চার মাসের হরতালে নাশকতা : ১৩শ' গাড়িতে আগুন ভাঙচুর
ট্রেনে হামলা : লাইন উৎপাটন, শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
বাকী বিল্লাহ ও মাহমুদ আকাশ
বিএনপি-জামায়াতের ঘন ঘন হরতাল ও সর্বশেষ ১৮ দলের ৩৬ ঘণ্টার হরতালে সহিংসতায় সারাদেশে গত ৪ মাসে ৩শ'র বেশি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় প্রায় এক হাজার গাড়ি। গত ৫ নভেম্বর থেকে চলতি মাসের গতকাল পর্যন্ত এই তা-ব চালানো হয়েছে। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বাসে অগি্নসংযোগ, ভাঙচুর ছাড়াও কমলাপুর রেলস্টেশন, রাজশাহী রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন প্রায় অর্ধশত স্থানে রেলস্টেশন, সেতু ট্রেনে আগুন ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। রেললাইন উৎপাটন করে। আগুনের তা-ব থেমে নেই। সর্বশেষ গত রোববার দুপুর থেকে গতকাল পর্যন্ত শ্রমিক নেতাদের হিসেবে ৪৯টির বেশি গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে দু'দিনেই। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতে ২৩টি গাড়িতে আগুন লাগিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হিসেবে এইসব তথ্য জানা গেছে। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান আলী সংবাদকে জানান, ৩শ গাড়িতে আগুন লাগালে
গড়ে ক্ষতি ১৫ লাখ টাকা করে হলে মোট ৪৫ কোটি টাকা হয়। আর ভাঙচুর করা প্রতিটি গাড়ির ক্ষতি গড়ে দেড় কোটি টাকা হলে ক্ষতির পরিমাণ ১৫ কোটি টাকা। এছাড়াও ট্রেনের ক্ষতি ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা হবে। সর্বশেষ সিলেট, চট্টগ্রামে কয়েকটি রেলস্টেশনে আগুন লাগিয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, ১৮ দলের হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে জামায়াত শিবিরের ক্যাডারদের সঙ্গে বিএনপি যোগ দিয়ে রাজধানীসহ দেশব্যাপী ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। হরতাল শুরুর আগের দিন থেকে সমর্থকরা তা-ব চালিয়ে এই ভাঙচুর করেছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত বছরের ৫ নভেম্বর থেকে জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা ঝটিকা মিছিলের নামে ব্যাপক ভাঙচুর ও তা-ব শুরু করেছে। পুলিশি বাধার মুখে তারা পুলিশের উপর হামলা ছাড়াও শহরজুড়ে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ব্যাপক তা-ব চালায়। এর মধ্যে নভেম্বর থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিএনপির হরতাল ও মিছিল থেকে অর্ধশত গাড়ি ভাঙচুর ও ২০/২৫টি গাড়িতে অগি্নসংযোগ করা হয়েছে। একই সময় জামায়াত-শিবিরের হরতাল অবরোধে ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন পোড়ানো হয়েছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশব্যাপী হরতাল, অবরোধ, ঝটিকা ভাঙচুরের তা-ব চালাচ্ছে। গত রোববার দুপুরের পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে ব্যাপক যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়েছে। এ সময় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ নিহত হয় ২ জন।
সূত্র আরও জানায়, হরতাল সমর্থক জামায়াত-শিবিরসহ ১৮ দলের ক্যাডাররা দেশব্যাপী রেলস্টেশন ও চলন্ত ট্রেনে ব্যাপক হামলা, লাইন উপড়ে ফেলে এ লাইনে আগুন ধরিয়ে দেয়। কমলাপুর ও রাজশাহীতে স্টেশনে যাত্রীবাহী ট্রেনের বগিতে আগুন লাগিয়েছে। তথ্য মতে, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কমলাপুর, গাজীপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, বগুড়া, গাইবান্ধা, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা, ঝিনাইদাহ, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজারসহ প্রায় অর্ধশত স্থানে ভাঙচুর ,আগুন লাগানো হয়েছে। এইসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকার থানাগুলোতে মামলা দায়ের করা হলে মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
রেলমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হরতালের কারণে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দুটি অঞ্চলে ৫৯টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ নিয়ে গঠিত পূর্বাঞ্চলেই হয়েছে ৫৬টি নাশকতার ঘটনা। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে গঠিত পশ্চিম রেলের দুটি স্টেশন ও তিনটি কোচ পুরোপুরি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। রেলের সর্বশেষ জরিপ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক সাংবাদিকদের জানান, জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী নাশকতার অংশ হিসেবে এই কাজ করছে। রেলওয়ের সম্পদও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। গত কয়েকদিনে নাশকতায় রেলের আট কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৪২ বছরে হরতাল-অবরোধ অনেক হয়েছে। কিন্তু এভাবে একযোগে সারাদেশে রেলের সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা কখনো ঘটেনি।
রেলওয়ে থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, পশ্চিমাঞ্চলে নাশকতা সংখ্যায় কম হলেও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলে গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা ও বগুড়া স্টেশন ভবন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ঢাকা-রাজশাহীর মধ্যে চলাচলকারী সিল্কসিটির তিনটি কোচ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে আগুন দেয়া হয়েছে উপকূল এক্সপ্রেসে। এতে একটি কোচ পুরোপুরি এবং তিনটি কোচ আংশিক পুড়ে গেছে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সূত্র জানায়, পশ্চিমাঞ্চলে ছোটখাটো অনেক নাশকতা করা হয়েছে। তবে সিল্কসিটি, বামনডাঙ্গা স্টেশন ও বগুড়া স্টেশন ভবন পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় সাত কোটি ৪৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে ছয় মাসেরও বেশি সময় লাগবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চলে ১৪টি রেলসেতুতে আগুন দেয়া হয়েছে। ফিস প্লেট উৎপাটন ও রেললাইন বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা ঘটেছে চারটি। স্টেশন ভবন, কোচ, সিস্নপার ও লাইনে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে ৩০টি। ককটেল ও বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে চারটি। গত সোমবার ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে তিনটি কোচে অগি্নসংযোগ এবং একই দিন রাতে চট্টগ্রামের বাড়বকুন্ডে স্টেশন ভবনে আগুন লাগানোসহ ছয় দিনের নাশকতায় ৯৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রেল সূত্র আরও জানায়, শুধু ২৮ ফেব্রুয়ারি পূর্বাঞ্চলে ১০টি নাশকতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে শর্শদী ও ফেনী স্টেশনের মধ্যবর্তী লাইনে রেলের ফিস প্লেট খুলে ফেলায় আন্তঃনগর গোধূলী এক্সপ্রেসের ছয়টি কোচ লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটির গতি কম ছিল বলে যাত্রীরা প্রাণে রক্ষা পায়। ওই দিন বরমচাল ও কুলাউড়া, লাকসাম ও চিতৌষী রোড, শ্রীমঙ্গল ও ভানুগাছ, কুমিরা ও সীতাকুন্ড, ভাটেরাবাজার ও মাইজগাঁও, সোনাইমুড়ী ও নাথেরপেটুয়া, খিলা ও দৌলতগঞ্জ স্টেশনের মধ্যবর্তী রেললাইনে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ও ফাতেমানগর স্টেশনে ট্রেনে বোমা হামলার চেষ্টা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। পূর্বাঞ্চলে ১ মার্চ পাঁচটি নাশকতা হয়েছে। ২ মার্চ আফজালাবাদ ও খাজাঞ্চিগাঁওয়ের মধ্যবর্তী স্টেশনে ফিস প্লেট উৎপাটন করায় বোল্ডারবাহী বিশেষ ট্রেনের ইঞ্জিন ও রেস্টভ্যান লাইনচ্যুত হয়। একই দিন ফেনী ও শর্শদী স্টেশনের মধ্যবর্তী লাইনে বস্তা ফেলে ও সিস্নপারে আগুন লাগানো হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনের ১৪ ও ২৭২ নম্বর সেতুতেও আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। ৩ মার্চ নাজিরহাট ও সরকারহাটের মধ্যবর্তী স্টেশনে সিস্নপার উৎপাটন করা হয়। ৪ মার্চে নাশকতা হয় সবচেয়ে বেশি। ওই দিন নেত্রকোনা ও ঝারিয়াঝাঞ্জাইল স্টেশনের মধ্যবর্তী রেললাইনে আগুন দিয়ে ট্রেন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও বরমচাল স্টেশনের মধ্যবর্তী লাইনে আগুন দেয়া হয়। ৫ মার্চ আখাউড়া ও গঙ্গাসাগর স্টেশনের মধ্যবর্তী দেবপুর স্কুলের পাশে ফিস প্লেট উৎপাটন করে হরতালকারীরা। কুমিরা ও ভাটিয়ারি স্টেশনের মধ্যবর্তী রেললাইন কেটে ফেলা হয়।
