Banner Advertiser

Tuesday, April 25, 2017

[mukto-mona] মোজাম্মেল হক, বীর প্রতীক : দেশমাতৃকার বীর সন্তান (মুক্তিযুদ্ধে অপারেশন মোনায়েম খান কিলিং)



মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনো

গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর
"মোজাম্মেল হক (বীর প্রতীক) - দেশমাতৃকার বীর সন্তান"

১৯৭১-এ শাহীনবাগের স্টাফ ওয়েল ফেয়ার হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক। মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পরই চাচাতো ভাই বকুল, গিয়াস ও সাঈদের সঙ্গে পরামর্শ করে যুদ্ধে যান। প্রথমবার খাবারের কষ্ট ও চোখ ওঠা 'জয়বাংলা' রোগের ভয়ে ফিরে আসেন। গ্রামের অগ্রজ রহিমুদ্দীন মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে গ্রামে আসেন। রহিমকে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তিনি সাহসের পরীক্ষা চান। জুন কি জুলাই মাসে রহিমুদ্দীনের সহযোগিতায় একটি বিদেশী পতাকাওয়ালা বাড়িতে গ্রেনেড ছুড়েন। পরদিন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়, 'দুষ্কৃতকারীরা বিদেশী রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে গ্রেনেড হামলা করেছে!' রহিমুদ্দীনের সাহসের পরীক্ষায় পাস করে মায়ের কাছ থেকে ২৪৬ টাকা নিয়ে ত্রিপুরায় মেলাঘর ট্রেনিং সেন্টারে যান। সেখানে ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর হায়দারের সম্মতিতে গেরিলা ট্রেনিং নেন। ২১ দিনের ট্রেনিং শেষে ১৫ জন গেরিলা যোদ্ধার সাথে 'ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গেরিলা গ্রুপ' তৈরি হয়। এর গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন এমএন লতিফ। মেজর হায়দার মোজাম্মেল হককে 'মোনায়েম খান কিলিং অপারেশন'-এর দায়িত্ব দেন। ওই সময় মোজাম্মেল হক মেজর হায়দারকে শর্ত দিয়ে বলেন, 'অপারেশন সফল হলে আমি আপনার কোমরের রিভলবারটা চাই!' মেজর হায়দার হাসিমুখে সম্মতি দেন।

'ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গেরিলা গ্রুপ' এলাকায় আসে। মোজাম্মেলের মাথায় তখন একটাই চিন্তা 'অপারেশন মোনায়েম খান।' মোনায়েম খানের গোয়ালা জব্বার চাচার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি রাখাল শাজাহানের সঙ্গে সম্পর্ক করার পরামর্শ দেন। শাজাহানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়েন। এ সময় শাজাহান বলে, 'মোনায়েম খান একটা জানোয়ার! আমাকে বেতন তো দেয়ই না, উল্টো নানা নির্যাতন করে। পাঁচবার বাসা থেকে পালিয়েছি। প্রতিবার পুলিশ দিয়ে আমাকে ধরে এনেছে। মুক্তিরা এত মানুষ মারে, এই ব্যাটাকে মারতে পারে না!' আরেকটু খাতির জমিয়ে 'অপারেশন মোনায়েম খান' সম্পর্কে শাজাহানকে জানালে তিনি সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

'অপারেশন মোনায়েম খান' কিভাবে সফল হলো এর একটি বিশদ বর্ণনা দিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বীর প্রতীক। তার এই বর্ণনা নিচে তুলে ধরা হলোঃ-

"একদিন বিকালে চটের ব্যাগে স্টেনগান, দুটি ম্যাগাজিন, একটি হ্যান্ড গ্রেনেড আর একটি ফসফরাস বোমা নিয়ে রাখাল শাজাহানের কাছে হাজির হই। মোনায়েম খানের বাসায় গিয়ে পরপর ২ দিন ব্যর্থ হই। প্রথমবার সন্ধ্যায় মোনায়েম খানের বাসায় ঢুকে গেটের পাশের কলা গাছের ঝোপে বসে ছিলাম। একটু পরে শাজাহান এসে জানায়, 'মোনায়েম খানের শরীর খারাপ। তিনি দোতলায় উঠে গেছেন।'

