সমকাল ডেস্ক
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে রায়ে খুশি তার এলাকা ফরিদপুর জেলার মানুষ। এ নরঘাতক পশুকে গ্রেফতার করে দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবি শহীদ পরিবারের সদস্যদের। নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর এবং বোয়ালমারী ও নগরকান্দা প্রতিনিধির পাঠানো খবর :
যে কয়টি অপরাধে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো সালথা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন দাসকে হত্যা। রায়ের খবর শুনে চিত্তরঞ্জন দাসের স্ত্রী জ্যোৎস্না রানী দাস বলেন, 'আমার স্বামীর হত্যাকারীর ফাঁসি দেখে যেতে পারলে আমি মরেও শান্তি পাব।'
চিত্তরঞ্জন দাসের ছেলে গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, 'আবুল কালাম আযাদ নিজ হাতে গুলি করে আমার বাবাকে হত্যা করেছে। আমি এতিম হয়ে জন্ম নিয়েছি।' ৪১ বছর পর বাবার হত্যার বিচার পেয়ে আনন্দের সঙ্গে অশ্রুও ঝরছিল গোপালের চোখ থেকে। তিনি বলেন, 'সরকারের কাছে দাবি, পলাতক আবুল কালাম আযাদকে ধরে এনে তার রায় কার্যকর করা হোক। এতে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।'
১৯৭১ সালের ৩ জুন আযাদের নেতৃত্বে ১০-১২ রাজাকার সদস্য সংখ্যালঘু এলাকায় লুটপাট চালিয়ে চিত্তরঞ্জন দাসকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।
একাত্তরে আযাদের হাতে নিহত সালথা উপজেলার পুরুরা গ্রামের মাধবচন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে ভক্তরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, 'প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় পেয়েছি। এখন সরকারের কাছে অবিলম্বে রায় বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।'
১৯৭১ সালের ১৬ মে আযাদ ১০-১২ রাজাকার সদস্যকে নিয়ে পুরুরা নামপাড়া গ্রামে যান এবং মাধবচন্দ্র বিশ্বাসকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন।
ফরিদপুরের একজন সাংবাদিক হিসেবে দৈনিক জনকণ্ঠে স্বাধীনতার ৩০ বছর পর ২০০১ সালে বাচ্চু রাজাকারকে জনসমক্ষে নিয়ে আসেন প্রবীর সিকদার। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ছেলে প্রবীর '৭১-এ ছিলেন মাত্র ৯ বছরের শিশু। বাচ্চু রাজাকার ও তার নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতেই তিনি হারিয়েছেন দাদু, বাবা ও কাকাদের। রায় ঘোষণার পর সাহসী সাংবাদিক প্রবীর সিকদার বলেন, এই রাজাকারের যে অপরাধ, তাতে একবার নয়, তিনশ'বার ফাঁসি হওয়া উচিত।
২০০১ সালের মার্চে রাজাকারের স্বরূপ উন্মোচন করে যখন ধারাবাহিক প্রতিবেদন করছিলেন, তখনই প্রবীর সিকদারের ওপর নেমে আসে বাচ্চু রাজাকারের খৰ। দিনটির কথা স্মরণ করে প্রবীর
সিকদার বলেন, 'সেদিন হাইওয়েতে একটি ডাকাতির খবর কভার করে মোটরবাইকে করে ফরিদপুর শহরে ফিরছিলাম। তখন হঠাৎই পথের মাঝে আমার ওপর প্রথম বোমা হামলা, এরপর এলোপাতাড়ি কোপানো চলতে থাকে। সবশেষে গুলি করে রেখে যায়। ওরা আমার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে আমাকে ফেলে যায়।'
মারা যাননি প্রবীর সিকদার। তবে একটি পা হারিয়ে এখন ক্র্যাচে ভর করে হাঁটেন। স্বাভাবিক কাজ করতে পারেন না একটি হাত দিয়ে। আর সারা শরীরে এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন স্পিল্গন্টারের যন্ত্রণা।
বাচ্চু রাজাকার ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কলারন গ্রামের সুধাংশ কুমার রায়কে গুলি করে হত্যা করেন। গুলিতে সুধাংশু রায়ের ছেলে মনিমোহন রায়ের একটি পা নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বর্তমানে ভারতে বসবাস করছেন। ট্রাইব্যুনালের আইনজীবীরা ভারতে গিয়ে তার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
