যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ নেতাদের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক আচরণ
সুব্রত বিশ্বাস : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানের চাপিয়ে দেওয়া দ্বিজাতি-তত্বের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সে কলঙ্কিত অধ্যায়ের পতন ঘটিয়ে জন্ম নেয় ধর্মনিরপেক্ষ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। যেখানে ধর্ম থাকবে সরকারের বাহিরে। রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি হবে সকল ধর্মের প্রতি সমান। কোন ধর্ম সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হবে না এবং একক ভাবে কোন ধর্ম বিশেষ মর্যাদা পাবে না। কিন্তু স্বৈরাচারী এরশাদ '৮৯ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ফলে এরশাদের এ অগণতান্ত্রিক সাম্প্রদায়িক অপকর্মটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রয়োজন ছিল। তারই প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে গঠিত হয় হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদ। কারণ সংখ্যালঘুরাই মূলত নিগৃহীত হওয়ার মুখোমুখি হয়। এক্ষেত্রে সংখ্যাগুরুরা যতটুকু প্রতিবাদী হওয়া উচিত ছিল তা হতে দেখা যায়নি। ফলে সংখ্যালঘুদেরই শুরুতে প্রতিবাদে উদ্যোগী হতে হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্যোগেই সংগঠনটি গঠিত হয়। ফলে পরবর্তীতে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে বা তুলতে দেখা যায়। নেতৃত্বে থাকা কিছু ব্যক্তির আচার-আচরণ, কর্মকান্ড মাঝে মধ্যে এরূপ প্রশ্নের মূখোমুখি করেছে।নিউইয়র্কেও একই দ্বন্দ্বের কারণে সংগঠনে বিভক্তি ও ভাঙ্গন ঘটতে দেখা গেছে। শুধু বিভক্তি নয়, বহু গ্রুপে বিভক্ত। অতীতে নেতৃত্বদানকারীদের কেউ বর্তমান কমিটির কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নেই। কেন্দ্রের কিছু নেতৃত্বলোভী ব্যক্তির আশির্বাদে জনৈক কর্মকার ও জনৈক দাসের করায়াত্তে ক্ষুদ্র একটি গ্রুপ বর্তমানে কেন্দ্রের অনুমোদিত অংশ। যদিও তাদের প্রতি সাধারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোন সমর্থন সহযোগিতা নেই। সংখ্যালঘুদের প্রয়োজনে কোন কর্মকান্ড পরিলক্ষিত না হলেও নেতৃত্ব ঠিকই আকড়ে ধরে আছেন। বছর খানেক আগে বিভিন্ন গ্রুপের আলাদা আলাদা এক সাংবাদিক সম্মেলন হয়। সেখানে সংখ্যালঘু দাবির পরিবর্তে অহেতুক বাংলাদেশে গো-হত্যা বন্ধের অপ্রয়োজনীয় দাবি তুলে কমিউনিটিতে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি করে। এরূপ ধ্যান-ধারণা ও মনেবৃত্তির পরিচায়ক এরা সকলেই।
সম্প্রতি রিতা বসু নামের জনৈকা বাংলাদেশী মহিলা ইমিগ্রেশন ইন্টাভিউ-এর প্রয়োজনে ঐক্য পরিষদের নেতাদের কাছে একটি চিঠির অনুরোধ জানিয়েছিলেন। বিভিন্ন গ্রুপের নেতাদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারেন কর্মকার ও দাসই হলেন বর্তমান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রের অনুমোদিত গ্রুপ। তারাই কোন প্রকার সার্টিফিকেট দেওয়ার অধিকার রাখেন বা দিতে পারেন। যে কাজটি অতীতে রতন বড়–য়া, শিতাংশু গুহ, নবেন্দুবাবুরা করতেন। রিতা বসু বিভিন্নজনের সহযোগিতায় কর্মকার ও দাসের শরণাপন্ন হন। ঘটনা ব্যাখ্যার পর ব্যবস্থা হিসেবে প্রথমে ৩০ ডলার দিয়ে সংগঠনের সদস্য হতে বলা হয়। তাদের নির্দেশ মতো সদস্য হওয়ার জন্য যথারীতি ৩০ ডলার প্রদান করেন। বিনিময়ে তাকে একটি রিসিপ্ট দেওয়া হয়। কিন্তু না, পরবর্তীতে সমস্যা দেখা দেয় মহিলার নামের পেছনে রহমান থাকা নিয়ে। উল্লেখ্য, রীতা বসু ধর্মত একজন হিন্দু মহিলা এবং স্বামী মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। উভয়ের কেউই নিজেদের ধর্ম পরিবর্তন করেননি। এই অস্বাভাবিক অবস্থা আমাদের দেশের সামাজিক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমস্যার বিষয় একথা আমরা সকলেই জানি। যদিও ক্ষেত্র বিশেষে বিষয়টি হয়তো সমস্যা নয়। তবে বেশির ক্ষেত্রে বিশেষ মফস্বল অঞ্চলে বিষয়টি যে জটিল সমস্যা বলাইবাহুল্য। তাই বাধ্য হয়ে দেশত্যাগ করে আমেরিকায় আসা। দিন দু'য়েক পর তাকে জানানো হয়, তিনি যে হিন্দু তা প্রমাণস্বরূপ কাগজপত্র জমা দিতে। রীতা বসু যথারীতি প্রমাণের জন্য ঢাকেশ^রী মন্দিরে মায়ের শ্রাদ্ধসহ পূজাপার্বনের কিছু ছবি জমা দেন। কিন্তু তাতে মিঃ কর্মকার ও দাস সন্তোষ্ট হতে পারেননি। পারেননি সম্ভবত তার স্বামী মুসলিম হওয়া এবং বিয়ে করার কারণে। তাই সার্টিফিকেট প্রদানে সোজাসুজি অপারগতার কথা না জানিয়ে হিন্দু প্রমাণের জন্য আরও কাগজপত্র জমা দেওয়ার কথা বলে এড়িয়ে যাবার অপচেষ্টা করেন। এজন্য রীতা বসুর হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শাহী চৌধুরী সহ অনেকেই অনুরোধ করেন। কিন্তু কারো অনুরোধ রাখা হয়নি। অনেকেই মনে করেন, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোন থেকেই মিঃ কর্মকার ও দাস রীতা বসুকে সার্টিফিকেট দেননি। রিতা বসু ধর্ম পরিবর্তন করেননি বটে, এবং তার প্রমাণ দিলেও সার্টিফিকেট না দেওয়ার কারণ সম্ভবত স্বামী মুসলিম। কিন্তু সেজন্য সার্টিফিকেট না দেওয়ার কারণ অনেকের কাছে বোধগম্য নয়।
বিষয়টি জেনে অনেকেই তার নিন্দা জানিয়েছেন। অনেকে মন্তব্য করতে শুনেছি, নেতা হওয়া ও পরিচিতি পাওয়ার নামে সংখ্যালঘু দাবি আদায় বা আন্দোলন হলো এদের মুখোশ। মূলত এরা চরম সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি পোষণ করেন। তারই প্রকাশ ঘটেছে ঘটনার মধ্য দিয়ে।
__._,_.___