সেদিন অপারেশন স্থগিত রেখে বনানীর খ্রীস্টান পাড়ায় ইটের স্তূপে অস্ত্রের ব্যাগটি লুকিয়ে রাখি। অন্য একদিন সন্ধ্যায় অস্ত্রের ব্যাগ নিয়ে শাজাহানের সঙ্গে আবার মোনায়েম খানের বাসায় যাই। একটি উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক বাল্বের আলোয় চারপাশের সব কিছু পরিষ্কার দেখাচ্ছিল। অপারেশনের সুবিধার্থে সেই বাতিটি ইট দিয়ে ভেঙে ফেলি। ভাঙা বাল্ব দেখে বাসার লোকজন 'চোর চোর' বলে চিৎকার শুরু করে। বাসায় পাহারারত অবাঙালি পুলিশ সদস্যরা হুইসেল বাজিয়ে টর্চ দিয়ে চোর খুঁজতে থাকে। আমি বিপদ দেখে সরে যাই। '৭১-এর ১৩ অক্টোবর আবার অভিযান শুরু করি। এবার সহযোগী হিসেবে সঙ্গে নেই আমার চাচাতো ভাই আনোয়ারকে। সন্ধ্যার পর মোনায়েম খানের বাসার ভেতর কলা গাছের ঝোপে দু'জন বসে থাকি। একটু পরে শাজাহান এসে জানায়, 'আজ অপারেশন সম্ভব।' মোনায়েম খান, তার মেয়ের জামাই জাহাঙ্গীর মোঃ আদেল, শিক্ষামন্ত্রী আমজাদ হোসেন বাসার নিচ তলার ড্রইংরুমে বসা। একটি সোফায় তিনজন। মাঝে মোনায়েম খান। আমি গোয়ালা জব্বার চাচা আর রাখাল শাজাহানকে জামা-কাপড় নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে যেতে বলি। অস্ত্র তাক করে আমরা দুজন ড্রইংরুমের দিকে এগিয়ে যাই। আমার প্ল্যান ছিল স্টেনগানের একটি ম্যাগাজিন পুরো খরচ করবো মোনায়েম খানের ওপর। বাকি দুজনকে আরেকটি ম্যাগাজিন দিয়ে ব্রাশফায়ার করবো। ব্যাকআপ আর্মস হিসেবে হ্যান্ড গ্রেনেড আর ফসফরাস বোমা তো আছেই।

ড্রইংরুমের দরজাটি খোলা ছিল। দরজার দিকে মুখ করে তিনজন একটি সোফায় বসা। আমি স্টেনগান দিয়ে ব্রাশফায়ার করি। কিন্তু সিঙ্গেল ফায়ার হয়, গুলিটি মোনায়েম খানের পেটে লাগে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বাকি দুজন ভয়ে 'বাঁচাও, বাঁচাও' চিৎকার শুরু করে। আমার স্টেনগান জ্যাম হয়ে যায়। আর ফায়ার হয় না। আমি ম্যাগাজিন বদলে ফায়ার করার চেষ্টা করি, তাতেও কাজ হয় না। আনোয়ার ভাই সেফটি পিন খুলে গ্রেনেড ছুড়ে মারেন। এবারও ভাগ্য খারাপ। গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত না হয়ে বরং সেটি দেয়ালে লেগে আমাদের কাছেই ফিরে আসে। এরই মধ্যে বাড়িতে থাকা অবাঙালি পুলিশ সদস্যরা মাথা নিচু করে ওপরের দিকে ক্রমাগত ব্ল্যাংক ফায়ার করতে থাকে। আমরা দেয়াল টপকে সেখান থেকে পালাই।

দৌড়ে গুলশান লেকের কাছে পৌঁছে দেখি জব্বার চাচা আর শাজাহান আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তারা তিনজন সাঁতরে লেক পাড়ি দেন। কিন্তু আমার পক্ষে স্টেনগান নিয়ে সাঁতরে লেক পার হওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। একটি কোষা নৌকায় আস্তে আস্তে গুলশান ২ নম্বর ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছি। এদিকে গোলাগুলির শব্দে ক্যান্টনমেন্টের দিক থেকে একের পর এক পাক আর্মির গাড়ি মোনায়েম খানের বাসার দিকে যেতে থাকে। গুলশান ২ নম্বর ব্রিজটির ওপর আর্মির চেক পোস্ট ছিল। আমি ধরা পড়ার ঝুঁকি নিয়েই ব্রিজের নিচ দিয়ে একটু একটু করে ক্রলিং করে ভাটারায় পৌঁছি।

