেক দুই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউন। অবশ্যই সাক্ষ্য দিয়েছেন রুপার্ট মারডক এবং তার ছেলে জেমস মারডক। জেমস মারডকও তার বাবার মিডিয়া সাম্রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন এবং এখনও আছেন।
বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় বড়ই বিপদে পড়েছিলেন। 'নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড'-এর এক সাবেক সম্পাদক, এন্ডি কুলসন, ডেভিড ক্যামেরনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট অফিসে গুরুত্বপূর্ণ এক দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এসব লোক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কাজ করে কিভাবে, প্রবলভাবেই প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে। তিনচার ভল্যুমে প্রকাশিত এই রিপোর্টে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, 'নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড' এর মালিক রুপার্ট মারডকসহ আরও যারা কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দিয়েছেন, এবং অন্য যারা তাদের মতামত মন্তব্য সুপারিশ কমিশনকে বিভিন্নভাবে পাঠিয়েছেন, তার সবই আছে এই রিপোর্টটিতে। তবে সকলের পক্ষে দুই হাজার হাজার পৃষ্ঠার রিপোর্ট পড়া তো সম্ভব নয়, তাই ২৯ নবেম্বর একই দিন প্রকাশিত হয়েছে ৪৮ পৃষ্ঠার একটি 'এক্সিকিউটিভ সামারি' এই সামারিটির শিরোনাম হচ্ছে "অঘ ঊঘছটওজণ ওঘঞঙ ঞঐঊ ঈটখঞটজঊ, চজঅঈঞওঈঊঝ অঘউ ঊঞঐওঈঝ ঙঋ ঞঐঊ চজঊঝঝ " যাদের ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা আছে, তারা লর্ড জাস্টিস লেভেসন, লেভেসন কমিশন রিপোর্ট, নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড' বা মিলি ডাউলার এই নামগুলোর যে কোন একটি টাইপ করে 'গুগল'এ ক্লিক করলেই শত শত ওয়েবসাইট পেয়ে যাবেন; আর দেখতে এবং পড়তে পারবেন 'হ্যাকিং' উদ্ভূত কেলেঙ্কারির পুরো বর্ণনা, প্রতিক্রিয়া আলোচনা-সমালোচনা এবং ভবিষ্যত করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ।
লর্ড জাস্টিস লেভেসন বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোনভাবেই খর্ব করা যাবে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যে কোন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য, ব্রিটিশ ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু তাই বলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নামে যা চলছে, তাও মেনে নেয়া যায় না। ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের গোপনীয়তায় প্রায়ই হামলা করছে গণমাধ্যমের কিছু সাংবাদিক, আইন-কানুন নিয়ম-নীতি, ন্যায় অন্যায়বোধের তোয়াক্কা না করেই। লর্ড জাস্টিস লেভেসন তার রিপোর্টে বলেছেন, পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় ও উদ্যোগে প্রেস কমপ্লেইন্টস কমিশন" (আমাদের প্রেস কাউসিলের মতোই) করে কাজ হচ্ছে না। কোন কোন পত্রিকা এই প্রেস কমপ্লেইন্টস কমিশনের সিদ্ধান্তকেও তোয়াক্কা করে না। তাদের কাছে পত্রিকার কাটতি কিভাবে বাড়ানো যাবে, তাই মুখ্য বিষয়; পত্রিকাও তো একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সুতরাং পত্রিকার মালিকের লাভ কিভাবে বাড়ানো যায়, সেই প্রতিযোগিতায় কিছু সংবাদপত্র বেআইনী, অবৈধ পন্থাও গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও থাকবে, থাকবে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীলতা এবং মানুষজনের গোপনীয়তার পবিত্রতাও।

॥ চার ॥
আমার অনেক লেখায় এবং 'অনেক আলোচনা অনুষ্ঠানে ('টক্্ শো'তে নয়) আমি দৃঢ়ভাবেই বলে আসছি, আমাদের দেশে যা কিছু মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র আছে, তার পেছনে আমাদের গণমাধ্যমের নন্দিত ভূমিকাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, তারিফ করতে হবে; আমাদের জাতীয় সংসদের চাইতে আমাদের জাতীয় প্রেসক্লাব অনেক বেশি কার্যকর। জাতীয় প্রেসক্লাব অর্থে আমি সাংবাদিক সমাজকেই বুঝিয়ে থাকি। তবে অন্য রকমের উদাহরণও আছে এখানে। আমাদের এই জাতীয় প্রেসক্লাব আমাদের স্বাধীনতার কবি, কবি শামসুর রাহমানকে সদস্য পদ দেয়নি, কিন্তু সদস্যপদ দিয়েছে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত, (এখন বিচারাধীন ব্যক্তিকে এবং অন্তত একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে। এই তথ্যগুলো কি বিশ্বাসযোগ্য?)
