শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৩, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না ॥ শেষ কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
(গতকালের চতুরঙ্গ পাতার পর)
শেষ কিস্তি
কোন সরকার এককভাবে এ ধরনের হিংস্রতা রোধ করতে পারবে না যদি না জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে পারেু। এ ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজেরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করি। খবরে পড়লাম, হেফাজতীরা যখন পালাচ্ছিল ট্রেনে করে, তখন একটি স্টেশনে ক্রুদ্ধ জনতা একত্রিত হয় এবং হেফাজতীকে বের করে গণধোলাই দেয়া হয়।
১৪. অনলাইনে হেজাবিরা কুৎসা রটনা থেকে দাঙ্গায় প্ররোচনাÑ এমন কোন কুকর্ম নেই যা করছে না। আমাদের কাছে খুবই অদ্ভুত লাগছে যে, এসব বিষয়ে হেজাবিরা যখন আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলে ১৪ দল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন এমনকি তথ্যমন্ত্রীও পরিষ্কারভাবে উত্তর দিতে কার্পণ্য করেন। দুয়েকটি উদাহরণ দিই। প্রত্যেকটি টকশোতে হেজাবি নেতা ও সমর্থকরা বারবার বলে যাচ্ছে, আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি ইচ্ছে করে বন্ধ করে দিয়েছে। এসব গণতন্ত্র ইত্যাদির ওপর আঘাত। এমনকি তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক সিটিংয়েও চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ বললেন, বন্ধের আগে তাদের সতর্ক করা উচিত ছিল।
মাহমুদুর রহমান, দিগন্ত ও নয়াদিগন্ত বাংলাদেশের প্রভূত পরিমাণ ক্ষতি করেছে। তারা মক্কা শরিফ, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী ইত্যাদি বিষয়ে মিথ্যা ছবি ও খবর ছাপিয়ে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করেছে, দাঙ্গা বাধিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, মাহমুদুর তিন চারজনের একটি গ্রুপ করেছিলেন যারা ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ইন্টারনেটেও নিয়মিত তথ্য বিকৃতি বা সাইবার ক্রাইম করত। তার অফিসে টাকা আদান-প্রদান সম্পর্কেও প্রতিবেদন বেরিয়েছে। এগুলো গুজব হলেও, যেহেতু ব্যক্তিটি মাহমুদুর রহমান তাই সব গুজব নাও হতে পারে। দিগন্ত টেলিভিশন ৫-৬ মে অসত্য ব্যাখ্যা শুধু নয়, তথ্য বিকৃতি ঘটিয়ে দাঙ্গা লাগাবার উপক্রম করেছিল। সুতরাং, যে সব পত্রিকা/টিভি, পত্রিকা বা টিভির মতো ব্যবহার করে না, দাঙ্গায় প্ররোচনা দেয় তাদের শুধু বন্ধ নয়, ডিক্লারেশন বাতিল করতে হবে। শিশুর হাতে আগুন দিলে সমূহ বিপদ, তেমনি যারা দায়িত্ববান নয় তাদের টিভি/পত্রিকার লাইসেন্স দেয়া বিধেয় নয়।
এইসব সাইবার ক্রাইম দমনে শক্তিশালী একটি বিভাগ খোলা উচিত যেখানে ভিন্ন বেতন স্কেলে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ করা উচিত। এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা উচিত, ইন্টারনেট অপব্যবহার চিহ্নিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে তদন্ত কমিটি করেছে সেখানে মৌলবাদের দুজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে; কিন্তু এর বিপরীতে মোস্তাফা জব্বার বা জাফর ইকবালের মতো কাউকে রাখা হয়নি। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
হেজাবিরা এখন রাজনীতির নামে সরাসরি সন্ত্রাস শুরু করেছে। তারা যে ভাষা বোঝে সে ভাষায় প্রতিরোধ করলে হয়ত তাদের বাড়াবাড়ি কমবে। তবে, আমাদের এ বিষয়ে কোন মতামত নেই। সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। তবে, স্ব-স্ব অবস্থান থেকে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে এবং রাজনৈতিকভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে। সেটি কী হতে পারে?
