যুদ্ধাপরাধের বিচারহোয়াইট হাউসের সঙ্গেও শিবিরের জালিয়াতি!
ঢাকা, ১২ মার্চ, ২০১৩ (বিডিএনএন২৪) :- মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে হোয়াইট হাউসের কাছে অভিযোগ তুলে শেষ মুহূর্তে পস্তাতে হলো জামায়াত-শিবিরকে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্দেশে পিটিশন খুলে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে গত রবিবার পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার সই প্রদর্শন করতে সক্ষম হয় শিবির। তাদের এ প্রতারণা নিয়ে তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ তোলা হয় সিএনএনের একটি পেজে। লেখালেখি হয় অন্যান্য অনেক সাইটেও। এরপরই পিটিশনটি বন্ধ করে দেয় হোয়াইট হাউস পিটিশন সাইট। গতকাল সোমবার রাত ১১টায়petitions.whitehouse.gov ঢুকে দেখা যায়, 'এক্সপ্রেস কনসার্ন এগেইন্সট ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যান্ড মব জাস্টিস ইন বাংলাদেশ' নামের পিটিশনটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সাইন নেওয়া চলছে ট্রাইব্যুনালের পক্ষে করা একটি পিটিশনে।
'বাংলাদেশকে বাঁচাও। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেওয়ায় বিএনপি-জামায়াত-শিবির নৈরাজ্য, সহিংসতা চালাচ্ছে ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতন করছে' শিরোনামে একটি পিটিশন করা হয় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এর তিন দিন পর জামায়াত-শিবিরের পক্ষে করা হয় পাল্টা পিটিশন।
যেভাবে সাইবারযুদ্ধ : সিএনএনএর আইরিপোর্ট শাখায় প্রকাশিত একটি সচিত্র প্রতিবেদন। ওপরে-নিচে স্থাপিত দুটি ছবি চলে গেছে পৃষ্ঠার ডান থেকে বাঁ পাশ পর্যন্ত। ওপরের ছবিতে মূর্ত শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের লাখো মোমবাতি জ্বালিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবির সঙ্গে সংহতি জ্ঞাপনের দৃশ্য। ছবিতে বড় করে সাদা হরফে লেখা 'আওয়ার প্রটেস্ট'। নিচের ছবিতেও দেখা যায় আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে ট্রেন। ছবির ওপর লেখা 'দেয়ার প্রটেস্ট'। প্রতিবেদনটির শিরোনাম এ রকম : 'বাংলাদেশকে বাঁচাও। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেওয়ায় বিএনপি-জামায়াত-শিবির নৈরাজ্য, সহিংসতা চালাচ্ছে ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতন করছে।' এরপর বিশ্ববাসীর উদ্দেশে এক বার্তায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে লাখো মানুষের গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরা হয়। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় বিডিনিউজ, ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাম্প্রতিক সময়ের সহিংসতার খবরের লিংক। সব শেষে বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আবেদন জানানো হয়- তারা যেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে ওবামা প্রশাসনের কাছে পেশ করা একটি পিটিশনে সাইন করে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রত্যাশা করে এ আবেদনটি করা হয়েছে হোয়াইট হাউসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (লিংক : wh.gov/dBpI)।
ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমতো সাইবারযুদ্ধ চলছে। এক পক্ষ যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরির চেষ্টা করছে। অন্য পক্ষ তাদের প্রচার করা বার্তায় বলছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে বাংলাদেশে জামায়াতের নেতাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। দুই পক্ষেই পৃথক পিটিশন জমা পড়ে হোয়াইট হাউসে।
সিএনএনের আইরিপোর্ট শাখায় প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, ওমাবা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জামায়াত-শিবির যে পাল্টা পিটিশন করেছে, তাতে বড় মাপের জালিয়াতি চলছে। সিএনএন ওয়েবসাইটের পাঠকরা এই আইরিপোর্ট শাখায় গবেষণা বা অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন পেশ করতে পারে। এ সুযোগে বাংলাদেশের চলমান ইস্যুতে এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
