Banner Advertiser

Friday, April 11, 2014

[mukto-mona] পলায়নবাদিতার ব্যাকরণ



পলায়নবাদিতার ব্যাকরণ
জয়া ফারহানা
শেয়ার - মন্তব্য (0) - প্রিন্ট
অ-অ+

গ্রিক ভাষার শব্দ ESCAPEISM এর অর্থ খুঁজতে গিয়ে ডি. কের ডিকশনারিতে দেখা গেল লেখা আছে, কারো হাতে কাপড়চোপড় দিয়ে দৌড়ানো। সিধা বাংলায় 'পলায়নবাদিতা'। অতএব ধরে নিতে পারি, পলায়নবাদী মানসিকতা কোনো দার্শনিক মতবাদ হিসেবে মর্যাদা পায়নি। বরং পলায়নবাদিতা অপবাদের চেয়ে আরো বেশি কিছু। যদিও আইনশাস্ত্র পলায়নপ্রবণতাকে প্রায় অধিকারের মর্যাদা দিয়ে ফেলেছে। প্রাণরক্ষার স্বার্থে আক্রমণকারীকে হত্যা করলে যেহেতু ৩০১ ধারার আসামি করা হয় না, কাজেই ধরে নেওয়া যেতে পারে, নিজেকে রক্ষার জন্য পলায়নবাদিতা, এমনকি আক্রমণকারীকে হত্যা পর্যন্ত দণ্ডনীয় অপরাধ নয়। যাক! পলায়নবাদিতা অন্তত একটি মাত্রায় জায়েজ তা হলে! মানুষ তার নিরাপত্তার স্বার্থে পালাতে পারে। জায়েজ যখন- খুবই সহি কথা। পালিয়ে গিয়ে কেউ যদি পশ্চিমা সুখে সুখী থাকেন, তাতেও আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা তো ভুলে যেতে পারি না যে মানুষের মতো ইতিহাসেরও নিরাপদ থাকা প্রয়োজন। ইতিহাস বেচারাকে তো আর আমরা পালিয়ে থাকতে দিতে পারি না। ইতিহাসের একটিই পাসপোর্ট, একটিই ওয়েবসাইট, একটিই সত্য। মহাভারতের কৃষ্ণের আচরণ সমর্থন করে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন, 'লোক হিতার্থে যে মিথ্যা আচরিত হয়, তা প্রকৃতপক্ষে মিথ্যাই নয়, বরং বিশেষ প্রয়োজনে তা অবশ্যসমর্থনযোগ্য।' উত্তরে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, 'কোনোখানেই মিথ্যা সমর্থনযোগ্য নয়। শ্রদ্ধাষ্পদ বঙ্কিম বাবু বলিলেও হয় না, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বলিলেও হয় না। মাতা বলিলেও হয় না। পুত্র বলিলেও না। সত্য থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো উপায় নেই বাবু মহাশয়।' ধারণা করি, সত্যকে গ্রহণ করার ক্ষমতা যাদের কম, তারাই বোধ হয় পালিয়ে বাঁচতে চায়।

