রোববার ভোররাতে ঢাকার খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে শরীফুল ওরফে
জানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
ওই ভিডিওতে ব্যাগ হাতে অভিজিৎ ও বন্যার পেছনে মোবাইল হাতে এক যুবককে হাঁটতে দেখা যায়। অভিজিৎরা একবার থামলে ওই যুবকও থামে। এরপর অভিজিৎরা চলতে শুরু করলে ওই যুবককেও হাঁটতে দেখা যায়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অভিজিৎ রায় হত্যার পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করেছিল শরীফ।
"বইমেলায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার দিন তার গতিবিধির উপর নজর রাখছিল শরীফ। অভিজিৎ কোথায় যাচ্ছে, কোন পথ দিয়ে বই মেলায় এসেছে, কোন পথ দিয়ে বের হয়, তা সে মোবাইলে এসএমএস দিয়ে তার সংগঠনের সদস্যদের জানিয়েছিল।"
নিহত শরীফুল নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের 'অপারেশন বিভাগের' 'গুরুত্বপূর্ণ সদস্য' ছিলেন বলে পুলিশের দাবি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ছাত্র শরীফের বাড়ি খুলনা এলাকায়। তিনি একটি বেসরকারি এনজিওতে চাকরি করতেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ৩০ বছর বয়সী এই যুবক সাকিব, সালেহ, আরিফ ও হাদী নাম ব্যবহার করে পরিচয় গোপন করে আসছিলেন। তাকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা ছিল।
অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে মুক্তমনা ব্লগসাইট পরিচালনাকারী অভিজিৎ থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। লেখালেখির কারণে জঙ্গিদের হুমকিতে থাকার মধ্যেও গত বছর বইমেলার সময় স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি।
এই স্থানেই খুন হন অভিজিৎ রায়
অভিজিৎ ও বন্যা এবং তাদের অনুসরণকারী
২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎকে। তার সঙ্গে থাকা বন্যাও হামলার শিকার হয়ে একটি আঙুল হারান।
পুলিশ কর্মকর্তা মাশরুক বলেন, আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের ছয় সদসের একটি দল অভিজিতের উপর হামলায় জড়িত ছিল।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই এক চা দোকানি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, তিনি দুজন হামলাকারীকে অভিজিৎ ও বন্যাকে চাপাতি দিয়ে কোপাতে দেখেন। হামলাকারী দুজনকে দুদিকে পালিয়ে যেতেও দেখেছিলেন তিনি।
শরীফ
মাশরুক বলেন, "শরীফ ও তার সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে বই মেলায় গিয়ে হত্যার ঘটনাটি কিভাবে ঘটাবে, কোথায় অভিজিৎ রায় আসতে পারে আর কীভাবে তারা পালিয়ে যাবে, সে পরিকল্পনা করে রেখেছিল।"
পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তবে বন্দুকযুদ্ধে নিহত শরীফ ছাড়া তাদের কেউই হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়নি বলে অনেকটা নিশ্চিত পুলিশ কর্মকর্তারা।
শরীফ ছাড়া বাকি পাঁচজনের বিষয়েও গোয়েন্দারা তথ্য পাচ্ছেন জানিয়ে মাশরুক বলেন, "একজন মোটা লোক সেখানে ছিল। সে সম্ভবত পুরনো ঢাকার বাসিন্দা। ওই যুবকটি প্রযুক্তি সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখে। বাকি চারজনের শারীরিক বর্ণনাসহ কিছু তথ্যও পেয়েছে গোয়েন্দারা।"
বাকিদের গ্রেপ্তারের বিষয়েও আশাবাদী এই পুলিশ কর্মকর্তা।
অভিজিৎ রায়
অভিজিতের পর বেশ কয়েকজন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট খুন হন, যার সবগুলোতে শরীফের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে দাবি করেন উপ-কমিশনার মাশরুক।
"ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল শরীফ। প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টার দিন লালমাটিয়ায় বাড়ির বাইরে অবস্থান করছিল এবং ওয়াশিকুর বাবু হত্যা, আশুলিয়ায় রিয়াজ মোর্শেদ বাবু হত্যারও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিল সে।"
গত ১৫ জুন আনসারুল্লাহ সদস্য সুমন হোসেন পাটোয়ারিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1170835.bdnews