http://www.bkagoj1.com/new/blog/2014/07/07/184503.php
†mvgevi, 7 RyjvB 2014
"সন্মানিত তথ্যমন্ত্রী, আপনি বিরোধী দলে থাকলে যে রকম নীতিমালা চাইতেন, দয়া করে তাই জনগনকে উপহার দেন"
ডিসিরা পত্রিকা বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছেন না। তথ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে মিডিয়া এসংবাদ দিয়েছে। মন্ত্রী বলেছেন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা অনুমোদিত হলে সেই আলোকে কমিশন এবং তা বাস্তবায়নে আইন হবে। কমিশনের কাজ কি হবে তারও উত্তর তিনি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কমিশন সংবাদপত্রের রেজিস্ট্রেশন, ভালমন্দ সংবাদ প্রকাশ করলে সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা বন্ধ বা সাংবাদিকরা পত্রিকা মালিকদের বিরুদ্বে অভিযোগ করলে সেগুলো দুইপক্ষের শুনানী শেষে নিস্পত্তি করবে। মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আরো বলেন, বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে এমন কিছু কথা বলা হয় যা বিষয় বিবেচনা করে কমিশন জরিমানা করতে পারবে। ইত্যাদি।
প্রথমে সংবাদটি যেভাবে এসেছিলো তা খুব সুখকর ছিলো না, তা হলো: জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার বাতিল হয়ে যাওয়া একটি ধারা ফিরে আসছে যাতে ডিসিরা সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল করতে পারবেন। এতে মুক্তমনা যে কারোই ঘাবড়ে যাবার কথা যে আবার মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ আসছে! ঢাকায় আমার সংবাদপত্রের সাথে জড়িত থাকার সময়টা, অর্থাৎ ১৯৭৮-১৯৯০, পুরোটাই কমবেশি সেন্সরশীপের যুগ। তথ্য অধিদপ্তর, সেনাছাউনি, বা উপর মহলের থেকে ডিক্টেশন আসতো, কখনো কখনো বলে দেয়া হতো কোন নিউজ যাবে বা যাবেনা। সংবাদের বজলুর রহমান এমন কিছু নির্দেশনা লিপিবদ্ব করে রেখেছিলেন, যা পরে ছাপা হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিলো।
মন্ত্রীর কথায় আশ্বস্থ হলাম। তবে পুরোপুরি নয়। কারণ তার কথায় কিছু ফাঁক আছে। যেমন ভালমন্দ সংবাদ প্রকাশ করলে বেতন-ভাতা বন্ধ বা টকশো-তে উল্টাপাল্টা বললে জরিমানার কথা তিনি বলেছেন। পুরোপুরি ব্যাখ্যা নেই, তাই মন্ত্রীকে 'বেনিফিট অব ডাউট' দেয়া যেতে পারে, কিন্তু উদ্বিগ্ন হবার যথেষ্ট কারণ আছে। যদি প্রশ্ন করা হয়, জনগণ কেমন জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা চায়? উত্তর সোজা: একটি গণতান্ত্রিক সমাজের উপযুক্ত অর্থাৎ যুক্ত্ররাষ্ট্র বা বৃটেনের মত বা নিদেনপক্ষে ভারতের মত উদার, উন্মুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রে সোয়া দু'শ বছরে সরকার কোন কাগজ বন্ধ করে নাই। আমাদের জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা এমন হওয়া দরকার যাতে একশ বছর পরে আমাদের উত্তরসুরীরা গর্ব করে বলতে পারেন, ২০১৪-এর পর বাংলাদেশ সরকার কোন মিডিয়া বন্ধ করে নাই। দেশে এ মুহুর্তে মিডিয়া মোটামুটি স্বাধীনতা ভোগ করছে, একে আরো স্বাধীন, অবাধ করতে হবে। স্বাধীনতা মানে লাগামহীনতা নয়, একথা মনে রেখেই বলা যায়, মিডিয়া দেশের প্রচলিত আইনের বাইরে নয় এবং মিডিয়াকে শায়েস্তা করতে নুতন আইনের দরকার নাই। বর্তমান তথ্যমন্ত্রী নিজে জিয়া, এরশাদ বা স্বৈরশাসনের সময় সেন্সরশীপের শিকার হয়েছেন, এর বিরুদ্বে আন্দোলন করেছেন, কথা বলেছেন; তার কাছে এমন একটি জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা চাই যাতে কেউ বলতে না পারে 'যে যায় লঙ্কা সে হয় রাবন'!