পলায়নবাদিতার ব্যাকরণ

খ্রিস্টের জন্মের আগের কবি লুক্রেসিয়াস আত্মহত্যার আগে লিখেছিলেন, 'প্রত্যেকে নিজের কাছ থেকে পালাতে চায়, কিন্তু পারে না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেবল নিজেকে ঘৃণা করে করে সে বেঁচে থাকে।' তার মানে, যিনি বহাল তবিয়তে বেঁচেবর্তে আছেন, তিনি পালিয়েই বেঁচে আছেন! দেখুন ঠিক তার বিপরীত কথাটি লিখেছেন ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে এমিল দুখাইম তাঁর 'সুইসাইড' গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন, 'সামাজিক বিধিগুলো কঠোর এবং অপরিবর্তনীয় হলে কিংবা সমাজে কোনো নিয়ম না থাকলে ব্যক্তি নিজের জন্য নিয়মের একটা জগৎ তৈরি করে নেয়। ফলে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যমান বিধিব্যবস্থা থেকে। তখন তার অন্তর্জগতের সঙ্গে বহির্জগতের সম্পর্ক হয় তুমুল সংঘর্ষসংকুল। এতে একদিকে যেমন তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, তেমনি তার মধ্যে জন্ম নেয় পলায়নপর মনোবৃত্তির। যার চূড়ান্ত প্রকাশ হচ্ছে আত্মহত্যা।' পলায়নবাদিতার প্রসঙ্গ উঠলে অনিবার্যভাবেই আসবে 'ওয়েটিং ফর গডোর' ভ্লাদিমির আর এস্টাগনের নাম। আর ব্যক্তিসর্বস্বতার এই দুনিয়াতে কাফকার 'আরশোলা' চরিত্রের মতো লুকিয়ে আছি আমরা সবাই। সব পলায়নপর মানুষ। সংস্কৃত ভাষার বহুল প্রচলিত একটি উক্তি 'যঃ পলায়তি স জীবতি।' অনুগত, বিশ্বস্ত, কৃতজ্ঞ আমলাদের জন্য নিশ্চিতভাবেই এটি মোক্ষম পন্থা। কিন্তু মির্জা গালিবের জন্য? তাঁর শায়ের 'আমি এমন কোথাও পালাতে চাই, যেখানে প্রেম আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।' প্রেমিক বটে! প্রেম বেশি থাকলে পালিয়ে বাঁচার জায়গা যে জোটে না গালিবের শায়ের থেকে বুঝলাম, আবার মোটেই প্রেম না থাকলেও মানুষ পালাতে চায়। অপ্রেমের কারণে আমরা যত্রতত্র পালাই। বারিধারায় থেকে সেলফোনে অবলীলায় বলে ফেলি আছি মিরপুর কিংবা ফোনই রিসিভ করি না। এক পক্ষের কাছে যে কর্মকাণ্ড পালিয়ে বাঁচা, অন্য পক্ষের কাছে হয়তো সেটাই মৃত্যুর কারণ।

বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের দুর্ধর্ষ হ্যাটট্রিকের পরও পালাতে পারছি না আমরা ১৬ কোটি মানুষ। প্রশ্নটি তো হেরে যাওয়া কিংবা করুণ পারফরম্যান্সের নয়, প্রশ্নটি যখন দেশ নিয়ে আর হাতে যখন কোনোই অপশন নেই। হংকং কিংবা আফগানিস্তান কেন, উজবেকিস্তানের কাছে হারলেও সবাই আছি। ঘোষণা দিয়ে বলার বিষয় নয় যে, হে বাংলাদেশের ক্রিকেটারগণ, তোমরা হারো-জেতো আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। সঙ্গে আছি বলেই তো ১৬ কোটি মানুষ ক্রিকেট বুঝে কিংবা না বুঝে অথবা অর্ধেক বুঝেও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হয়ে যাই! বিবিধ উপদেশের বন্যা বইয়ে দিই। বাংলাদেশ আমাদের সঙ্গে রক্ত-মাংস, হাড়-মজ্জায় মিশে আছে বলেই তো এত পরামর্শ, উপদেশ। পাকিস্তান টিমকে তো আর পরামর্শ দিতে যাচ্ছি না। নিঃসহায় মানুষের স্বপ্নই সম্বল বলে হয়তো যেখানে স্বপ্ন দেখেছি বাংলাদেশের ফাইনালে যাওয়ার, সেখানে টি-টোয়েন্টি ধারার ম্যাচে বাংলাদেশ যদি ৯ বল বাকি থাকতে আট উইকেটে ভারতের কাছে হারে..., তখন আমাদের পালাতে ইচ্ছে হওয়াটা অন্তত আবেগগত বিচারে দোষণীয় নয়। বাংলাদেশের প্রতি প্রেমটা ১৬ কোটি মানুষের একটু বেশি বলেই পালাতে চাই। এমন কোথাও পালাতে চাই, যেখানে বাংলাদেশ ছুঁয়ে থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশ তো ছুঁয়েই থাকে পল-অনুপল। গালিবের মতো আমাদেরও পালানোর জায়গা নেই তাই। ভালো হতো যদি এমএইচ৩৭০-এ পালানো যেত। সংসার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইলেন রাজকুমার সিদ্ধার্থ। সাত দিন ধ্যানস্থ থাকার পর অবশেষে এই সিদ্ধান্তে এলেন- জরা, রোগ, মৃত্যু থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। নির্বাণেই মুক্তি কেবল। সেই যে বৃদ্ধ বয়সে এসে বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধি হলো দুঃখ যদি না পাবে তো দুঃখ তোমার ঘুচবে কিসে? মানে দাঁড়াল এই যে দুঃখ পাওয়া ছাড়া দুঃখ থেকেও মুক্তি নেই। পালানোর কিংবা ফিরে যাওয়ার দরজা খোলা নেই। বধূ এবং শিশু শুয়ে থাকার পরও জ্যোৎস্নায় যারা ভূত দেখে, তারাই কি কেবল পলায়নবাদী? নাকি রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মতে সে-ই পলায়নবাদী, যে মানুষ আপাত বিচারে ঘোরতর সংসারী! পরমহংসের মতে, ভ্রষ্টা নারীর মন পড়ে থাকে প্রেমিকের কাছে। পাছে সে ধরা পড়ে যায়, সেই ভয়ে সে সংসারে খুবই মনোযোগী থাকে। সংসারে থেকেও তার মন সহস্র আলোকবর্ষ দূরে। একটি ঝুঁকিহীন নিরুপদ্রব জীবনের আকাঙ্ক্ষায় সংসারে থেকেও সে সংসারবিবাগী।

