প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মাওয়া গোলচত্বরে জনসভায় সমবেত জনতাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। ছবি : পিআইডি
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ পদ্মা পুনর্বাসনকেন্দ্র মাঠে (মাওয়া গোল চত্বর এলাকা) এক জনসভায় ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী মানুষ হত্যা এবং চৌদ্দ দলীয় জোট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হেফাজতকে আমন্ত্রণ জানান ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের অস্ত্র সরবরাহ করেন। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চান।
শেখ হাসিনা বলেন, 'খালেদা জিয়া ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আমাদের ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বলেছেন। অন্যথায় আমরা পালানোর পথ খুঁজে পাব না বলে তিনি বলেছিলেন। খালেদা জিয়া এখন নিজেই তাঁর পথ হারিয়ে ফেলেছেন। আওয়ামী লীগ একটি গণমুখী দল এবং এ দল জনগণের জন্য কাজ করে। তাই এ দলকে হুমকি দিয়ে কোনো লাভ হবে না।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিকভাবে আর কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী নির্বাচন যথাসময়ে হবে এবং তা হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ।
প্রধানমন্ত্রী চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী দেওয়ার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দলটি সোজা পথে আসবে এবং সংসদ নির্বাচনসহ ভবিষ্যতে সব নির্বাচনে অংশ নেবে।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ নিজস্ব অর্থায়নেই হবে। খুব দ্রুতই নির্মাণকাজ শুরু হবে। এই মাওয়া থেকেই নির্মাণকাজ শুরু হবে। ২০০১ সালের ৪ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণ না করে তা অন্যত্র সরিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হয়নি।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থীকেই নির্বাচিত করায় মুন্সীগঞ্জের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছে এবং দেশকে সমৃদ্ধ ও সম্মানজনক স্থানে পেঁৗছানোর জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার পর যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা দেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, 'অতীতে বিএনপির শাসনামলে আমরা নির্বাচনকে দেখেছি ভয়াবহ পরিস্থিতি ও ভোটকেন্দ্র দখলের মহড়া হিসেবে। মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়লাভের ফল বাতিলের অভিজ্ঞতাও আমাদের রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করেছে। ২০০৯ সালের পর কোনো প্রকার গোলযোগ ছাড়া দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ছয় হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।' তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সফলতার সঙ্গে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, 'গণতন্ত্র ছাড়া কোনো দেশ সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে না। আমাদের সরকারের বিগত চার বছরে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে।' তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে এবং সাক্ষরতার হারও উন্নত হয়। আওয়ামী লীগ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থে বিভিন্ন ভাতা চালু করে। কিন্তু ২০০১ ক্ষমতা পরিবর্তনের পর বিএনপি দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের রাজনীতি শুরু করে। এমনকি তারা প্রকাশ্য দিবালোকে আমাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী নিহত হয়।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ অনেক নেতাকে হত্যা করেছে এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পুকুর থেকে মাছ চুরি করেছে, জোরপূর্বক জমি থেকে ধান কাটা এবং বাড়িঘরসহ এমন কোনো জঘন্য কাজ নেই, যা তারা করেনি।
লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফকির আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, এম ইদ্রিস আলী, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, আলহাজ মমতাজ বেগম, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রমুখ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী মাওয়ায় নৌযান উদ্ধারে ২৫০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন 'নির্ভীক' ও 'প্রত্যয়' নামের দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া হাসাইল-বেতকা-তেঘরিয়া সড়কে সুলেশ্বরী নদীর ওপর ৮০ দশমিক ৫০ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজ, বিক্রমপুর জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বিক্রমপুর বৌদ্ধবিহার উদ্বোধন করেন। তিনি বিক্রমপুর জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের রেস্টহাউস এবং ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সূত্র : মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি, বাসস ও ইউএনবি।
প্রথম পাতা -এর আরো সংবাদ
অনলাইন জরিপআজকের প্রশ্নআগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তাঁর এ বক্তব্য সমর্থন করেন কি?হ্যাঁনা
আজকের পাঠকসংখ্যা
৩৫৭৮২
__._,_.___