রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা কে? গোলাম আজম নাকি নিয়াজী?
24 Oct, 2014
আহমাদ মুসাফ্ফা
এই প্রশ্নের সোজা সাপ্টা জবাব পাওয়া যায় একাত্তর সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার জেনারেল নিয়াজীর বক্তব্যে। জেনারেল নিয়াজী মুনতাসির মামুনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে অত্যন্ত গর্বের সাথে বলেছেন, 'রাজাকার বাহিনীর আমিই স্রষ্টা'। (শান্তি কমিটি ১৯৭১, মুনতাসির মামুনঃ পৃষ্ঠা ১২)।
মুনতাসির মামুন এবং মহিউদ্দিন আহমেদের আরেক সাক্ষাৎকারেও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এ বিষয়টি স্বীকার করেন:
Q. Can you elaborate on the formation of the civil armed forces saying that you formed the Razakars?
A. I think it had been formed by the Martial Law Head Quarter.
Q. Whose brainchild was the Force?
A. Must have been the Core Commandant's.
Q. Who was at that time?
A. Niazi.
Q. His book is also dedicated to them.
A. He created them and he used them, which I suppose anybody else also would have done.
(সাক্ষাৎকারের লিংকঃ http://etongbtong.blogspot.com/2010/03/interview-of-major-general-rao-farman.html)
তারমানে দেখা যাচ্ছে, রাজাকার বাহিনী ছিল জেনারেল নিয়াজীর ব্রেইন চাইল্ড এবং জেনারেল নিয়াজীর নিজস্ব বক্তব্য অনুযায়ী এ বাহিনী গঠন করার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিজে নিতে চান।
রাজাকার শব্দের অর্থ স্বেচ্ছাসেবক। আনসার বাহিনীর মত এটি ছিল একটি আধাসামরিক বাহিনী। আনসার শব্দের অর্থও স্বেচ্ছাসেবক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আনসার আইন ১৯৪৮ বাতিল করে রাজাকার অধ্যাদেশ ১৯৭১ অনুযায়ী এ বাহিনী গঠন করে। পুলিশ বাহিনীর DIG আব্দুর রহিম ছিলেন এর প্রথম কমান্ডার। 'পাকিস্তান রক্ষা'র মন্ত্র নিয়েই সরকারী তত্ত্বাবধানে এ বাহিনী গঠিত হয়।
৩৭,০০০ থেকে ৬০,০০০ হাজার বাঙ্গালী রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি হবার পিছনে এক বা একাধিক কারণ ছিলঃ
১) তখন দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছিল। সরকার সে সময় ঘোষণা করল, যারা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিবে, তাদের দৈনিক নগদ তিন টাকা ও তিন সের চাউল দেয়া হবে। রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পিছনে এটি ছিল অন্যতম কারণ।
২) পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার বাসনা থেকে অনেক নিবেদিত প্রাণ মানুষেরাও এ বাহিনীতে যোগদানে উৎসাহিত হয়েছিল।
৩) পাকসেনার ভয়ে যারা ভীত ছিল, রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেওয়াকে অনেকে আত্মরক্ষার উপায় মনে করল।
৪) এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী জোর করে মানুষের সম্পত্তি দখল করা, হিন্দুদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি দখল করা কিংবা পৈতৃক আমলের শত্রুতার প্রতিশোধ নেওয়া, প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ গ্রহণের জন্য এ বাহিনীতে যোগ দেয়।
