Banner Advertiser

Monday, August 12, 2013

[mukto-mona] ঈদ কেন মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ উত্সব



Amardesh
আজঃঢাকা, মঙ্গলবার ১৩ আগস্ট ২০১৩, ২৯ শ্রাবণ ১৪২০, ৫ সাওয়াল ১৪৩৪ হিজরী    আপডেট সময়ঃ রাত ১২.০০টা

ঈদ কেন মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ উত্সব

ফি রো জ মা হ বু ব কা মা ল
পৃথিবীর নানা দেশে নানা ধর্মের ও নানা জাতির মানুষের মাঝে শত শত বছর ধরে চলে আসছে বিচিত্র উত্সব। কিন্তু সেসব উত্সব থেকে ঈদ যে অনন্য ও শ্রেষ্ঠতর তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? সামান্যতম সন্দেহ চলে কি মহান আল্লাহ তায়ালার হিকমত, প্রজ্ঞা ও তাঁর প্রদত্ত বিধানগুলোর কল্যাণধর্মিতা নিয়ে? আল্লাহ তায়ালার প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যেই তার অসীম কুদরতের পরিচয়। ঈদ সর্বশ্রেষ্ঠ উত্সব হওয়ার কারণ, এটি কোনো মানুষের আবিষ্কৃত উত্সব নয়। এটি এসেছে মহান আল্লাহ তায়ালা থেকে। মানব সভ্যতার সর্বশেষ্ঠ উত্সব হওয়ার জন্য এই একটিমাত্র কারণই যথেষ্ট। ঈদের সে সর্বাঙ্গ সুন্দর বিধান, সেটি যে কোনো বিবেকবান ও সুস্থ চেতনার মানুষের চোখে ধরা পড়তে বাধ্য। নিবন্ধের সেটিই আলোচ্য বিষয়। কিন্তু তা নিয়ে অবিশ্বাস থাকতে পারে একমাত্র তাদের যাদের অবিশ্বাস আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব, তাঁর প্রজ্ঞা ও তার অপার সৃষ্টি ক্ষমতা নিয়ে। এখানে সমস্যা তাদের অসুস্থ বিবেকের, ঈদ উত্সবের নয়। এমন মানসিক অসুস্থতার কারণে তারা যেমন ইসলামের ইবাদতের বিধানের মধ্যে কোনো শ্রেষ্ঠত্ব খুঁজে পায় না তেমনি পায় না মুসলমানদের ঈদ উত্সবের মাঝেও।
ঈমানদারের জীবন চলে মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত সিরাতুল মোস্তাকিম বেয়ে। এ পথে চলায় মুসলমানের জীবনে যেমন প্রচুর ত্যাগ-তিতীক্ষা ও জান-মালের কোরবানি আছে, তেমনি খুশিও আছে। দুঃখ-বেদনার সঙ্গে উত্সবও আছে। তবে সে উত্সবে মোহচ্ছন্নতা নেই, আছে পবিত্রতা। মুসলিম বিশ্বের ঘরে ঘরে ঈদ তাই পবিত্র উত্সব বা খুশি বয়ে আনে। এমন খুশির দিন সারা বছরে মাত্র দুটি। একটি ঈদুল ফিতর এবং অপরটি ঈদুল আজহা। এ খুশির দিন দুটিতে প্রতিটি মুসলিম দেশ নতুনভাবে সাজে। কিন্তু কেন এ খুশি বা উত্সব? খুশি বা উত্সব তো আসে বিশাল বিজয় বা বড় কিছু অর্জনের পর। কিন্তু কি সে বিজয় বা অর্জন, যার জন্য মুসলমানরা ঘরে ঘরে ঈদের খুশি করবে? অন্য ধর্ম বা অন্য জাতির উত্সব আর ইসলামের এ উত্সবের পার্থক্য কোথায়? ঈদের শ্রেষ্ঠত্বই বা কী? কেনই বা দিন দুটি মানব সংস্কৃতিতে অনন্য? ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম; কিন্তু এ উত্সবে শান্তি ও কল্যাণই বা কী? খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও শিখ ধর্মের অনুসারীরা তাদের ধর্মের প্রচারকদের জন্ম বা মৃত্যুদিবসকে উত্সবের দিনে পরিণত করেছে, কিন্তু ইসলাম সেটি করেনি। অন্যদের উত্সবগুলোর দিনক্ষণ ও উপলক্ষ তাদের মনগড়া, কিন্তু ঈদের উত্সব ও তার দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে মহান আল্লাহ থেকে। তিনি যেমন পবিত্র কোরআন দিয়েছেন এবং নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের বিধান দিয়েছেন, তেমনি এ উত্সবটিও দিয়েছেন। উত্সবের পরিকল্পনায় ও উদযাপনের যে বিধানটি মহান আল্লাহ তায়ালা থেকে আসে তাতে কি কোনো ত্রুটি থাকতে পারে?