জানা গেছে,১৮ দলের হরতাল ,ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের তা-বে দেশজুড়ে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। নিরাপত্তার অভাবে অনেকেই বাসাবাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগুন, ভাঙচুরের ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এইসব মামলায় অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। পলাতকদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
গড়ে ক্ষতি ১৫ লাখ টাকা করে হলে মোট ৪৫ কোটি টাকা হয়। আর ভাঙচুর করা প্রতিটি গাড়ির ক্ষতি গড়ে দেড় কোটি টাকা হলে ক্ষতির পরিমাণ ১৫ কোটি টাকা। এছাড়াও ট্রেনের ক্ষতি ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা হবে। সর্বশেষ সিলেট, চট্টগ্রামে কয়েকটি রেলস্টেশনে আগুন লাগিয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, ১৮ দলের হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে জামায়াত শিবিরের ক্যাডারদের সঙ্গে বিএনপি যোগ দিয়ে রাজধানীসহ দেশব্যাপী ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। হরতাল শুরুর আগের দিন থেকে সমর্থকরা তা-ব চালিয়ে এই ভাঙচুর করেছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত বছরের ৫ নভেম্বর থেকে জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা ঝটিকা মিছিলের নামে ব্যাপক ভাঙচুর ও তা-ব শুরু করেছে। পুলিশি বাধার মুখে তারা পুলিশের উপর হামলা ছাড়াও শহরজুড়ে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ব্যাপক তা-ব চালায়। এর মধ্যে নভেম্বর থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিএনপির হরতাল ও মিছিল থেকে অর্ধশত গাড়ি ভাঙচুর ও ২০/২৫টি গাড়িতে অগি্নসংযোগ করা হয়েছে। একই সময় জামায়াত-শিবিরের হরতাল অবরোধে ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন পোড়ানো হয়েছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশব্যাপী হরতাল, অবরোধ, ঝটিকা ভাঙচুরের তা-ব চালাচ্ছে। গত রোববার দুপুরের পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে ব্যাপক যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়েছে। এ সময় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ নিহত হয় ২ জন।
সূত্র আরও জানায়, হরতাল সমর্থক জামায়াত-শিবিরসহ ১৮ দলের ক্যাডাররা দেশব্যাপী রেলস্টেশন ও চলন্ত ট্রেনে ব্যাপক হামলা, লাইন উপড়ে ফেলে এ লাইনে আগুন ধরিয়ে দেয়। কমলাপুর ও রাজশাহীতে স্টেশনে যাত্রীবাহী ট্রেনের বগিতে আগুন লাগিয়েছে। তথ্য মতে, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কমলাপুর, গাজীপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, বগুড়া, গাইবান্ধা, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা, ঝিনাইদাহ, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজারসহ প্রায় অর্ধশত স্থানে ভাঙচুর ,আগুন লাগানো হয়েছে। এইসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকার থানাগুলোতে মামলা দায়ের করা হলে মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
রেলমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হরতালের কারণে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দুটি অঞ্চলে ৫৯টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ নিয়ে গঠিত পূর্বাঞ্চলেই হয়েছে ৫৬টি নাশকতার ঘটনা। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে গঠিত পশ্চিম রেলের দুটি স্টেশন ও তিনটি কোচ পুরোপুরি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। রেলের সর্বশেষ জরিপ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক সাংবাদিকদের জানান, জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী নাশকতার অংশ হিসেবে এই কাজ করছে। রেলওয়ের সম্পদও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। গত কয়েকদিনে নাশকতায় রেলের আট কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৪২ বছরে হরতাল-অবরোধ অনেক হয়েছে। কিন্তু এভাবে একযোগে সারাদেশে রেলের সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা কখনো ঘটেনি।