পাকিস্তান বাহিনী নানাভাবে এ রাজাকার বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। পাকিস্তান বাহিনী প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর সাথে তেমন পরিচিত ছিল না, তারা স্থানীয়দেরও চিনত না। রাজাকার বাহিনী সেখানে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করত। অনেক সময় তারা কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স, যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের অবস্থান নির্ণয় ও তাদের ধরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কাজ করত। আবার পাকিস্তান বাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের অনৈতিক কার্যকলাপ যেমন সুন্দরী মেয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার কাজেও এদেরকে ব্যবহার করা হত। আবার রাজাকার বাহিনীর অনেকেই সেই গোলমেলে পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত ফায়দা ও অনৈতিক সুবিধা হাসিলে বিশেষভাবে তৎপর ছিল।
১৯৭১ সালের ২রা সেপ্টেম্বর সরকারীভাবে দ্য ঢাকা গ্যাজেটে রাজাকার কমান্ডারদের নাম পরিচয় প্রকাশিত হয়। সেই তালিকায় গোলাম আজমের নাম নাই।
গোলাম আজম নিজেও এ বাহিনী গঠনে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। তবে এটাও সত্য যে, গোলাম আজম এ বাহিনীকে পাকিস্তান রক্ষায় উদ্বুদ্ধ্ব করার জন্য পত্রপত্রিকায় বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু তাদেরকে যুদ্ধাপরাধ কিংবা অনৈতিক কাজে উৎসাহ দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন বলে জানা যায় না।
অন্যদিকে, জেনারেল নিয়াজী নিজেকে রাজাকার বাহিনী গঠনের মাস্টারমাইন্ড বলে দাবি করেন। এমনকি তাদের উদ্দেশ্যে নিজের বইও উৎসর্গ করেন। এ পোস্টের সাথে সংযুক্ত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, জেনারেল নিয়াজী রাজাকার ট্রেনিং ক্যাম্পের গিয়ে রাজাকারদের প্রশিক্ষণ পর্যবেক্ষণ করছেন। আবেগকে পেছনে ফেলে যদি আমরা ইতিহাস পর্যালোচনা করি, তখন একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে। রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা/সংগঠক/গুরু/শিরোমণি ইত্যাদি বিশেষণগুলো আসলে জেনারেল নিয়াজীর প্রাপ্য, গোলাম আজমের নয়। যেখানে স্বয়ং জেনারেল নিয়াজী রাজাকার বাহিনী গঠনের কৃতিত্ব নিতে চান, সেখানে জোর করে তার দায় গোলাম আজমের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় হচ্ছে কিনা তা পুনর্বিবেচনা করে দেখা দরকার।
তবে গোলাম আজম স্বীকার করেছেন যে, তিনি শান্তি কমিটি গঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এর স্বপক্ষে তার নিজস্ব জাস্টিফিকেশনও তিনি প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন। যারা গোলাম আজমকে অপছন্দ করেন তাদের উচিত এই শান্তি কমিটি গঠন করার কাজটি অনৈতিক ছিল বলে প্রমাণ করে গোলাম আজমকে দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, কিন্তু তার উপরে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা/সংগঠক হিসেবে মিথ্যা উপাধি আরোপ করে তার ইমেইজ নষ্ট করার চেষ্টা আজ হোক কাল হোক আমার ধারণা মতে আল্টিমেটলি বৃথা যাবে। ইতিহাস তার নিজের প্রয়োজনেই সত্যকে সামনে তুলে ধরবে, অসত্য ও বানোয়াট ন্যারেটিভকে উচ্ছিষ্ট হিসেবে নিচে ফেলে দিবে।
এই প্রশ্নের সোজা সাপ্টা জবাব পাওয়া যায় একাত্তর সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার জেনারেল নিয়াজীর বক্তব্যে। জেনারেল নিয়াজী মুনতাসির মামুনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে অত্যন্ত গর্বের সাথে বলেছেন, 'রাজাকার বাহিনীর আমিই স্রষ্টা'। (শান্তি কমিটি ১৯৭১, মুনতাসির মামুনঃ পৃষ্ঠা ১২)।
মুনতাসির মামুন এবং মহিউদ্দিন আহমেদের আরেক সাক্ষাৎকারেও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এ বিষয়টি স্বীকার করেন:
