আরব-ইহুদি মেলবন্ধনে বিশ্বঐক্যের আহ্বান
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: আরবদেশের মুসলিম ও ইসরাইলের ইহুদিদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও শান্তির মেলবন্ধন সৃষ্টিতে বিশ্বব্যাপী ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়েছে।
নিউইয়র্কে অবস্থানরত এক প্রেমিক জুটি যাদের একজন ইসরায়েলি ও আরেকজন লেবানিজ ও সিরিয়ান, তারা এ ঐক্যের ডাক দেন এবং এ আহ্বান সামাজিক সাইটে ব্যাপক সাড়াও ফেলেছে।
এই প্রেমিক জুটি হলেন- ইসরায়েলি তরুণ আব্রাহাম গুটমান ও লেবানিজ ও সিরিয়ান তরুণী দানিয়া দারবিশ। তারা দুজনেই নিউইয়র্কের হান্টার কলেজে পড়াশুনা করছেন।
৮ জুলাই থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যে গণহত্যা শুরু করেছে, বিশেষ করে শিশুহত্যা, এ ঘটনা প্রেমিক জুটির মনকে ব্যথিত করে তোলে। এরই ফলে, ইসরায়েলি তরুণ আব্রাহাম ও লেবানিজ ও সিরিয়ান তরুণী দারবিশ কিছু করার একটা উদ্যোগ নেন। এরপরই তারা টুইটারে হ্যাশট্যাগ দেন- 'ইহুদি ও আরব বিশ্ব শত্রু হতে নারাজ' (#JewsAndArabsRefuseToBeEnemies)।
এতে সাড়াও মিলেছে ব্যাপক। অনলাইনে তাদের ক্যাম্পেইনে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী মুসলিম ও ইহুদি তরুণ-তরুণী ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক সাইটে গাজায় হামলার নিন্দা জানিয়ে এ অসম লড়াই বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, ইহুদি ও আরবরা শত্রু হতে নারাজ। এর পক্ষে তারা সামাজিক সাইটগুলোতে লিখছেন ও সংশ্লিষ্ট ছবিও দিচ্ছেন। এ সব শান্তিকামী মানুষের মধ্যে আরব মুসলিম ও ইহুদি পরিবার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাধারণ মানুষসহ সবস্তরের মানুষ রয়েছেন।
এসব ইহুদি ও মুসলিম নারী-পুরুষ, যারা নিজেদের বন্ধুত্বের সীমানা পেরিয়ে একসঙ্গে ঘর বেঁধেছেন তারা এবং তাদের সন্তানরাও এ ঐক্যের সঙ্গে সরব হয়েছেন। তারা স্লোগান তুলেছেন, 'আরব-ইহুদি শত্রু নয়'।
এই ঐক্যের আহ্বানের সঙ্গে বিশ্বের সংবাদমাধ্যমও একাত্ম হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় এবং মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার নামিদামি সংবাদমাধ্যম এই শান্তিবাদীদের কথা ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে শুরু করেছে।
প্রথম দিকে প্রেমিক জুটির আহ্বান টুইটারে হ্যাশট্যাগে থাকলেও তাদের হ্যাশট্যাগকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী শান্তির আহ্বান। আর এই আহ্বানের কেন্দ্রতে রয়েছেন, আরব বিশ্বের মুসলিম ও ইসরায়েলের তরুণ-তরুণী।
এই হ্যাশট্যাগে আব্রাহাম ও দারবিশ আরো লিখেছেন, তারা গাজায় সহিংসতা চান না।
আব্রাহাম গুটমান লিখেছেন, এত দূর থেকে ইসরাইল ও গাজার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। আমি শান্তির পথিক হিসেবে একটা সমাধানের উপায় দেখতে চাই। আমি চেয়ে চেয়ে ঘটনা দেখার বদলে কিছু করতে চাই। সেটা হবে আশা জাগানিয়া ও সবচেয়ে ভালো একটা কিছু।
ইসরাইলের শান্তিবাদী কিছু মানুষ যারা সংগঠিতভাবে শান্তির পক্ষে বছরের পর বছর ধরে স্লোগান হিসেবে যা বলেছেন, তারই অনুবাদ এই হ্যাশট্যাগের কথা, জানালেন আব্রাহাম গুটমান।
গুটমান জানান, এই শান্তিবাদী মানুষেরা পরস্পরকে শ্রদ্ধার কথা বলে আসছেন এবং তারা সাধারণ মানুষ হিসেবেই থাকতে চান।
আব্রাহাম গুটমানের এই ক্যাম্পেইনকে সাধুবাদ জানিয়ে শত শত টুইটার-অ্যাকাউন্টধারী প্রতিদিন হ্যাশট্যাগে মন্তব্য লিখে টুইট করছেন। কেউ কেউ ফেসবুক, লিঙ্কডইন, পিনারেস্ট, টামলারসহ বিভিন্ন সামাজিক সাইটে লিখছেন, ছবি দিচ্ছেন ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধ। এদের বেশিরভাগই ইহুদি সম্প্রদায়ের। আবার ইহুদি ও মুসলিম একসঙ্গে ফেস্টুন লিখে ছবি তুলে পোস্ট করছেন।
