মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০১৩, ২১ ফাল্গুন ১৪১৯ হিন্দু বাড়িতে আগুন মন্দিরে হামলা ভাংচুর থামেনি জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতা জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করেছে দুষ্কৃতকারীরা। জয়পুরহাটের কড়ই-কাদিপুর গ্রামের দুই হিন্দু বাড়ি পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ এবং পাঁচবিবির ধরঞ্জি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে একটি কালীমন্দির ভাংচুর ও কালীমূর্তির মাথা কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। কক্সবাজারের মহেশখালী ও ফাঁসিয়াখালী হায়দারনাশীতে মন্দির ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। মীরসরাইয়ে হিন্দুপাড়ায় ককটেল বিস্ফোরণে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। বরিশালে মন্দিরে আগুন দেয়ার ঘটনায় আরও দু'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রংপুরের বদরগঞ্জে শহীদ মিনার পদদলিত ও গণজাগরণ মঞ্চ ভাংচুর করেছে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। এছাড়া হিন্দুদের বাড়িতে হামলা, মন্দির ভাংচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও সুনামগঞ্জে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এজেডএম শারজিল হাসান জানান, রবিবার রাত ৩টার পরে যে কোন সময় নতুন আলীডাঙ্গা মহল্লার বট পেকুড়তলা সার্বজনীন পূজা সংঘ মন্দিরে দুষ্কৃতকারীরা অগ্নিসংযোগ করে। এতে মন্দিরের একাংশ পুড়ে গেছে। জয়পুরহাটের কড়ই-কাদিপুর গ্রামের হিন্দুপল্লীতে '৭১-এর ন্যায় আবারও জামায়াত-শিবির রবিবার রাতে ২ হিন্দু বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আগুনে পুড়ে সর্বস্বহারা সুধন বর্মণ ও সন্তোষ বর্মণ পরিবার-পরিজন নিয়ে আহাজারি শুরু করেছে। একই দিনে পাঁচবিবির ধরঞ্জি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরগ্রামে গভীর রাতে একটি কালীমন্দির ভাংচুর ও কালীমূর্তির মাথা কেটে নিয়ে গেছে। জেলাজুড়ে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে সর্বক্ষণিক আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপত্তার অভাবে জয়পুরহাটে ইতোমধ্যেই হিন্দুদের বড় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বারোয়ারি মন্দিরে উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ডাকা একটি সভা বাতিল করা হয়েছে। হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলা বন্ধে ও বৌদ্ধ এবং খ্রীস্টানদের চার্চ ও প্যাগোডার নিরাপত্তার দাবিতে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় হরিবাসর শিব মন্দিরে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম মেম্বার এ্যাডভোকেট নৃন্দ্রেনাথ ম-লের সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সভা করে। প্রতিবাদসভায় জেলায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টানদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় জেলা প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করা হয়। কক্সবাজারের মহেশখালী ও ফাঁসিয়াখালী হায়দারনাশীতে মন্দির ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। সংখ্যালঘু লোকজন রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে নিজ নিজ বাড়িঘর। ঈদগাও এবং মহেশখালীতে সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ও মন্দিরে লুটপাট, ডাকাতি ও লুট করে তা-বলীলা চালিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। রবিবার রাতে মহেশখালীর হোয়ানকের কেরুনতলী মন্দির প্রাঙ্গণে হামলা এবং ২০টি হিন্দু বাড়িতে ভাংচুর লুটপাট করে ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। হোয়ানকের টাইম বাজার হিন্দুপাড়ায়ও ১৫টি বাড়ি, দোকান ও মন্দিরে হামলা করে ব্যাপক লুটপাট চালায় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার বাহিনী। এছাড়া পদ্মা পুকুরপাড় মন্দির, নাগারা বাজারের মন্দির, কালমারছড়া বড়ুয়াপাড়ার মন্দির ও হিন্দু মন্দির সমূহে হামলা ও লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা। হরতালের দ্বিতীয় দিন সকালে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা রংপুরের বদরগঞ্জে শহীদ মিনার পদদলিত করে সেখানকার গণজাগরণ মঞ্চ ভাংচুর করেছে। সকাল সাড়ে ৮টায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিছিল নিয়ে নারায়ে তকবির ধ্বনি তুলে সেখানে হামলা চালায়। তারা বেদিতে থাকা জাগরণ মঞ্চের টেবিল, কয়েকটি ব্যানারসহ আসবাবপত্র ভাংচুর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে উপস্থিত থাকলেও তারা মিছিলকারীদের প্রতিরোধ করেননি। অভিযোগ উঠেছে, এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কারমাইকেল কলেজে অধ্যয়নকালে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যে কারণে তিনি ব্যবস্থা নেননি। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পৌর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করে। চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে হিন্দুপাড়ায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রবিবার রাত আনুমানিক ১টার দিকে উপজেলা হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুরো হিন্দুপাড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ এবং আওয়ামী লীগ অফিসে ভাংচুরের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিকেলে রাজগঞ্জ মাইজবাজারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পিঙ্গলাকাঠী এলাকার বোরাদী গরঙ্গল সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সোমবার সকালে আরও দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলা, মন্দির ভাংচুর, বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ গোপালগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তার দু'ধারে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী এসব কর্মসূচী পালিত হয়। মানববন্ধন চলাকালে পূজা উদ্যাপন পরিষদের জেলা সভাপতি ডা. প্রহল্লাদ কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার গোয়ালী মান্দ্রা গ্রামের মণিপাড়া কালীমন্দিরে আগুন ও ভাংচুরের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। মন্দিরে হামলার ঘটনায় লৌহজং থানায় একটি মামলা হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে স্থানীয় হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মহসীন গাজীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ অনষ্ঠিত হয়। এর আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল গোয়ালী মান্দ্রার মন্দির এলাকাসহ প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গোয়ালী মান্দ্রা বাজারে এসে শেষ হয়। এ সময় কয়েক শ' হিন্দু মহিলাও সমাবেশসহ বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। |
__._,_.___