Banner Advertiser

Thursday, December 13, 2012

[mukto-mona] আমাদের স্বাধীনতাটা ছিনতাই ও গুম হয়ে গেছে



 ১৯৭৫ পর্যন্ত মুজিবের "বলদদের" কচ্ছে এখন হাসিনার "বলদদের কাছে
 
Shahadat Suhrawardy

আমাদের স্বাধীনতাটা ছিনতাই ও গুম হয়ে গেছে

সিরাজুর রহমান
তারিখ: ১৪ ডিসেম্বর, ২০১২

সিরাজুর রহমান

বিজয় দিবস এলে এখন আর উচ্ছ্বাস কিংবা উল্লাস হয় না। আবেগের তো কথাই নেই। অথচ একাত্তরের এ দিনের আবেগ-উচ্ছ্বাস আর উল্লাসের কথা মনে করে এখনো গায়ে কাঁটা দেয়। সে দিন বাংলাদেশের এবং বিশ্বের মানুষকে আমি সর্বপ্রথম বিবিসি থেকে বলতে পেরেছিলাম যে বিশ্বের কনিষ্ঠতম স্বাধীন রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছে।
বিবিসির চাকরি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে আমার একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। ব্রিটিশ মিডিয়ার সাথে আগে থাকতেই বিভিন্ন কারণে আমার ভালো যোগাযোগ ছিল। একাত্তরের ২৬ মার্চ ভোরে যখন আগের রাতের পাকিস্তানি সামরিক অভ্যুত্থানের খবর আসে, ব্রিটিশ মিডিয়া তার জন্য প্রস্তুত ছিল না। পটভূমি এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা জানতে কয়েকজন সাংবাদিক বুশ হাউজে আমার সাথে দেখা করতে আসেন। টেলিফোন করেছিলেন আরো কয়েকজন। তাদের সবার সুবিধার জন্য গোটা পটভূমি বিবৃত করে দীর্ঘ একটা ফ্যাক্টশিট লিখেছিলাম। মিডিয়া মহলে সেটা যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছিল। কয়েকজন পূর্ব পাকিস্তানি উচ্চশিক্ষার্থী তখন বিবিসিতে খণ্ডকালীন কাজ করতেন। দিনের কাজের শেষে আমরা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতাম। সবাই মিলে আমরা ঠিক করলাম যে আমার ফ্যাক্টশিট লেখা বজায় রাখা হবে। ক্রমে ক্রমে প্রচারসংখ্যা পাঁচ হাজারে দাঁড়িয়েছিল। ফ্যাক্টশিটগুলো ছেপে ব্রিটিশ মিডিয়া, পার্লামেন্ট সদস্য, হাইকোর্টের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাইস চ্যান্সেলর ও বিদেশী দূতাবাসগুলোতে পাঠানোর দায়িত্ব নেন উপরি উক্ত উচ্চশিক্ষার্থীরা। এখনো ভেবে আনন্দ হয় পরবর্তীকালে তারা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কূটনীতিক, বিচারপতি, আইনজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় দিনে আমরা স্থির করি যে বিলেতে আমাদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য একজন 'হাই-প্রোফাইল' ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন। জানা গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং হাইকোর্টের বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের বৈঠক শেষে দেশে ফেরার পথে লন্ডনে আটকা পড়েছেন। সে দিনই এবং পরবর্তী ক'দিন রাতে আমি তার সাথে দীর্ঘ টেলিফোন আলাপ করি। বিচারপতি থেকে সরাসরি রাজপথের রাজনীতিতে নেমে আসতে তার সঙ্কোচ ছিল। কয়েক দিনের চিন্তাভাবনার পর ১০ এপ্রিল তিনি জানালেন যে আমাদের আন্দোলনে যোগ দিতে তিনি প্রস্তুত আছেন, তবে এ শর্তে যে আন্দোলনের আন্তর্জাতিক প্রচারের দায়িত্ব আমাকেই বহন করে যেতে হবে। অর্থাৎ বিজয় দিবস পর্যন্ত সে দায়িত্ব আমি পালন করেছিলাম।
আন্দোলন উপলক্ষেই প্রবাসী বাংলাদেশী সমাজের নেতাদের সাথেও আমার নিয়মিত দেখাশোনা হতো। একটা জিনিস গোড়া থেকেই লক্ষ করেছিলাম। তখনো জীবিকা উপার্জন নিয়েই তাদের ব্যস্ত থাকতে হতো। দেশের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় তাদের ছিল না। কিন্তু দেশ স্বাধীন করার ব্যাপারে দ্বিমত কখনো শুনিনি। মনে আছে, এক সন্ধ্যায় রেড লায়ন হলের সভা থেকে এক মহিলা সমাজকর্মী আর একজন উদীয়মান রাজনীতিক (পরে বাংলাদেশে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন) আমাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, প্রায় কোনো রকম ত্যাগ স্বীকার ছাড়াই আমরা পাকিস্তান পেয়েছিলাম, তাই সে পাকিস্তানের কদর দিতে আমরা শিখিনি। চটজলদি বাংলাদেশকে স্বাধীন করলেও সে রকম পরিণতি হতে পারে। তার স্বাধীনতা পেতে বছর দুয়েক বিলম্ব করলে ভালো হয় না?
