প্রেম করে বিয়ে, ইসলাম কি বলে?
প্রশ্নঃ প্রকৃত ইসলাম প্রেম করে বিয়ে করার ব্যাপারে কি দৃস্টিভংগী পোষন করে?
উত্তরঃ কথায় বলে প্রেম স্বরগীয়, একজন নর এবং একজন নারীর মধ্যে প্রকৃত ভালবাসার চেয়ে ভাল কি আর কিছু হয়! ১৫০০ শত বছর আগের কুরআন নাজিলের সময়, স্থান ও সামাজিক অবস্থা এবং বর্তমানের আধুনিক অবস্থা এবং উপায় উপকরনের বিস্তর ফারাক কাজেই আমাদের পবিত্র কুরান অনুসরনের সাথে সাথে এটাও মনে রাখতে হবে এই আধুনিক যুগে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ কিভাবে প্রয়োগ করা যাবে। ১৫০০ শত বছর আগে ছেলে এবং মেয়েরা একসাথে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত না বা একসাথে একই কর্মস্থলে চাকুরী করত না। সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রেম করে বিয়ে একটা অনিবার্য বাস্তব অবস্থা হয়ে দাড়িয়েছে তবে আমরা এটাও বলছি না যে প্রেম করে বিয়েই হল আদর্শস্থানীয়। প্রেম, বিয়ে, ভালবাসার ক্ষেত্রে সবার জন্য একই নিয়ম খাটে না।
তবে প্রেম-ভালবাসার নামে আমাদের সমাজে অনেক দুঃখজনক ঘটনাও ঘটছে, কিছু নারী হয়রানীর শিকার হচ্ছে, কেওবা ধর্ষনের শিকারও হয়, কেও বা প্রেমে ব্যার্থ হয়ে "দেবদাস" হয়, গাজা-হেরোইনে আসক্ত হয়, আত্বহত্যার পথও কেও কেও বেছে নেয় ইত্যাদি। ওসব দুঃখজনক ঘটনার জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকাংশে দায়ী। আমরা আমাদের স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস, ভুগোল, ধর্ম, সমাজনীতি, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী ইত্যাদি কত কিছুই না পড়ে থাকি কিন্তু যৌনতা এবং নারী-পুরুষের প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক কিভাবে গড়ে উঠবে, কোন নীতিমালার ভিত্তিতে ইত্যাদি ব্যাপারে কিছুই পড়ানো হয় না যা জানা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য অতি জরুরী।
একটা ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করলে সে কিভাবে তার পছন্দ উক্ত মেয়েকে বলবে এটাই সে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানে না! আবার উক্ত ছেলে বা মেয়ে যদি তাকে পছন্দ না করে তাহলে তার কি করনীয় হবে এ ব্যাপারেও তার অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক জ্ঞান নেই ফলে আমাদের সমাজে অনেক দুঃখজনক এবং মারাত্বক ঘটনা ঘটছে। দেখুন কিছু মারাত্বক ঘটনার নমুনা, এ ধরনের ঘটনা প্রায়শঃ মিডিয়াতে আসে। চট্টগ্রামে বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে খুন; মেয়ের উত্ত্যক্তকারীকে কুপিয়ে খুন ; হাফিজকে ঠেকানোই গেল না ইত্যাদি ইত্যাদি। এ বাপারে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ এখানে নেই তবে আমরা কিছু মৌলিক দিক আলোচনা করলাম।
১. আপনি যদি কোন বিশেষ অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত বা বিধোবা মেয়েকে পছন্দ করেন তাহলে নিজে সরাসরী তাকে তা সুন্দরভাবে বলেন। এ ধরনের কথা বলার জন্য একটা ভাল পরিবেশ লাগে কাজেই ধৈর্য ধরুন একটা ভাল সুযোগের অপেক্ষায়। আপনি যদি মেয়ে হয়ে থাকেন এবং কোন বিশেষ ছেলেকে পছন্দ করেন তাহলেও একই নিয়ম।
২. মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রথমে না করে থাকে বা অনেক সময় নিতে পারে সিদ্ধান্ত দিতে কাজেই ধৈর্য ধরুন! মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন!
৩. আপনি যদি প্রধানমন্ত্রীর কন্যাও হন আর একটা দরিদ্র ছেলেও আপনাকে ভালবাসার প্রস্তাব দেয় তার সাথে দুর্ব্যবহার করবেন না। তাকে যথাসম্ভব ভালভাবে বুঝানোর চেস্টা করুন! মহান আল্লাহ দাম্ভিক-অহংকারীকে পছন্দ করেন না! আপনি যেই হন না কেন, যত সুন্দরীই হন না কেন আপনি একজন রক্ত-মাংশে গড়া আর একজন সাধারন মানুষের মতই মানুষ, কাজেই অহংকার করার আপনার আসলে কিছুই নেই!
