Banner Advertiser

Saturday, February 18, 2017

[mukto-mona] বাঙালীর আত্মপরিচয় ॥ ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন



বাঙালীর আত্মপরিচয় ॥ ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন

প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
  • মাসুদা ভাট্টি

বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশের পরিচয় কী হবে তা নিয়ে নানাবিধ আলোচনা চলছে সর্বত্র। বিশেষ করে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সাবেক 'ধর্মনিরপেক্ষ' পরিচয়টি বদলে গিয়ে হঠাৎই 'মডারেট মুসলিম' রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের দ্য ইকোনমিস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রপত্রিকা প্রায়শই বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন সংবাদ বা নিবন্ধে বাংলাদেশকে পরিচয় করাতে শুরু করেছে 'মডারেট মুসলিম কান্ট্রি' হিসেবে। এছাড়া বিবিসির মতো প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশকে মুসলিম মেজরিটির দেশ যেমন বলে তেমনই যুদ্ধাপরাধের দায়ে দ-িতদের যখন একের পর এক ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে তখন তাদের সম্পর্কে 'ইসলামিস্ট লিডার' বা 'ইসলামপন্থী নেতা' হিসেবে উল্লেখ করা হতো। আল-জাজিরা তো শুরু থেকেই বাংলাদেশকে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টায় কোন রকম দ্বিধা করছে না। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের ভবিষ্যত পরিচয়টি নিয়ে একটু আলোচনা হওয়া জরুরী। কারণ আমার মতে, আগামী বছর দু'য়েক ধরে গণতন্ত্রের পশ্চিমা ঠিকাদারগণ বাংলাদেশ ও এদেশের রাজনীতি নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করবে। ফলে তখন দেশটির আত্মপরিচয় কী হবে তা নিয়ে নতুন সঙ্কটও তৈরি করা হবে কৃত্রিম ভাবেই।

আরও একটি বিষয় উল্লেখের দাবি রাখে, তা হলো, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশকে কীভাবে দেখছে? গত চল্লিশ বছরে যে পরিচয়-সঙ্কট থেকে জাতি বেরিয়ে আসতে পারেনি তার প্রমাণ তো নানা ভাবেই দৃশ্যমান। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে রীতিমতো বচসা চলে যে, আগে বাঙালী? নাকি? কোন্্ পরিচয়ে বাঙালীর পরিচিত হয়ে ওঠা উচিত? এদেশের রাজনীতি আসলে বাঙালীকে কোন্্ পরিচয়ে পরিচিত করাতে চায়? আমরা জানি যে, এদেশ মোটা দাগে দুটি শিবিরে বিভক্ত। তার একটি পক্ষ নিজেদের সেক্যুলার বাঙালী পরিচয়ে এতদিন ধরে আমাদের পরিচিত করাতে চেয়েছে। বিপরীতে পাকিস্তান আমল থেকেই মুসলিম লীগ বাঙালীকে কেবলমাত্র 'মুসলমান' হিসেবে পরিচয় করাতে চেয়েছে। এদেশের বিশাল অমুসলিম জনগোষ্ঠীকে তারা কেবল অগ্রাহ্যই করেনি, তাদেরকে এদেশ থেকে তাড়ানোর জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তার সবটাই করেছে। এই রাজনৈতিক পক্ষটি ১৯৭৫ সালের পরে বাংলাদেশে আরও শক্তিশালী হয়ে বিএনপি-জামায়াত নামে জোট বেঁধে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু এদের বাইরে আরেকটি পক্ষ যারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত এবং দেশ-জাতি-কাল নিয়ে তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে কিন্তু তারা রাজনৈতিকভাবে মূলত বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেÑ এই গোষ্ঠীটি বাঙালীর পরিচয় মুছে ফেলতে চাইছে জোর করে হলেও বাঙালীকে 'মুসলিম' হিসেবে দেশে ও বিদেশে প্রমাণ করতে চাইছে। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের যোগাযোগকে ব্যবহার করে তারা এই কাজটিতে অনেকটাই সফলও হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, এদেশের ক্ষীয়মাণ বাম শক্তিটি, যারা এতদিন নিজেদের অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালী হিসেবে পরিচয় দিত তারা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয়ের মতো বাঙালী হিসেবে 'আত্মপরিচয়'টি দিতেও বোধ করি দ্বিধান্বিত। না হলে এই যে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে একটি 'মডারেট মুসলিম স্টেইট' হিসেবে প্রায় প্রতিষ্ঠিত করা সম্পন্নই হয়ে গেছে, কিন্তু কাউকেই তো সে ব্যাপারে কথা বলতে শুনছি না। এমনকি দেশের ভেতরেও এই যে আত্মপরিচয়ের সংকটে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা চলছে তার বিপরীতে দাঁড়িয়েও তাদের কোন কর্মসূচীই কি চোখে পড়ছে? পড়ছে না। বিশ^ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান যখন বাংলাদেশের বিপক্ষে দুর্নীতির কথিত অভিযোগ আনল তখন তারা বগল বাজিয়েছে এই বলে যে, এবার বুঝি শেখ হাসিনাকে এক হাত নেওয়া যাবে, দুর্নীতির দায়ে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিকভাবেই আদালতের রায়ে সেই কথিত দুর্নীতির অভিযোগটি নাকচ হয়ে গেল, কোন বামের পক্ষ থেকেই কিন্তু বিশ^ব্যাংকের বিরুদ্ধে টু-শব্দটি হলো না। ফলে, আমরা ধরেই নিতে পারি যে, বাংলাদেশের এই বাম রাজনৈতিক শক্তিটির অপমৃত্যু ঘটেছে, যারা এক সময় বাঙালীকে একটি বিকল্প প্ল্যাটফরমের স্বপ্ন দেখিয়েছিল, যারা বাঙালীর জাতি পরিচয়কে একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান দিতে চেয়েছিল তারা এতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে বাকি থাকল কে? বাকি থাকল দুটি মাত্র পক্ষ, একটি এখনও নিজেদের মুখে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়ে পরিচয় দেয় কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত তাদের অবস্থান। আর আরেকটি পক্ষ প্রকাশ্যেই বাঙালীকে কেবল মুসলিম পরিচয়ে পরিচিত করিয়েই সুখী হয় না, তারা নিজেদের ক্রমশ উগ্র ধর্মবাদী হিসেবে পরিচিত করানোর জন্য হলি আর্টিজান কিংবা শোলাকিয়ার মতো ঘটনা ঘটাতেও পিছনা হয় না। আসুন এবার এই দুই পক্ষ নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

