গাইবান্ধার গুলিবিদ্ধ সৌরভ; মা আমি কি আর কোনদিন হাঁটতে পারব না?
Saturday, October 3, 2015 || Time : 11:49:11 AM
তোফায়েল হোসেন জাকির,গাইবান্ধা প্রতিনিধি: মা আমি কি আর কোনদিন হাঁটতে পারব না? আমি কি আর স্কুলে যেতে পারব না? কেন এমপি আমার পায়ে গুলি করেছে? আমিতো কোন অন্যায় করিনি মা, অন্যায় করিনি। এ সব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে গুলিবিদ্ধ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সৌরভ মিয়া। এ সময় শিশুটির মা সেলিনা বেগম ও বাবা সাজু মিয়ার দুচোখ গড়িয়ে ঝরে পানি। ছেলের এমন অবস্থায় তারাও যেন বাকরুদ্ধ। তবে শিশুটি এখন আশঙ্কামুক্ত বলে হাসপাতাল পরিচালক জানিয়েছেন। আহত শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের পিস্তলের গুলিতে সে আহত হয়। তবে সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৮ নম্বর শিশু সার্জারি বিভাগের বিছানায় শুয়ে সৌরভ মিয়া বলেন, সকালে আমি হাঁটতে বের হই। হেঁটে গোপালচরণ এলাকায় পৌঁছলে একটি গাড়ি আসতে দেখে সে পাকা রাস্তা থেকে নেমে কাঁচা রাস্তায় চলে যায়। কিন্তু গাড়িটি তার পাশে এসে থামে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ি থেকে এমপি আমার পায়ে গুলি ছুড়তে থাকে। গুলি আমার দু'পায়ে বিদ্ধ হয়। আমি সেখানেই চিৎকার করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমার চাচা শাহজাহান মিয়া আমার চিৎকার শুনে দৌঁড়ে আমার দিকে আসছিলেন। এসময় এমপি পিস্তল বের করে চাচার দিকে ধরলে চাচাও ভয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যান। পরে আমার চিৎকারে লোকজন ছুটে আসার আগেই এমপি গাড়ি নিয়ে চলে যান। লোকজন ও আমার চাচা এসে আমাকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে যাবার পথে এমপির লোকজন বাধা দেয়।
পওে এক পর্যায়ে কাঁদতে থাকে সৌরভ। কাঁদতে কাঁদতেই বলে, কি অপরাধ ছিল আমার, কেন তিনি আমাকে গুলি করলেন। এখন আমি কিভাবে স্কুলে যাব। আমি কি আর হাঁটতে পারব না। সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাব?' সৌরভ সুন্দরগঞ্জ গোপালচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। সৌরভের বাবা ফেরি করে গ্রামা লে হাড়ি পাতিল বিক্রি করে সংসার চালান। হাসপাতালের বিছানায় সৌরভের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তার মা সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, লোকজন এসে বলছিল তোমার সৌরভকে গুলি করেছে এমপি। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার এই ছোট নিষ্পাপ শিশুটিকে কেউ গুলি করতে পারে না। কিন্তু তুবও মনটা মানছিল না। দৌঁড়ে ছুটে যাই হাসপাতালের দিকে গিয়ে দেখি আমার বাবা সৌরভ রক্তে ভিজে রয়েছে। আর কিছু বলতে পারি না, জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। হাসপাতালে কথা হয় সৌরভের বাবা সাজু মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এমপি আমার ছেলেকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখন কি হবে আমার ছেলের, কি হবে বলেন আপনারা। আমি ফেরি করে সংসার চালাই। কিভাবে আমার ছেলের চিকিৎসা করাব। এসব কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্য এমপি'র লোকজন নানাভাবে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। সৌরভের চাচা শাহজাহান মিয়া বলেন, সকালে হাটতে হাটতে কিছুদূর যাওয়ার পর পর কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। এরপর শুনতে পাই শিশুর কান্নার আওয়াজ। চিৎকার করে বলছে বাবা বাঁচাও বাঁচাও, মরে গেলাম। কিছুদুর যেয়ে দেখি আমার ভাতিজা মাটিতে পড়ে আছে, পাশেই রাস্তার উপর একটি গাড়িতে আমাদের গাইবান্ধা-১ আসন সুন্দরগঞ্জের এমপি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন বসে আছেন সেই গাড়িতে। আমি গাড়ির কাছাকাছি যাওয়া মাত্র এমপি আমার দিকে পিস্তল তাক করে গুলি ছোড়ার চেষ্টা করে। আমি ভয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যাই।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক শুভ কুমার দাস জানান, তার দুপায়ে তিনটি গুলি লেগেছে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে রোগী এখন অনেকটা আশঙ্কামুক্ত। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এএসএম বরকতুল্লাহ জানান, শিশুটি আশঙ্কামুক্ত। শিশুটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। আমিও সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম শুক্রবার বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ সৌরভকে দেখতে আসেন। তিনি শিশুটির কাছে ঘটনার বিস্তারিত শোনেন এবং তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।
গ্লোবাল নিউজ ২৪ ডটকম/রিপন/ডেরি
http://theglobalnews24.com/details.php?id=55245
শিশুকে গুলি অতঃপর আত্মগোপনে এমপি লিটন!
Saturday, October 3, 2015 || Time : 12:47:47 PM
http://theglobalnews24.com/details.php?id=55254
কিভাবে এমপির বিরুদ্ধে মামলা চালাব?
Saturday, October 3, 2015 || Time : 10:37:12 AM
http://theglobalnews24.com/details.php?id=55241/
__._,_.___