শেখ হাসিনার রাজনীতির কাছে ধরাশায়ী বিএনপি-জামাত জোট!
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক চালচিত্রে এর চেয়ে অকাট্য সত্যি কথা বোধ হয় আর কিছু নেই। দেশরত্ন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশলের কাছে সম্পুর্ণভাবে পরাস্ত হয়েছে বিএনপি-জামাতের অপরাজনীতির চোরা-গুপ্তা কৌশল। কিভাবে এবং কেন সেটাও খুব বেশী ব্যখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ১৩১৪ ডলারে উন্নীত হওয়াতে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক বাণিজ্যের যে রিজার্ভ বর্তমানে আছে তা দিয়ে ৯ মাসের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এছাড়াও এই মজুদ অর্থ (২৪ বিলিয়ন ডলারের বেশী) দিয়ে যে কোন সময় পদ্মা সেতুর মত একটা গোটা প্রকল্পের খরচ মেটানো যায় - যার প্রয়োজন এখন পর্যন্ত হয়নি।আমদানী-রফতানীর ঘাটতিও কমে এসেছে অতীতের যে কোন সময়ের তুলণায়। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আর দ্রব্যমুল্য স্ফীতির মধ্যে পার্থক্য ১% এরও কম হওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ। ঢাকা শহরের একজন রিকশাওয়ালার দৈনিক আয় এখন প্রায় ৭০০-৯০০ টাকা।এমন একটি অর্থনৈতিক অবস্থা যখন আ'লীগ সরকারের অনুকূলে আছে তখন বিএনপি নেতৃত্বের একের পর এক হটকারি সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম এই দলটিকে ক্রমশ তার কর্মী-সমর্থকদের কাছে হাস্যকর করে তুলছে।
২০১৪ সালে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামাতের চক্করে পড়ে শেষ পর্যন্ত হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়েছে বিএনপির কর্মীরা এবং তাদের উদীয়মান নেতারা। দেশরত্ন শেখ হাসিনার জটিল রাজনীতির চালের কাছে বিএনপি সম্পুর্ণ ধরাশায়ী হয়ে নির্বাচনে না গিয়ে শক্তভাবে জামাতের লেজুড়ই ধরে থাকল। ফলে, ০৫ জানুয়ারীর নির্বাচনী ট্রেনে জাতীয় পার্টি আর বামদের নিয়ে উঠে পড়ল আ'লীগ। এই নির্বাচনকে 'প্রতিদ্বন্দ্বী বিহীন' নির্বাচন হিসেবে সারা পৃথিবীর পরাশক্তির কাছে গ্রহনীয় করে তোলার জন্য অনেক আগে থেকেই সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির নেতৃত্বে চলছিল পররাষ্ট্র কূটনীতি।'৭১ এর মিত্রশক্তি সবার আগে তাদের সমর্থন জানিয়ে দিল এই নির্বাচনকে। রাশিয়া, চীন আর ভারতের সমর্থন এসে যাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়ে মার্কিন এবং ইউরোপীয় অবস্থান। তারাও সমর্থন জানালো সেই নির্বাচনকে এবং নির্বাচনের ফলাফলকে। এই পর্যায়ে চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করল বিএনপি। তাদের আপাত মিত্র জামাতের সৌদি সমর্থনও তখন অনেক দূরে সরে গেলো খোদ মার্কিন সমর্থন এদিকে না থাকায়।
হতাশা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এক বছর সময় নিল বিএনপি। তাদের এবারের রজনৈতিক আপকৌশলও শেখ হাসিনার রাজনীতির প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের কাছে জ্বলে পুড়ে ভস্মে পরিণত হল। ০৫ জানুয়ারী ২০১৫ থেকে ৯০ দিন একটি ব্যর্থ আন্দোলন করে মানুষকে পেট্রোল বোমায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ অবধি আদালতে হাজিরা দিয়ে যবনিকা টানতে হল তাদেরকে। গুলশান আর লন্ডনের টানাপোড়েন তখন হাঁড়ে হাঁড়ে বুঝতে পেরেছে বিএনপি'র সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কর্মী পর্যন্ত সবাই। তাদের সেই অনুভূতিই এখন প্রকাশ পায় দলের বর্ষীয়ান নেতা মওদুদ আহমেদের কন্ঠে "এই বিএনপি দিয়ে হবে না"। উল্লেখ্য, এই নেতার ঘোষণার মাধ্যমেই আমরা বিএনপির ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ধ্বংসস্তূপ তৈরি হতে দেখেছি। তাদের আরেক সংগঠক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন অনেক দিন চেষ্টা করেও দলের ঘুরে দাঁড়াবার পথ দেখাতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললেন "এই বিএনপি আর জিয়ার বিএনপির মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে"। বিএনপির কফিনে আরেকটি শক্ত পেরেক ঠুকে দিল আজকে আ'লীগের ঝানু রাজনীতিবিদ মোফাজ্জন হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বললেন "বিএনপি যদি আন্তরিক হয় তাহলে সরকার জিয়া হত্যারও বিচার করবে"! মায়া-র এই বক্তব্যের কোন রকম কোন জবাবতো দূরস্থ, কোন প্রতিক্রিয়া জানানোও বিএনপি নেতৃত্বের কাছ থেকে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। সব বিশ্লেষণ থেকে বলা যায় - এখন পর্যন্ত রাজনীতির এই নতুন মাঠে বিএনপি নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে।
লেখকঃ শিক্ষক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
__._,_.___