Q. Can you elaborate on the formation of the civil armed forces saying that you formed the Razakars?
A. I think it had been formed by the Martial Law Head Quarter.
Q. Whose brainchild was the Force?
A. Must have been the Core Commandant's.
Q. Who was at that time?
A. Niazi.
Q. His book is also dedicated to them.
A. He created them and he used them, which I suppose anybody else also would have done.
(সাক্ষাৎকারের লিংকঃ http://etongbtong.blogspot.com/2010/03/interview-of-major-general-rao-farman.html)
তারমানে দেখা যাচ্ছে, রাজাকার বাহিনী ছিল জেনারেল নিয়াজীর ব্রেইন চাইল্ড এবং জেনারেল নিয়াজীর নিজস্ব বক্তব্য অনুযায়ী এ বাহিনী গঠন করার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিজে নিতে চান।
রাজাকার শব্দের অর্থ স্বেচ্ছাসেবক। আনসার বাহিনীর মত এটি ছিল একটি আধাসামরিক বাহিনী। আনসার শব্দের অর্থও স্বেচ্ছাসেবক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আনসার আইন ১৯৪৮ বাতিল করে রাজাকার অধ্যাদেশ ১৯৭১ অনুযায়ী এ বাহিনী গঠন করে। পুলিশ বাহিনীর DIG আব্দুর রহিম ছিলেন এর প্রথম কমান্ডার। 'পাকিস্তান রক্ষা'র মন্ত্র নিয়েই সরকারী তত্ত্বাবধানে এ বাহিনী গঠিত হয়।
৩৭,০০০ থেকে ৬০,০০০ হাজার বাঙ্গালী রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি হবার পিছনে এক বা একাধিক কারণ ছিলঃ
১) তখন দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছিল। সরকার সে সময় ঘোষণা করল, যারা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিবে, তাদের দৈনিক নগদ তিন টাকা ও তিন সের চাউল দেয়া হবে। রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পিছনে এটি ছিল অন্যতম কারণ।
২) পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার বাসনা থেকে অনেক নিবেদিত প্রাণ মানুষেরাও এ বাহিনীতে যোগদানে উৎসাহিত হয়েছিল।
৩) পাকসেনার ভয়ে যারা ভীত ছিল, রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেওয়াকে অনেকে আত্মরক্ষার উপায় মনে করল।
৪) এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী জোর করে মানুষের সম্পত্তি দখল করা, হিন্দুদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি দখল করা কিংবা পৈতৃক আমলের শত্রুতার প্রতিশোধ নেওয়া, প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ গ্রহণের জন্য এ বাহিনীতে যোগ দেয়।
পাকিস্তান বাহিনী নানাভাবে এ রাজাকার বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। পাকিস্তান বাহিনী প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর সাথে তেমন পরিচিত ছিল না, তারা স্থানীয়দেরও চিনত না। রাজাকার বাহিনী সেখানে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করত। অনেক সময় তারা কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স, যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের অবস্থান নির্ণয় ও তাদের ধরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কাজ করত। আবার পাকিস্তান বাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের অনৈতিক কার্যকলাপ যেমন সুন্দরী মেয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার কাজেও এদেরকে ব্যবহার করা হত। আবার রাজাকার বাহিনীর অনেকেই সেই গোলমেলে পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত ফায়দা ও অনৈতিক সুবিধা হাসিলে বিশেষভাবে তৎপর ছিল।
১৯৭১ সালের ২রা সেপ্টেম্বর সরকারীভাবে দ্য ঢাকা গ্যাজেটে রাজাকার কমান্ডারদের নাম পরিচয় প্রকাশিত হয়। সেই তালিকায় গোলাম আজমের নাম নাই।
গোলাম আজম নিজেও এ বাহিনী গঠনে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। তবে এটাও সত্য যে, গোলাম আজম এ বাহিনীকে পাকিস্তান রক্ষায় উদ্বুদ্ধ্ব করার জন্য পত্রপত্রিকায় বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু তাদেরকে যুদ্ধাপরাধ কিংবা অনৈতিক কাজে উৎসাহ দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন বলে জানা যায় না।
অন্যদিকে, জেনারেল নিয়াজী নিজেকে রাজাকার বাহিনী গঠনের মাস্টারমাইন্ড বলে দাবি করেন। এমনকি তাদের উদ্দেশ্যে নিজের বইও উৎসর্গ করেন। এ পোস্টের সাথে সংযুক্ত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, জেনারেল নিয়াজী রাজাকার ট্রেনিং ক্যাম্পের গিয়ে রাজাকারদের প্রশিক্ষণ পর্যবেক্ষণ করছেন। আবেগকে পেছনে ফেলে যদি আমরা ইতিহাস পর্যালোচনা করি, তখন একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে। রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা/সংগঠক/গুরু/শিরোমণি ইত্যাদি বিশেষণগুলো আসলে জেনারেল নিয়াজীর প্রাপ্য, গোলাম আজমের নয়। যেখানে স্বয়ং জেনারেল নিয়াজী রাজাকার বাহিনী গঠনের কৃতিত্ব নিতে চান, সেখানে জোর করে তার দায় গোলাম আজমের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় হচ্ছে কিনা তা পুনর্বিবেচনা করে দেখা দরকার।
তবে গোলাম আজম স্বীকার করেছেন যে, তিনি শান্তি কমিটি গঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এর স্বপক্ষে তার নিজস্ব জাস্টিফিকেশনও তিনি প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন। যারা গোলাম আজমকে অপছন্দ করেন তাদের উচিত এই শান্তি কমিটি গঠন করার কাজটি অনৈতিক ছিল বলে প্রমাণ করে গোলাম আজমকে দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, কিন্তু তার উপরে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা/সংগঠক হিসেবে মিথ্যা উপাধি আরোপ করে তার ইমেইজ নষ্ট করার চেষ্টা আজ হোক কাল হোক আমার ধারণা মতে আল্টিমেটলি বৃথা যাবে। ইতিহাস তার নিজের প্রয়োজনেই সত্যকে সামনে তুলে ধরবে, অসত্য ও বানোয়াট ন্যারেটিভকে উচ্ছিষ্ট হিসেবে নিচে ফেলে দিবে।
__._,_.___