মন্ত্রী টকশো এবং জরিমানার কথা বলেছেন। টকশো'র অনেক কথা মন্ত্রীর পছন্দ নয়; সরকারের ভালো লাগার কথা নয়, জনগণ পছন্দ করে তাও নয়। তাই বলে জরিমানা করতে হবে নাকি? তাহলে তো রাজনীতিকদের কথার ওপরও জরিমানা চালু করতে হয়! টকশোওয়ালাদের ভালো কথা বা পছন্দসই কথা বলার যেমন অধিকার আছে, তেমনি অপছন্দের কথা বলার অধিকারও থাকা চাই। একেই বলে 'ফ্রিডম অব স্পীচ' বা বাক স্বাধীনতা। যার যা খুশি বলুক, বিচারের ভার থাকুক জনগনের ওপর, সরকারের ওপর নয়। কোন মনীষীর সেই বিখ্যাত উক্তিটি স্মরণ রাখা দরকার: 'তোমার একটি কথার সাথেও আমি একমত নই; কিন্তু তোমার একথা বলার অধিকার আমি জীবন দিয়েও রক্ষা করবো।' টকশো-তে কে কি বলে তাতে সরকারের খুব একটা কিছু আসে যায় না; অথবা যারা বলে তাদেরও জনগণ খুব পছন্দ করে তা নয়, মন্ত্রী অযথা এনিয়ে সময় নষ্ট করছেন। টকশো-তে অনেকে আবোলতাবোল কথা বলেন, সেটা যেমন সত্য; আমাদের মন্ত্রী বাহাদুররাও অনেকে কি তা বলেন না?
মিডিয়াকে বলা হয় ফোর্থ স্টেট। এর কন্ঠ চেপে কেউ কখনো লাভবান হয়নি। কোন বিশেষ আইন বা বাহিনী মানুষের কল্যানে আসেনা। যেমন, র্যাব। খালেদা জিয়া র্যাব সৃষ্টি করেন আওয়ামী লীগকে ঠেঙাতে। এখন নিজে এর বাতিল চান। শেখ হাসিনা নিজে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রবক্তা এবং তিনি নিজেই এর কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছেন। আসলে জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলনের বাইরে আইন করলে সরকারের কোন লাভ হয়না। আপাত: লাভ মনে হলেও পরে কাফফরা দিতে হয়। বাংলায় একটি কথা আছে, 'অপরের জন্যে গর্ত খুড়লে নিজেই ওই গর্তে পড়তে হয়।' সন্মানিত তথ্যমন্ত্রী, এমন কিছু করুন, যাতে ক্ষমতায় না থাকলেও লোকে ভালো বলে। আপনি জাসদ নেতা, আপনার অতীত কথাবার্তার সাথে বর্তমান কর্মকান্ডের মিল থাকা চাই। তদুপুরি, আপনি আওয়ামী লীগের নন, মহাজোটের, উল্টাপাল্টা কিছু হলে ভবিষ্যতে এর দায় আপনাকে নিতে হবে বৈকি। শেখ হাসিনার ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে শেষরক্ষা হবেনা। আসম আবদুর রব-কেও খেসারত দিতে হয়েছিল বটে। বুঝিনা, আমরা কেন সোজা রাস্তায় চলতে পারিনা। যা করলে সবার ভালো তা কেন করিনা। অপরের কন্ঠরোধ, 'নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রাভঙ্গের দরকারটা কি?' সন্মানিত মন্ত্রী মহোদয়, আপনি বিরোধী দলে থাকলে যে রকম নীতিমালা চাইতেন, দয়া করে জনগনকে তাই উপহার দেন। এটি হলে আপনার ভালো, সরকারের ভালো এবং দেশের জন্যে ভালো। কথায় বলে, 'শেষ ভালো যার, সব ভালো তার'।
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক
নিউইয়র্ক, ৪ঠা জুন ২০১৪।
__._,_.___