শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৯ অগ্রহায়ন ১৪২০
'মিরপুরের কসাই' কাদের মোল্লা ॥ ফাঁসি হলো
০ রাত দশটা দুই মিনিটে ফাঁসি কার্যকর
০ কারাগারের প্রধান জল্লাদ শাহজাহান মিয়ার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের ফাঁসুড়ে দল মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করে
০ কারাগারের প্রধান জল্লাদ শাহজাহান মিয়ার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের ফাঁসুড়ে দল মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করে
বিভাষ বাড়ৈ/ আরাফাত মুন্না/ মশিউর রহমান খান ॥ ৩০ লাখ শহীদ আর অসংখ্য নারীর সীমাহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪২ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হলো। ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হলো একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধী 'মিরপুরের কসাই'খ্যাত জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো বাঙালী জাতির কলঙ্ক মোচনের অন্যতম এক অধ্যায়। নানা নাটকীয় অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে কার্যকর করা হয় ঘাতক কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়। এর মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধের পথে যাত্রা শুরু করল বাঙালী জাতি। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয় এই ঘাতক যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড। জল্লাদ শাহজাহান ভূইয়ার নেতৃত্বে পাঁচ জল্লাদের সহযোগিতায় এ দণ্ড কার্যকর হয়।
বৃহস্পতিবার কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন খারিজ করে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া আদেশের অনুলিপি পাওয়ার পর পরই ফাঁসি কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। রাত ৯টায় ডিআইজি প্রিজন (ঢাকা রেঞ্জ) গোলাম হায়দার, অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল ইফতেখার আলম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। প্রায় একই সময় ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইউসুফ হারুন ও কেন্দ্রীয় কারা মসজিদের ইমাম আব্দুল হাই এবং রাত সোয়া ৯টার দিকে সিভিল সার্জন আব্দুল মালেক মোল্লা কারাগারের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। রীতি অনুযায়ী, ফাঁসি কার্যকরের আগে কাদের মোল্লা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। দেয়া হয় স্বাভাবিক খাবার। শেষ মুহূর্তে গিয়ে ইমাম তাকে নফল নামাজ এবং তওবা পড়ান।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করেছে সুপ্রীমকোর্ট। বৃহস্পতিবার 'রিভিউ' আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা ও মূল আবেদনের ওপর দু'দিন শুনানির পর প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপীল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আদালত সর্বসম্মতভাবে রিভিউ আবেদন খারিজ করেছে। এ কারণে এখন আর কোন আইনগত বাধা নেই। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রায় কার্যকর করার জন্য নতুন করে আদেশের কপির প্রয়োজন নেই।
মুক্তিযুদ্ধকালে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এ ছাড়া ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরেকটি মামলা হয় কাদেরের বিরুদ্ধে। এ মামলাতেই ২০১০ সালের ১৩ জুলাই জামায়াতের এই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১১ সালের ১ নবেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি ঘটনায় তার বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক। দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। এর পক্ষকাল পর কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। এর পর সুপ্রীমকোর্টে উভয়পক্ষের দায়ের করা আপীল নিষ্পত্তি করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আপীল গ্রহণ করে এবং আসামি পক্ষের আপীল খারিজ করে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করেন সুপ্রীমকোর্ট। এর পর সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার ৮০ দিন পর গত ৫ ডিসেম্বর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। এর পর গত ৮ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই দিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লার মৃত্যুপরোয়ানা জারি করে।
কারা কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি ॥ এর আগে মঙ্গলবার সন্ধায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ফরমান আলী গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাত ১২-০১ মিনিটে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক মহল থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি জানান, ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য অপেক্ষমাণ থাকবেন ম্যাজিস্ট্রেট, ডাক্তার, সিভিল সার্জন, কারা কর্মকর্তা, পুলিশ, জল্লাদসহ সংশ্লিষ্টরা।
পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে শেষ দেখা ॥ যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার সঙ্গে কারাগারে শেষ দেখা করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। এর আগে গত মঙ্গলবারও তারা দেখা করেছিল। তবে ওই দিন কারা কর্তৃপক্ষ তাদের শেষ দেখা করার জন্য চিঠি দিয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার কাদের মোল্লার পরিবারের সদস্যরা দেখা করার জন্য আবেদন করলে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের দেখা করার অনুমতি দেয়। বৃহস্পতিবার সন্ধায় তার পরিবারের ১০ সদস্য কাদের মোল্লার সঙ্গে দেখা করে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল সাংবাদিকদের বলেন, স্ব-উদ্যোগেই তারা দেখা করতে চাইলে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি দেয়। পরিবারের অন্য আরও ৯ সদস্যকে নিয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে একটি গাড়িতে করে কারা ফটকে যান হাসান জামিল। ওই গাড়িতে তার মা সানোয়ারা জাহান ও চার বোনও ছিলেন। কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কিছু সময়ের মধ্যেই তারা কারাগারের ভেতরে ঢুকে যান। এক ঘণ্টা পর বেরিয়ে আসেন তারা।
নীতিনির্ধারক মহলের বৈঠক ॥ কাদের মোল্লার মৃত্যুদ-ের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন সুপ্রীমকোর্ট খারিজ করার পরই সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কাদের মোল্লার দ- কার্যকরের বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক শেষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কাদের মোল্লার প্রাণভিক্ষার কোন সুযোগ নেই।
এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম, রিভিউ চলে না। জেল কোড এ্যাপ্লিকেবল না। আমি প্রতিনিয়ত বলে আসছি। তারা আদালতে বিষয়টি তুলেছিলেন। আদালত এ বিষয়ে কোন অবজারভেশন দেননি। তিনি আরও বলেন, প্রাণভিক্ষা চাওয়ার কথা অনেক আগে থেকেই বলা হয়েছে। তিনি কোন সুযোগ নেননি। এখন কোন আর সুযোগ নেই।
এ বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও দুজন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল উপস্থিত ছিলেন। আইন উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোন মন্তব্য করেননি। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামও কোন কথা বলেননি।
নিরাপত্তা বলয় ॥ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন খারিজের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ নগরীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। রাজধানীর পুরানা পল্টন, নয়াপল্টন, কাকরাইল, মগবাজার, ফার্মগেট, মহাখালী ও মিরপুর গোলচত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
দুপুরের পর পরই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে দর্শনার্থীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। আশপাশের সব সড়কে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। কারাগার এলাকায় বসবাসকারী লোকজন ছাড়া কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রবেশের আগে তল্লাশি করা হচ্ছে। র্যাব, পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কঠোর নজরদারিতে রয়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা। এদিকে, যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হওয়ার পরে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু।
কারা কর্তৃপক্ষের বৈঠক ॥ কাদের মোল্লার রায়ের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া আপীল বিভাগের আদেশ হাতে পাওয়ার পর বৈঠক করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কারা মহাপরিদর্শক মাঈন উদ্দিন খন্দকার। বৈঠকে কারা বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধকালে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এ ছাড়া ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরেকটি মামলা হয় কাদেরের বিরুদ্ধে। এ মামলাতেই ২০১০ সালের ১৩ জুলাই জামায়াতের এ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১১ সালের ১ নবেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পর ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি ঘটনায় তার বিচার শুরুর আদেশ দেয় বিচারক। দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। এর পক্ষকাল পর কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। এর পর সুপ্রীমকোর্টে উভয় পক্ষের দায়ের করা আপীল নিষ্পত্তি করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আপীল গ্রহণ করে এবং আসামিপক্ষের আপীল খারিজ করে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করে সুপ্রীমকোর্ট। এর পর সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার ৮০ দিন পর গত ৫ ডিসেম্বর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। এর পর গত ৮ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই দিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। সেই পরোয়ানার ভিত্তিতে কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- কার্যকরের প্রস্তুতি শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। তার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে কাদের মোল্লা সঙ্গে শেষ দেখা করতে তার পরিবারকে চিঠি দেয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। এর