Banner Advertiser

Friday, December 11, 2015

[mukto-mona] খোলা চোখে: একাত্তর ও ‘ক্ষমার রাজনীতি’



খোলা চোখে

একাত্তর ও 'ক্ষমার রাজনীতি'

হাসান ফেরদৌস | আপডেট:  | প্রিন্ট সংস্করণ
    

অলংকরণ: তুলিডিসেম্বর মাস এলেই একাত্তরে পাকিস্তানিদের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রশ্নটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই প্রশ্ন এখনো কার্যত অমীমাংসিত, তার গুরুত্ব সে কারণেই। পাকিস্তান মনে করে, ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এই প্রশ্নের সমাধান হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের অবস্থানও ভিন্ন। একদল মনে করে, পাকিস্তানকে সরকারিভাবে ক্ষমা চাইতে হবে, সেই ক্ষমা প্রার্থনার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। অপর দল মনে করে, ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়ে বিব্রত করা ঠিক হবে না।
বিষয়টি ইতিহাসের পাতা খুঁড়ে দেখা যাক। ক্ষমা প্রার্থনা না করলেও একধরনের দুঃখ প্রকাশ পাকিস্তান ১৯৭৪ সালেই করেছিল। সে বছর এপ্রিল মাসে দিল্লিতে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলন শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমদের কথা উদ্ধৃত করে বলা হলো, (একাত্তরে) যে অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে, পাকিস্তান তার জন্য নিন্দা ও গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে। অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে প্রস্তুত সে বিবৃতির ভাষা ছিল এই রকম: 'হিজ গভর্নমেন্ট (অর্থাৎ পাকিস্তান) কনডেমড অ্যান্ড ডিপলি রিগ্রেটেড এনি ক্রাইম দ্যাট মে হাভ বিন কমিটেড।' লক্ষ করুন, মূল ঘোষণাপত্রের কোথাও পাকিস্তান 'গণহত্যা' শব্দটি ব্যবহার করেনি। এমনকি 'দুঃখিত' বলে যে শুকনো বিবৃতি তারা দিল, তার সুরটি এই রকম যে ১৯৭১-এ 'অপরাধ' হয়ে থাকলেও হয়ে থাকতে পারে। হয়ে থাকলে পাকিস্তান তার জন্য দুঃখিত, আর না হলে তো কথাই নেই।
একই বিবৃতিতে আরও বলা হলো, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (ভুট্টো) বাংলাদেশের জনগণের কাছে এই বলে আবেদন করছেন যে সমঝোতার স্বার্থে তারা যেন বিগত ঘটনা ভুলে যায় এবং ক্ষমা প্রদর্শন করে। বাংলাদেশ যে ক্ষমা করেছে, সে কথাও খুব স্পষ্টভাবে জানালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। সেই বিবৃতিতে বলা হলো, 'শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছেন যে ১৯৭১-এ তাঁর দেশে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, তিনি চান সে অতীত ভুলে নতুন করে যাত্রা শুরু হোক।'
১১ এপ্রিল ১৯৭৪ নিউইয়র্ক টাইমস 'পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চেয়েছে' শিরোনামে তার দিল্লি প্রতিনিধি বার্নাড উইনরবের এক নাতিদীর্ঘ প্রতিবেদন ছাপে। তাতে বলা হলো, 'যদিও পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনা সরাসরি ছিল না, যতটা সরাসরি বাংলাদেশ দাবি করেছিল, কিন্তু ভারতীয় ও বাংলাদেশি কর্মকর্তারা মনে করেন, পাকিস্তান এ কথা স্বীকার করেছে যে ১৯৭১-এ তাদের সৈন্যবাহিনীর কেউ কেউ মাত্রাতিরিক্ত কাজ করেছে।' পত্রিকাটি জানাল, চুক্তিপত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেন পাকিস্তানকে 'গণহত্যা'র জন্য অভিযুক্ত করেছেন, তবে বৃহত্তর মৈত্রীর স্বার্থে পাকিস্তানের প্রতি তাঁর দেশ ক্ষমা প্রদর্শন করেছে।