মুসলমানদের এ দুটি উত্সবের পেক্ষাপট যেমন ভিন্ন, তেমনি ভিন্ন তার লক্ষ্যও। এ দুটি উত্সবের কোনোটিই কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির জন্মদিবস উদযাপনের লক্ষ্যে যেমন নয়, তেমনি বছরের সুন্দরতম কোনো দিনকে মহামান্বিত করার লক্ষ্যেও নয়। উভয় উত্সবই নির্ধারিত হয়েছে মহান আল্লাহর অনুগত গোলাম রূপে তাঁর বান্দাহ কতটা সফল বা বিজয়ী হলো সে বিষয়টিকে সামনে রেখে। এদিক দিয়ে মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এবং বিজয়ী ব্যক্তি হলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। তিনি বিস্ময়কর প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে নয়, বরং মহা সত্যের আবিষ্কারে এবং সফলতা দেখিয়েছেন সে সত্যের আপসহীন অনুসরণে। তিনি খুঁজে পেয়েছেন মহান আল্লাহকে। মানব জাতির ইতিহাসে এর চেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার আছে কি? বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে ব্যর্থতার কারণে কেউ জাহান্নামে যাবে না, জাহান্নামে যাবে সত্য আবিষ্কারে ব্যর্থতার কারণে। কি আল্লাহর ওপর অটল বিশ্বাসে, কি ইবাদতে, কি হিজরতে, কি আত্মত্যাগে—আল্লাহর প্রতিটি হুকুমে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে 'লাব্বায়েক' বলেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর সে নিষ্ঠাকে নিয়ে বার বার গর্ব করেছেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি নিজ জন্মস্থান ছেড়ে নানা দেশের পথে পথে ঘুরেছেন। স্ত্রী হাজেরা এবং শিশুপুত্র ইসমাইলকে যখন জনমানবশূন্য মক্কার বুকে ছেড়ে আসার নির্দেশ এসেছে, তখনও তিনি নিজের ও নিজ পরিবারের স্বার্থকে গুরুত্ব দেননি। বরং গুরুত্ব দিয়েছেন মহান আল্লাহর ইচ্ছাকে। ফলে আল্লাহ তায়ালার সে নির্দেশের জবাবে তিনি ত্বরিত 'লাব্বায়েক' বলেছেন। রাব্বুল আলামিনকে খুশি করতে নিজ ছেলে ইসমাইলকে কোরবানি করতে তার গলায় ছুরি চালাতে উদ্যতও হয়েছেন। নিজ খেয়াল-খুশি ও নিজ প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে মানব জাতির ইতিহাসে এটাই হলো সবচেয়ে বড় বিজয়। আল্লাহপাক তাঁর এ বিজয়ে এতই খুশি হয়েছিলেন যে তাঁর সে বিজয়কে তিনি মানবজাতির উত্সবে পরিণত করেছেন এবং সেটি কিয়ামত অবধি। মুসলমান হওয়ার অর্থ মূলত মহান আল্লাহর প্রতি হুকুমে 'লাব্বায়েক' তথা 'আমি হাজির বা প্রস্তুত' বলার ধর্ম। দ্বীনে ইব্রাহিমের এটিই মূল শিক্ষা। মুসলিম নামটিও তাঁরই দেয়া। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মূল কৃতিত্ব হলো, খেয়ালখুশি ও প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে আল্লাহর ওপর ঈমানকে তিনি বিজয়ী করেছেন। সে অটল ঈমানকে ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে—'নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার বেঁচে থাকা এবং আমার মৃত্যুবরণ—সবকিছুই আল্লাহর জন্য।' মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর সে প্রদীপ্ত উচ্চারণকে এতটাই পছন্দ করেছেন যে, পবিত্র কোরআনে নিজ কথাগুলোর পাশে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সে কথাগুলোও কিয়ামত অবধি মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয় করেছেন। মানব ইতিহাসে এর চেয়ে বড় বিজয় আর কী হতে পারে? এ বিজয় সামরিক বিজয় নয়, শারীরিক শক্তি বা কুশলতার বিজয়ও নয়, বরং কুফরির ওপর ঈমানের বিজয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) হলেন মুসলিম উম্মাহর পিতা। ঈদুল আজহার দিনে বিশ্বের মুসলমানরা বস্তুত পিতার সে বিজয়কে নিয়ে উত্সবই করে না, বরং তার আদর্শের সঙ্গে একাত্মতাও জাহির করে। এর চেয়ে পবিত্র উত্সব আর কী হতে পারে?

উত্সব ঈমানের বিজয় নিয়ে
অপরদিকে ঈদুল ফিতর হাজির হয় বিজয়ের আরেক প্রেক্ষাপটে। সেটি মাসব্যাপী আত্মসংযম, আত্মপরিশুদ্ধি ও আল্লাহতে আত্মসমর্পণের। উত্সব আসে মাহে রমজানের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষে। অন্য মাসে পানাহারের মতো বহু কিছুই হালাল, কিন্তু সেগুলোর বহু কিছুই রোজার সময়ে হারাম। ঈমানদার হওয়ার শর্তই হলো হারাম-হালাল নিয়ে আল্লাহর প্রতিটি হুকুমের কাছে আত্মসমর্পণ করা। সেটি জীবনের প্রতি মুহূর্তে। 'শুনলাম এবং মেনে নিলাম'—থাকতে হবে এমন এক সদাপ্রস্তুত চেতনা। তেমন একটি চেতনার কারণে মুমিন ব্যক্তি একান্ত নিভৃতেও কিছু খায় না। তীব্র ক্ষুধা বা প্রচণ্ড তৃষ্ণার মুখেও খাদ্য বা পানীয় মুখে দেয় না। লোক দেখাতে মানুষ নামাজ পড়তে পারে, অর্থ দান করতে পারে, এমনকি হজও করতে পারে—কিন্তু লোকদেখানোর সে লোভ কি একান্ত গোপনে কিছু খাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে? এক্ষেত্রে যেটি কাজ করে তা হলো আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া। যে ব্যক্তিটি রমজানের সারাটি মাস রোজা রাখে এবং আল্লাহর প্রতিটি হুকুমকে মেনে চলে, সেই বস্তুত বিজয়ী। এ বিজয় লোভ-লালসা ও প্রবৃত্তির খায়েশাতের ওপর। ঈদুল ফিতর আসে সে বিজয়ের উত্সব নিয়ে।
ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে হলে রোজার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝতে হবে। রোজার মূল লক্ষ্য, মুসলমানদের মনে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি সৃষ্টি। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'হে ঈমানদারগণ! রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যেন তোমরা তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পার।' (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)। আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, মাগফিরাত এবং আখেরাতে নাজাতপ্রাপ্তির জন্য অপরিহার্য হলো এই তাকওয়া। জান্নাতে প্রবেশের এটিই হলো মূল চাবি। প্রশ্ন, তাকওয়ার অর্থ কী? তাকওয়া হলো মুমিনের মনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহির এমন এক সার্বক্ষণিক চেতনা যা তাকে প্রতিদিন ও প্রতিক্ষণে আল্লাহর প্রতিটি হুকুমের আজ্ঞাবহ গোলামে পরিণত করে। ফলে ঈমানদারের প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মুহূর্ত কাটে আল্লাহর প্রতি হুকুমের আনুগত্য নিয়ে। সেটি প্রকাশ পায় তার কথা, কর্ম ও আচরণে। আর আল্লাহর যে কোনো হুকুমের আনুগত্যই তো ইবাদত। তাই ঈমানদারের ইবাদত শুধু নামাজ-রোজা, হজ-জাকাতে সীমাবদ্ধ থাকে না; সে তো বরং সর্বক্ষণের আবেদ। এরূপ তাকওয়াকে মুমিনের জীবনে স্থায়ী তথা সার্বক্ষণিক করাই রমজানের রোজার মূল লক্ষ্য। তখন মুমিনের ঈমান দৃশ্যমান হয় তার ধর্ম-কর্ম, আচার-আচরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি-সংস্কৃতি, যুদ্ধবিগ্রহ তথা জীবনের সর্বাঙ্গ জুড়ে। এভাবে রোজা আল্লাহর গোলামিকে ব্যক্তির জীবনে চির অভ্যাসে পরিণত করে। তখন সে আল্লাহর গোলাম শুধু নামাজে নয়, শুধু রোজা বা হজকালীন সময়ে নয় বরং সর্বক্ষণ এবং সর্বক্ষেত্রে। এটিই হলো মুমিনের জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। সে তখন পরিণত হয় মহান আল্লাহর সেনাদলের সার্বক্ষণিক সৈনিকে। মাহে রমজান তাই ইসলামের অতিগুরুত্বপূর্ণ ট্রেনিংয়ের মাস। ট্রেনিং পর্বের শিক্ষাগ্রহণে যারা কৃতকার্য হয় তাদের নিয়ে ট্রেনিং শেষে যেমন সমাপনী উত্সব হয়, তেমনটি আছে ইসলামেও। ঈদুল ফিতরের উত্সব তো সেটাই।
রমজানের এ পবিত্র মাসটিতে যারা তাকওয়া অর্জন করে সেসব মোত্তাকির জন্য এ মাসটিতে রয়েছে বিশাল সুখবর। তাদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা খুলে দেন রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের দ্বার। এ মাসেই রয়েছে লাইলাতুল কদর যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ পবিত্র মাসে যারা রোজা রাখে, তারাবি নামাজ পড়ে, নানাবিধ নফল ইবাদত করে এবং মিথ্যা-ঈর্ষা-কুত্সা-গিবত ও নানাবিধ খারাপ কর্ম থেকে বাঁচে এবং লাইলাতুল কদরের রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা থেকে মাগফিরাতের সুযোগ নেয়, এ মাস তাদের জন্য বয়ে আনে জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এ পবিত্র মাসের ইবাদতের বরকতে মাফ হয়ে যায় অতীত জীবনের সব গুনাহ এবং বিপুল সমৃদ্ধি আসে ঈমানে। মুমিনের জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? ব্যবসায়িক লাভ, পেশাদারি সাফল্য, বিপুল অর্থপ্রাপ্তি বা কর্মজীবনের অন্য কোনো সফলতায় কি এমন অর্জন ঘটে? এমন সফলতা খুশি বয়ে আনবে সেটিই কি যথার্থ নয়? আল্লাহ তায়ালাও চান তাঁর অনুগত বান্দারা জীবনের এ বিশাল অর্জনের পর উত্সব করুক। সেজন্যই তিনি ঈদুল ফিতরের বিধান দিয়েছেন।