কেউ কেউ টুইটের সঙ্গে তাদের ছবিও দিচ্ছেন। কোনো কোনো প্রেমিক-প্রেমিকা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে, কেউবা জড়িয়ে ধরে অথবা চুমু খেয়ে দেখাচ্ছেন, ইহুদি-মুসলিমের সহাবস্থান। তারা বলছেন, গাজায় মুসলিম নয়, মরছে মানুষ। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু।
এমনকি স্বামী-স্ত্রী যাদের হয়ত একজন ইহুদি অপর জন মুসলিম, তারা এই শান্তির আহ্বানকে আরো বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারা বিভিন্ন মন্তব্য লিখছেন, সমাবেশ করছেন, মিছিল করছেন, সমবেত হয়ে দাবি তুলছেন- 'ইহুদি ও আরব বিশ্ব শত্রু হতে নারাজ।'
শুধু তাই নয়, প্রেমিক ও প্রেমিকার একজন হয়ত ইহুদি অন্য জন মুসলিম, তারা একে অপরকে চুমু খেয়ে তার ছবি পোস্ট করেছেন। তারা বলছেন, আমরা যদি ভালোবাসতে পারি, তবে কেন ইহুদি ও আরববিশ্ব পরস্পরের বন্ধু হতে পারে না!
এর প্রথম উদাহরণটা সৃষ্টি করলেন হ্যাশট্যাগের জুটি- আব্রাহাম গুটমান ও দানিয়া দরবিশ।
লেবানিজ ও সিরিয়ান বংশোদ্ভুত সাংবাদিক সুলোমি অ্যান্ডারসন তার ইসরায়েলি ইহুদি বয়ফ্রেন্ডকে চুমু দিয়ে ও একই সঙ্গে একটি ফেস্টুন তুলে ধরে ছবি তুলেছেন। তারা ফেস্টুনে লিখেছেন 'ইহুদি ও আরব বিশ্ব শত্রু হতে নারাজ'।
শুধু তাই-ই নয়, সুলোমি জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধের চেয়ে তাদের ভালোবাসা আরো বেশি শক্তিশালী বোঝাতেই তিনি তার ইহুদি বয়ফ্রেন্ডকে চুমু দিচ্ছেন, এমন ছবি তুলেছেন।
তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা যখন দুজনে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি, তখন আমরা রাজনীতি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা করেছি। তিনি বলেন, এরপর আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসি। আমরা তর্ক-বিতর্ক করতাম। তারপর একে অপরের দৃষ্টিকোণ বোঝার চেষ্টা করতাম। এতে করে আমরা দুজন পরস্পরের আরো বেশি কাছাকাছি চলে আসি।
অ্যান্ডারসনের বাবা টেরি অ্যান্ডারসন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) মধ্যপ্রাচ্য ব্যুরোর সাবেক প্রধান। তার বাবাকে ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যরা ধরে নিয়ে যায়। এরপর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও তার আর খোঁজ মেলেনি।
সুলোমি অ্যান্ডারসন আশা করছেন, 'ইহুদি ও আরব বিশ্ব শত্রু হতে নারাজ' এই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবেন যে, যুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হয়!
তিনি বলেন, অনেকেই আমাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন না, কিন্তু তারাও আমাদের হ্যাশট্যাগকে টুইট করছেন, অন্যকে জানিয়ে দিচ্ছেন।
অপরদিকে, আব্রাহাম গুটমান বলেন, 'ইহুদি ও আরব বিশ্ব শত্রু হতে নারাজ' এ স্লোগানটা হিব্রু ভাষায় শুধুমাত্র ইসরায়েলেই চালু ছিল। আমরা এটাকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে জানিয়ে দিতে চাই যে, আমরা কেউ কারো শত্রু হতে রাজি নই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৪
Israel, Palestine and the problem with the two-state solution
Related
- Palestinian liberation is ingrained into the Egyptian revolution
- Thousands protest across Britain as Israel continues assault on Gaza
- Stop Israeli Terror - Palestinians say take to the streets against Gaza attack
- Thousands join London demo for Palestine
- Horror in Gaza after Israel cuts power and sends in tanks
Israel/Palestine: one state solution
-
The One-State Solution Is on Our Doorstep
Middle East Forum-Jul 17, 2014A one-state solution to the Israeli-Palestinian conflict is upon us. It won't arrive by Naftali Bennett's proposal to annex the West Bank's Area C, ... POLL: MAJORITY OF PALESTINIANS NOW OPPOSE TWO-STATE SOLUTION
__._,_.___