প্রকাশ : ০২ মার্চ, ২০১৫
খুনিরা মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা-লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যার পরিকল্পনা এক মাস আগেই করেছিল। এমন কি তাকে এক বছরের বেশি সময় ধরে ফেসবুকের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। আর এই খুনের অন্যতম নায়ক ইসলামপন্থী নামধারী উগ্র মতাদর্শের দুই ব্লগার। এদের একজন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রেদোয়ানুল ইসলাম রানা ও অপরজন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরির নেতা ফারাবী সাইফুর রহমান। এদের সার্বিক পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা একরকম নিশ্চিত।
আইনশৃংখলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, অন্তত এক বছর আগে অভিজিৎকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অভিজিৎ ও তার পরিবারের সদস্যদের অবস্থানসহ নাম-ঠিকানা বিস্তারিত সংগ্রহ করছিল সন্দেহভাজন খুনিরা। একই সঙ্গে অভিজিতের দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিল তারা। বইমেলা উপলক্ষে কবে অভিজিৎ সস্ত্রীক ঢাকা আসছেন সে খবরও তারা সংগ্রহ করেছিল। আর ১৫ ফেব্র"য়ারি ঢাকায় আসার পর থেকে খুনিরা হত্যা মিশন নিরাপদে সফল করতে সব চেষ্টা চালিয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর চরম ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার যার করুণ পরিসমাপ্তি ঘটে।
যেভাবে হত্যার হুমকি দেয়া হয় : খুনি চক্রের অন্যমত ফারাবী সাইফুর রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিজিৎকে হত্যার প্রত্যক্ষ হুমকি দেয়ার প্রমাণ রয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২৬ ফেব্র"য়ারি অভিজিৎকে হত্যার পর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফারাবীর ফেসবুকে অভিজিতের রক্তাক্ত লাশের একটি ছবি পোস্ট করে জানতে চান, 'ছবি পাইছেন কি? কি রকম অনুভূতি হচ্ছে আপনার? জবাবে ফারাবী বলেন, হ্যাঁ (ছবি পেয়েছি)। আমি গ্রেফতার হব কাল-পরশুর মাঝে।'
এর আগে গত বছর ২৭ জানুয়ারি ফারাবীর ফেসবুকে মোজাম্মেল হক নামে সন্দেহভাজন এক ব্লগার লেখেন, অভিজিৎ রায়, উমর ফারুক লুক্স, দাঁড়িপাল্লা দমাদম, সাদিয়া সুমি উজ্জা, সুব্রত শুভ, মোশাররফ হোসেন সৈকত ও দিগম্বর পয়গম্বরকে হত্যা করা সময়ের দাবি। এতে দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর হবে। ৩১ জানুয়ারি ফারাবীর ফেসবুকে আরেক সন্দেহভাজন ব্লগার আসাদুজ্জামান লেখেন, 'অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা বাংলার মুসলমানদের জন্য ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।' ২৫ জানুয়ারি দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে উগ্রপন্থী ব্লগার সাহাবুদ্দীন ইলিয়াস নিজের ফেসবুক পোস্টে বলেন, মুক্তমনা ওয়েবসাইটের প্রতিটি নাস্তিক ব্লগারকে পাথর মেরে হত্যা করা বাংলার মুসলমানদের জন্য ফরজ। দুপুর ১টায় তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন আরেক চরমপন্থী ব্লগার মুন্না রাহী। রাত ৯টা ১১ মিনিটে মাসুম খান নিলয় নামের সন্দেহভাজন আরেক ব্লগার লেখেন, 'আমাদের ইমানি কাজ হচ্ছে, তাকে (অভিজিৎ)সহ সব নাস্তিককে হত্যা করা।'
রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে ব্লগার ইকবাল বিন আহমেদ লেখেন, 'অভিজিতের বাপেরে (অজয় রায়) আগে মারতে হবে। ওই শালা ইত্যাদিতে (জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি) অ্যাক্টিং করে।' ১০টা ৪৬ মিনিটে রুহিন আহমেদ নামের এক ব্লগার লেখেন, 'কুকুরের বাচ্চাকে খুন করতে হবে।' ১০টা ৫৭ মিনিটে 'তুফান বাবা' ছদ্মনামের ব্লগার লেখেন, 'যদি ওকে পাই, আমি কাঁচা খেয়ে ফেলব। কুত্তার বাচ্চাটাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে আমি ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে চাই।' রাজভীর হোসাইন বিন সাখাওয়াত নামের উগ্রপন্থী এক ব্লগার লেখেন 'ওই ওয়েবসাইটের (অভিজিতের মুক্তমনা ওয়েবসাইট) অ্যাডমিনের খোঁজ লাগান। কই থাকে আর মোবাইল নাম্বারেরও খোঁজ নেন। টাকা দরকার হলে আমি দিব।'