রমজান হলো প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাস। যুদ্ধজয়ের পর যোদ্ধারা যেমন মহাধুমধামে উত্সব করে, ঈমানদাররাও তেমনি প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের পর উত্সব করে। ঈদুল ফিতরে ঘটে সে উত্সবেরই আয়াজন। তবে এ পবিত্র মাসটিতে যারা রোজা রাখেনি এবং তাকওয়া অর্জন করেনি, প্রকৃত অর্থেই তারা ব্যর্থ। এ পবিত্র মাসটিতে নিজেদের বিদ্রোহী প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা অংশই নেয়নি। ফলে তারা বিজয়ী হবে কীরূপে? বরং পরাজিত ক্ষুধা, যৌনতা, অশ্লীলতা তথা অবাধ্য প্রবৃত্তির কাছে। ঈদুল ফিতরের উত্সবের দিনে এমন পরাজিত ব্যক্তিদের জন্য খুশির কিছু নেই। এদিন তো তাদের জন্য মাতমের। তারা তো মহান আল্লাহর অবাধ্য বান্দা। এরূপ অবাধ্যতা তো কুফরি। তাদের সে অবাধ্যতা বিমূর্ত হয় শুধু রমজানে নয়, বরং বছরের অপর ১১টি মাসেও। রমজানের এ ব্যর্থতা তাদের জীবনে দুঃখময় বিপর্যয় ডেকে আনে। এমন বিপর্যয় নিয়ে তারা উত্সব করে কী করে? নবীজী (সা.) তাই তাদের জন্য বলেছেন, 'মাহে রমজানে যারা রোজা রাখেনি তাদের জন্য এ ঈদ খুশির নয়, বরং বড়ই অখুশির।'

আনন্দ যেখানে সর্বজনীন
ইসলাম কল্যাণের ধর্ম। কল্যাণ চায় ব্যক্তির সঙ্গে সমষ্টিরও। কল্যাণ চায় সমাজের ধনী-দরিদ্র সর্ব শ্রেণীর মানুষের। তাই উত্সবের মাঝেও সে কল্যাণ-চেতনা থেকে ঈমানদারদের বিচ্যুতির অবকাশ নেই। এ দিনে সমাজের সচ্ছল মানুষেরা আনন্দ করবে, আর অভাবী মানুষেরা সে আনন্দ নীরবে দেখবে সে বিধান ইসলামে নেই। ঈদের আনন্দ এখানে সর্বজনীন। খুশির এ দিনটিতে কল্যাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সমাজের অভাবগ্রস্ত দুঃখী মানুষেরও। অনাথ-এতিম-দুস্থ মানুষও যাতে ঈদের খুশিতে শামিল হতে পারে সেজন্য ঈদের জামায়াতে শামিল হওয়ার আগে তাদের হাতে ফিতরার টাকা পৌঁছে দিতে হয় প্রতিটি সচ্ছল মুসলমানকে। নবীজী (সা.)-এর হাদিস, যে ব্যক্তি ফিতরা না দিয়ে ঈদের নামাজে হাজির হয় তার রোজা আল্লাহর আরশের নিচে শূন্যে ভাসতে থাকে। তাই রোজা কবুলের শর্ত হলো ঈদের নামাজে হাজির হওয়ার আগে পরিববারে প্রতিটি সদস্যের মাথাপিছু ফিতরা আদায় করা। এটি গরিবের হক, ধনীর দান বা কৃপা নয়। সমাজের অভাবগ্রস্তদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব এখানে প্রতিটি সচ্ছল ব্যক্তির। সম্পদ লাভের সঙ্গে সঙ্গে মুমিনের ঘাড়ে এ এক বাড়তি দায়িত্ব। গরিবরা এসে তার দরজায় ধরনা দেবে এবং ফিতরা ভিক্ষা করবে, সেটি ইসলামের বিধান নয়। এমন বিধানে গরিবের প্রচণ্ড অসম্মান হয়। এভাবে গরিবের অসম্মান বাড়িয়ে কি ঈদের খুশি হয়? নির্মিত হয় কি সামাজিক সংহতি? প্রতিষ্ঠা পায় কি শান্তি? ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তির সংস্কৃতি গড়ে না, গড়ে দানের সংস্কৃতি। ইসলাম তাই ধনীকে বরং গরিবের দরজায় ছুটতে বলে। খলিফা হজরত উমর (রা.) তাই আটার বস্তা নিজের কাঁধে চাপিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। সম্পদ-লাভ এভাবেই মুমিনের জীবনে অহঙ্কার না বাড়িয়ে দায়িত্ববোধ বাড়ায়। অর্থ এভাবেই তাকে পরীক্ষার মুখে ফেলে। ইসলাম চায় সমাজের ধনী-দরিদ্র সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো মজবুত একতা। দান-খয়রাত এবং গরিবের কল্যাণ চিন্তা সে একতার নির্মাণে সিমেন্টের কাজ করে। দুস্থ-দরিদ্র জনগণ তখন সমাজের হৃদয়বান সচ্ছল ব্যক্তিদের আপন ভাবতে শেখে। শোষণ-নির্ভর পুঁজিবাদী দেশে ধনী-দরিদ্রের যে বিশাল বিভাজন ও বিভেদ, সেটি রাজনৈতিক লড়াই ও রক্তক্ষয়ী ম্রেণীযুদ্ধের জন্ম দেয়, কিন্তু ইসলামী সমাজে সেটি ঘটে না। বরং সমাজের ধনী ব্যক্তিরা বোঝে, অর্থসম্পদ তাদের ওপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত আমানত। যেরূপ পবিত্র আমানত হলো তার নিজ জীবন। মুমিনের দায়িত্ব হলো, অর্পিত এ আমানতকে আল্লাহরই নির্দেশিত পথে ব্যয় করা। নইলে প্রচণ্ড খেয়ানত হয়। আর সে খেয়ানত ইহকালে আজাব এবং পরকালে জাহান্নাম ডেকে আনে। তাই মুমিন ব্যক্তি সম্পদশালী হলে জীবনযাপনে স্বেচ্ছাচারী হয় না এবং স্বেচ্ছাচারী হয় না সম্পদের ব্যয়েও। আর এমন একটি আত্মসচেতন ও আত্মসমর্পিত চেতনার কারণেই বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশেও ঈদুল ফিতরের উত্সবে বহু শতকোটি টাকা ধনীর পকেট থেকে গরিবের ঘরে গিয়ে পৌঁছে। ফিতরার অর্থের সঙ্গে যোগ হয় বহু শত কোটি টাকার জাকাতের অর্থ। ফলে আনন্দের ছোঁয়া লাগে লাখ লাখ গরিব মানুষের ঘরে। মুসলিম সমাজে এমন অর্থ হস্তান্তরের ফলে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে বহু কোটি দরিদ্র মানুষের। ফলে রক্ত-সঞ্চালন হয় অর্থনীতিতে। মুসলিম দেশ তো এভাবেই সামাজিক কল্যাণ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে এগোয়। একইভাবে ঈদুল আজহার দিনে হাজার হাজার টন কোরবানির গোশত বিতরণ হয় মুসলমানদের ঘরে। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে মক্কা থেকে কোরবানির গোশত গিয়ে পৌঁছে বহু হাজার মাইল দূরের শত শত এতিমখানা, উদ্বাস্তু শিবির ও দুস্থ পল্লীতে। অর্থাভাবে বা পুষ্টির অভাবে মুসলিম প্রাণ হারাবে সেটি এ কারণেই অভাবনীয় এবং সেটি ঘটলে বুঝতে হবে সে সমাজ যে শুধু বিবেকশূন্য তাই নয়, ইসলামশূন্যও। ইসলামের প্রাথমিক যুগে জাকাতের অর্থ নেয়ার লোক পাওয়া যেত না মদিনাতে। অর্থের সুষ্ঠু বণ্টন হলে প্রতি সমাজেই তেমনটি ঘটে। অভাব, দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে মৃত্যু তো সামাজিক অবিচার, অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্বৃত্তির ফল। অতীতে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে তো এগুলোর ফলে। একই কারণে, দুনিয়ার সবচেয়ে সম্পদশালী দেশ হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহু নগরীতে বহু দুস্থ মানুষের বাস।