আমি তাদের বলেছিলাম, দেশে মুক্তিযোদ্ধারা রক্ত দিচ্ছেন, সাধারণ মানুষকেও চরম ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের সামনে এ প্রস্তাব অমানুষিক শোনাবে। তা ছাড়া এমন কথা প্রচার হলে আন্দোলনে ভেদাভেদ সৃষ্টি হতে পারে। তাদের কিংবা অন্য কারো মুখে সেসব কথা আর কখনো শুনিনি। মুক্তিযুদ্ধে বিলেতের সব প্রবাসী বাংলাদেশী ষোলআনা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন।
পরে শুনেছি শত নির্যাতন ও আত্মদান সত্ত্বেও দেশের ভেতরেও জাতি পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ ছিলÑ শুধু জনকয়েক পথভ্রষ্ট ব্যক্তি ছাড়া। দেশের ভেতরের মুক্তিযুদ্ধ, প্রবাসে আমাদের সফল আন্দোলন ইত্যাদির ফলে বিশ্বজনমত পুরোপরি আমাদের পক্ষে এসে গিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গণচীন সে সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। সে অবস্থায় বিশ্বজনমতের সমর্থন ছাড়া ভারতও আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়া বিজ্ঞজনোচিত বিবেচনা করত না। অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতা আরো দীর্ঘকাল পিছিয়ে পড়তে পারত।
ঐক্য হত্যার জন্য যারা ওঁৎ পেতে ছিলেন
যে ঐক্য দিয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি সে ঐক্যকে হত্যা করার জন্যও অনেকে ওঁৎ পেতে ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানিরা বলেছিল আওয়ামী লীগের 'হট হেডরা' তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তাদের মাথা ঠাণ্ডা করতে মুজিবের সরে দাঁড়ানো উচিত। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে চলে গেলেন। মাথা ঠাণ্ডা করার নামে পাকিস্তানিরা গণহত্যা চালাবে মুজিব বোধ হয় সেটা ধারণা করতে পারেননি। যা হোক, সামরিক অভিযান শুরু হলো, আওয়ামী লীগ নেতারা প্রথম চোটেই কলকাতায় চলে গেলেন। ভারত সরকারের ব্যয়ে কলকাতার হোটেলগুলোতে তারা বিলাস-ব্যসনেই ছিলেন।
দেশে মেজর জিয়াউর রহমান 'শেখ মুজিবুর রহমানের নামে' স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বিদেশে আমরা বিশ্ব মিডিয়ায় সংগ্রাম করেছি, প্রবাসীরা কাজ কামাই করেও আবু সাঈদ চৌধুরীর ডাকা মিছিল ও সমাবেশে যোগ দিয়েছে, পুরো সপ্তাহের মাইনেও অনেকে যুদ্ধ তহবিলে তুলে দিয়েছিল। আনুমানিক হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে তিন লাখ মানুষ মারা গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা দানের 'অপরাধে' হাজার হাজার মানুষ অকথ্য নির্যাতন সয়েছেন। হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করেছে পাকিস্তানি পাষণ্ডরা।
অবশেষে বিজয় এলো। কলকাতার হোটেলে আমোদ-ফুর্তি করছিলেন যেসব আওয়ামী লীগ নেতা, আর ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে বাংলাদেশের নেতা হওয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন যে মুজিব বাহিনী, প্রথম সুযোগেই তারা উড়ে ঢাকায় এলেন, মন্ত্রীর পদগুলো এবং অন্যান্য প্রভাবশালী 'পজিশন' তারা হুড়মুড় করে ভাগবাটোয়ারা করে নিলেন। পাকিস্তান থেকে জুলফিকার আলী ভুট্টো 'অটোনমির' ভরসা দিয়ে মুজিবকে পাঠালেন বাংলাদেশের মানুষকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে অটোনমিতেই রাজি করাতে। (রাষ্ট্রদূত রেজাউল করিমও এ তথ্য দিয়েছেন উইকিপিডিয়াতে)।
