ইতিহাসে পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাব
আমাদের সময়.কম
আরিফুর রহমান: বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাদেশের ভাষা শহীদ দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারিকে দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান। বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিদে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের বাঙ্গালীরা যে আন্দোলন করছিলেন ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে তা চূড়ান্ত রুপ লাভ করে। ভাষার দাবিতে সেদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। সেই মিছিলে চালানো হয় গুলি। ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন নারীরাও। কিন্তু সেই নারী ভাষা সৈনিকদের কথা তেমনাটা শোনা যায়না কেন?
ভাষা আন্দোলনে নারীদের অবদান নিয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সেদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করবার যে সিন্ধান্ত হয়, সেই মিছিল যখন বের হয় তার পুরোভাগেই ছিলেন ছাত্রীরা। মিছিল যখন বেরিয়ে পরিপূর্ণভাবে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল বেশ কয়েকজন ছাত্রী মিছিলের সামনেই ছিল। কাজেই ভাষা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ পুর্ণমাত্রায় ছিল বলা যেতে পারে। কারণ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা হাতে গোনা যেত।
কিন্তু ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী নারীরা কারা এবং তাদের নাম কেন শোনা যায়না এ সম্পর্কে আনোয়ার হোসনে বলেন, এটা আমাদের একটি দুর্ভাগ্য যে আমরা আমাদের ইতিহাস সঠিকভাবে সংরক্ষণ করিনা। যেমনা করিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যা নিয়ে বিকৃতির পরিমাণই বেশি। ঠিক একইভাবে আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আমরা সংরক্ষণ করিনি। তবে অন্তত কয়েকজন মহিয়সী নারীর কথা বলতে পারি। একজন প্রফেসর সুফিয়া আহমেদ, তারপরে হালিমা বেগম, প্রতিভা মুর্শিদ্দী, রওশনরা বাচ্চু এদের নাম আমরা সবাই জানি। এরা বাদে আরও অনেকে ছিলেন কিন্তু তাদেও নাম সংরক্ষণ করা হয়নি।
যে নারীদের কথা আপনি বলছেন অনেক শোনা যায় তাদের কথা সাধারণ মানুষ জানেই না এক্ষেত্রে এখন করনীয় কি হতে পারে এ সম্পর্কে আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম উত্তরটা হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিকতার একটা প্রভাব ইতিহাসে রয়ে গেছে। তারই প্রভাবে শুধু পুরুষদের নামই উচ্চারিত হয়েছে, নারীদের নাম উচ্চারিত হয়নি সেটা দু:খজনক। সবসময় আমি একটা দাবি জানিয়েছি আসছি ভাষা আন্দোলনের একটি সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা হওয়া দরকার। যা আজও হয়নি, বিচ্ছিন-বিক্ষিপ্ত রচনা আছে। এমন একটি ইতিহাস প্রণয়ণের দায়িত্ব বাংলা একাডেমিকে নিতে হবে কারণ ভাষা আন্দোলন থেকে বাংলা একাডেমি উঠে এসেছে।
ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস রচনায় পদক্ষেপ সম্পর্কে আনোয়ার হোসেন বলেন, পদক্ষেপ হচ্ছে ইতিহাসে যারা পশিক্ষিত গবেষক অর্থ্ৎা যারা রীতি-পদ্ধতি মেনে গবেষণা শিখেছেন, গবেষণা করেছেন তাদের সমন্বয়ে বাংলা একাডেমির নেতৃত্বে একটি কমিটি হওয়া দরকার এবং যে কমিটিতে ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করা অনেক ব্যক্তিত্ব্য যারা বেঁচে আছেন তাদেরকে সদস্য করে নেয়া দরকার। অবশ্য আশির দশকে গোড়ার দিকে এমন একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল যার সাথে আমিও সম্পৃক্ত ছিলাম। কিন্তু নানা সমস্যা ও জটিলতার কারণে প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস প্রণয়ণের জন্য নতুন করে উদ্যোগ নেয়া দরকার।
বিবিসি বাংলা থেকে নেয়া
http://www.amadershomoys.com/unicode/2016/02/21/72492.htm#.VslcX30rJSN
'মিছিলের পুরোভাগেই ছিলেন ছাত্রীরা'
http://www.bbc.com/bengali/news/2016/02/160221_bangla_language_movement_women_contribution_rally
__._,_.___