বঙ্গবন্ধু আছেন !!!!
On Friday, August 15, 2014 10:21 AM, Sitangshu Guha <guhasb@gmail.com> wrote:
বঙ্গবন্ধু জীবিত নেই; কিন্তু তিনি আছেনআগস্ট মাস, শোকের মাস। ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সপরিবারে নিহত হয়েছেন ৩৯বছর। এ সময়ে তিনি বাঙালী জাতির ইতিহাসে মোটামুটিভাবে প্রতিষ্টিত, তবে সুপ্রতিস্টিত তা বলা যাবেনা। কারণ এখনো তার প্রচন্ড বিরোধিতা আছে। স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনো তার বিরোধিতা করে থাকেন। এজন্যে সময় লাগবে। নবাব সিরাজদ্দৌলা প্রতিষ্টিত হতে সময় লেগেছে প্রায় দু'শ বছর; সেই তুলনায় বঙ্গবন্ধু অনেকটা এগিয়ে।পচাত্তরের পর 'শোককে শক্তিতে পরিনত' করার একটা বলদীপ্ত শ্লোগান ছিলো, সেটা হয়েও ছিলো, এবং সেই শক্তির বলে ১৯৯৬-তে আওয়ামী লীগের ক্ষমতারোহন। কিন্তু এখন আর তা নেই, ওপর তলায় বঙ্গবন্ধু শুধু ক্ষমতার কাছাকাছি যাবার সোপান, যদিও নীচতলায় অর্থাৎ সাধারণ জনগনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শুধু বঙ্গবন্ধুই। এখন থেকে ১শ বছর পর হয়তো দেখা যাবে শুধু বঙ্গবন্ধুই জীবিত, অন্যরা হারিয়ে গেছেন। তবে সিরাজদ্দৌলার নাম এলে যেমন মীরজাফরের নাম আসে; তেমনি বঙ্গবন্ধুর নাম এলে মুশতাক-জিয়ার নামও আসবে। এটাই ইতিহাস; ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা।গত প্রায় দুই দশক আমি যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, কিন্তু বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানি তা মনে হয়না। রবি ঠাকুরের এক জীবনের লেখা যেমন আমাদের পক্ষে সারাজীবনেও শেষ করা অসম্ভব, তেমনি বঙ্গবন্ধুর কর্মও বোঝা বা বিশ্লেষণ অনেকের মত আমার পক্ষেও দু:সাধ্য। এতবড় মাপের নেতাকে ভবিষৎ ইতিহাসই কেবল মাপতে পারবে। আমরা মাপতে গেলে তা 'অন্ধের হাতি দর্শনের' মত হবে। তবু কি তাকে নিয়ে লেখালেখি, বা গবেষণা থেমে আছে, বা থেমে থাকা উচিত? না তা নেই, বা উচিতও নয়, তবে যা হচ্ছে সেটা অতি সামান্য। আমরাও লিখি, অনেকের লেখাই দেখি, তবে ওসব তার জন্যে নয়, আমাদের জন্যে। আর তার জন্যে আমরা কি লিখবো, 'তার কর্মের চেয়ে তিনি যে মহান।'খবর সম্পাদকের মত 'বঙ্গবন্ধুর সাথে কই মাছ দিয়ে ভাত খাবার' কল্পকাহিনী অনেকেই করেন, বঙ্গবন্ধুকে বেঁচে অনেকে 'টু পাইস' কামিয়েছেন বা কামাচ্ছেন, বা অনেকে শেখ পরিবারের কাছাকাছি পৌঁছতে সচেষ্ট হন, এসবই স্বাভাবিক, কিন্তু বঙ্গবন্ধু এসবের উর্ধে। বঙ্গবন্ধুকে কাছাকাছি দেখার সুযোগ আমার হয়নি; কিন্তু ১০ই জানুয়ারী ১৯৭২, শাহাবাগের মোড়ে দাড়িয়ে খোলা জীপে বঙ্গবন্ধুকে দেখেছিলাম। জননেত্রী শেখ হাসিনার 'স্বদেশ প্রত্যাবর্তন'ও বৃষ্টিভেজা দুপুরে আমি দেখেছিলাম। আর দেখেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর বাবা মারা যাবার পর টিভিতে মোশতাকের কান্না, সম্ভবত: তিনি বঙ্গবন্ধুর চেয়েও বেশি কেঁদেছিলেন! আমি গবেষক নই, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার কোন কাজও নেই। সেই সাহসও নেই। তবে বঙ্গবন্ধুকে যিনি নিজহাতে কবর দিয়েছিলেন, গোপালগঞ্জের সেই মাওলানার একটি ইন্টারভিউ আমি করেছিলাম, যা আশির দশকে দৈনিক বাংলাবানীতে ছাপাও হয়েছিলো। সেটাও সম্ভব হয়েছিলো সম্পাদক শেখ সেলিমের বদান্যতায়। ওই লেখাটা আমি এখনো প্রায়শ: খুজি, কিন্তু পাইনে, পেলে পুন:মুদ্রণ করতাম। কারণ, ওই সাক্ষাত্কারে মাওলানা সাহেব অনেক মূল্যবান কথাই বলেছিলেন।বঙ্গবন্ধু নেই। 'যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই' -এ গানের কথাও সত্য হবেনা। কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙালীর মাঝে। বঙ্গবন্ধুর কাছে বাঙালীর কৃতজ্ঞতার কোন সীমা-পরিসীমা নেই, তিনি আমাদের একটি দেশ ও একটি সবুজ পাসপোর্ট দিয়েছেন, যার বদৌলতে আমরা বাঙালিরা আজ বিশ্বময় ঘুরে বেড়াচ্ছি। শুধু এই কারণে নয়, আমি কৃতজ্ঞ অন্য একটি কারণে। পাকিস্তান আমলের একবারে শেষদিকে আমি মাধ্যমিক পরীক্ষায় মোটামুটি ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করলে আমার ডাক্তারী পড়ার সম্ভবনা উজ্জল হয়। কিন্তু বাবা তখন বললেন, 'তা হবেনা, অতদিন পাকিস্তানে থকতে পারবে না, বিএসসি পাশ করে এখান থেকে চলে যেতে হবে যাতে কলকাতায় একটা চাকুরী পাওয়া যায়।' বাবা তখন মোটামুটি পাকিস্তান থেকে চূড়ান্তভাবে পাততাড়ি গুটানোর ছক ঠিক করে ফেলেছেন, পরিবারের অর্ধেক ইতোমধ্যে কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেছে। ছেলে বেলায় আমরা 'এইম ইন লাইফ' পড়তাম, আমাদের বলা হতো, জীবনে লক্ষ্য স্থির না থাকলে তা 'মধ্যনদীতে মাঝিবিহীন নৌকার মতই হয়'। তবু আমার জীবনের কোন লক্ষ্য ছিলোনা, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তো নয়ই, এমনকি বিজ্ঞান পড়ায়ও অনীহা ছিলো, তবে বাধ্য হয়েছিলাম একথা মেনে নিতে যে, কোনমতে একটা পাশটাশ করে ভারত যাওয়া ছাড়া উপায় নাই; কারণ পাকিস্তান হিন্দুদের দেশ নয়। যাহোক, আমাকে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়নি। আমি কৃতজ্ঞ যে, বঙ্গবন্ধুর জন্যেই আমাদের সেদিন পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়নি। বঙ্গবন্ধুর কারণেই আমি আজও বাঙালী, বাংলাদেশের নাগরিক। সুখে-দু:ক্ষে আছি বাংলাদেশের সাথেই। কিন্তু জাতীয় শোক দিবসে স্বার্থপরের মতো আমাকে এখনো ভাবতে হচ্ছে, 'বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে হিন্দুরা কি আদৌ থাকতে পারবে?' জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
__._,_.___