বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম
মুক্তিযোদ্ধা ড. মহসিন আলী
নিউইয়র্ক, আমেরিকা
১৫ই অগাস্ট ২০২০
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের আগস্টের শুরুতে ৬৪টি জেলার জন্য ৬৪ জন গভর্নর নিযুক্ত করেন। বাবু শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীকে নাটোর জেলার গভর্নর করা হয়। নাটোরের বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরী আমার সরাসরি নেতা ছিলেন কারণ আমি আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী এবং নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার ছিলাম। তাঁর সাথে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তাকে আমি "কাকাবাবু" বা "শঙ্কর কাকা" বলে সম্বোধন করতাম। ১৯৭৫ সালের ১৪ই আগস্ট সকাল ১০টা নাগাদ , আমি শের-ই-বাংলা নগরের সংসদ ভবনের এমপি হস্টেলে কাকাবাবুর সাথে দেখা করতে যাই। তাঁর নির্দেশে আমি প্রতিদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যেতাম এবং সে সময় তাঁর সঙ্গে প্রায় সারাদিন কাটাতাম।
সেদিন হঠাৎ শঙ্কর কাকা আমাকে নাটোরে গিয়ে একটি বিশাল অভ্যর্থনার আয়োজন করতে বলেন। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিযুক্ত নাটোর জেলার নতুন ও প্রথম গভর্নর হিসেবে এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি নাটোরে যাবেন তাই। কাকাবাবু নাটোর ও গুরুদাসপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ফোন করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং অন্যান্য আওয়ামী সংগঠনগুলোকে সেই অভ্যর্থনা আয়োজনে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। রাতের বাসে রওয়ানা হবো বলে গুরুদাসপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ থেকে আমার কর্মীদের সাথে কথা বলে তাদেরকে বলি আহমেদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে মোটরসাইকেলে আমাকে তুলে নিতে।
সেই অনুযায়ী, আমি সন্ধ্যায় নাটোরের জন্য বাসে উঠি। আরিচা থেকে নাগরবাড়ি পর্যন্ত যমুনা নদী পার হতে সে সময় প্রায় ৬ ঘণ্টার মতো সময় লেগেছিলো। অবশেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোর ৩টায় আহমেদপুর বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছাই। জাফর চেয়ারম্যান এবং আরও ২ জন কর্মী আমার জন্য ২টি মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তারা আমাকে গুরুদাসপুর থানা সদরের কাছে চাঁচকৈর বাজারে নিয়ে যান প্রথমে। তারপর জাফর ভাই আমাকে তার শ্বশুর জনাব আসমত তালুকদারের বাড়ীতে নিয়ে যান। তখন প্রায় ভোর ৪টা বেজে গেছে। ঐ বাড়ীতে কিছু খাবার খাওয়ার পর আমরা ভোর ৫টায় ঘুমাতে গেলাম। বাস যাত্রার ক্লান্তির কারণে সেদিন ঘুমোতে আর দেরি হলো না।
হঠাৎ ঘুমের মধ্যেই "বঙ্গবন্ধু"- শব্দটা শুনতে পাই অন্য কারো কন্ঠে। কেউ একজন আমার দরজায় কড়া নাড়ছিলো। ততক্ষণে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। আমি দরজা খুলে দেখি জাফর ভাই, তার শ্বশুর এবং শাশুড়ি। তারা রীতিমতো কাঁপছিলেন। তাদের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না। জনাব আসমত তালুকদার আমাকে ভাঙ্গা কন্ঠে বললেন যে, বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছেন এবং সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। সেই মুহূর্তে তার কথা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি তাকে বলেছিলাম এটা হতে পারে না, এটা অসম্ভব! তারপর তিনি রেডিওটা এনে আমার হাতে দিয়ে রেডিওর ঘোষণা শুনতে বললেন। এরপর রেডিওতে শুনলাম যে, মেজর ডালিম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার ঘটনা এবং সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিচ্ছেন। রেডিওতে খবরটা শোনার পর আমার কোন সন্দেহ ছিল না যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে এবং সামরিক আইন জারি করা হয়েছে।
সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ জাফর ভাইকে নিয়ে গুরুদাসপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব ইসমাইল শাহের বাড়ীতে যাই। আমরা তাঁর শ্বশুর জনাব হাকিম সরকার (গুরুদাসপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি), জনাব এনতাজ আলী মোল্লা (গুরুদাসপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক), জবোতুল্লাহ প্রামাণিকের (বা্টুল ভাই) (গুরুদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) সাথে যোগাযোগ করি। সবার সাথে যোগাযোগ করে দেশের রাষ্ট্রপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত নেই এবং এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ বিচারের দাবী জানাতে চাই। আমরা তখন আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী সংগঠনের কর্মী ও নেতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাথেও যোগাযোগ করি। গুরুদাসপুর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে আমি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের চাঁচকৈর বাজারে একসাথে মিলিত হওয়ার আহ্বান জানাই একটা প্রতিবাদ সভা ও শোকযাত্রা বের করার জন্য। দুপুর ১২টায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ ও শ্রমিকলীগের কর্মী এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হয়। তারপর একটা সংক্ষিপ্ত বৈঠক করি যেখানে আমরা সকলে মিলে প্রতিবাদ মিছিল এবং বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাওয়ার শপথ নেই।
