যুদ্ধাপরাধী বিচারে তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করেন শহীদ জননী
আসিফুর রহমান সাগর
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। কিন্তু ১৯৭৫ এর পর সেই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি আবারো সারাদেশে ব্যাপকতা লাভ করে। সে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আলোর মুখ দেখেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ বিচার নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা ছিল। কিন্তু সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আবুল কালাম আযাদের বিচারের রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই বিচার কার্যক্রম একটি পরিণতি লাভ করেছে বলে মনে করছেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত নেতৃবৃন্দ।
১৯৯২ সালে গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলন বিস্মৃত প্রায় তরুণ প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের হারানো চেতনাকে ফিরিয়ে এনেছিল। আজ যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে সেদিনের আন্দোলন এই বিচারের ক্ষেত্র তৈরি করেছে, বলছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, '১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পরিকল্পিতভাবে মুছে ফেলা হয়েছিল। আমরা গণআদালত গঠন করার আগে মুক্তিযুদ্ধের বইমেলার আয়োজন করেছিলাম তখন দেখা গেল ১৯৭৫ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের বই প্রকাশিত হয়েছে চারশ'র কিছু বেশি। আর গত ২০ বছরে মুক্তিযুদ্ধের প্রকাশনার সংখ্যা ৪ হাজারেরও বেশি। এ থেকে বোঝা যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কী প্রবলভাবে পরবর্তী প্রজন্মকে আলোড়িত করেছে।'
ড. কামাল হোসেন বললেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে রায় দেয়া হলো এর পেছনে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। তিনি সারাদেশে গণবিক্ষোভ সৃষ্টি করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সরকার জাতীয় কতর্ব্য সম্পন্ন করছে। এখন বাকি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাই আমাদের জাতীয় চ্যালেঞ্জ।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিস্মৃত নতুন প্রজন্মকে জাগিয়ে তুলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায়। মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমামের বড় ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শফি ইমাম রুমী শহীদ হন। একাত্তরে তার লেখা দিনপঞ্জি নিয়ে প্রকাশিত হয় 'একাত্তরে দিনিলিপি' গ্রন্থটি। মুক্তিযুদ্ধে একজন মায়ের সাহসী অবস্থান ও দলিল গ্রন্থ হিসাবে মানুষের কাছে সমাদৃত হয় গ্রন্থটি। এছাড়া যুদ্ধের সময় তার স্বামী শরীফ ইমামও ইন্তেকাল করেন। আশির দশকের শুরুতে, ১৯৮২ সালে তিনি মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। প্রতি বছর একবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে চিকিত্সা নিতে হতো তাকে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রুমীর মা সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার প্রতীক হয়ে ওঠেন।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, গত ৪১ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। সেই চলমান আন্দোলনকে নির্মূল কমিটি এগিয়ে নিয়ে গেছে। জাহানারা ইমামের প্রেরণা তো ছিলই, এর সঙ্গে শাহরিয়ার কবির এ আন্দোলন গড়ে তুলতে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রতীকী গণআদালতে ছিল মূলত সুশীল সমাজের আন্দোলন যেখানে সারাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি এসে যোগ দিয়েছিল। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতাই বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে। এ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে যত গুজব, অপপ্রচার ছিল তার নিরসন ঘটেছে। এখন লক্ষ্য হচ্ছে সকল অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা এবং বিচার সম্পন্ন করা।
জাহানারা ইমামের আন্দোলন
১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। একজন পাকিস্তানি নাগরিক এবং যুদ্ধাপরাধী এই গোলাম আযমের তত্কালীন বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পুনর্বাসনে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো দেশ। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। তিনি হন এর আহ্বায়ক। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে ১৯৯২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি' গঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। এই কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ 'গণআদালত' এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক প্রতীকী বিচার অনুষ্ঠান করে। গণআদালতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দশটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।
জাহানারা ইমাম গণআদালতের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। এই গণআদালতের সদস্য ছিলেন, এডভোকেট গাজিউল হক, ড. আহমদ শরীফ, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সুফিয়া কামাল, কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, শওকত ওসমান, লে. কর্নেল (অব.) কাজী নুরুজ্জামান, লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার শওকত আলী খান।
গণআদালত অনুষ্ঠিত হবার পর সরকার ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে অজামিনযোগ্য মামলা দায়ের করে। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ২৪ বিশিষ্ট ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করে। এরপর লাখো জনতার পদযাত্রার মাধ্যমে জাহানারা ইমাম ১৯৯২ সালের ১২ এপ্রিল গণআদালতের রায় কার্যকর করার দাবিসংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পেশ করেন। ১০০ জন সংসদ সদস্য গণআদালতের রায়ের পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করেন। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, সংসদ যাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট, মহাসমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। সরকার ৩০ জুন সংসদে ৪ দফা চুক্তি করে। ১৯৯৩ সালের ২৮ মার্চ নির্মূল কমিটির সমাবেশে পুলিশ হামলা চালায় । পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন জাহানারা ইমাম।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও গঠিত হয় নির্মূল কমিটি এবং শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠলে আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন জাহানারা ইমাম। গোলাম আযমসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনকে সমর্থন দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে।
২৬ মার্চ ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা দিবসে গণআদালত বার্ষিকীতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণতদন্ত কমিটি ঘোষিত হয় এবং আরো আট যুদ্ধাপরাধীর নাম ঘোষণা করা হয়। এই আট যুদ্ধাপরাধী হচ্ছে- আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী, মোঃ কামারুজ্জামান, আবদুল আলীম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মওলানা আবদুল মান্নান, আনোয়ার জাহিদ এবং আবদুল কাদের মোল্লা।
১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে গণআদালতের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান কবি বেগম সুফিয়া কামাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে রাজপথের বিশাল জনসমাবেশে জাহানারা ইমামের হাতে জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর করেন। গণতদন্ত কমিশনের সদস্যরা ছিলেন শওকত ওসমান, কে এম সোবহান, সালাহ উদ্দিন ইউসুফ, অনুপম সেন, দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, খান সারওয়ার মুরশিদ, কবি শামসুর রাহমান, শফিক আহমেদ, আবদুল খালেক এবং সদরুদ্দিন। এই সমাবেশে আরো আট যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্ত অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময়ে খুব দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে ১৯৯৪ সালের ২ এপ্রিল চিকিত্সার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে যান জাহানারা ইমাম। এসময় তার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। ২৬ জুন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মিশিগানের ড্রেট্রয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুর তিন দিন আগে তত্কালীন বিএনপি সরকার গোলাম আযমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে।
১৯৯২ সালে গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলন বিস্মৃত প্রায় তরুণ প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের হারানো চেতনাকে ফিরিয়ে এনেছিল। আজ যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে সেদিনের আন্দোলন এই বিচারের ক্ষেত্র তৈরি করেছে, বলছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, '১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পরিকল্পিতভাবে মুছে ফেলা হয়েছিল। আমরা গণআদালত গঠন করার আগে মুক্তিযুদ্ধের বইমেলার আয়োজন করেছিলাম তখন দেখা গেল ১৯৭৫ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের বই প্রকাশিত হয়েছে চারশ'র কিছু বেশি। আর গত ২০ বছরে মুক্তিযুদ্ধের প্রকাশনার সংখ্যা ৪ হাজারেরও বেশি। এ থেকে বোঝা যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কী প্রবলভাবে পরবর্তী প্রজন্মকে আলোড়িত করেছে।'