রায়ের পর সুধাংশ কুমারের দৌহিত্র গৌতম কুমার বলেন, 'এ রকম একটি রায়ের জন্য আমরা ৪০ বছর অপেক্ষা করেছি। ৪০ বছর পর সুষ্ঠু বিচার পেয়ে আমরা খুশি।' সরকারকে এ জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি। হাসামদিয়া গ্রামের ডা. সুশীল পোদ্দার বলেন, 'আমরা অপেক্ষায় ছিলাম, একদিন না একদিন রাজাকারদের বিচার এ দেশের মাটিতে হবে। ৪০ বছর পর হলেও আমাদের সে আশা পূরণ হয়েছে। আশা করি, সব রাজাকারের বিচার হবে।' ডা. সুশীল পোদ্দারের বাবা সুরেশ পোদ্দারসহ পাঁচজন বাচ্চু রাজাকারের হাতে নিহত হন। শ্রীনগর গ্রামের শ্যাম সাহা বাচ্চু রাজাকার ও তার দোসরদের হাতে নিহত হন। শ্যাম সাহার ছেলে সত্য রঞ্জন সাহা বলেন, বাচ্চু রাজাকার ও তার দোসররা এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর অমানবিক জুলুম-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। তাকেসহ তার দোসরদেরও শাস্তি হতে হবে।
বাচ্চু রাজাকারের নিজ গ্রাম নগরকান্দা উপজেলার খারদিয়ার নির্যাতিত সুভাষ দত্ত বলেন, 'রায় বাস্তবায়ন হলে আমরা খুশি হবো।'
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সালথা উপজেলার ডেপুটি কমান্ডার ও বাচ্চু রাজাকারের সহপাঠী শাহাদাত হোসেন বলেন, ৪১ বছর ধরে যে বেদনা-কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছিলাম, অবশেষে তার ফাঁসির রায় হওয়ায় এবার কিছুটা শান্তি পাচ্ছি। এ নরপশুকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে দেখে যেতে পারলে মারা গেলেও আমার আর কোনো দুঃখ নেই।'
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে রায়ে খুশি তার এলাকা ফরিদপুর জেলার মানুষ। এ নরঘাতক পশুকে গ্রেফতার করে দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবি শহীদ পরিবারের সদস্যদের। নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর এবং বোয়ালমারী ও নগরকান্দা প্রতিনিধির পাঠানো খবর :
যে কয়টি অপরাধে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো সালথা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন দাসকে হত্যা। রায়ের খবর শুনে চিত্তরঞ্জন দাসের স্ত্রী জ্যোৎস্না রানী দাস বলেন, 'আমার স্বামীর হত্যাকারীর ফাঁসি দেখে যেতে পারলে আমি মরেও শান্তি পাব।'
চিত্তরঞ্জন দাসের ছেলে গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, 'আবুল কালাম আযাদ নিজ হাতে গুলি করে আমার বাবাকে হত্যা করেছে। আমি এতিম হয়ে জন্ম নিয়েছি।' ৪১ বছর পর বাবার হত্যার বিচার পেয়ে আনন্দের সঙ্গে অশ্রুও ঝরছিল গোপালের চোখ থেকে। তিনি বলেন, 'সরকারের কাছে দাবি, পলাতক আবুল কালাম আযাদকে ধরে এনে তার রায় কার্যকর করা হোক। এতে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।'
১৯৭১ সালের ৩ জুন আযাদের নেতৃত্বে ১০-১২ রাজাকার সদস্য সংখ্যালঘু এলাকায় লুটপাট চালিয়ে চিত্তরঞ্জন দাসকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।
একাত্তরে আযাদের হাতে নিহত সালথা উপজেলার পুরুরা গ্রামের মাধবচন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে ভক্তরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, 'প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় পেয়েছি। এখন সরকারের কাছে অবিলম্বে রায় বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।'