ভাটারা বাজারে একটি চায়ের দোকানে আনোয়ার, জব্বার ও শাজাহান আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। পথে ইস্রাফিল খোন্দকারের সঙ্গে দেখা। তাকেই প্রথম মোনায়েম খান গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর দেই। স্টেনগান কাঁধে করে ওই দিনই প্রথম গ্রামের মানুষ আমাকে দেখে। আমি শীতে কাঁপতে থাকি। আনোয়ার ভাইকে স্টেনগান দিয়ে বলি, আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে! এরপর আমি জ্ঞান হারাই। রাতে জ্ঞান ফিরে এলে দেখি বাড়ির লোকজন আমাকে ঘিরে আছে। বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয় ভেবে আনোয়ার ভাইসহ অন্যরা রূপগঞ্জে চলে যায়। আমি বাড়ির বাংলা ঘরে ঘুমাই।

আমার এক চাচা মালেক মাস্টার রেডিও পাকিস্তানে সকাল ৭টার খবর শুনছেন। খবরে প্রচার হয় 'রাতে আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে মোনায়েম খান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন।' সকালে আমি বাড়ির বাংলাঘরে ঘুমিয়ে আছি। মালেক চাচা এসে খুব জোরে বারবার দরজা ধাক্কাচ্ছিলেন। আমি ঘুম চোখে দরজা খুলতে জানতে চাই কি হইছে? তিনি বললেন, 'কি অইছে জানো না, রাইতে আকাম কইরা শুইয়া আছো! মোনায়েম খান মইরা গেছে। মিলিটারি বাড়িত আইলো বইলা, তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বাইরো।' তখন আমি নিশ্চিত হলাম যে, আমার গুলিতে মারা গেছে পাক গভর্নর মোনায়েম খান।"

........................................................
(সামগ্রিক ইতিহাস চর্চার লক্ষ্যকে ধারণ করেই "মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনো"। নিয়মিত কনটেন্ট যুক্ত হচ্ছে এখানে। পেজটিতে 'লাইক' দেয়ার মাধ্যমে অনুসরণ করুন। এখানকার পোস্টগুলো পড়ুন, ভাবুন, 'লাইক' দিন, মন্তব্য করুন, প্রশ্ন করুন, তর্ক করুন। ভাল লাগলে পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিন। টুইটারে - http://twitter.com/History1971 , অথবা "@History1971" আইডিটিও অনুসরণ করুন নিয়মিত আপডেট এর জন্য।)


https://www.facebook.com/Muktijuddhergolpo/photos/a.131064856975006.33531.129242633823895/889842031097281/?type=3&theater


'71 history & beyond

 

http://twitter.com/History1971 




অপারেশন মোনায়েম খান কিলিং

বিপ্লব রহমান 

https://mm-gold.azureedge.net/Articles/biplob_rahaman/monayem_killing.html


মোনায়েমের হত্যাকারী দুঃসাহসী মোজাম্মেল হকের স্মৃতিচারণ -

Nov 10, 2016 - ঢাকার বনানীর যে বাড়িতে ঢুকে মোজাম্মেল খুন করেন মোনায়েমকে, সেই বাড়ি এত দিন মোনায়েমের পরিবারের দখলেই ছিল। সম্প্রতি এর দখল নিল বাংলাদেশ সরকার। মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ সরকারের বীর প্রতীক সম্মান পেয়েছিলেন। তিনি মারা যান ২০০০ সালের ২৭ ডিসেম্বর। তাঁর এই স্মৃতিচারণটি পুনঃপ্রকাশিত হল। বানান অপরিবর্তিত।

গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর "মোজাম্মেল হক... - মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনো ...

গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর "মোজাম্মেল হক (বীর প্রতীক) - দেশমাতৃকার বীর সন্তান". ১৯৭১-এ শাহীনবাগের স্টাফ ওয়েল ফেয়ার হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক। মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পরই চাচাতো ভাই বকুল, গিয়াস ও সাঈদের সঙ্গে পরামর্শ করে যুদ্ধে যান। প্রথমবার খাবারের কষ্ট ও চোখ ওঠা 'জয়বাংলা' রোগের ভয়ে ...

মুক্তিযুদ্ধের টুকরো স্মৃতি


"আইয়ুব,মোনায়েম দুই ভাইএক দড়িতে ফাঁসি চাই", "ঢাকা না পিণ্ডি, ঢাকা, ঢাকা", "এগার দফা, এগার দফা মানতে হবে", "ছয় দফা, এগার দফা ...
, "আইয়ুব, মোনায়েম দুই ভাই, এক দড়িতে ফাঁসি চাই", "ঢাকা না পিণ্ডি, ঢাকা, ঢাকা", "এগার দফা, এগার দফা মানতে হবে", "ছয় দফা, এগার দফা মানতে হবে, মানতে হবে।"





__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___