ড. কামাল হোসেন বললেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে রায় দেয়া হলো এর পেছনে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। তিনি সারাদেশে গণবিক্ষোভ সৃষ্টি করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সরকার জাতীয় কতর্ব্য সম্পন্ন করছে। এখন বাকি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাই আমাদের জাতীয় চ্যালেঞ্জ।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিস্মৃত নতুন প্রজন্মকে জাগিয়ে তুলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায়। মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমামের বড় ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শফি ইমাম রুমী শহীদ হন। একাত্তরে তার লেখা দিনপঞ্জি নিয়ে প্রকাশিত হয় 'একাত্তরে দিনিলিপি' গ্রন্থটি। মুক্তিযুদ্ধে একজন মায়ের সাহসী অবস্থান ও দলিল গ্রন্থ হিসাবে মানুষের কাছে সমাদৃত হয় গ্রন্থটি। এছাড়া যুদ্ধের সময় তার স্বামী শরীফ ইমামও ইন্তেকাল করেন। আশির দশকের শুরুতে, ১৯৮২ সালে তিনি মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। প্রতি বছর একবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে চিকিত্সা নিতে হতো তাকে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রুমীর মা সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার প্রতীক হয়ে ওঠেন।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, গত ৪১ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। সেই চলমান আন্দোলনকে নির্মূল কমিটি এগিয়ে নিয়ে গেছে। জাহানারা ইমামের প্রেরণা তো ছিলই, এর সঙ্গে শাহরিয়ার কবির এ আন্দোলন গড়ে তুলতে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রতীকী গণআদালতে ছিল মূলত সুশীল সমাজের আন্দোলন যেখানে সারাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি এসে যোগ দিয়েছিল। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতাই বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে। এ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে যত গুজব, অপপ্রচার ছিল তার নিরসন ঘটেছে। এখন লক্ষ্য হচ্ছে সকল অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা এবং বিচার সম্পন্ন করা।
জাহানারা ইমামের আন্দোলন
১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। একজন পাকিস্তানি নাগরিক এবং যুদ্ধাপরাধী এই গোলাম আযমের তত্কালীন বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পুনর্বাসনে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো দেশ। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। তিনি হন এর আহ্বায়ক। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে ১৯৯২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি' গঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। এই কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ 'গণআদালত' এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক প্রতীকী বিচার অনুষ্ঠান করে। গণআদালতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দশটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।
জাহানারা ইমাম গণআদালতের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। এই গণআদালতের সদস্য ছিলেন, এডভোকেট গাজিউল হক, ড. আহমদ শরীফ, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সুফিয়া কামাল, কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, শওকত ওসমান, লে. কর্নেল (অব.) কাজী নুরুজ্জামান, লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার শওকত আলী খান।
গণআদালত অনুষ্ঠিত হবার পর সরকার ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে অজামিনযোগ্য মামলা দায়ের করে। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ২৪ বিশিষ্ট ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করে। এরপর লাখো জনতার পদযাত্রার মাধ্যমে জাহানারা ইমাম ১৯৯২ সালের ১২ এপ্রিল গণআদালতের রায় কার্যকর করার দাবিসংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পেশ করেন। ১০০ জন সংসদ সদস্য গণআদালতের রায়ের পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করেন। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, সংসদ যাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট, মহাসমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। সরকার ৩০ জুন সংসদে ৪ দফা চুক্তি করে। ১৯৯৩ সালের ২৮ মার্চ নির্মূল কমিটির সমাবেশে পুলিশ হামলা চালায় । পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন জাহানারা ইমাম।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও গঠিত হয় নির্মূল কমিটি এবং শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠলে আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন জাহানারা ইমাম। গোলাম আযমসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনকে সমর্থন দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে।
