Bhorer Kagoj, 29th http://www.bkagoj1.com/new/blog/2014/08/29/193475.php
সারদার টাকা জামাতের পেটে?
এ সময়ে আমেরিকায় সাদা পুলিশের হাতে দুই কালোর মৃত্যু নিয়ে মিজৌরী ও নিউইয়র্কে বেশ হৈচৈ হচ্ছে। এদেশে সাদা-কালো নিয়ে মাঝেমধ্যে এমনটা হয়ে থাকে। অবশ্য সাদা ও কালোরা বা এমনকি প্রায় প্রতিটি মার্কিনীর পছন্দ 'গ্রীন' বা সবুজ। ব্যবসা-প্রতিষ্টানে প্রায় সবাই বলেন, 'উই লাভ গ্রীন'। কারণ কি? কারণ হলো গ্রীন হচ্ছে ডলারের রং। হ্যা, বর্ণ নির্বিশেষে, আর শুধু বর্ণই বা কেন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সবুজ ডলার পছন্দ করে থাকেন। এমনকি কাঠমোল্লা যিনি দু'চোক্ষের কোনে আমেরিকাকে অপছন্দ করেন, আমেরিকার মাটিতে পা দিয়েই যিনি বলেন, 'আইলাম ইহুদী-নাছারার দেশে' তিনিও সমভাবে ডলার পছন্দ করেন। সবাই জানে, 'মানি ইজ হানী', সেটা মার্কিন ডলারই হোক বা ভারতীয় রুপিই হোক, এখানে হারাম-হালাল নেই, টাকা যেদিক থেকেই আসুক, হালাল; কথায় বলে, 'জো আপসে আতা হ্যায় ও হালাল হ্যায়।' এসব কথা বলার কারণ হলো, পশ্চিমবঙ্গের 'সারদা গ্রুপের' টাকা খেয়ে হজম করে বসে আছে জামাত-ই-ইসলামী সহ বেশ ক'টি ইসলামী দল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা এ খবর দিয়ে বলেছে, আওয়ামী লীগের বিরূদ্বে আন্দোলন জোরদার করতেই মমতা ব্যানার্জী এ টাকা ঢালেন। সদ্য সমাপ্ত ভারতীয় নির্বাচনের সময় মমতার পক্ষে মিঠুন চক্রবর্তীকে দেখে অবাক হয়েছিলাম, পরে পত্রিকায় দেখলাম, তিনি সারদা থেকে মাসিক ২০লক্ষ রুপি ভাতা পেতেন। বোঝা গেলো, 'মানি টকস'। সারদা কেলেঙ্কারিতে কলকাতায় অনেকে ফেঁসে যাবেন, সেটা তাদের বিষয়। আমাদের দেখার বিষয় হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের জামাতী ও আমাদের জামাতীদের মধ্যে সম্পর্ক কতটা গভীর তা খুঁজে বের করা এবং সেইমত ব্যবস্থা নেয়া। আমরা পারবো কি?