সমগ্র মানব সংস্কৃতিতে যে উত্সব অনন্য
প্রতি ধর্মে এবং প্রতি জাতির জীবনেই উত্সব আছে। আনন্দ প্রকাশের নানা দিনক্ষণ, পর্ব এবং উপলক্ষও আছে। কিন্তু ইসলামের ঈদে যেরূপ সর্বজনীন কল্যাণ চিন্তা আছে, সেটি কি অন্য ধর্মে আছে? ইসলামের মতো অন্য কোনো ধর্মে ধনীদের ওপর দরিদ্রদের জন্য অর্থদান বাধ্যতামূলক? খ্রিস্টান ধর্মে সবচেয়ে বড় উত্সব হলো ক্রিসমাস। এ উত্সবে বিপুল সাজসজ্জার আয়োজন আছে, বিস্তর অর্থব্যয়ও আছে। কিন্তু সে উত্সবে জাকাত-ফিতরার মতো গরিব মানুষের অর্থদানের নির্দেশ নেই। ক্রিসমাসের দিনে যে ভোজের আয়োজন করা হয় সেগুলো নিতান্তই পারিবারিক। তাতে বিপুল আয়োজন হয় খাদ্য ও পানীয়ের। মদ্যপান হয়, নাচগানও হয়। বিপুল আদান-প্রদান হয় উপহারের। কিন্তু সে উত্সবে দরিদ্র মানুষের কি ভাগ আছে? সেসব পারিবারিক ভোজে এবং উপহারের আদান-প্রদানে পরিবারের বাইরের মানুষের কোনো অধিকার নেই। তাছাড়া ক্রিসমাসের উত্সবে প্রকৃতির ওপর নাশকতাই কি কম? কোটি কোটি গাছ কেটে ঘরে ঘরে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। উত্সবের পর সে সবুজ গাছগুলোকে আবর্জনার স্তূপে ফেলা হয়। একইভাবে বিপুল তছরুপ হয় পূজা উত্সবে। শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে ও হাজার হাজার মূর্তি নির্মাতার বহু শ্রমে গড়া হয় হাজার হাজার মূর্তি। কিন্তু এত শ্রম, এত অর্থ, এত কাঠ-মাটি ও রঙে গড়া মূর্তিগুলো অবশেষে পানিতে ফেলা হয়। এতে দূষিত হয় নদী ও জলাশয়ের পানি। ভারতীয় হিন্দুদের বড় উত্সব হলো দেয়ালি। সেখানেও কি নাশকতা কম? শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয় বৈদ্যুতিক বাতিতে শহরগুলো সাজাতে। বিপুল অর্থ ব্যয় হয় আতশবাজিতে। তাতে যেমন পরিবেশ দূষণ ঘটে, তেমনি মাঝে মাঝে ভয়ানক দুর্ঘটনাও ঘটে। অথচ এত অর্থব্যয়ের মাঝে গরিবের অর্থদানের কোনো ব্যবস্থা নেই। পূজার মণ্ডপে আয়োজিত হয় হিন্দি ফিল্মি গান ও অশ্লীল নাচ। ফলে পবিত্রতা কোথায়? কোনো আয়োজন তো তখনই পবিত্রতা পায় যখন সেটি একমাত্র মহান স্রষ্টাকে খুশি করার উদ্দেশে আয়োজিত হয় এবং জিকর হয় তাঁর পবিত্র নামের। কিন্তু যেখানে ফিল্মি গান ও নাচের অশ্লীলতা, সেখানে কি পবিত্রতা থাকে? ইসলামের ঈদে কি এমন অপচয়, এমন নাচগান ও অশ্লীলতার আয়োজন আছে? বর্ষবরণ, বসন্তবরণ, জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশে যে উত্সব হয় তাতেও কি গরিব মানুষের কোনো কল্যাণচিন্তা থাকে? থাকে কি পবিত্রতা?
