সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত বিচার করতে এ-সংক্রান্ত সব মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনকারীদের বিচার করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রসচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমেদ গতকাল বুধবার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের বিচার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের যেসব স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে, সেসব এলাকার দ্রুত বিচারযোগ্য মামলাগুলোকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে আজ বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হবে।
একই সঙ্গে সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, রামুসহ বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, বাড়ি লুট ও সম্পত্তি দখলের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দায়ের করা মামলাগুলোর দ্রুত বিচার করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার প্রস্তাবও আজ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন ও পরিকল্পনা) শওকত মোস্তফা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারীদের মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর জন্য গেজেট নোটিফিকেশনের প্রয়োজন রয়েছে। এসব মামলার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও সরকারি কৌঁসুলিদের সহায়তা চাওয়া হবে।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে হামলা হওয়া সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ দিনাজপুর ও যশোরে যাচ্ছে। এ প্রতিনিধিদলে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ থাকবেন।
জানা গেছে, এসব আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারীদের ও পুরো ঘটনার পেছনে কাদের ইন্ধন ছিল তা নির্ণয় করা। আক্রান্ত এলাকা নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে প্রতিবেদন আসছে বা তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে এসব ঘটনায় স্থানীয় কোন্দলের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করারও অভিযোগ রয়েছে। কিছু কিছু এলাকার প্রকৃত চিত্র নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। এ অবস্থায় পুরো বিষয়টি আক্রান্তদের মুখ থেকে শুনতে ওই সব এলাকায় যাচ্ছে এ প্রতিনিধিদল। এলাকা পরিদর্শনের পর পুরো অবস্থা বিবেচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, সাম্প্রতিক সময়ে হামলার ক্ষয়ক্ষতি জানাতেও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে এসব ক্ষয়ক্ষতির হিসাব বিবেচনা করে সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে এবং ঘটতে পারে, সেসব এলাকা থেকে সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রত্যাহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দায়িত্বে অবহেলার জন্য যশোরের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের নথিপত্রও গতকাল চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, ২০০১ সালের ঘটনায় হামলাকারীদের শাস্তি দেওয়া দূরের কথা, সবার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মামলাই করা যায়নি। বর্তমান সরকার ওই ঘটনায় দেশের ১২টি জেলায় ৩৭টি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২৭টি। এর মধ্যে ১১টিতে সব আসামি খালাস পেয়েছেন, নয়টি বিচারাধীন। আরও ছয়টির ঘটনা তদন্তের পর্যায়ে আছে। আরেকটি মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে।