বিএনপির রাজপথে লড়াকু নেতাদের কপাল খুলছে
আফজাল বারী : আন্দোলনরত প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মাঠ পর্যায়ের লড়াকু নেতাদের কপাল খুলছে। বিশেষ করে যারা সব মহলে সমালোচিত কৌশল 'গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা' নীতির ধারধারেনি তাদের। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গুম-খুন আর গুলির মুখে যারা রাজপথে ছিলো, আছে তাদের তালিকা করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। আন্দোলনের ফসল 'প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন' এলে ওই তালিকাভুক্তদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। একই সাথে দায়িত্ব নিয়েও যারা বেঈমানী করেছে তাদেরকেও কালো তালিকাভুক্ত করেছেন তিনি। এদিকে গত সাত বছর শত চেষ্টা করেও যারা সাক্ষাৎ করতে পারেনি অথচ আন্দোলনে ছিলো গত দুই সপ্তাহে তাদের সাথে সরাসরি কথা বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দলীয় চেয়ারপার্সনের সাথে সরাসরি কথা বলার পর নেতাদের মনোবল বেড়েছে, নিজের ত্যাগের মূল্যায়নও পেয়েছে। একই সাথে আত্মগোপনে থাকা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বেঈমান নেতাদের বিষয়ে নানান তথ্য সরবরাহ করেছেন।
গৃহবন্দি খালেদা জিয়ার সাথে সরাসরি কথা হয়েছে এমন একাধিক নেতা ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, দলীয় চেয়ারপার্সন তাদের আন্দোলনের বিষয়ে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। সতর্কতা অবলম্বন করতেও বলেছেন। দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। দলীয় দ্বন্দ্ব ও কমিটি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার চিত্রও জেনে নিয়েছেন অনেকের কাছ থেকে। কে আন্দোলনের মাঠে আছে, কে সরকার দলীয় নেতাদের সাথে সমঝোতা করে চলছে, আগামীর আন্দোলনে কাকে সামনে রাখা ঠিক হবে- এমন কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরও জেনে নিয়েছেন। একই ধরনের আরেকটি তালিকা এসেছে লন্ডন থেকে।
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমন এক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন গত কয়েকদিন ধরে তৃণমূলের সাথে কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা এতোদিন নানান বিষয়ে অন্ধকারে রাখলেও এখন চেয়ারপার্সন নিজেই অবগত হয়েছেন। তার বাস্তব চিত্র সামনে রেখেই পরবর্তী আন্দোলন, নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নসহ সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এতে করে মাঠের লড়াকু নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
আসনভিত্তিক পরীক্ষিত নেতার তালিকা : গত ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি ঘোষণা করার পরপরই দফতর থেকে সারা দেশের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের একটি তালিকা নেন খালেদা জিয়া। ২৫ ডিসেম্বর নিজ বাসয় গৃহবন্দি হবার আগে-পরে দেশের ৭৫ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সাথে ফোনে কথা বলেছেন তিনি। সংসদীয় ৩০০ আসনে কোন নেতা কি ধরনের দায়িত্ব পালন করছেন তার একটি তালিকাও করেছেন তিনি। এতে সহযোগিতা করেছেন লন্ডনে চিকিৎসাধীন দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার গঠন করা কয়েকটি টিম গত কয়েক মাস ধরে এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য বর্তমানে রাজপথে থাকা নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
৭ বছরেও যারা পাননি এবার খালেদা জিয়ার সাথে তাদের কথা হয়েছে : ২০০৬ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর সেনানিবাসের বাসায় থাকেন বেগম খালেদা জিয়া। পরের বছরই সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন। এ সময়ের মধ্যে চেয়ারপার্সনের সাথে দেখা করতে পারেনি দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বন্দি এবং মুক্ত হওয়ার পর গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয় নেন বেগম খালেদা জিয়া। ওই সময় থেকেই খালেদা জিয়াকে ঘিরে একটি বলয় তৈরি হয়। অভিযোগ রয়েছে মাশুল নিয়ে নিজ দলের চেয়ারপার্সনের সাথে সাক্ষাৎ করাতেন বলয়ের সদস্যরা। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন গেলো কিন্তু আজ পর্যন্ত উপজেলা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ের অনেক নেতা এমনকি কয়েকজন সাবেক এমপিও খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেনি। লালমনির হাটের (আসন-২) সাবেক এমপি সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ হেলাল, পাবনার (আসন-২) সাবেক এমপি এ.