৪. আপনার ভালবাসার প্রস্তাব যদি আপনার স্বপ্নের রাজকুমারী প্রত্যাক্ষ্যন করে তাহলে এখন আপনার এ ব্যাপারে আর কিছুই করনীয় নেই। আপনাকে সে ভালবাসে না বা আপনার স্বপ্নের রাজকুমারী আপনার প্রতি আকর্ষন অনুভব করে না। কাজেই সে আপনার জন্য নয় আর আপনিও তার জন্য নন। কত গভির রোমান্টিক ভালবাসা, অতপর বিয়ে তারপর দাম্পত্য কলহ অতপর বিচ্ছেদ এবং তালাকের ঘটনা ঘটে!
যাহোক, ভুলে যান তাকে। একইভাবে আপনি খুজতে থাকুন কে আপনাকে সত্যিকারভাবে ভালবাসে। মহান আল্লাহ নিশ্চয় কাওকে না কাওকে আপনার ভালবাসার জন্য সৃস্টি করেছেন। মহান আল্লাহ রহমত থেকে নিরাশ হবেন না। এ ব্যাপারেও মহান আল্লাহ সাহায্য প্রার্থনা করুন। আপনার ভালবাসার মানুষকে খুজে পাওয়া জন্য ভাল একটা চাকুরী খোজার চেয়েও বেশি সময় লাগতে পারে! মনে রাখবেন ভালবাসা সস্তা কোন জিনিস না! আর এই পৃথিবীতে সবাই একই রকম ভাগ্য নিয়ে জন্ম নেই নি। যাহোক, একই কথা আপনার জন্যও প্রযোজ্য যদি আপনি একজন মেয়ে হয়ে থাকেন।
৫. কোন অবস্থাতেই প্রত্যাক্ষ্যত হয়ে আপনার স্বপ্নের রাজকুমারী বা রাজকুমারকে হুমকি দিবেন না। হুমকি দেওয়া বা ক্রমাগত উত্যাক্ত করা অপরাধ যা আপনার জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। সাবধান, সীমালংঘনকারীকে মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না!
৬. মনে রাখবেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী এবং আকর্ষনীয় মেয়েটিও যে পদার্থ দিয়ে তৈরি আবার এই পৃথিবীর সবচেয়ে অসুন্দরী এবং কুৎসিত মেয়েটিও সেই একই পদার্থ, রক্ত ও মাংশ দিয়ে তৈরি! কত ক্লিওপেট্রা এই পৃথিবীতে এল এবং গেল কে তার হিসাব রাখে! কাজেই সুন্দরী এবং আকর্ষনীয় মেয়ে দেখলেই পাগল হওয়ার খুব বেশি কিছু নেই! সুতরাং আপনার স্বপ্নের রাজকুমারী আপনাকে প্রত্যাক্ষ্যন করেছে মানে আপনার "দেবদাস" হওয়ার কিছু নেই! যে আপনাকে ভালবাসে না তাকে ভুলে যান আর যে আপনাকে ভালবাসে আপনি তাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার চেস্টা করুন।
৭. সবাই সবার প্রতি গভির রোমান্টিক আকর্ষন বা ভালবাসা অনুভব করে না। এটা প্রকৃতির নিয়ম! এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ, সে নর বা নারী যেই হোক না কেন, প্রকৃতির নিয়ম শৃংখলের কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ! কাজেই আপনার স্বপ্নের রাজকুমারী বা রাজকুমার আপনাকে প্রত্যাক্ষ্যন করেছে মানে সে আপনার প্রতি গভির রোমান্টিক আকর্ষন অনুভব করে না; করলে সে আপনাকে প্রত্যাক্ষ্যন করতে পারত না! আবার বাস্তব অবস্থার আলোকে প্রত্যাক্ষ্যন করার অন্য কোন কারনও থাকতে পারে, জীবনতো সবসময় সহজ হয় না! কাজেই স্বাভাবিক কারনেই তাকে আপনাকে ভুলে যেতে হবে!
৮. এই সমস্যা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে প্রায়শ দেখা যায়। বেশ কিছু বন্ধু একসাথে কোন সুন্দরী, আকর্ষনীয় ললনার প্রেমে পড়ে যায়! কঠিন বেকায়দা অবস্থা! এ অবস্থায় আমাদের পরামর্শ হল বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেন, বাস্তবতা মেনে নিন এবং আবেগ সংবরন করুন। উক্ত সুন্দরী, আকর্ষনীয় মেয়েটিকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন আপনাদের সব বন্ধুদের মধ্যে কাকে সে ভালবাসে অথবা আপনাদের সব বন্ধুদের মধ্যে হয়ত কাওকেই সে ভালবাসে না! সে হয়ত ভালবাসে আপনাদের সার্কেলের বাইরের কাউকে! আপনাদের সব বন্ধুদের মধ্যে যদি সে কাওকে ভালবাসে তাহলে উক্ত বন্ধুকে অভিনন্দন জানান এবং সব বন্ধু মিলে ওই নব যুগলকে শুভকামনা জানান, নিজেদের মধ্যে আত্বকলহ না করে!
যাহোক, আমরা এখানে যা বললাম তা একান্তই আমাদের নিজস্ব অভিমত, এটা কোন আইনি পরামর্শ না। আইনি পরামর্শর জন্য কোন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। সবাইকে নিরন্ত্রর শুভেচ্ছা।
Copyright © www.QuranResearchBD.org
Source: http://www.quranresearchbd.org/love-marriage-what-Islam-says.htm
__._,_.___