বাবুনগরী জানিয়েছেন, তাদের সহিংস প্রচেষ্টাকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা সহায়তা করেছে। তদন্তে তা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বাবুনগরী বেশ কিছু সংস্থার নাম বলেছেন যারা তাকে আর্থিক অন্যান্য সহায়তা করেছে। সেগুলো হলো-
ইসলামী ব্যাংক, রাবেতা আল ইসলামী, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, কেয়ারি গ্রুপ, মাকান গ্রুপ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, চট্টগ্রামের আল আমিন ফাউন্ডেশন, কেয়ারি বাংলাদেশ, খুলনার হ্যামকো ব্যাটারি, আল আমিন জুয়েলার্স, তামান্না ট্রেডিং, মৌ-মার্কেট, রেটিনা, যশোরের এস এহসান মাল্টিপারপাস কোম্পানি সোসাইটি লিমিটেড, হাজী শরীয়তউল্লাহ ফাউন্ডেশন, আঁকাবা ফাউন্ডেশন এবং জেলা ইত্তেফাকুল উলামা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, এমদাদুল উলুম মাদ্রাসা [প্রথম আলো, ১৯ বৈশাখ, ১৪২০]।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজনের প্রথম কাজ হবে এসব প্রতিষ্ঠানকে বয়কট করা, ইসলামী ব্যাংক সব সময় এসব কাজ করছে কিন্তু তাকে ছোঁয়াও যায় না। সরকারে কি তাদের শক্তিশালী এজেন্ট আছে? অনেক টিভির খবর স্পন্সর করবে বিভিন্ন চ্যানেল। তাদের আমরা অনুরোধ করব সে সব পরিহার করতে। সরকার তদন্ত করে যদি দেখে বাবুনগরী যা বলছে তা সত্য তাহলে কোরান পোড়ানো, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি এবং সাধারণ মানুষ হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট, সরকারী সম্পত্তির ক্ষতি, নিরাপত্তার হুমকি স্বরূপ এসব প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিতে হবে, কোন রকম দয়া-দাক্ষিণ্য দেখান যাবে না। যারা দয়া-দাক্ষিণ্য দেখাবে তাদেরও আমাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
হেজাবিরা ক্ষমতায় এলে নারীকে শিকল দিয়ে ঘরে আটকে রাখা হবে। অত্যাচার করা হবে। তাদের রুটি-রোজগার, পড়াশোনা সব বন্ধ করে দেয়া হবে। সেখানে হেজাবি বলে খাতির করার কোনো সুযোগ থাকবে না। হেজাবিরা এলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ও আওয়ামী লীগারদের শেষ করতে হবে। গয়েশ্বর রায়দের মতো দুতিনজনকে রাখা হবে বাইরে দেখানোর জন্য যে তারা অসাম্প্রদায়িক। হেজাবিরা এলে কোরান হাদিস সব পুড়িয়ে ফেলা হবে। খালি মওদুদীর অনূদিত কোরান বা তার বইপত্র চলবে। মসজিদগুলো ব্যবহৃত হবে হেজাবিদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মানুষজনের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়া হবে। আপনারা যদি তা না চান তাহলে ভোটের বাক্সে এর জবাব দিতে হবে।
সরকারকে শুধু একটি অনুরোধ। আলোচনার দ্বার সব সময় খোলা রাখুন, এমনকি হেজাবিদের জন্যও। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে এদের কোন ছাড় দেবেন না। তাহলে আমাদেরকেও মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে। শেখ হাসিনার যদি মুসলমানত্ব পরীক্ষা দিতে হয় তাহলে আমাদের সবার জন্যই তা অপমান। তাদের কাছে পরীক্ষা দিয়ে, মিনতি করে আমাদের আর অপমান করবেন না। তরুণদের, গণজাগরণ মঞ্চের তরুণদের বলব, পক্ষ নিতে হবে। নির্দলীয় কোন আন্দোলন সফল হয় না। এবং একা কোন আন্দোলন করা যায় না। যে সব ব্যক্তি বা শক্তি সমর্থন দেবে তাদের নিয়েই আন্দোলন করতে হবে হেজাবিদের বিরুদ্ধে। এবং সেটি স্পষ্ট করতে হবে। না হলে মানুষ কেন যাবে শাহবাগে? খালি গান শুনতে আর পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে! ইতিহাস বলে, তোষণে কোন কাজ হয় না। অতি তোষণ, নির্দলীয় ভঙ্গি নিজের বিপদ টেনে আনে।
আজ আমাদের সবার একটি স্লোগানই হওয়া উচিত, এ দেশ আর রাজাকারদের হবে না। এ দেশ আর রাজাকারদের হাতে তুলে দেয়া যাবে না। জয় বাংলা!
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=13&dd=2013-05-17&ni=135677 শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৩, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০ Also Read:
বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০১৩, ২৬ বৈশাখ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না - ॥ প্রথম কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
শুক্রবার, ১০ মে ২০১৩, ২৭ বৈশাখ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না - ॥ দ্বিতীয় কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
শনিবার, ১১ মে ২০১৩, ২৮ বৈশাখ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না ॥ তৃতীয় কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
শনিবার, ১১ মে ২০১৩, ২৮ বৈশাখ ১৪২০
রবিবার, ১২ মে ২০১৩, ২৯ বৈশাখ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না ॥ চতুর্থ কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০১৩, ৩১ বৈশাখ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না ॥ ষষ্ঠ কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
বুধবার, ১৫ মে ২০১৩, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না ॥ সপ্তম কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০১৩, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না ॥ ৮ম কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০১৩, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০
ويقترح رجل الله يتصرف [ Man proposes, Allah the Almighty disposes]
__._,_.___