শাবান মাহমুদ
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নে জাগাতে চান প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বিশ্ববাস্তবতার আলোকে দেশ গড়তে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে তার। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তিনি নিজের সেই দর্শন তুলে ধরবেন।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি জয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে মাস্টার্স করেছেন। শৈশব থেকেই খ্যাতনামা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার শিক্ষা অর্জন। তিনি এসব অভিজ্ঞতা দেশের সার্বিক কল্যাণে কাজে লাগাতে চান। শুধু গার্মেন্ট নয়, সামগ্রিক শিল্প বিকাশে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা রয়েছে জয়ের। তার বিশ্বাস, বাংলাদেশে আইসিটি ও শিল্প খাতে বিনিয়োগ অপরিহার্য। এ দুটি খাতের বিকাশ হলে দেশ বদলে যাবে। তিনি আরও বিদেশি বিনিয়োগের পক্ষে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা রয়েছে তার। রাজধানীসহ বিভিন্ন ব্যস্ত শহরের যানজট নিরসনে তিনি মেট্রোরেল ও বাসসেবা চালুর পক্ষে, যাতে বাসিন্দারা সপ্তাহ বা মাসিক এককালীন টিকিটে চলাচল করতে পারেন। পাশাপাশি শুধু ফ্লাইওভার নয়, উন্নত বিশ্বের আদলে অত্যাধুনিক উড়ালসড়ক চালুরও পক্ষে তিনি। জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের সব অপপ্রচারের জবাব দিতে সজীব ওয়াজেদ জয় আগামী ছয় মাস কাজ করবেন। আওয়ামী লীগের শাসনকালে দেশের কোথাও জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের অস্তিত্ব ছিল না। অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াত আমলে কী পরিস্থিতি ছিল, জয়ের পরামর্শে তা তুলে ধরবে আওয়ামী লীগের প্রচার সেল। দুর্নীতির বিরুদ্ধেও জয়ের অবস্থান থাকবে সোচ্চার। বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের গত সাড়ে চার বছরের সাফল্য তুলে ধরা হবে। আগামীতে পর্যটনের বিকাশে নেওয়া হবে আরও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী কয়েক মাস ব্যস্ত সময় কাটাবেন জয়। দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে ঢাকার বাইরেও তিনি সভা-সমাবেশে যোগ দেবেন। জয় গত মঙ্গলবার যুবলীগের ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়ে গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছেন। তার দূরদর্শী বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সব মহলে। ছাত্রলীগের ইফতার মাহফিলেও তার যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
আগামীকাল প্রথমবারের মতো জয় তার পৈতৃক বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন। প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও জয়কে দেখা যাবে বিভিন্ন জনসভায়। সারা দেশে ঝিমিয়ে পড়া আওয়ামী লীগকে চাঙ্গা করতে নেবেন নানামুখী উদ্যোগ। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে নতুন করে গতি সঞ্চার করতে চান উচ্চশিক্ষিত জয়। আগামী ছয় মাস ধরেই তার প্যাকেজ পরিকল্পনা রয়েছে। জয়ের মহাপরিকল্পনায় দল গতিশীল করতে শীঘ্রই আসছে যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ। নির্বাচন সামনে রেখে তিনি দেশের তরুণ সমাজকে কাছে টানারও উদ্যোগ নেবেন। গত সংসদ নির্বাচনের আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ধারণা দিয়ে জয় তরুণ সমাজে আলোচিত হয়েছিলেন। রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে তরুণদের যে জোয়ার লক্ষ্য করা গেছে, তার নেপথ্যে জয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন অনেকটা জাদুর বাঁশির মতো কাজ করেছে। দলীয় সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনে একঝাঁক মেধাবী তরুণকে কাজে লাগাতে চান জয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে তিনি বিশ্বের অনেক রাজপরিবারের সন্তানদের সানি্নধ্য পেয়েছেন। জয়ের সহপাঠীদের কেউ কেউ এখন রাষ্ট্রনায়ক। ভুটানের বর্তমান রাজা জয়ের আমন্ত্রণেই ঘুরে গেছেন বাংলাদেশ। বছরদুয়েক আগে পরিচালিত এক আন্তর্জাতিক জরিপে বিশ্বের প্রতিভাবান যুবকের মধ্যেও উঠে আসে জয়ের নাম। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জয়কে ঘিরে এ কারণে দলের ভেতরে-বাইরে সবসময়ই আলোচনা হয়। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে আসবেন কি না তা নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসার পর জয় অনেকবারই দেশে এসেছেন। কিন্তু এবারই প্রায় সব মহল কৌতূহলী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকের ধারণা ছিল, জয়ের এ দফায়ই হয়তো রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হতে পারে। এমনকি আগামী নির্বাচনে পীরগঞ্জের আসনে প্রার্থীও হতে পারেন। তবে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, জয়কে ঘিরে যত কৌতূহল কিংবা নেতা-কর্মীদের দাবি থাকুক না কেন, আপাতত তিনি দলের কোনো পদ নিচ্ছেন না। নির্বাচনে প্রার্থীও হচ্ছেন না।
রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের মতে, পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় জয় রাজনীতিতে নামলে দেশকে নতুন কিছু দিতে পারবেন। কারণ, উন্নত বিশ্বে পড়াশোনার পাশাপাশি সে দেশের উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। জয়ের মতো উচ্চশিক্ষিত, রুচিশীল, ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিত্ব এলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে; যা আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে অবদান হয়ে থাকবে। পশ্চিমা শিক্ষা, ভাবধারা আর প্রাচ্যের ভাবধারার সংমিশ্রণে যে পরিশীলিত জয়কে আমরা দেখি, তা সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হলেও জয়ের স্বচ্ছতা ও ক্লিন ইমেজ নিয়ে কোনো মহলেই বিতর্ক নেই। তিনি যদি রাজনীতিতে আসেন সে ক্ষেত্রে তার ক্লিন ইমেজ দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে সুবিধা হবে। বিদেশিদের সহযোগিতা পাওয়াও সহজ হবে। কিন্তু জয়ের সমসাময়িক অন্যদের বেলায় তা হবে প্রশ্নবিদ্ধ। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে আধুনিক চিন্তা-চেতনা ও মেধারও প্রয়োজন রয়েছে।' তিনি বলেন, 'জয়ের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ রয়েছে। তার অতীত ও বর্তমান কোনোটিই প্রশ্নবিদ্ধ নয়। এ কারণেই আগামীর আধুনিক বাংলাদেশ গড়া তার পক্ষেই সম্ভব। তিনি দলের কোনো পদ না নিয়েও তার নানার প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ ও মায়ের ত্যাগ-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে নতুন করে গড়া আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তার এ অংশগ্রহণ দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে উৎসাহ জোগাবে। বিদেশে পড়াশোনা এবং গবেষণামূলক কাজে জড়িত থাকার কারণে দেশের রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ও দুর্বৃত্তায়নের ঊধের্্ব থাকার সুযোগ তার হয়েছে। আর এ কারণেই জয়ের রয়েছে ক্লিন ইমেজ।' ইকবাল সোবহান বলেন, 'মেধা, সততা ও যোগ্যতা নেতৃত্বের জন্য অপরিহার্য। এটি জয়ের মধ্যে রয়েছে। সে কারণেই নেতৃত্বে তার সফল হওয়ার সুযোগ রয়েছে।'
১৯৭৫ সালে নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের তরুণ সমাজের স্বপ্ন সজীব ওয়াজেদ জয় মায়ের সঙ্গে জার্মানি-লন্ডন হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে পাস করার পর যুক্তরাষ্ট্রের টেঙ্াস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে গ্রাজুয়েশন করেন। সবশেষ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০২ সালের ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ক্রিস্টিন অ্যান ওভারমাইনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি এক কন্যাসন্তানের জনক।
__._,_.___