মুজিব ভাইকে লন্ডনে পরামর্শ দিয়েছিলাম জাতির পিতা হয়ে মহাত্মা গান্ধীর মতো সবার মাথার ওপরে বসে থাকতে। কিন্তু তিনি গিয়ে হলেন প্রধানমন্ত্রীÑ আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধানমন্ত্রী। একটা সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবও তার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক চত্বর থেকে সব বিরোধিতা নির্মূল করার কর্মসূচি নিলেন শেখ মুজিবÑ যে মুজিব একদা গণতন্ত্রের নামে ছয় দফা চেয়েছিলেন। দেশের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেশি সক্রিয় ছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ। খুঁজে খুঁজে জাসদের নেতাকর্মীদের নিধন করার জন্য তিনি রক্ষীবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। 'লাল ঘোড়া দাবড়াইয়া দিব'-এ উপলক্ষে তখনকার তার বিখ্যাত উক্তি। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে জাসদের ৩০ থেকে ৪০ হাজার নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছিল।
স্বৈরতন্ত্রের পথে
তাতেও সন্তুষ্ট হননি শেখ মুজিবুর রহমান। সংসদকে সব বিরোধিতামুক্ত করার আশায় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ সম্পূর্ণ বিনা প্রয়োজনে একটা সাধারণ নির্বাচন ডাকেন। বলাই বাহুল্য পাকিস্তান থেকে দেশে পৌঁছানোর মুহূর্ত থেকে যারা তাকে জেঁকে ধরেছিলেন তাদের কুপরামর্শ থেকে মুজিব মুক্ত হতে পারেননি। দিনরাতের অধিকাংশ সময় তাকে স্তবক-স্তুতি আর ফুলের মালা দিয়ে নেশাগ্রস্ত করে রাখা হতো। প্রথমে সেই জেঁকে ধরা লোকেরা, তারপর প্রধানমন্ত্রীর কাছের, এমনকি তার পরিবারেরও কোনো কোনো সদস্য বেসামাল দুর্নীতিতে লেগে যায়।
শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার মন্ত্রীদের কারোই কোনো প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ছিল না। ভ্রান্তনীতি, কুশাসন আর সর্বব্যাপী দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি ধসে পড়ে। সে করুণ পরিস্থিতির বহু বিবরণ আমি নিজেও বাংলাদেশ থেকে বিবিসিতে প্রচার করেছি। আমার কয়েকটি বইয়ে (প্রীতি নিন সকলে, ইতিহাস কথা কয় ও নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রবন্ধ এবং এক জীবন এক ইতিহাস) তার বিবরণ আছে। এসবের জের ধরে এলো চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ। অন্যূন ৭০ হাজার লোক সে দুর্ভিক্ষে মারা গেছে। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন লিখেছেন তখন বাংলাদেশে প্রচুর খাদ্যসামগ্রী ছিল, কিন্তু সুষ্ঠু বণ্টনব্যবস্থার অভাবেই এত লোক না খেয়ে মারা গিয়েছিল।
দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত সর্বস্তরে প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। মুজিবের উপদেষ্টারা তাকে দলন ও নির্যাতনের পথে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বিশেষ ক্ষমতা আইন জারি করে ৪০ হাজার লোককে জেলে পুরেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এর পরও আফ্রিকার কোনো কোনো দেশের দৃষ্টান্ত অনুকরণ করে তিনি একদলীয় বাকশাল চালু করেন এবং নিজে আজীবন রাষ্ট্রপতি হওয়ার ব্যবস্থা নেন। এত কিছুর পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থান মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। সে তারিখে বিবিসির এক সাংবাদিক আমাকে বলেছিলেন, তিনি মোটেই বিস্মিত হননি; বিস্মিত হয়েছেন এ কারণে যে এ ঘটনা আরো আগে ঘটেনি।
মুজিব নিজেই আওয়ামী লীগকে হত্যা করে গিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কর্মসূচি অনুযায়ী শুধু আওয়ামী লীগকে আবার বৈধই করেননি, দু'জন দূত (ড. কামাল হোসেন ও আবদুর রাজ্জাক) পাঠিয়ে দিল্লি থেকে আওয়ামী লীগের জন্য একজন নেত্রীও আমদানি করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে বহুবার আমার একটা হিন্দি ফিল্মিগানের এক পঙ্ক্তি মনে পড়েছেÑ 'হাম আজ আপনে মওতকে সামান লে চলে।'