এরপর আরও দুবার পাকিস্তান সরকার সরকারি পর্যায়ে একাত্তরের ঘটনাবলির জন্য 'দুঃখ প্রকাশ' করে। দুবারই তারা 'গণহত্যা' শব্দটি এড়িয়ে যায় এবং একবারও ক্ষমা প্রার্থনার কথা উল্লেখ করেনি। ১৯৭৪ সালের জুন মাসে ঢাকায় সরকারি সফরে আসেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। সে সময় এক নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি বলেছিলেন, 'একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য আমি শোক প্রকাশ করছি।' সে সভায় তিনি ' আপনাদের কাছে তওবা করছি' বলেও বিলাপ করেন। নিউইয়র্ক টাইমস তাঁর সেই কুম্ভীরাশ্রুকে 'ভুট্টোর ক্ষমা প্রার্থনা' শিরোনামে প্রথম পাতায় খবর ছেপেছিল। তবে সেবার ঢাকায় বাংলাদেশের মানুষের প্রতি যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ভুট্টো করেন, তাতে স্পষ্ট ছিল, ক্ষমা প্রকাশ তো নয়ই, একাত্তরের গণহত্যার জন্য তাঁর বিন্দুমাত্র অনুশোচনাও ছিল না।
১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে যে সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে, ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি তারা এই দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা বিবেচনা করেনি। এমনকি নব্বইয়ের দশকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর বিএনপি নতুন করে ক্ষমতা গ্রহণের পরও ক্ষমার প্রশ্নে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ব্যাপারটা ইতিমধ্যে মীমাংসিত। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী ছিলেন এবং ২০০৬ সালে সে দেশে তিনি পাঁচ দিনের সরকারি সফর করেন।
২০০২ সালে, পাকিস্তানি সামরিক শাসক জেনারেল মোশাররফের ঢাকা সফরের সময় একাত্তরের গণহত্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মোশাররফ মন্তব্য খাতায় লিখলেন, 'আপনাদের পাকিস্তানি ভাই ও বোনেরা একাত্তরের ঘটনাবলির জন্য আপনাদের বেদনার সঙ্গে একাত্মতা বোধ করে।' পরে রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় মোশাররফ তাঁর দুঃখের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বললেন, 'এই ট্র্যাজেডি, যা আমাদের দুই দেশের ওপর ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে, তার জন্য আমরা দুঃখিত।'
ভুট্টোর মতো এই জেনারেলও চাতুর্যের সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করলেন, একবারও ক্ষমা চাইলেন না। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, মোশাররফের এই শুকনো 'দুঃখ প্রকাশ'কে ক্ষমতাসীন বিএনপি শুধু স্বাগত নয়, তাকে রীতিমতো বাহবা দেয়। খালেদা জিয়া সেই ভোজসভায় তাঁর পূর্বপ্রস্তুত লিখিত বক্তব্যে জানালেন, 'একাত্তরের ঘটনাবলির জন্য এমন খোলামেলা বক্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই বক্তব্য, সন্দেহ নেই, পুরোনো ক্ষত মেটাতে সাহায্য করবে। আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই এবং ভাইয়ের মতো একযোগে কাজ করতে চাই।'
বলা বাহুল্য, সে সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার সে বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে। প্রতিবাদ হিসেবে তারা মোশাররফের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের এক নির্ধারিত সাক্ষাৎ বাতিল করে দেয় এবং ৩০ জুলাই ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল পালন করে। বঙ্গবন্ধু নিজে ১৯৭৪-এ জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পেছনে না তাকিয়ে সামনে তাকানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই দলের নতুন নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিল, পাকিস্তানের সঙ্গে নিঃশর্ত বন্ধুত্ব করতে তারা প্রস্তুত নয়।