প্রথমে যে পক্ষটি বাঙালী জাতিকে একটি নির্দিষ্ট ধর্ম পরিচয়ে পরিচিতি দিতে উঠে-পড়ে লেগেছে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করলে অন্য পক্ষটি সম্পর্কে আলোচনায় সুবিধে হবে। আমি যদিও মনে করি যে, সংবাদপত্রের এই পরিসরে কোন পক্ষ সম্পর্কেই বিশদ আলোচনা সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়ে আরও কয়েকটি লেখা লেখার ইচ্ছে রাখি। যা হোক, আগেই বলেছি যে, ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার প্রাক্কালে এদেশে যে ধর্ম-বিভেদকে কেন্দ্র করে রাজনীতির সূচনা হয়েছিল তা উপমহাদেশ ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রে ভাগ হওয়ার পর পাকিস্তান রাষ্ট্রে আরও প্রকট হয়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে মুসলমানদের যে অংশটি পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিল তাদের বেশিরভাগই ছিল উচ্চবর্গের মানুষ। পাকিস্তান মূলত ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকেই মূলধারার করতে চেয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মুসলমান সে প্রক্রিয়ায় শামিল হতে চায়নি বলেই আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে 'মুসলিম' শব্দটি দূরে রেখে রাজনীতিকে সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করতে চেয়েছিল এবং তা যে সফল হয়েছিল সেটা বলাই বাহুল্য, না হলে এদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হতো না। কিংবা জাতীয় চার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রাধান্য পেত না। কিন্তু পাকিস্তানের দেখানো পথ যে এক শ্রেণীর বাঙালীরও রাজনৈতিক-পথ ছিল সেটা তো প্রমাণিত হলো স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথাতেই। নাহলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে বাংলাদেশকে কেন ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ হিসেবে প্রথম ঘোষণা দেওয়ার যে দাবিটি উঠেছিল ঘাতকদের পক্ষ থেকে তা থেকে কি ঘাতকচক্রটি একচুলও সরেছে? সরেনি। বরং আজকে যারা এদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করছে তাদের মূল উদ্দেশ্য সেটিই। দুঃখজনক হলো, তারা দিন দিন দলে ভারি হয়েছে। আরও দুঃখজনক হলো, এখন দেশের ভেতরকার একটি শিক্ষিত শ্রেণী যারা চাইলেই বাংলাদেশকে এই পরিচয়-সংকট থেকে বের করে আনতে পারে তারাও মূলত ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও পরিচয়ের চোরাবালিতে বাঙালী জাতিকে নিমজ্জিত করার তালে রয়েছে। সমস্যাটি সেখানেই।