বৈঠক শেষে আমরা গুরুদাসপুর চাঁচকৈর বাজারে একটি প্রতিবাদ মিছিল করি যেখানে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবী করি। আমরা গুরুদাসপুর থানার দিকে যাচ্ছিলাম। আমাদের দেখে লোকেরা খুব ভয় পেয়ে গেলো। আমাদের মিছিলে খুব অল্প সংখ্যক লোক ছিলো। থানায় পৌঁছানোর আগেই, একদল পুলিশ আমাদের মিছিল থামিয়ে দেয় এবং আমাদের বাড়ী ফিরে যেতে বলে। তারা আমাদের উপর হামলা করার এবং গ্রেফতার করার হুমকি দেয়। জনাব হাকিম সরকার, এনতাজ মোল্লা, ইসমাইল শাহ, জবোতুল্লাহ প্রামাণিক এবং আমি থানার ওসির সাথে দেখা করতে যাই। যদিও গতকাল পর্যন্ত তিনি আমাদের ভালো বন্ধু ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে তার আচরণেও পরিবর্তন চলে আসে। আমাদের সতর্ক করে দেন যাতে মিছিল ভেঙ্গে বাড়ী ফিরে গিয়ে লুকিয়ে থাকি। অন্যথায় উনি আমাদের গ্রেফতার করতে বাধ্য হবেন। আমরা তার কথা শুনে ফিরে এসে মিছিলে যোগ দেই। আমাদের সাথে যারা ছিলো তারা একরকম ভীতিতে পড়ে যায়। হঠাৎ পুলিশ আমাদের মিছিলে হামলা চালায় এবং গ্রেফতার করার হুঁশিয়ারি দেয়। মিছিল ভেঙ্গে যায় এবং পুলিশ আমাদের তাড়া করে। আমরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হই।
সেদিন সন্ধ্যায় আমরা একটা গোপন জায়গায় একত্রিত হলাম। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আমাদের সাথে যোগ দেন। আমরা আমাদের সেই গোপন বৈঠকে মুস্তাক-জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে একত্রে মিলে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ঠিক তেমনি কয়েক সপ্তাহের ভেতরে আমরা একত্রে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে শুরু করি। আমি প্রথম কয়েক সপ্তাহ ধরে চাঁচকৈর ও গুরুদাসপুরের আশেপাশের বিভিন্ন বাড়ীতে লুকিয়ে ছিলাম। তারপর আমি চলনবিল এলাকায় গিয়ে কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে আমাদের দলের জন্য নিয়ে আসি। ইসমাইল শাহ, হাকিম সরকার, জবোতুল্লাহ প্রামাণিক, ইয়াসিন ডাক্তার এবং অন্যান্যদের বাড়ীতে আমাকে আশ্রয় দেওয়া হয়। তারপরে আমি তারাশ থানার ধামাইচ এলাকায় চলে আসি গুরুদাসপুর থানার পুলিশের নাগালের বাইরে।
আমি আরেকটা বড় সমস্যার সম্মুখীন হই। "গণমিলন"- প্রকল্প নামে একটা এনজিও চালাতাম আমি। ১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারি ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত অস্ত্র জমা দান সভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, তোমরা যারা ২ বছরের শিক্ষা বিরতি দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতির পুনর্বাসনে যোগ দিতে চাও, তারা অবশ্যই যোগ দিতে পারো। দেশের কল্যাণের স্বার্থে তোমাদের এগিয়ে আসা উচিত। আমি তখন বঙ্গবন্ধুর আদেশ পালন করলাম। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে না গিয়ে নিজেকে এবং আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্বাসনের জন্য নিয়োজিত হলাম। আমি গুরুদাসপুর থানায় একটি এনজিও চালু করি যার মাধ্যমে আমরা তেভাগা (তিন অংশীদারি) খামার, গণশিক্ষা, ক্ষুদ্রঋণ, নারী কর্মসংস্থান, কুটির শিল্প, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা এবং অন্যান্য গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের মত প্রকল্প বাস্তবায়ন করি। পুলিশ গণশিক্ষা কার্যক্রমের রাত ও বিকেলের স্কুল বন্ধ করে দেয়, তেভাগা খামারের সকল পাওয়ার পাম্প বন্ধ করে দেয়। আমার এনজিও-এর অনেক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয় এবং এনজিও অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানের সমস্ত বই এবং জরুরী কাগজপত্র কেড়ে নেয় তারা। বিশেষ করে, তেভাগা খামারের কৃষকরা তাদের চাষ চালিয়ে যেতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হোন। ধান ক্ষেত পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কুটির শিল্পের কর্মীরা তাদের বিপণন সুবিধা থেকে বঞ্ছিত হোন। আমি তাদের কোনভাবেই সাহায্য করতে পারিনি সেসময়।
চলবে...
At PAF Shaheen School (now BAF Shaheen College), Dhaka, in 1967, everybody took a glimpse of a tall, well-built student with a light moustache, unkempt hair, wearing thick, black-framed spectacles in khaki trousers and a blue school uniform shirt. Every time I saw the senior student, he was ... www.dhakatribune.com |
><((((o>><((((o><o))))><><((((o>
+1-718-713-4364 ePhone
+1-863-774-1849 eFax
Email: saleemsamad@hotmail.com
Twitter: @saleemsamad
Skype: saleemsamad
Facebook: https://www.facebook.com/saleem.samad
Blog: http://bangladeshwatchdog.blogspot.com/
__._,_.___
Posted by: "Dr. M. Mohsin Ali" <drmohsinali@yahoo.com>
****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration:
Call For Articles:
http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68
http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585
****************************************************
VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/
****************************************************
"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
-Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190