বস্তুত, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার নতুন করে ক্ষমা প্রার্থনার দাবিটি তোলে। সে সময় থেকে প্রতিবছর ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ বিষয়টি উত্থাপন করায় তা ওই দেশটির সঙ্গে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের কাঁটা হয়ে ওঠে। ২০১২ সালে গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার প্রশ্নে অনড় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করায় পাকিস্তান হতবাক হয়ে গিয়েছিল।
এই দুই দলের অবস্থানের ভিন্নতা বোঝার জন্য ২০০২ সালের সেই ভোজসভায় খালেদার বক্তব্যের প্রতি আরেকবার মনোযোগ দেওয়া যাক। খালেদা বলেছিলেন, 'পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন পরিণত আকার নিয়েছে। এই সম্পর্ক জোরদার করতে আমরা বদ্ধপরিকর।' শুধু তা-ই নয়, সেই ভোজসভার পর অতি বিগলিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা মহামান্য পাকিস্তানি প্রেসিডেন্টের এই সফরের সময় ক্ষমা প্রার্থনার মতো বিষয় আলোচনা করে তাঁকে বিব্রত করতে চাই না।' অন্য কথায়, খোদ বাংলাদেশ সরকার তার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে জানিয়ে দিল, ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি নিয়ে আর কথা বাড়িয়ে কাজ নেই।
মজার ব্যাপার হলো, খোদ পাকিস্তানেই একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী মোশাররফের শুকনো দুঃখ প্রকাশকে যথেষ্ট নয় বলে তা প্রত্যাখ্যান করেন। করাচির ডন পত্রিকায় সে সময় ভাষ্যকার আমির আকিল লিখেছিলেন, 'সবাই বলছে এখন সময় এসেছে ক্ষমা করার ও পুরোনো ঘটনা ভুলে যাওয়ার। আমাদের ক্ষমা করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে শুধু বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু ভুলে যাওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, তার জবাবে বলা যায়, বাংলাদেশ সে ঘটনা কখনোই ভুলবে না, আর আমাদের (পাকিস্তানিদের) সে ঘটনা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। ১৯৭১-এর ঘটনাবলির পেছনে যে সত্য নিহিত, তা এখনো আমাদের চৈতন্যে প্রবেশ করেনি, অথবা তা আমাদের সম্মিলিত স্মৃতির অন্তর্ভুক্ত হতে দেওয়া হয়নি। আর সে জন্যই প্রয়োজন সে সময় কী ঘটেছিল এবং কেন ঘটেছিল, তা উপলব্ধি করা। যাতে এই ঘটনা আর কখনো না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই দরকার এই উপলব্ধির।'
হ্যাঁ, আকিল যথার্থই বলেছেন। ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি পাকিস্তানিদের নিজেদের দায়ভার, তাদের চৈতন্যের শুদ্ধির জন্যই তা প্রয়োজন। প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তারা কাকে দেখে, একজন খুনিকে, নাকি একজন ঘাতকের অনুতপ্ত উত্তরসূরিকে? এ প্রশ্নের জবাব কেবল তারাই দিতে পারে। পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার পক্ষে সেখানে জনমত গড়ে তুলছেন সাংবাদিক হামিদ মিরসহ আরও অনেকে।
প্রশ্ন হলো, পাকিস্তান যদি আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়, তাহলে কি আমরা একাত্তরের সেই খাণ্ডবদাহন ভুলে যাব? ভুলে যাব ধর্মের নামে কোনো রক্তগঙ্গা বয়ে গিয়েছিল বাংলার মাটিতে? প্রতিবছর ডিসেম্বরে আমরা সে ঘটনা স্মরণ করি নিজের জন্মকথার সেই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে বারবার মনে করিয়ে দিতে। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানকেও মনে করিয়ে দিতে চাই, তার হাতে এখনো রক্তের দাগ, সময়ের স্রোতে সে দাগ মোছেনি, মুছবেও না।

হাসান ফেরদৌস: যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি।

http://www.prothom-alo.com/opinion/article/708850/




__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___