পুরনো পাঠক ও বিবিসির পুরনো শ্রোতাদের অবশ্যই মনে পড়বে মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং গোটা আশির দশকজুড়ে এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের সময় বিবিসি থেকে এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন পত্রিকার কলামে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আমার আপসহীন সংগ্রামের কথা। আমি হলপ করে বলতে পারি, স্বাধীনতার পরবর্তী  সময় থেকে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা কিংবা গণতন্ত্রের জন্য আর শুভ কিংবা কল্যাণকর ছিল না। মুজিবের স্বৈরতন্ত্রী কাজকর্মের কথা একটু আগেই বলছিলাম। হাসিনা আশির দশকে এরশাদের জঙ্গি স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন দিয়েছিলেন। বর্তমানেও তার রাজনীতির কোথাও না কোথাও এরশাদ জড়িত থাকেন।
ছিয়ানব্বইয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী গঠন করেন এবং রাজনৈতিক প্রতিভূদের গুপ্তহত্যার নির্দেশ দেন। লক্ষ্মীপুরে আবু তাহেরের পুত্র কর্তৃক অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম হত্যা, ফেনীতে জয়নাল হাজারীর তাণ্ডব, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের এবং ঢাকায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সন্ত্রাসের কথা বাংলাদেশের মানুষ এখনো ভুলে যায়নি। তারা আরো ভুলে যায়নি যে হাসিনা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের 'একটির বদলে দশটি লাশ ফেলার' নির্দেশ দিয়েছিলেন, তারা শাড়ি পরেন বলে বিদ্রƒপ করেছিলেন। এসব গডফাদারের সমালোচনা করায় সাংবাদিকদের তিনি তিরস্কার করেছিলেন।
সুসভ্য সমাজের কাঠামো ধ্বংস
বর্তমান দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব পেয়ে শেখ হাসিনা এক দিকে তার ক্যাডারদের এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মাস্তানদের রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন; অন্য দিকে ভর্তিবাণিজ্য, টেন্ডার-বাণিজ্য, বিনা টেন্ডারে হাজার হাজার কোটি টাকা হরিলুট হওয়া, শেয়ারবাজার লুট, ডেসটিনি কোম্পানি ও হলমার্ক করপোরেশনকে দিয়ে রাষ্ট্রের ও দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের পথ খুলে দেন। উদ্দেশ্য ছিল দেশে যত সম্পদ আছে, সব কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পকেটে গিয়ে জমা হবে।
সুসভ্য রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য যে অনুশাসনগুলো অত্যাবশ্যকীয় শেখ হাসিনার সরকার রিকল্পিতভাবে তাদের প্রত্যেকটি ধ্বংস করছে। পুলিশ ও বিচার বিভাগ দলীয়করণ করে আইনশৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার অসম্ভব করে তোলা হয়েছে। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের কাণ্ডকারখানা এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিতর্কিত রায় এর মাত্র কয়টি দৃষ্টান্ত। আমলাতন্ত্রকে দলীয়করণ করে সুষ্ঠু প্রশাসনও অসম্ভব করে তোলা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, ছিনতাই ও গুম-হত্যার জন্য বাংলাদেশ বহুকাল বিশ্বব্যাপী ধিকৃত হয়ে থাকবে।
দুর্নীতি সব দেশেই কম-বেশি থাকে। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার সরকার দুর্নীতিকে রাষ্ট্রকর্মের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গে পরিণত করেছেন। বিস্তর অভিযোগ, তদন্ত ইত্যাদির পর পদ্মা সেতুর নির্মাণ বন্ধ হয়ে গেছে বলেই এখন মনে হচ্ছে। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর এই সেতুটা আমরা হারাতে বসেছি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে। বিশ্বব্যাংক বলছে, দুর্নীতির বিচার না হলে তারা সেতুর টাকা দেবে না। প্রশ্ন উঠেছে দুর্নীতি দমন কমিশন কি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তার বিচার করতে নারাজ। কারণ কী? সৈয়দ আবুল হোসেন কি অন্য কারো হয়ে প্রক্সিতে দুর্নীতি করেছেন যে আদালতে সেটা ফাঁস হয়ে গেলে সরকারের শীর্ষ স্তরের কারো সমস্যা হওয়ার ভয় আছে?
দেশের দীর্ঘমেয়াদি সর্বনাশ করেছেন শেখ হাসিনা ভারতের সাথে গোপন চুক্তি করে। সেসব চুক্তির বিবরণ আজ অবধি দেশের মানুষকে জানতে দেয়া হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক এলাকা ও সম্পদ তিনি পাশের দেশের হাতে তুলে দিতে চান কিনা সে সংশয় অনেকের রয়েছে।