পর মঙ্গলবার রাতে ঘোষণা দেয়া হয় রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। পরে নাটকীয়ভাবে মৃত্যুদ- কার্যকরের দেড় ঘণ্টা আগে কাদের মোল্লার আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মৃত্যুদ-ের রায়ে কার্যকারিতা বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন খারিজ করে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া আদেশের অনুলিপি পাওয়ার পর পরই ফাঁসি কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। রাত ৯টায় ডিআইজি প্রিজন (ঢাকা রেঞ্জ) গোলাম হায়দার, অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল ইফতেখার আলম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। প্রায় একই সময় ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইউসুফ হারুন ও কেন্দ্রীয় কারা মসজিদের ইমাম আব্দুল হাই এবং রাত সোয়া ৯টার দিকে সিভিল সার্জন আব্দুল মালেক মোল্লা কারাগারের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। রীতি অনুযায়ী, ফাঁসি কার্যকরের আগে কাদের মোল্লা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। দেয়া হয় স্বাভাবিক খাবার। শেষ মুহূর্তে গিয়ে ইমাম তাকে নফল নামাজ এবং তওবা পড়ান।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করেছে সুপ্রীমকোর্ট। বৃহস্পতিবার 'রিভিউ' আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা ও মূল আবেদনের ওপর দু'দিন শুনানির পর প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপীল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আদালত সর্বসম্মতভাবে রিভিউ আবেদন খারিজ করেছে। এ কারণে এখন আর কোন আইনগত বাধা নেই। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রায় কার্যকর করার জন্য নতুন করে আদেশের কপির প্রয়োজন নেই।
মুক্তিযুদ্ধকালে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এ ছাড়া ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরেকটি মামলা হয় কাদেরের বিরুদ্ধে। এ মামলাতেই ২০১০ সালের ১৩ জুলাই জামায়াতের এই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১১ সালের ১ নবেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি ঘটনায় তার বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক। দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। এর পক্ষকাল পর কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। এর পর সুপ্রীমকোর্টে উভয়পক্ষের দায়ের করা আপীল নিষ্পত্তি করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আপীল গ্রহণ করে এবং আসামি পক্ষের আপীল খারিজ করে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করেন সুপ্রীমকোর্ট। এর পর সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার ৮০ দিন পর গত ৫ ডিসেম্বর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। এর পর গত ৮ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই দিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লার মৃত্যুপরোয়ানা জারি করে।
কারা কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি ॥ এর আগে মঙ্গলবার সন্ধায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ফরমান আলী গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাত ১২-০১ মিনিটে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক মহল থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি জানান, ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য অপেক্ষমাণ থাকবেন ম্যাজিস্ট্রেট, ডাক্তার, সিভিল সার্জন, কারা কর্মকর্তা, পুলিশ, জল্লাদসহ সংশ্লিষ্টরা।
পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে শেষ দেখা ॥ যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার সঙ্গে কারাগারে শেষ দেখা করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। এর আগে গত মঙ্গলবারও তারা দেখা করেছিল। তবে ওই দিন কারা কর্তৃপক্ষ তাদের শেষ দেখা করার জন্য চিঠি দিয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার কাদের মোল্লার পরিবারের সদস্যরা দেখা করার জন্য আবেদন করলে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের দেখা করার অনুমতি দেয়। বৃহস্পতিবার সন্ধায় তার পরিবারের ১০ সদস্য কাদের মোল্লার সঙ্গে দেখা করে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল সাংবাদিকদের বলেন, স্ব-উদ্যোগেই তারা দেখা করতে চাইলে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি দেয়। পরিবারের অন্য আরও ৯ সদস্যকে নিয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে একটি গাড়িতে করে কারা ফটকে যান হাসান জামিল। ওই গাড়িতে তার মা সানোয়ারা জাহান ও চার বোনও ছিলেন। কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কিছু সময়ের মধ্যেই তারা কারাগারের ভেতরে ঢুকে যান। এক ঘণ্টা পর বেরিয়ে আসেন তারা।
নীতিনির্ধারক মহলের বৈঠক ॥ কাদের মোল্লার মৃত্যুদ-ের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন সুপ্রীমকোর্ট খারিজ করার পরই সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কাদের মোল্লার দ- কার্যকরের বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক শেষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কাদের মোল্লার প্রাণভিক্ষার কোন সুযোগ নেই।
এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম, রিভিউ চলে না। জেল কোড এ্যাপ্লিকেবল না। আমি প্রতিনিয়ত বলে আসছি। তারা আদালতে বিষয়টি তুলেছিলেন। আদালত এ বিষয়ে কোন অবজারভেশন দেননি। তিনি আরও বলেন, প্রাণভিক্ষা চাওয়ার কথা অনেক আগে থেকেই বলা হয়েছে। তিনি কোন সুযোগ নেননি। এখন কোন আর সুযোগ নেই।
এ বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও দুজন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল উপস্থিত ছিলেন। আইন উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোন মন্তব্য করেননি। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামও কোন কথা বলেননি।
নিরাপত্তা বলয় ॥ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন খারিজের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ নগরীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। রাজধানীর পুরানা পল্টন, নয়াপল্টন, কাকরাইল, মগবাজার, ফার্মগেট, মহাখালী ও মিরপুর গোলচত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
দুপুরের পর পরই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে দর্শনার্থীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। আশপাশের সব সড়কে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। কারাগার এলাকায় বসবাসকারী লোকজন ছাড়া কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রবেশের আগে তল্লাশি করা হচ্ছে। র্যাব, পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কঠোর নজরদারিতে রয়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা। এদিকে, যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হওয়ার পরে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু।
কারা কর্তৃপক্ষের বৈঠক ॥ কাদের মোল্লার রায়ের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া আপীল বিভাগের আদেশ হাতে পাওয়ার পর বৈঠক করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কারা মহাপরিদর্শক মাঈন উদ্দিন খন্দকার। বৈঠকে কারা বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধকালে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এ ছাড়া ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরেকটি মামলা হয় কাদেরের বিরুদ্ধে। এ মামলাতেই ২০১০ সালের ১৩ জুলাই জামায়াতের এ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১১ সালের ১ নবেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পর ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি ঘটনায় তার বিচার শুরুর আদেশ দেয় বিচারক। দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। এর পক্ষকাল পর কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। এর পর সুপ্রীমকোর্টে উভয় পক্ষের দায়ের করা আপীল নিষ্পত্তি করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আপীল গ্রহণ করে এবং আসামিপক্ষের আপীল খারিজ করে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করে সুপ্রীমকোর্ট। এর পর সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার ৮০ দিন পর গত ৫ ডিসেম্বর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। এর পর গত ৮ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই দিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। সেই পরোয়ানার ভিত্তিতে কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- কার্যকরের প্রস্তুতি শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। তার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে কাদের মোল্লা সঙ্গে শেষ দেখা করতে তার পরিবারকে চিঠি দেয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। এর পর মঙ্গলবার রাতে ঘোষণা দেয়া হয় রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। পরে নাটকীয়ভাবে মৃত্যুদ- কার্যকরের দেড় ঘণ্টা আগে কাদের মোল্লার আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মৃত্যুদ-ের রায়ে কার্যকারিতা বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৯ অগ্রহায়ন ১৪২০
Related:
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৯ অগ্রহায়ন ১৪২০
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ প্রমাণিত
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৯ অগ্রহায়ন ১৪২০
যে সাক্ষ্যে কাদের মোল্লার ফাঁসি
সুমন মাহবুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2013-09-18 19:50:09.0 BdST Updated: 2013-09-18 21:36:53.0 BdST
যে সাক্ষ্যে কাদের মোল্লার ফাঁসি
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৭ অগ্রহায়ন ১৪২০
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৭ অগ্রহায়ন ১৪২০
---------------------------------------------------------------------------------------------
Also read:
ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে আলবদর কমান্ডার আবদুল কাদের মোল্লা !
Related video:
লাকী আক্তার- Tui Rajakar Slogan leading by Lucky akter
__._,_.___