চরমপন্থী ব্লগার খালিদ বিন কালাম লেখেন, 'এই কুত্তাকে চিনিয়ে দিন, আমি তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিতে রাজি আছি।' ৯ ফেব্র"য়ারি ১০টা ১৭ মিনিটে মান্নান রাহী নামের এক ব্লগার লেখেন, 'থাবা বাবার (খুন হওয়া ব্লগার রাজীব হায়দার) পরিণতির কথা ওকে স্মরণ করে দিলেই তো হয়।' ১০টা ২৬ মিনিটে আবদুল আহাদ হানাফি লেখেন, 'নরকের কীটগুলা আবার নড়াচড়া আরম্ভ করতেছে।' ১০টা ২৮ মিনিটে মূল সন্দেহভাজন ফারাবী সাইফুর রহমান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তার অনুসারী আরেক ব্লগার মান্নান রাহীকে উদ্দেশ করে লেখেন 'অভিজিৎ রায় আমেরিকায় থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে। তাই আমাদের সাথী ভাইয়েরা যারা আমেরিকায় থাকেন তারা ওর ব্যাপারে খোঁজ-খবর লাগান।' এরপর ২৮ জানুয়ারি ফারাবী তার ফেসবুকে অভিজিৎ রায়ের পরিবারের সদস্যদের একটি ছবি আপলোড করেন। সেখানে লেখা হয়, 'এই হল অভিজিৎ রায়, তার স্ত্রী বন্যা আহমেদ ও তার মেয়ে। এরা সবাই আমেরিকার লুজিয়ানা প্রদেশের নিউ অরলিন্স সিটিতে থাকে।'
এভাবে সন্দেহভাজন উগ্র ইসলামপন্থীরা অভিজিৎকে হত্যার জন্য নানা মন্তব্য করে। ২৬ জানুয়ারি রাত ৩টা ১১ মিনিটে রুবেল নায়েক নামের এক ব্লগার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, 'অভিজিৎ কুত্তারে কোপানোর মতো মুসলিম নাই? তারে মারা ফরজ।' এর জবাবে তাহমিদ আলাভি রাত ৩টা ২৪ মিনিটে লেখেন অভিজিৎ রায়ের মতো লোক গুলারে কোপায়া থেঁতলায়া শেষ করে ফেলা উচিত।' ব্যোমকেশ বক্সী নামের আরেক ব্লগার লেখেন, 'ধর ধর ধর, ধরে… আল্লাহর নামে জবেহ কর।'
নজরদারিতে ২০ ব্লগার : তদন্তসংশ্লিষ্টরা মূল সান্দেহভাজন ফারাবী ও রানাসহ তাদের মতাদর্শের অন্তত ২০ জনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, টুইটার ও মোবাইল ফোনের ওপর নজরদারি করছে। ইতিমধ্যে এদের ফেসবুক ও ব্লগ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। এই গ্র"পের অন্যরা হলেন, মোজাম্মেল হক, সাকিব আফ্রিদী, রানা মাসুদ, আসাদুজ্জামান, সাহাবুদ্দীন ইলিয়াস, মান্নান রাহী, মমিন মমিনুল হক, দিলওয়ার হুসেন, রুবেল নায়েক, তাহমিদ আলভি, ব্যোমকেশ বক্সী, ইকবাল বিন আহমেদ, রুহিন আহমেদ, সাইফ আল ইসলাম, তুফান বাবা, রাজভীর হুসাইন বিন সাখাওয়াত, তাওহিদুল ইসলাম, খালিদ বিন কালাম ও আবদুল আহাদ হানাফি।
৩০ দিনের সাইট : র্যাব সূত্র জানায়, দৃশ্যত হত্যাকাণ্ডের দায় 'আনসার বাংলা-৭' নামের একটি উগ্রপন্থী সংগঠন স্বীকার করেছে। অভিজিৎকে হত্যার পর যে টুইটার অ্যাকাউন্টে এর দায় স্বীকার করে টুইট করা হয় সেটি মাত্র ৩০ দিন আগে খোলা হয়। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের মাত্র ২ দিন থেকে এটি ব্যবহার করা হচ্ছিল। আর হত্যাকাণ্ডের পর দায় স্বীকার করে বক্তব্য পোস্ট করার পরপরই এটি বন্ধ করে দেয়া হয়। খুনিদের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ রোববার যুগান্তরকে বলেন, বেশ কয়েকটি 'গুরুত্বপূর্ণ ক্লু' নিয়ে তারা কাজ করছেন। ফারাবী ও রানাসহ বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। শিগগিরই জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
http://khabor.com/archives/46236
http://www.jugantor.com/first-page/2015/03/02/228380
Avbmviæjøvi Ici `vq Pvwc‡q AwfwR‡Zi nZ¨vKvixiv cvi cv‡"Q!
AwfwRr nZ¨vi cÖavb m‡›`nfvRb dvivex AvUK
ivwKeyj myenvb : gy³gbv eø‡Mi cÖwZôvZv... we¯—vwiZ
__._,_.___