সবচেয়ে বড় ক্ষতি তিনি করেছেন, যে জাতীয় ঐক্যের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম সে ঐক্যকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ-বাসনা চরিতার্থ করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস বিষাক্ত করে দিয়েছেন। প্রাচীন ভারতবর্ষের সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের অমাত্য চাণক্য কোনো রাজ্য জয়ের আগে চর পাঠিয়ে সে দেশের ঐক্য বিনষ্ট করতেন, বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি করে দেশটিকে দুর্বল করে ফেলতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকের বাংলাদেশকে ঠিক সে অবস্থাতেই এনে ফেলেছেন। ইলিয়াস আলী এবং আরো ১২১ জনের মতো গুম ও হত্যার শিকার হয়েছে। এ জন্যই বলছিলাম বিজয় দিবস এলে এখন আর উল্লাস কিংবা উচ্ছ্বাস হয় না।
শহীদেরা এ বিচার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন
এসবই শেখ হাসিনা করেছেন বিচারের নামে। মুক্তিযুদ্ধে যেসব পাকিস্তানি চরের হাতে আমাদের বুদ্ধিজীবী ও অন্যেরা শহীদ হয়েছেন, হাসিনা বলছেন যে তিনি সেসব চরের বিচার করছেন। যে তথাকথিত অন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এ বিচার করছে তার গঠনপদ্ধতি নিয়েও দেশে-বিদেশে বহু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম গত মঙ্গলবার অনেক কেলেঙ্কারির বোঝা মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। ব্রাসেলসের অধিবাসী ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সাথে তার স্কাইপি কথাবার্তা ও ই-মেইলের বিবরণ ফাঁস করে দিয়েছে সাপ্তাহিক ইকোনমিস্ট। পরবর্তীকালে আমার দেশ পত্রিকাও সবিস্তারে সেসব বিবরণ প্রকাশ করেছে। তা থেকে প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে যে সে বিচার সত্যিকারের বিচার নয়, সরকারের বিরোধীদের ওপর প্রতিশোধ নেয়াই হচ্ছে উদ্দেশ্য। স্কাইপি কথোপকথনে বিচারপতি নিজামুল হকই বলেছেন, 'গভর্নমেন্টের মাথা গেছে খারাপ হইয়া, তারা রায় চায়।'
এ প্রবন্ধ আপনারা পড়ছেন ১৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ তারিখে দ্বিতীয় কিস্তিতে বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞ চলে। সেদিন সকালে বিবিসির অফিসে গিয়েই টেলিফোন পেলাম ঢাকায় আমাদের সংবাদদাতা নিজাম উদ্দিনের স্ত্রীর। আগের রাতে তারা যখন খেতে বসেছিলেন কয়েকজন মুখোশ পরা লোক এসে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর একে-দুয়ে আরো বহু মর্মান্তিক খবর। এ পর্যায়ে শহীদ হয়েছিলেন মূলত সাংবাদিক ও লেখক। সিরাজুদ্দিন হোসেনের খবরে ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলাম মনে। ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে খায়রুল কবির, সিরাজ আর আমি একই দিনে কলকাতার দৈনিক আজাদে সাংবাদিকতার কাজ শুরু করি। সিরাজুদ্দিন হোসেন আর আমি সারা জীবন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। তারপর আরো খবর এলো আরো কয়েকজনের নিখোঁজ হওয়ার।
মনেপ্রাণে তারা সবাই একটা স্বাধীন, ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। তাদের বিচারের নামে দেশ ও জাতিকে শতধাবিভক্ত, দুর্নীতি ও হানাহানিতে কেদাক্ত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার অপচেষ্টায় তাদের বিদেহী আত্মা নিশ্চয়ই অপমানিত ও প্রতারিত বোধ করছে, ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
আসুন, আমরা সবাই মিলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাদের আত্মার কাছে ক্ষমা চাই। তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি।
লন্ডন, ১২. ১২. ১২
serajurrahman@btinternet.com


__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___