On Monday, September 15, 2014 1:12 PM, Muhammad Ali <manik195709@yahoo.com> wrote:
On Monday, September 15, 2014 1:10 PM, Muhammad Ali <manik195709@yahoo.com> wrote:
On Monday, September 15, 2014 1:10 PM, Muhammad Ali <manik195709@yahoo.com> wrote:
বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে কোথা থেকে এলো জয় পাকিস্তান, জিয়ে পাকিস্তান?
প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ন, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪
আপডেট: ৮:২৬ অপরাহ্ন, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪
শেরিফ আল সায়ার॥
বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের শেষে "জয় পাকিস্তান" বলেছেন বলে উল্লেখ করেছেন একে খন্দকার। সম্প্রতি প্রথমা প্রকাশনী থেকে একে খন্দকারের "১৯৭১: ভেতর বাহির" বইটি প্রকাশিত হয়েছে। এই বইয়ের ৩২ নং পৃষ্ঠায় তিনি উল্লেখ করেছেন, 'বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণেই যে মুক্তিযুদ্ধ অারম্ভ হয়েছিল, তা আমি মনে করি না। এই ভাষণের শেষ শব্দগুলো ছিল 'জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান'। তিনি যুদ্ধের ডাক দিয়ে বললেন, 'জয় পাকিস্তান'! এটি যুদ্ধের ডাক বা স্বাধীনতার আহ্বান, তা প্রচণ্ডভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং তর্কাতীতও নয়।…'
মূলত এই লাইনেই শুরু হয় বিতর্ক। বঙ্গবন্ধু আসলে কী বলেছিলেন? বাংলা ট্রিবিউনের গবেষণা সেল এ নিয়ে নেমেছিল অনুসন্ধানে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একে খন্দকারের 'জয় পাকিস্তান' বিষয়ে অনেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান রচিত 'বাংলাদেশের তারিখ' ও 'বাংলা ভাষার সংগ্রাম এখনো অসমাপ্ত' বই দুটির রেফারেন্স দেন। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু ভাষণের শেষে 'জিয়ে পাকিস্তান' শব্দ দুটি উল্লেখ করেন। কিন্তু যারা রেফারেন্স দেন তারা হয়তো জানেন না যে 'বাংলাদেশের তারিখ' বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণে সংশোধন করে 'জিয়ে পাকিস্তান'শব্দ দু'টি বাদ দেওয়া হয়।
সংশোধিত সংস্করণ
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একে খন্দকারের 'জয় পাকিস্তান' বিষয়ে অনেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান রচিত 'বাংলাদেশের তারিখ' ও 'বাংলা ভাষার সংগ্রাম এখনো অসমাপ্ত' বই দুটির রেফারেন্স দেন। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু ভাষণের শেষে 'জিয়ে পাকিস্তান' শব্দ দুটি উল্লেখ করেন। কিন্তু যারা রেফারেন্স দেন তারা হয়তো জানেন না যে 'বাংলাদেশের তারিখ' বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণে সংশোধন করে 'জিয়ে পাকিস্তান' শব্দ দু'টি বাদ দেওয়া হয়।
তাই প্রশ্ন উঠছে, একে খন্দকার ভাষণটি আদৌ শুনেছিলেন কিনা? নাকি তিনি হাবিবুর রহমানকেই অনুসরণ করেছেন? এছাড়াও, দু'জনের লেখায় শব্দগত পার্থক্যটাও স্পষ্ট। সাবেক বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেছেন, "জিয়ে পাকিস্তান" আর একে খন্দকার বললেন 'জয় পাকিস্তান'।
যদিও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সম্পূর্ণটা শুনে কিংবা পড়ে জিয়ে বা জয় পাকিস্তান শব্দ পাওয়া যায়নি। ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাকে বঙ্গবন্ধুর পুরো ভাষণ প্রকাশিত হয়নি। তবে ভাষণ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদগুলোর কোথায়ও "জয় পাকিস্তান" বা "জিয়ে পাকিস্তান" শব্দগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
১৯৭১ সালের ৮ মার্চ পুরো ভাষণটি প্রকাশ করে "দৈনিক পূর্বদেশ"। "সামরিক আইন প্রত্যাহার কর" শিরোনামে শেষের পাতায় ভাষণটি ছাপা হয়। প্রকাশিত ওই ভাষণের সঙ্গে বর্তমানে যে ভাষণটির সঙ্গে সবাই পরিচিত তার সঙ্গে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও পূর্বদেশে প্রকাশিত ওই ভাষণেও 'জয় পাকিস্তান' বা 'জিয়ে পাকিস্তান' এর উল্লেখ নেই।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রক্ষিত ৭ মার্চের ভাষণের অনুলিপি থেকেও দেখা যায় বঙ্গবন্ধু ভাষণ শেষ করেছেন "জয় বাংলা" দিয়ে। তাহলে 'জয় পাকিস্তান' বা 'জিয়ে পাকিস্তান' সবাই কোথা থেকে পাচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে একটু পেছনে যেতেই দেখা গেল বঙ্গবন্ধু শেষ কবে 'জয় পাকিস্তান' বা 'জিয়ে পাকিস্তান' বলেছেন।