কিন্তু এই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে যে অনাচার চলছে, 'দৈনিক আমার দেশ' এর কথোপকথন প্রকাশ, তার সর্বশেষ উদাহরণ তার তদন্তেও তো একটি কমিশন গঠন করা দরকার। সেই এরশাদ জমানার প্রথমদিকে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে যে প্রেস কমিশন গঠিত হয়, তারপর তো ৩০ বছর চলে গেল। ইতোমধ্যে আমাদের এই গণমাধ্যম জগতে কত পরিবর্তন, কত বিপ্লব ঘটে গেল।
রবিবার সকালের খবরে দেখছি, বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম বলেছেন, 'আমার দেশ' পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার না করলে তারা গণঅভ্যুত্থান ঘটাবেন! তো এই মাহমুদুর রহমানের পক্ষে আমাদের এই ঢাকা শহরের ২১২টি দৈনিক পত্রিকার কয়টি পত্রিকা সম্পাদকীয় লিখেছে? তিনি কি প্রথমে সম্পাদক, নাকি প্রথমে বড় এক রাজনীতিবিদ? তার পক্ষে কয়জন সম্পাদক, সাংবাদিক বিবৃতি দিয়েছেন? বোধ হয় গত বছর মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ওব্লেক যখন বাংলাদেশ সফরে আসেন তখন ইংরেজী দৈনিক ডেইলী স্টার অফিসে সিভিল সোসাইটির সঙ্গে তার মতবিনিময়ের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমান অংশগ্রহণ করতে রাজি হননি। কারণ ডেইলী স্টার এবং প্রথম আলো পত্রিকা দু'টি এবং তাদের সম্পাদক সাংবাদিকদের মাহমুদুর রহমানের দারুণ অপছন্দ। মাহমুদুর রহমান যেমন কিছু কিছু সম্পাদক-সাংবাদিককে পছন্দ করেন না, অনেক বেশি সংখ্যক সম্পাদক-সাংবাদিক তাকেও অপছন্দ করেন। তারপরও তার জন্য গণঅভ্যুত্থান!! বিএনপির একটি বড় অংশও তো মাহমুদুর রহমানকে পচ্ছন্দ করে না। বেগম খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে তাঁর এক উপদেষ্টা সাবিউদ্দিন আহমদ ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার পক্ষে বিবিসি বাংলায় কথা বলেছিলেন। সাবিউদ্দিনকে আক্রমণ করে এই মাহমুদুর রহমান তখন বড় এক মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলেন আমার দেশ পত্রিকায়। 
আরও বড় প্রশ্ন। এই দেশে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাই যদি না থাকবে, এতগুলো দৈনিক এই ঢাকা শহরে কেন? এতগুলো প্রাইভেট টিভি চ্যানেলই বা কেন? পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলের মালিক হওয়ার জন্য এত দরখাস্ত কেন? দরখাস্ত প্রত্যাখ্যাত হলে এত ক্ষোভ? এত আক্রোশ কেন? 