এদিকে পুলিশের এআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদারের বিরুদ্ভে এক মনগড়া কাহিনী ছেপে দৈনিক ইনকিলাব আবারো প্রমান করেছে, 'কুকুরের লেজ মরলেও সোজা হয়না।' যাহোক, ইনকিলাব সংবাদটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং দু:খ প্রকাশ করেছে। কিন্তু ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেটে প্রলয়ের বিরুদ্ভে বিষোদগার অব্যাহত আছে। বিষয়টি প্রলয় নয়, মৌলবাদীদের রোষানলে যে কোন হিন্দুই বা যেকোন প্রগতিশীল ব্যক্তি যেকোন সময় পড়তে পারেন। মৌলবাদীরা ভারতকে অপছন্দ করে, হিন্দুদের বিরুদ্বে বিষোদগার করে; কিন্তু ভারতীয় রুপীতে কোন এলার্জি নেই। আমরা ভুলে যাই নাই যে, বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার পর গিয়াস কামাল চৌধুরী 'ভোয়া'-য় বানোয়াট রিপোর্ট করেছিলেন যে, 'হিন্দুরা আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করেছে।' এরফলে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিলো। কিছু কিছু পত্রিকা বা ব্যক্তি বড্ড উলঙ্গভাবে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প ছড়িয়ে থাকে, যা জাতির জন্যে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক। এরমধ্যে আশারবাণী হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, 'বাংলাদেশ আপনাদের জন্মভূমি, আপনার দেশ, অধিকার নিয়ে বসবাস করুন।' রাষ্ট্রনায়কদের এমন জোরালো বক্তব্য নিশ্চিতভাবে যেকোন নিপীড়িত জনগোষ্টিকে সাহস জোগায়। একইসাথে জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে এরশাদের কথাও প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, 'জন্মাষ্টমীর ছুটি আমিই দিয়েছি। দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আপনারা মাত্র একদিন ছুটি পান, ৩দিন ছুটির কথা আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো।' পল্লীবন্ধু (!) এরশাদের এ ভাওতাবাজি নুতন নয়, ভোটারবিহীন সংসদে ৩মিনিটে ৮ম সংশোধনী পাশ করার পর হিন্দুদের প্রতি এরশাদের এ দরদ কুম্ভিরাশ্রু মাত্র।
অন্যদিকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মহসীন সাহেব আবার সভামধ্যে ঘুমিয়ে পড়লেন। উনি আসলে ক্লান্ত, প্রধানমন্ত্রীর উচিত তাকে বিশ্রামের সুযোগ করে দেয়া। গুটিকয় মন্ত্রী-এমপি'র কারণে বারবার সরকারের ভাবমুর্তি ম্লান হচ্ছে। ধর্মমন্ত্রী দেরীতে আসার কারণে যদি প্রধানমন্ত্রী তাকে বক্তৃতা দিতে না দেন, তাহলে অন্যদের বেলায় নমনীয়তা কেন? বাক-স্বাধীনতার দেশ লন্ডনে বসে তারেক রহমান যা ইচ্ছে তাই বলছেন, বিএনপি তা নিয়ে ডুগডুগি বাজাচ্ছে। কিন্তু সুখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে যেসব কথাবার্তা আমরা শুনি, তাতে মনে হয়, 'ফ্রীস্পিচ' ব্রিটেন থেকে আমাদের দেশে কম নয়! ভারতে লোকসভার উপনির্বাচনে ১৮ সীটের মধ্যে বিজেপি-বিরোধী জোট ১১টি আসন জিতেছে; এটা মোদীর জন্যে ১শ দিনের মাথায় বড় ধাক্কা এবং বিরোধীদের কলিজায় পানি আসার মত। গণতন্ত্রের এটাই সৌন্দর্য্য, তাইতো আমরা গণতন্ত্র চাই। পাকিস্তানে নওয়াজ শরীফের অবস্থা দোদুল্যমান। ইমরান খানের ওপর হামলা পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করেছে। ইমরান ভালো ক্রিকেটার হলেও জাতিতে জামাত, কাজেই আমাদের কিছু যায় আসেনা। পাকিস্তান 'গোল্লায়' যাক। সদ্য দেখলাম, বালুচরা ভারত ও আমেরিকার কাছে সাহায্য চেয়েছে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য করার জন্যে। দেখা যাক, জল কতটুকু গড়ায়। শেষ করবো সন্তু লারমার কথা দিয়ে, তিনি বলেছেন, 'বাংলাদেশে কোথাও সামরিক শাসন নেই; কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসন চলছে।' পার্বত্য সমস্যা জিইয়ে রাখাটা কি ঠিক? ১৭ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়াটা আর যাই হোক, সরকারের ভাবমুর্ক্তি উজ্জল করেনা।
শিতাংশু গুহ, কলম লেখক।
২৫শে আগস্ট ২০১৪।
__._,_.___