১৯৭০ সালের ১ ডিসেম্বর 'নৌকা' প্রতীকে ভোট চেয়ে দেশবাসীর কাছে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করার আবেদন জানান বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ এই ভাষণে তিনি ৬ দফা, ১১ দফা প্রসঙ্গ তুলে ধরে ভাষণ শেষ করেন- 'জয় বাংলা', 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ" বলে।
বিরল গণশপথ ও রেসকোর্সের শ্লোগান
১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৫১ জন জাতীয় পরিষদ এবং ২৬৮ জন পূর্ব পাকিস্তান পরিষদ সদস্য ৬ দফা ও ১১ দফা বাস্তবায়নের দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করে শপথ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এই ঘটনাটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলেই ইতিহাসে বিবেচিত হয়েছে। এমনকি তৎকালীন পত্রিকায় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই এই শপথের সংবাদ প্রকাশ করা হয়। কারণ গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এই ধরনের গণশপথ তখন পর্যন্ত ইতিহাসে প্রথম।
গণশপথ নিয়ে ১৯৭১ সালের জানুয়ারির ৫ তারিখ ইত্তেফাক তাদের সম্পাদকীয়তে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। "জননেতার ঘোষণা: জনপ্রতিনিধিদের শপথ" শিরোনামে যে সম্পাদকীয় প্রকাশ হয় তার কিছু লাইন উল্লেখ করা যেতে পারে।
তেসরা জানুয়ারি ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ লোকের সামনে পূর্ব বাংলার সাত কোটি মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শুধু এদেশে নয়, সারা গণতান্ত্রিক জগতেও এক অভিনব ব্যাপার। জনপ্রতিনিধিদের শপথ করানোর রেওয়াজ সব দেশেই অাছে। কিন্তু সেটা করানো হয় পরিষদ বা পার্লামেন্টের ভিতরে। এভাবে বিশাল-বিস্তীর্ণ প্রান্তরে উদার-উন্মুক্ত অাকাশের নীচে দাঁড়াইয়া লক্ষ লক্ষ মানুষকে সাক্ষী রাখিয়া হলফগ্রহণের দৃষ্টান্ত পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রে বিরল।….
গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেন, 'বাংলার দাবির প্রতি কোনও সদস্য যদি বিশ্বাসঘাতকতা করেন, আপনারা তাঁহাকে কঠোর শাস্তি দেবেন। আমি নিজেও যদি কখনও বিশ্বাসঘাতকতা পথে পা বাড়াই, আমাকেও আপনারা অনুরূপ সাজা দিবেন, আমাকেও ক্ষমা করিবেন না।"
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণের শেষে "পাকিস্তান জিন্দাবাদ" শব্দ দুটি উচ্চারণ করেছেন। ইত্তেফাকে ১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি প্রকাশিত "রেসকোর্সের শ্লোগান" শিরোনামে সংবাদে উল্লেখ রয়েছে,
…রেসকোর্সের সমাবেশে সমাবেশের সভাপতি অাওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান নিম্নোক্ত ধ্বনি দিয়া সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেনঃ 'নারায়ে তকবির'- 'আল্লাহু আকবর', 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ', 'আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলা দেশ বাংলা দেশ', 'জাগো জাগো বাঙ্গালী জাগো' ও 'জয় বাংলা'।
অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু 'জয় পাকিস্তান' কিংবা 'জিয়ে পাকিস্তান' বলেছেন কিনা শব্দদুটি পত্রিকার পাতায় খুঁজে না পাওয়া গেলেও পাওয়া গেছে "পাকিস্তান জিন্দাবাদ"।
এই শব্দ দুটি ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারির পর বঙ্গবন্ধুর আর কোনও ভাষণে কিংবা সভায় উল্লেখ করার তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকী ৪ জানুয়ারি (১৯৭১) ছিল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। রমনা পার্ক বটমূল ছিল আয়োজনস্থল। এইদিনও শেখ মুজিব ভাষণ শেষ করেছেন 'জয় বাংলা' বলে। বস্তুত ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারির পর তিনি "পাকিস্তান জিন্দাবাদ" আর উচ্চারণ করেননি।
(তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতা করেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সহযোগী গবেষক শুভাশীষ চন্দ্র দাম)
/এস__._,_.___