জঙ্গিদের হাতেই খুন রাবি শিক্ষক লিলন?
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বাংলামেইল২৪ডটকম
ঢাকা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শফিউল ইসলাম লিলন (৩৯) হত্যার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। বাউল আর লালন সংগীত নিয়ে মেতে থাকা ওই শিক্ষককে কে বা কারা এবং কেনই বা হত্যা করে থাকতে পারে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য।
আর হত্যার ক্লু খুঁজতে মারিয়া আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে। তবে শিক্ষক লিলন হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে 'আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২' (Ansar al Islam Bangladesh - 2) নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের একটি স্ট্যাটাস নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।
রাবি শিক্ষক লিলন হত্যার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খোলা হয়েছে পেজটি। এরপর সেখানে হত্যার দায় স্বীকার করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সংগঠনটির ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে।
সেই স্ট্যাটাসে বলা হয়-
'আল্লাহু আকবার !!!
আল্লাহু আকবার !!!
আল্লাহু আকবার !!!
আমাদের মুজাহিদীনরা আজকে রাজশাহীতে এক মুরতাদকে কতল করেছেন যে তার ডিপার্টমেন্টে ও ক্লাসে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেছিল।
আল্লাহর ইচ্ছায়, আল্লাহর শক্তিতে ও আল্লাহর অনুমতিতে মুজাহিদীনরা আজকে এই মুরতাদকে কতল করেছেন।
ইসলাম বিরোধী সকল নাস্তিক-মুরতাদ সাবধান !!!'
সেই পেজে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার একটি সংবাদের বেশকিছু লাইন তুলে দিয়ে বলা হয়-'এ কে এম শফিউল ইসলামের অপরাধ- ১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে দাড়ি কাঁটা ও পাঞ্জাবি-পায়জামা না পরার শর্তের শিক্ষক নিয়োগের পর ছাত্রীদের বোরকা পরে ক্লাস না করার নির্দেশ দিয়েছে বিভাগীয় সভাপতি ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম। – দৈনিক সংগ্রাম, শনিবার ০৩ এপ্রিল ২০১০
আজ এই মুরতাদ তার যথাযথ প্রতিদান পেয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।'
'এ কে এম শফিউল ইসলামের অপরাধ- ২
এ ব্যাপারে রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. এ কে এম শফিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বদম্ভে বলেন, "এটি বিভাগীয় কোন সিদ্ধান্ত নয় কিন্তু আমি আমার ক্লাসে কোন ছাত্রীকে বোরকা পরে ক্লাস করতে দেব না"।
তিনি আরো বলেন, কোন সাংবাদিক এ নিউজ করলে তিনি তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।- দৈনিক সংগ্রাম, শনিবার ০৩ এপ্রিল ২০১০'
'এ কে এম শফিউল ইসলামের অপরাধ- ৩
"এখন নতুন করে বেশ কিছুদিন ধরে বিভাগীয় সভাপতি ও সদ্য নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক নাজমুল হকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্রীদের বোরকা পরার জন্য ক্লাসে নানা ভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে বলে একাধিক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে।
তিনি বোরখা পড়ার জন্য ক্লাসে থেকে বের করে দেয়া, দাঁড় করিয়ে রাখাসহ পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার অব্যাহত হুমকি দিচ্ছেন।
তিনি ক্লাসে মধ্যযুগীয় পোশাক বোরখা পরা যাবে না এটা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোন পোশাক হতে পারে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।
যে সব ছাত্রী চার পাঁচ বছর ধরে শ্রেণীকক্ষে বোরকা পরে আসতো তারাও বোরকা খুলে আসতে বাধ্য হচ্ছে। এবং ছোট থেকে যেসব শিক্ষার্থী বোরকা পরে আসছে তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বোরকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে এবং অনেকে ক্লাস করা বন্ধ করে দিয়েছে।
- দৈনিক সংগ্রাম, শনিবার ০৩ এপ্রিল ২০১০'
একই সময় সবগুলো স্ট্যাটাস দেয়া হয়। এমনকি পেজটি তৈরিও করা হয় একই সময়। রাবি শিক্ষক এ কে এম শফিউল ইসলাম ছাড়াও ওই পেজে আশরাফুল আলম নামে আরো একজনকে খতম করা হয়েছে বলে ছবিসহ স্ট্যাটাস দেয়া হয়। তার ছবির ওপর লাল কালি দিয়ে ক্রস চিহ্নও দেয়া হয়েছে। এছাড়া ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন, রাকিব মামুনের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে 'প্রথম প্রচেষ্টা সমাপ্ত, দ্বিতীয় প্রচেষ্টা আসছে…'। আর ব্লগার রাজিব হায়দারকে 'খতম' উল্লেখ করে ছবির ওপর লাল কালি দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেয়া হয়েছে। তাদের সেই ছবিটিই ফেসবুক পেজটির কভার পেজ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শনিবার বিকেল ৩টার দিকে মহানগরীর বিহাস এলাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শফিউল ইসলাম লিলনকে (৩৯) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মমতাজ বাংলামেইলকে জানান, রাবি শিক্ষকের মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম রয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি মারা যান।
এ ব্যাপারে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বাংলামেইলকে জানান, শফিউল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চৌদ্দপায় এলাকার বাড়িতে ফিরছিলেন। শনিবার বেলা ৩টার দিকে শফিউল ইসলাম বিহাসের সামনে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা তাকে ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা অধ্যাপক শফিউল ইসলামের মাথা ও ঘাড়ে এলোপাথাড়ী কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
এ সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তবে কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা জানাতে পারেননি ওসি আলমগীর হোসেন।
তিনি জানান, আঘাতের চিহ্ন দেখে হামলাকারীদের পেশাদার বলেই মনে হচ্ছে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
বাংলামেইল২৪ডটকম/ এমএন/ এস
রাবি শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা
__._,_.___