২৬ মার্চ ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা দিবসে গণআদালত বার্ষিকীতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণতদন্ত কমিটি ঘোষিত হয় এবং আরো আট যুদ্ধাপরাধীর নাম ঘোষণা করা হয়। এই আট যুদ্ধাপরাধী হচ্ছে- আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী, মোঃ কামারুজ্জামান, আবদুল আলীম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মওলানা আবদুল মান্নান, আনোয়ার জাহিদ এবং আবদুল কাদের মোল্লা।
১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে গণআদালতের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান কবি বেগম সুফিয়া কামাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে রাজপথের বিশাল জনসমাবেশে জাহানারা ইমামের হাতে জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর করেন। গণতদন্ত কমিশনের সদস্যরা ছিলেন শওকত ওসমান, কে এম সোবহান, সালাহ উদ্দিন ইউসুফ, অনুপম সেন, দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, খান সারওয়ার মুরশিদ, কবি শামসুর রাহমান, শফিক আহমেদ, আবদুল খালেক এবং সদরুদ্দিন। এই সমাবেশে আরো আট যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্ত অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময়ে খুব দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে ১৯৯৪ সালের ২ এপ্রিল চিকিত্সার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে যান জাহানারা ইমাম। এসময় তার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। ২৬ জুন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মিশিগানের ড্রেট্রয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুর তিন দিন আগে তত্কালীন বিএনপি সরকার গোলাম আযমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই পক্ষ নিলে রক্ষা নাই
মুক্তিযোদ্ধাদের স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত
সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১২, ৩০ আশ্বিন ১৪১৯
সিরাজুদ্দিন হোসেনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বর্ণনা দিলেন ছেলে শাহীন রেজা
যুদ্ধাপরাধী বিচার
Avje`i Avkivdz¾vgvb Lvb, †PŠayix gBbywÏb
Ges GKwU ARvbv Aa¨vq
http://www.amadershomoy2.com/content/2012/10/12/news0008.htm
'আশরাফ ও মঈনুদ্দীনের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ মিলেছে'
Tue, Oct 9th, 2012 3:37 pm BdST
http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?id=207317&cid=3
রাজাকারদের মুজাহিদের স্বাক্ষর করা পরিচয়পত্র দেয়া হতো
যুদ্ধাপরাধী বিচার : মাহবুব কামালের সাক্ষ্য
বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর ২০১২, ১৯ আশ্বিন ১৪১৯
eyw×Rxex nZ¨vi g~j bvqK gvBbywÏb I Avkiv‡di wePvi Abycw¯'wZ‡ZB
ag©všÍwiZ Kiv, jyUcvU, †`kZ¨v‡M eva¨ Kivmn bvbv ai‡bi Awf‡hvM Avbv n‡q‡Q|
আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন মুজাহিদ: শাহরিয়ার কবির
http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=c9817c634fbcce10748f531feed40332&nttl=20120913050520138606
শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২, ৩১ ভাদ্র ১৪১৯যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ বুদ্ধিজীবী হত্যার পলাতক তদন্ত রিপোর্ট শীঘ্রইচৌধুরী মাইনুদ্দিন ব্রিটেনে ও আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে, পলাতক অবস্থায়ই বিচার শুরুশনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২, ৩১ ভাদ্র ১৪১৯
http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A6%B9%E0%A7%80%E0%A6%A6_%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A7%80_%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B8শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
মাঈনুদ্দিন-আশরাফুজ্জামান ১৬ বুদ্ধিজীবীর ঘাতক
চৌধুরী মঈনূদ্দীন সহ তিন পলাতক যুদ্ধাপরাধী নিয়ে চ্যানেল ফোরের সেই বিখ্যাত ডকুমেন্টারিটি!
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১; মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ৩০০টির অধিক পোস্ট লিঙ্ক নিয়ে তৈরী হল সামহোয়্যার ইন ব্লগ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আর্কাইভ:
আলবদর প্রধান ছিলেন নিজামী, উপপ্রধান মুজাহিদ ॥ জেরায় শাহরিয়ার কবিরনিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১১-০৯-২০১২
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পক্ষের প্রতীক ছিলেন গোলাম আযম
যুদ্ধাপরাধী বিচার: সুলতানা কামালের জবানবন্দী
মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১২, ২০ ভাদ্র ১৪১৯আলবদর ১৯৭১ - ৯সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১২, ১৯ ভাদ্র ১৪১৯আলবদর ১৯৭১ - ৮http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2012-09-02&ni=107855রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১২, ১৮ ভাদ্র ১৪১৯শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১২, ১৭ ভাদ্র ১৪১৯
আলবদর ১৯৭১ - ৬
আলবদর ১৯৭১ - ৪
__._,_.___