রেলওয়ে থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, পশ্চিমাঞ্চলে নাশকতা সংখ্যায় কম হলেও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলে গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা ও বগুড়া স্টেশন ভবন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ঢাকা-রাজশাহীর মধ্যে চলাচলকারী সিল্কসিটির তিনটি কোচ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে আগুন দেয়া হয়েছে উপকূল এক্সপ্রেসে। এতে একটি কোচ পুরোপুরি এবং তিনটি কোচ আংশিক পুড়ে গেছে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সূত্র জানায়, পশ্চিমাঞ্চলে ছোটখাটো অনেক নাশকতা করা হয়েছে। তবে সিল্কসিটি, বামনডাঙ্গা স্টেশন ও বগুড়া স্টেশন ভবন পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় সাত কোটি ৪৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে ছয় মাসেরও বেশি সময় লাগবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চলে ১৪টি রেলসেতুতে আগুন দেয়া হয়েছে। ফিস প্লেট উৎপাটন ও রেললাইন বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা ঘটেছে চারটি। স্টেশন ভবন, কোচ, সিস্নপার ও লাইনে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে ৩০টি। ককটেল ও বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে চারটি। গত সোমবার ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে তিনটি কোচে অগি্নসংযোগ এবং একই দিন রাতে চট্টগ্রামের বাড়বকুন্ডে স্টেশন ভবনে আগুন লাগানোসহ ছয় দিনের নাশকতায় ৯৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রেল সূত্র আরও জানায়, শুধু ২৮ ফেব্রুয়ারি পূর্বাঞ্চলে ১০টি নাশকতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে শর্শদী ও ফেনী স্টেশনের মধ্যবর্তী লাইনে রেলের ফিস প্লেট খুলে ফেলায় আন্তঃনগর গোধূলী এক্সপ্রেসের ছয়টি কোচ লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটির গতি কম ছিল বলে যাত্রীরা প্রাণে রক্ষা পায়। ওই দিন বরমচাল ও কুলাউড়া, লাকসাম ও চিতৌষী রোড, শ্রীমঙ্গল ও ভানুগাছ, কুমিরা ও সীতাকুন্ড, ভাটেরাবাজার ও মাইজগাঁও, সোনাইমুড়ী ও নাথেরপেটুয়া, খিলা ও দৌলতগঞ্জ স্টেশনের মধ্যবর্তী রেললাইনে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ও ফাতেমানগর স্টেশনে ট্রেনে বোমা হামলার চেষ্টা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। পূর্বাঞ্চলে ১ মার্চ পাঁচটি নাশকতা হয়েছে। ২ মার্চ আফজালাবাদ ও খাজাঞ্চিগাঁওয়ের মধ্যবর্তী স্টেশনে ফিস প্লেট উৎপাটন করায় বোল্ডারবাহী বিশেষ ট্রেনের ইঞ্জিন ও রেস্টভ্যান লাইনচ্যুত হয়। একই দিন ফেনী ও শর্শদী স্টেশনের মধ্যবর্তী লাইনে বস্তা ফেলে ও সিস্নপারে আগুন লাগানো হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনের ১৪ ও ২৭২ নম্বর সেতুতেও আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। ৩ মার্চ নাজিরহাট ও সরকারহাটের মধ্যবর্তী স্টেশনে সিস্নপার উৎপাটন করা হয়। ৪ মার্চে নাশকতা হয় সবচেয়ে বেশি। ওই দিন নেত্রকোনা ও ঝারিয়াঝাঞ্জাইল স্টেশনের মধ্যবর্তী রেললাইনে আগুন দিয়ে ট্রেন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও বরমচাল স্টেশনের মধ্যবর্তী লাইনে আগুন দেয়া হয়। ৫ মার্চ আখাউড়া ও গঙ্গাসাগর স্টেশনের মধ্যবর্তী দেবপুর স্কুলের পাশে ফিস প্লেট উৎপাটন করে হরতালকারীরা। কুমিরা ও ভাটিয়ারি স্টেশনের মধ্যবর্তী রেললাইন কেটে ফেলা হয়।
জানা গেছে,১৮ দলের হরতাল ,ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের তা-বে দেশজুড়ে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। নিরাপত্তার অভাবে অনেকেই বাসাবাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগুন, ভাঙচুরের ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এইসব মামলায় অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। পলাতকদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
__._,_.___