॥ পাঁচ ॥
'হ্যাকিং'-এর অপরাধে ব্রিটেনে সম্পাদক-সাংবাদিকরা জেল খেটেছেন। তাদের মধ্যে আছেন 'নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড'-এর দুই সাবেক সম্পাদক রেবেকা ব্রুকস এবং এন্ডি কুলসন। জেল খেটেছেন আরও কয়েকজন সাংবাদিক। একই অপরাধে বিচার চলছে আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশেও তো হ্যাকিং একটি অপরাধ। বিচারে অভিযুক্তরা অপরাধী প্রমাণিত হলে তাদেরও আইন বিধি মোতাবেক শাস্তি ভোগ করতে হবে, তাইত স্বাভাবিক। সম্পাদক-সাংবাদিক বলে তো আইনে কোন বিশেষ ব্যবস্থা বা মর্যাদা নেই। ব্রিটেনে নেই, দুনিয়ার কোথাও নেই।
'ম্যাটার অব পাবলিক ইন্টারেস্ট' নামের একটি কথার খুবই অপব্যবহার হচ্ছে এই দেশে। 'জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়' এই উছিলায় বিচারপতি নিজামুল হক এবং আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কথোপকথন প্রকাশ করা হয়েছে। 'আমার দেশ' এর কাছে যা জনগুরুত্বপূর্ণ, এই দেশের বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে তা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং বিলম্বিত করার একটি অপপ্রয়াস মাত্র। আর জনগুরুত্ব বিষয়টি প্রচলিত আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা, তাও তো দেখতে হবে। 
এই প্রসঙ্গে ৩৩ বছর আগের বিশ্ব কাঁপানো একটি ঘটনার প্রতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে উছিলা হিসেবে অপব্যবহারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। ১৯৭৯ সালে তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে হামলা করে ৫২ জন মার্কিন কূটনীতিবিদকে ৪৪৪ দিন বন্দী করে রাখে আয়াতুল্লাহ খোমিনীর 'রেভ্যুলুশনারি গার্ড।' কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন পত্র-পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল এই বন্দী কূটনীতিবিদদের একজনেরও নাম প্রকাশ করেনি, তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে। প্রকাশ করেনি, দুনিয়ার আর কোন গণমাধ্যমও। বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই ছিল; কিন্তু অনেক বেশি, অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই কূটনীতিবিদদের নিরাপত্তা। সুতরাং এখানে দুনিয়ার গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ। 
বাংলাদেশে জনগুরুত্বপূর্ণ দোহাই দিয়ে প্রতিপক্ষকে হামলা করার জন্য, প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার জন্য যা কিছু ইচ্ছা, আমাদের কোন কোন সম্পাদক ছাপাবেন! 'নো নেভার।' এই দেশের মানুষের কাছে আমাদের প্রচলিত আইন, বিধিবিধান মোতাবেক দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 
এই লেখাটি যখন শেষ করে এনেছি, তখন 'আলজাজিরা টিভিতে খবর শুনলাম, পোপ বিনেডিক্টের এক 'বাট্্লার'-পাওলো গ্যাব্রিয়েলকে পোপ ক্ষমা করে দিয়েছেন। এই বাটলার পোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে পোপের কিছু গোপনীয় কাগজপত্র ফাঁস করে দেয়ার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে গত অক্টোবরে ১৮ মাসের কারাদ-ে দ-িত হয়। সামনের ক্রিসমাসের কথা মনে রেখে পোপ তার বাকি কারাভোগ মাফ করে দেন গতকাল। তবে তাকে কিছুটা হলেও শাস্তিভোগ করতে হয়েছে। 
তারপর সকলেই তো পোপ নয়। 

লেখক : সাবেক সচিব, কলাম লেখক

শিউলিতলা, উত্তরা, রবিবার ২৩ ডিসেম্বর ২০১২।
Mohiuddinahmed1944@yahoo.com