ছেড়ে দিন সংসারে বসবাসকারী সংসারসন্ন্যাসীদের কথা। সমাজে তাদের কোনোকালেও মূল্য ছিল না, এখনো নেই। কিন্তু আপনি যদি হন সমাজের কেউকেটাদের একজন, তাহলে আপনার পলায়নবাসনা কোনোকালেই পূরণ হওয়ার নয়। যেখানেই হোক আপনার ঠিকানা পাড়াতুতো আত্মীয়, বন্ধুর বন্ধু তস্য বন্ধু আপনাকে ঠিকই খুঁজে বের করে তদবিরের প্রাথমিক আলাপ সেরে নেবে। অসহায় তদবিরকারীর আকুল আরজিতে বিরক্ত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের বদলে পালিয়ে বাঁচবেন? পালিয়ে থাকা যদি বৃক্ষ হয়, এড়িয়ে যাওয়া তবে সেই বৃক্ষের বীজ।

এপ্রিল ১৯৭১। বাংলাদেশের আকাশে তখন ট্রেসারের আগুন। মাটিতে পাকিস্তানি সেনাদের ট্যাংক। পাকিস্তানের সাচ্চা মুকাম শান্তিবাহিনী গঠনের তোড়জোড় চলছে। সেই শ্বাপদসংকুল পথে পালিয়ে বর্ডার পার হওয়ার লক্ষ্যে লাখো মানুষের মাঝে সদ্য কৈশোর-উত্তীর্ণ তরুণও ছিল। উদ্দেশ্য ওপারে গিয়ে যুদ্ধের ট্রেনিং নেওয়া। বাংলাদেশের প্রথম সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আগরতলায় তখন মিটিংও চলছিল। সেই মিটিং থেকে একজন পালিয়ে বাঁচতে চাইলেন। বললেন, তোমাদের সঙ্গে আমি নেই। আমাকে মক্কা পাঠিয়ে দাও। যুদ্ধের চেতনা থেকে তবে সেই দিনই পালিয়েছিলেন খন্দকার মোশতাক! ৩ মে ১৯৭১। জাহানারা ইমামের জন্মদিনে ছেলে রুমী বলল, 'তোমার জন্মদিনে একটা সুখবর দিই, আম্মা। আমার যাওয়া ঠিক হয়ে গেছে। ঠিকমতো যোগাযোগ হয়েছে। পালিয়ে যুদ্ধে গেলে আরো এক মাস আগেই যেতে পারতাম। এখন তোমার মত নিয়ে যাচ্ছি। দেশের জন্য যুদ্ধে যাচ্ছি। পালিয়ে যাব কেন? পালাবই বা কেন? প্যারাডঙ্, এই যে রুমী এবং লক্ষ্মণ সেন- দুজনেই একই মাটির সন্তান, এমনকি মোশতাকও!

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, কিংবদন্তি মিডিয়া

- See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/sub-editorial/2014/04/12/71968#sthash.q3mdfqsZ.dpuf





__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___