হোয়াইট হাউসের সাইটে গিয়ে দেখা যায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে পিটিশনটি করা হয় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, '১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের যে দাবি জানোনো হচ্ছে, তার প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করুন।' এর তিন দিন পর করা হয় পাল্টা একটি পিটিশন। এ বিষয়ে সিএনএন আইরিপোর্টের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, জামায়াত-শিবিরের পক্ষে করা পিটিশনটি নিয়ে বড় ধরনের জালিয়াতি চলছে। 'হোয়াইট হাউস পিটিশন স্ক্যাম : লার্জ স্কেল ইউজেস অব ফেইক ই-মেইল আইডিস?' পৃথক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ওবামা প্রশাসনের বিবেচনার জন্য এক মাসের মধ্যে এক লাখ স্বাক্ষর প্রয়োজন। এ জন্য জামায়াত-শিবিরের ফেসবুক পেজ 'নিউ বাঁশের কেল্লা'য় ওই আবেদনের পক্ষে স্বাক্ষর করতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সংগৃহীত স্বাক্ষরের একটি বড় অংশই ইন্টারনেটে ভুয়া পরিচয় ব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়েছে দাবি করে প্রতিবেদনে গ্রাফ আকারে নানা তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের পোর্ট আর্থারের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ জামায়াত-শিবিরের আবেদনে স্বাক্ষর করেছে। আর আবেদনকারীদের ৯৯ শতাংশেরই নামের সংক্ষিপ্ত রূপ 'অ. অ'। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শিবিরের একটি সাইট থেকে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, তারা যেন 'ফেইকমেইলজেনারেটর.কম' সাইটে গিয়ে যত ইচ্ছা তত ভুয়া ইমেইল পিটিশনের পক্ষে সাইন করে।
গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশবিষয়ক বেশ কয়েকটি পিটিশন চলমান থাকতে জমা পড়তে দেখা যায়। দেখা গেছে ট্রাইব্যুনাল বা সরকারের বিপক্ষে করা পিটিশনের পক্ষে শিবিরের বিভিন্ন সাইট, ফেসবুক পেজ ও ব্লগ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে করা এই পিটিশনের পক্ষে সাংগঠনিকভাবে কোনো প্রচার চালানো হচ্ছে না এবং গণজাগরণ মঞ্চও এ ব্যাপারে নির্বিকার। হোয়াইট হাউস তাদের সাইটে জানায়, কোনো পিটিশনের পক্ষে এক মাসের মধ্যে এক লাখ সাইন পড়লে এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর একটি বক্তব্য জানাবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার কূটনীতিকরা আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে আবেদন প্রসঙ্গে কিছু বলতে অপরাগতা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক বিডিএনএন২৪কে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিপক্ষে বিদেশে জনমত সৃষ্টির চেষ্টার সঙ্গে অবশ্যই অর্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
এ বিষয়ে জানতে চাাইলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির গত রবিবার বিডিএনএন২৪কে বলেন, জামায়াত যা করছে তা কেবল সাইবার অপরাধই নয়, সাইবার বিদ্রোহ (ইনসার্জেন্সি)। তিনি বলেন, 'জামায়াতের ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লা বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া হলেও আবার তুরস্কে তা খোলা হয়েছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ছাড়াও তুরস্ক, সৌদি আরব ও মিসরের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জামায়াতকে সহযোগিতা করছে।'
এ বিষয়ে জানতে গত রবিবার সন্ধ্যায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ ও ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক নেতা বিডিএনএন২৪কে বলেন, 'যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে আমাদের চেষ্টা দীর্ঘদিনের। আমরা অনেক আগে থেকেই ফেসবুক, ব্লগ ব্যবহার করে বিচার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছি।' ভুয়া ইমেইল ব্যবহার করে হোয়াইট হাউসে স্বাক্ষর প্রদান সম্পর্কে জানতে চাইলে বিষয়টি 'জানা নেই' বলে এড়িয়ে যান ওই নেতা।
http://khabor.com/news/2013/03/12/201302999902275230444029.htm
__._,_.___