১৯৭১ সালের ১৬ মে আযাদ ১০-১২ রাজাকার সদস্যকে নিয়ে পুরুরা নামপাড়া গ্রামে যান এবং মাধবচন্দ্র বিশ্বাসকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন।
ফরিদপুরের একজন সাংবাদিক হিসেবে দৈনিক জনকণ্ঠে স্বাধীনতার ৩০ বছর পর ২০০১ সালে বাচ্চু রাজাকারকে জনসমক্ষে নিয়ে আসেন প্রবীর সিকদার। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ছেলে প্রবীর '৭১-এ ছিলেন মাত্র ৯ বছরের শিশু। বাচ্চু রাজাকার ও তার নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতেই তিনি হারিয়েছেন দাদু, বাবা ও কাকাদের। রায় ঘোষণার পর সাহসী সাংবাদিক প্রবীর সিকদার বলেন, এই রাজাকারের যে অপরাধ, তাতে একবার নয়, তিনশ'বার ফাঁসি হওয়া উচিত।
২০০১ সালের মার্চে রাজাকারের স্বরূপ উন্মোচন করে যখন ধারাবাহিক প্রতিবেদন করছিলেন, তখনই প্রবীর সিকদারের ওপর নেমে আসে বাচ্চু রাজাকারের খৰ। দিনটির কথা স্মরণ করে প্রবীর
সিকদার বলেন, 'সেদিন হাইওয়েতে একটি ডাকাতির খবর কভার করে মোটরবাইকে করে ফরিদপুর শহরে ফিরছিলাম। তখন হঠাৎই পথের মাঝে আমার ওপর প্রথম বোমা হামলা, এরপর এলোপাতাড়ি কোপানো চলতে থাকে। সবশেষে গুলি করে রেখে যায়। ওরা আমার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে আমাকে ফেলে যায়।'
মারা যাননি প্রবীর সিকদার। তবে একটি পা হারিয়ে এখন ক্র্যাচে ভর করে হাঁটেন। স্বাভাবিক কাজ করতে পারেন না একটি হাত দিয়ে। আর সারা শরীরে এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন স্পিল্গন্টারের যন্ত্রণা।
বাচ্চু রাজাকার ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কলারন গ্রামের সুধাংশ কুমার রায়কে গুলি করে হত্যা করেন। গুলিতে সুধাংশু রায়ের ছেলে মনিমোহন রায়ের একটি পা নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বর্তমানে ভারতে বসবাস করছেন। ট্রাইব্যুনালের আইনজীবীরা ভারতে গিয়ে তার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
রায়ের পর সুধাংশ কুমারের দৌহিত্র গৌতম কুমার বলেন, 'এ রকম একটি রায়ের জন্য আমরা ৪০ বছর অপেক্ষা করেছি। ৪০ বছর পর সুষ্ঠু বিচার পেয়ে আমরা খুশি।' সরকারকে এ জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি। হাসামদিয়া গ্রামের ডা. সুশীল পোদ্দার বলেন, 'আমরা অপেক্ষায় ছিলাম, একদিন না একদিন রাজাকারদের বিচার এ দেশের মাটিতে হবে। ৪০ বছর পর হলেও আমাদের সে আশা পূরণ হয়েছে। আশা করি, সব রাজাকারের বিচার হবে।' ডা. সুশীল পোদ্দারের বাবা সুরেশ পোদ্দারসহ পাঁচজন বাচ্চু রাজাকারের হাতে নিহত হন। শ্রীনগর গ্রামের শ্যাম সাহা বাচ্চু রাজাকার ও তার দোসরদের হাতে নিহত হন। শ্যাম সাহার ছেলে সত্য রঞ্জন সাহা বলেন, বাচ্চু রাজাকার ও তার দোসররা এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর অমানবিক জুলুম-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। তাকেসহ তার দোসরদেরও শাস্তি হতে হবে।
বাচ্চু রাজাকারের নিজ গ্রাম নগরকান্দা উপজেলার খারদিয়ার নির্যাতিত সুভাষ দত্ত বলেন, 'রায় বাস্তবায়ন হলে আমরা খুশি হবো।'
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সালথা উপজেলার ডেপুটি কমান্ডার ও বাচ্চু রাজাকারের সহপাঠী শাহাদাত হোসেন বলেন, ৪১ বছর ধরে যে বেদনা-কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছিলাম, অবশেষে তার ফাঁসির রায় হওয়ায় এবার কিছুটা শান্তি পাচ্ছি। এ নরপশুকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে দেখে যেতে পারলে মারা গেলেও আমার আর কোনো দুঃখ নেই।'
Also Read:
শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী ২০১৩, ১২ মাঘ ১৪১৯
__._,_.___