সারাদেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। যখন জীবনের রঙধনু তুলে যুদ্ধাপরাধের কলঙ্কমুক্ত করার প্রত্যয়ে এগিয়ে আসছে আমাদের আলোকিত সময়; ঠিক তখনই যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকগোষ্ঠি ছাত্র শিবির সক্রিয় হয়ে উঠেছে দল ভারি করার জন্য। নিচ্ছে নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয়। যে কৌশলের কারনে যুদ্ধাপরাধীী সমর্থক গোষ্ঠি হয়েও পার পেয়ে যাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের হাত থেকে। মধ্যখান থেকে আমাদের মেধাবী মননগুলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে নাম মাত্র সম্মাননা আর সনদ পত্রের কাছেভ কেননা, সারাদেশের সকল মেধাবীদেরকে যুদ্ধাপরাধী সমর্থক গোষ্ঠিতে ভেড়াতে বিশেষ এই কৌশল অবলম্বন করছে কুচক্রি ছাত্র শিবির। একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেধাবী তরুণদের দলে ভেড়াতে বিশেষ কৌশল নিয়েছে জামায়াত-শিবির। এ কৌশলেরই অংশ হিসেবে কিশোর কন্ঠ, ফুলকঁড়ি, কানামাছি, ডাকটিকিট, ছাত্র সংবাদসহ বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধীী সমর্থক সংশ্লিষ্ঠ প্রকাশনা তুলে দেয়ার পাশাপাশি দেশব্যাপী এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিচ্ছে তারা। নতুন প্রজন্মের কাছে জামায়াতকে আরো পরিচিত করে তোলার পাশাপাশি সংগঠন শক্তিশালী করার জন্যই জামায়াত-শিবিরের এ আয়োজন । বিষয়টি বুঝতে পেরে এরই মধ্যে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেছে বলে সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করলেও বাস্তবতা এই যে সারাদেশে প্রায় পাঁচশ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে ছাত্র শিবির নামক এই মিনি হায়েনারা। শুধু এখানেই শেষ নয়, আমাদের আলোকিত প্রজন্মকে অন্ধকারের বাসিন্দা করার লক্ষ্য থেকে পরীক্ষিত কর্মী বা সদস্যদের জামায়াতের ইসলামী ব্যাংক,ই্সলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক স্কৃল এন্ড কলেজ, ফুলকুঁড়ি কিন্ডার গার্ডেন, দৈনিক নয়াদিগন্ত, দিগন্তটভিসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে তুলছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। বেকারদের চাকরি বা ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য নগদ অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করছে এরা। এই যুবক শ্রেণী একটা সময় সরকারের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা জেগেছে। যদিও বলা হচ্ছে যে,আর তাই শিবিরের কার্যক্রমে কড়া নজর রাখছে সরকার। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিঘ্ন ঘটাতে ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে, এমন আশঙ্কাও ক্রমেই দানা বাঁধছে। সবকিছু মিলিয়ে কোনো অঘটন যাতে তারা না ঘটাতে পারে, সে জন্য কড়া দৃষ্টি রাখা এখন একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব। কর্মী বাড়াতে নতুন কৌশল নিয়ে শিবিরের মাঠে নামার বিষয়টি শুধু গোয়েন্দা সংস্থাই নয় খেয়াল রাখতে হবে সকল স্বাধীনতার চেতনাদ্বীপ্ত মানুষের। এই মিনি হায়েনারা এসএসসি ফল প্রকাশের পর থেকে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারেও বেশি তাদের ছাত্র শিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে সংবর্ধনা দিয়েছে। শুধু শিবির-ই নয়, শিবিরের সহযোগী ছাত্রী সংস্থা জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের নিয়ে রাজধানীতে একাধিক অনুষ্ঠান করেছে। এতে শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকলেও পুলিশ প্রশাসন তাদেরকে গ্রেফতারতো দূরের কথা বাঁধাও দেয়নি। এথেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে পুলিশ-প্রশাসনেও জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থকরা ঘুপটি মেরে বসে আছে। যেমন বসে আছে সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী এমনকি গোয়েন্দা বাহিনীতে। আর এরই সুযোগে হায়েনাদের বাচ্চা এই ছাত্র শিবির এবার সারাদেশে জিপিএ-৫ পাওয়া ৮২ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে । এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্র থেকে সারাদেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর দিনই ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে সাড়ে ১৪শ' শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেয় শিবির। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত ২০ মে পাঁচ সহস্রাধিক জিপিএ-৫ প্রাপ্তকে সংবর্ধনা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা শিবির। নগরীর 'দি কি চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে' এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলো শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল জব্বার। এছাড়া একই দিনে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিলেট ও মৌলভীবাজারে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. রেজাউল করিম। আর মৌলভীবাজারের ছিলো কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো. ইয়াহইয়া। শিবির দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে এ ধরনের সংবর্ধনা দিচ্ছে। একই সঙ্গে তারা সারাদেশে সদস্য সংখ্য বৃদ্ধি করতেও কাজ করছে। এ বছর দেশব্যাপী ছাত্রশিবিরের ১৪৭টি সাংগঠনিক শাখার মাধ্যমে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন উপঢৌকন পাঠানো হয়েছে। চলতি বছরের ৫ জুন পর্যন্ত শিবিরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। সব শাখায় নবীন ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টি কাড়তে শিবিরের কেন্দ্রীয় কোনো নেতা অথবা স্থানীয় প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তিকে এসব সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাখারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিবির গত কয়েক বছর রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনসহ নামকরা কয়েকটি স্থানে এসব সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও সরকারের কঠোর মনোভাবে কারণে গত দু'বছর তারা কিছুটা গোপনে এসব অনুষ্ঠান করছে। এসব অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফসহ সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের এসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হতো। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থীদের প্রথমে ভালো কলেজ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে সেসব কলেজে ভর্তি করানোর নানা প্রলোভন দেখানো হয়। যারা তাদের পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাদের পুরো ঠিকানা ও যোগাযোগের সব মাধ্যম রাখা হয়। এরপর শুরু হয় তাকে দলের টানার পরবর্তী কার্যত্রুম। প্রভাবশালী পরিবারের ছাত্রদের সংবর্ধনার এসব বিষয় পরিবারের কাছে গোপন রাখতে বলা হয়। এসব কর্মসূচি পালন করতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এসব অর্থের উৎস হলো জঙ্গীবাদের নতুন নীল নকশাকারী ইসলামী ব্যাংক ও জামায়াতে ইসলাম। মেধাবীদের দলে ভেড়াতে শিবির আরো যেসব কৌশল নিয়েছে সেগুলো হলো- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমর্থক সংগ্রহের জন্য রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও দুস্থ কৃতী ছাত্রদের অর্থ সহায়তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ফার্স্টদের স্বর্ণপদক প্রদান, বিনামূল্যে কোচিং করানোসহ নানা কর্মসূচি। ২০১১ সাল শিবির তাদের কর্মকাণ্ড থেকে পিছিয়ে ছিলো না। গেল ডিসেম্বরেই সারা দেশে শিবিরের জেলা, উপজেলা ও ইউনিটের কাউন্সিল করা হয়েছে। এমন করে চলতে থাকলে যে কোন সময় দখল হয়ে যেতে পারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠটিও। এ ক্ষেত্রে আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা না বললেই নয়, অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পাওয়ার পর আমার উপর ভর করেছিল ছাত্র শিবিরের ভূত। কোন ক্রমেই যখন মুক্তি মিলল না। তখন 'বাঁচতে হলে জানতে হবে' গোছের চন্তা থেকে ইনভলব হই এবং মাত্র ছয় মাসে কর্মী থেকে সাথী অতপর সদস্য পর্যন্ত হই। আমার জানা মতে তখন দেশের সর্ব কনিষ্ট সদস্য ছিলাম আমি। কিন্তু পরবর্তীতে ঘটতে থাকে মুখোশ উম্মোচনের ঘটনা। আমাকে দিয়ে তৎকালিন বিএম কলেজের এজিএস শেখ নেয়ামুল করিম, দৈনিক নয়াদিগন্ত ও দিগন্ত টিভির বরিশাল প্রতিনিধি আযাদ আলাউদ্দিনসহ সকলেই অস্ত্র হাতে তুলে দেয়। বলে- 'ইসলামে নামজ যেমন ফরজ, তেমন জেহাদ করাও ফরজ।' আমি বুঝতে পারি, আমাকে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। ক্রমেই দূরত্ব তৈরি করতে থাকি। আর তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল সাংবাদিকতা। সংবাদপত্রে চাকুরী করার কারনে সে যাত্রায় বেচে গেলেও তারা আমাকে লিখিতভাবে বহিষ্কার করে। পরবর্তীতে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ভাসিত একটি ছাত্র সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হই। ্উপরের কথাগুলো এজন্য বললাম যে, আমাকে দলে ভেড়ানোর জন্যও ওরা সংবর্ধনা দিয়েছিল। আর সেই সংবর্ধনাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমার। এখনো যখন রেডিও টুডে, দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক সমকাল, দৈনিক যায়যায়দিন, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ প্রায় সকল সংবাদমাধ্যমেই ওদের সাঙ্গপাঙ্গদেরকে কাজ করতে দেখি; তখন আৎকে উঠি এই ভেবে যে, ওরা আসছে মেধাবীদেরকে ধংশ করে দিতে, মাকে শেষ করে দিতে, দেশকে শেষ করে দিতে। অতএব, সাবধান হতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে, পুলিশ-প্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সবাইকে। তা না হলে কিন্তু অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে এই হায়েনারা যে কোন সময়, যে কোন মূহুর্তে... মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও রাজনীতিক http://www.news-bangla.com/index.php?option=com_content&task=view&id=9590&Itemid=26
|