অথচ ঈদের উত্সবের শুরু আতশবাজি বা উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে নয়। এতে নাচগান যেমন নেই, তেমন মদ্যপানও নেই। বরং দিনের শুরুটি হয় অজু-গোসলের মধ্য দিয়ে। পরিবারের সবাই পরিধান করে উত্তম পোশাক। পাঠ করা হয় মহান আল্লাহর নামে তাকবির। এভাবে দিনের শুরু থেকেই প্রাধান্য পায় পবিত্রতা। মহল্লার ঈদগাহে বা মসজিদে সে হাজির হয় আল্লাহর নামে তাকবির দিতে দিতে। এই দিনটিতে বিশাল জামায়াতে নামাজ হয়, খোতবা হয় এবং আল্লাহর দরবারে সমবেত দোয়া হয়। দোয়া শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি হয়। এরপর শুরু হয় প্রতিবেশীর গৃহে ঈদের শুভেচ্ছা-সাক্ষাতের পালা। ঈদের এ দিনটিতে ঘরের দরজা সবার জন্য খোলা। কারও গৃহে মেহমান হওয়ার জন্য এ দিনে কোনো দাওয়াতের প্রয়োজন পড়ে না। আত্মীয় হওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। মহল্লার যে কেউ যে কোনো গৃহে কুশল বিনিময়ে হাজির হতে পারে। এরূপ নির্মল আয়োজন কি অন্য ধর্মে আছে? ইসলাম যেমন জামায়াতবদ্ধভাবে নামাজ আদায়ের ওপর গুরুত্ব দেয়, তেমনি জামায়াতবদ্ধতা ও সমাজবদ্ধতার গুরুত্ব দেয় উত্সব পালনেও। ঈদের দিন বেশি বেশি মানুষের সঙ্গে দেখা হবে, কুশল বিনিময় হবে এবং কোলাকুলি হবে—তেমনি একটি লক্ষ্য সামনে রেখে রেওয়াজ হলো ঈদগাহের নামাজে এক পথ দিয়ে যাওয়া এবং অন্য পথ দিয়ে ফেরা।

ঈদ দেয় মিশন নিয়ে বাঁচার প্রত্যয়
অনর্থক গাছ কাটা দূরে থাক, গাছের একটি ডাল ভাঙা বা পাতা ছেঁড়াও ইসলামে হারাম। ফলে কোটি কোটি বৃক্ষ নিধন করে উত্সব পালন কীরূপে ধর্মীয় কর্মরূপে গণ্য হতে পারে? অপরদিকে মদ্যপান এবং নাচ-গান ব্যক্তির মন থেকে আল্লাহর স্মরণকে বিলুপ্ত করে। বিনষ্ট করে সত্যসন্ধানী মানুষের ধ্যানমগ্নতা এবং বিচ্যুতি আনে সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে। অন্য বহু জাতির উত্সবে যেমন মদ্যপান আছে, তেমনি নাচ-গান এবং অশ্লীলতাও আছে। ফলে প্রচণ্ডতা-পথভ্রষ্টতাও আছে। শয়তান সরাসরি আল্লাহকে অস্বীকার করতে বলে না, মূর্তিকেও পূজা করতে বলে না। হজরত আদম (আ.)-কে ইবলিস কখনোই এমন অবাধ্য হতে বলেনি। কিন্তু মিথ্যা প্রলোভনে সে ভুলিয়ে দিয়েছিল মহান আল্লাহর দেয়া নির্দেশকে। মদ্যপান ও নাচ-গান তো সেটিই করে। ফলে মুসলমানের উত্সবে যেমন নাচ-গান নেই, তেমনি মদ্যপানও নেই। কোনোরূপ অশ্লীলতাও নাই। সব ভেদাভেদ ভুলে এক জামায়াতে নামাজ পড়া এবং অন্যকে বুকে জড়িয়ে আলিঙ্গন করা, নিজ ঘরে প্রতিবেশীকে আপ্যায়ন করা হলো ইসলামের সংস্কৃতি। এমন আলিঙ্গনে ও আপ্যায়নে ধনী-দরিদ্র, আমির-উমরাহ, শাসক-প্রজার মাঝে কোনো দূরত্ব রাখার সুযোগ নেই। বরং সবাইকে একই সমতলে খাড়া করে এবং বিলুপ্ত করে বর্ণভেদ, গোত্রভেদ ও শ্রেণীভেদের বিভক্তি। উচ্চতর সমাজ নির্মাণে অপরিহার্য হলো মানুষে-মানুষে এমন ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য। মুসলমানের জীবনে এটিই তো মহান মিশন। প্রকৃত মুসলমান ঈদের উত্সবমুখর দিনেও সে পবিত্র মিশন ভুলে না। বরং সে মিশন নিয়ে বাঁচায় পায় নব প্রত্যয়। সমগ্র মানব সংস্কৃতিতে এমন পবিত্র ও সৃষ্টিশীল উত্সব কি দ্বিতীয়টি আছে?


__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___