প্রশ্ন হলো, এই যে চারদিকে যেখানে চোখ পড়ে সেখানেই একটি ধর্মান্ধ শক্তি ক্রমশ বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিটিকে চাপে রেখে অত্যন্ত দুর্বল করে ফেলছে তা থেকে মুক্তি আসবে কীভাবে? নাকি এই চাপ অগ্রাহ্য করতে না পেরেই নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সকল সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের মতো ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় দেওয়া (অন্তত মুখে হলেও) দলটিকে ক্রমাগত আপোস করতে হচ্ছে? একেবারে সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তা আসলে হেফাজতে ইসলাম নামক উগ্র ধর্মবাদী শক্তিটির দাবিকেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এখন চাইলেই এই বাস্তবতা থেকে সরে আসার সুযোগ আছে বলে কেউই মনে করেন না। কারণ এর সঙ্গে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মবিশ^াসের যোগসূত্র রয়েছে। যে মুহূর্তে সরকার পাঠ্যপুস্তককে অতি-ধর্মান্তর থেকে মুক্ত করার কোন পদক্ষেপ নেবে সে মুহূর্তে দেশের ইসলামপন্থী, ইসলামপছন্দ, জামায়াত-বিএনপি, হেফাজত, হিজবুত তাহরীর, আনসার আল ইসলাম, আল-কায়েদা, আইসিস ইত্যাদি সকল পক্ষই এক হয়ে যাবে এবং সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে। কিন্তু তখন কি আওয়ামী লীগের পাশে দেশের ক্ষীয়মাণ বামশক্তি কিংবা রামপাল-বিরোধী পরিবেশবাদীরা গিয়ে দাঁড়াবেন? আমার অন্তত মনে হয় না যে, তখন এদের কাউকে আওয়ামী লীগের পাশে দেখা যাবে। কিন্তু তখন কি আওয়ামী লীগের এই যে বিপুল সমর্থকগোষ্ঠী যারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিয়ে দেশব্যাপী নিজেদের শক্তিশালী অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত গর্বিত এবং তা ভাঙ্গিয়ে করে-কম্মে খাচ্ছে, তারা কি আওয়ামী লীগের পক্ষে মাঠে নামবে? আমি এক্ষেত্রেও সমানভাবে সন্দিহান। তার মানে কী দাঁড়াল? তার মানে এতক্ষণ ধরে এই কথাটিই বলতে চেয়েছি যে, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটি বিপদের মুখোমুখি এবং এই বিপদ থেকে সহসা মুক্তির কোন পথ খোলা দেখতে পাচ্ছিনে। আর তাই বিদেশীরাও এই সুযোগে বাংলাদেশকে একটি 'মডারেট মুসলিম' রাষ্ট্রের সার্টিফিকেট দিচ্ছে, যে কোন মুহূর্তে এই সার্টিফিকেট বদলে যাবে 'ইসলামিক রাষ্ট্রে'র তকমায়। ইউনিসেফের একটি অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিতদের কাছে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে সম্প্রতি তাতে বাংলাদেশের নাম লেখা হয়েছে 'ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ'। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, আসলে যেহেতু ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান সব সময় লেখা হয় এবং সেই ই-মেইল থেকেই 'কপি পেস্ট' করা হয়েছে সেহেতু এই বিপত্তি হয়েছে। নিন্দুকেরা বলছেন, ইউনিসেফের এই ভুল ইচ্ছাকৃত, অচিরেই এটি আর ভুল থাকবে না, এটি সত্যে পরিণত হবে। সম্পূর্ণ সত্যে পরিণত করার জন্য এটি আসলে 'মকটেস্ট'। আমি এতটা হতাশ এখনও হতে চাইনে, কিন্তু আশাবাদীও যে হবো তারও কোন সুযোগ আছে কিনা, সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি। বিষয়টি নিয়ে আগামীতে আরেকটু তলিয়ে দেখার চেষ্টা করব।

ঢাকা ॥ ১৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবার ॥ ২০১৭ ॥

masuda.bhatti@gmail.com.

- See more at: https://www.dailyjanakantha.com/details/article/250055/
১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৭, ৬ ফাল্গুন ১৪২৩, শনিবার, ঢাকা, বাংলাদেশ 
নতুন 'ইসলামিক' সামরিক জোট ও রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র





__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___