কে.এম. সেলিম রেজা হাবীব দলীয় চেয়ারপার্সনের দেয়া মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনও করেছিলেন কিন্তু গুলশানের ওই বলয়টির কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। এরকম শত শত নেতা রয়েছেন, যারা কমিটিতে ছিলেন এবং এখনো আছেন অথচ তারা খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই দুই এমপির একজন ইনকিলাবকে সাক্ষাৎ না পাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা গুলশানে আসলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন চেয়ারপার্সন সাক্ষাতের সময় দিচ্ছেন না, আবার চেয়ারপার্সনকে বলেছেন তারা গুলশানেই আসেন না। তবে সুবিধার বিনিময়ে অনেকেইে সাক্ষাৎ করেছেন।
অর্জিত সফলতা ভেস্তে দিচ্ছে কয়েক আমলা নেতা : ঢাকা মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচি ভ-ুলের নেপথ্যে ছিলেন। তার সাথে ইন্দন দিয়েছে চার দলীয় জোট সরকারের আমলে কোটিপতি বনে যাওয়া, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরী, ব্যাংক মালিকসহ দুই ডজন নেতা। তারা সাবেক এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। এবার কূটনৈতিক সফলতাকে ভেস্তে দিচ্ছেন এ দায়িত্বে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও আরেক আমলা সাবিহ উদ্দিন আহম্মেদসহ কয়েকজন। ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনের সাথে গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় সাক্ষাতের পর আটক হন শমসের মবিন চৌধুরী। ডিবি অফিসে কিছুক্ষণ রাখার পর তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। এর কয়েকদিন পরই তারেক রহমানের সাথে তার কথোপকথনের তথ্য ফাঁস হয়। চাউর রয়েছে, ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে তাদের সখ্যতা রয়েছে। দেশটি সফরও করেছেন কয়েক মাস আগে। এরপরই গুলশান এলাকায় কোটি টাকার ফ্ল্যাটও কিনেছেন। এর রহস্যও খুঁজছেন তার সহকর্মীরাই। সংবাদপত্রে প্রকাশ করা যায় না, এমন মন্তব্যও করেছেন তার বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এমন দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন উপদেষ্টা বলেন, দল ও চেয়ারপার্সন এই ধরনের সর্বগ্রাসী বেঈমান মুক্ত করতে না পারলে কূটনীতিকদের যে সহযোগিতা পাওয়া গেছে তা হাতছাড়া হতে হবে। রহস্যজনক ভূমিকার কারণে সম্প্রতি শমসের মবিনকে সতর্কও করেছেন তারেক রহমান।
- See more at: গৃহবন্দি খালেদা জিয়ার সাথে সরাসরি কথা হয়েছে এমন একাধিক নেতা ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, দলীয় চেয়ারপার্সন তাদের আন্দোলনের বিষয়ে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। সতর্কতা অবলম্বন করতেও বলেছেন। দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। দলীয় দ্বন্দ্ব ও কমিটি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার চিত্রও জেনে নিয়েছেন অনেকের কাছ থেকে। কে আন্দোলনের মাঠে আছে, কে সরকার দলীয় নেতাদের সাথে সমঝোতা করে চলছে, আগামীর আন্দোলনে কাকে সামনে রাখা ঠিক হবে- এমন কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরও জেনে নিয়েছেন। একই ধরনের আরেকটি তালিকা এসেছে লন্ডন থেকে।
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমন এক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন গত কয়েকদিন ধরে তৃণমূলের সাথে কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা এতোদিন নানান বিষয়ে অন্ধকারে রাখলেও এখন চেয়ারপার্সন নিজেই অবগত হয়েছেন। তার বাস্তব চিত্র সামনে রেখেই পরবর্তী আন্দোলন, নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নসহ সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এতে করে মাঠের লড়াকু নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
আসনভিত্তিক পরীক্ষিত নেতার তালিকা : গত ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি ঘোষণা করার পরপরই দফতর থেকে সারা দেশের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের একটি তালিকা নেন খালেদা জিয়া। ২৫ ডিসেম্বর নিজ বাসয় গৃহবন্দি হবার আগে-পরে দেশের ৭৫ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সাথে ফোনে কথা বলেছেন তিনি। সংসদীয় ৩০০ আসনে কোন নেতা কি ধরনের দায়িত্ব পালন করছেন তার একটি তালিকাও করেছেন তিনি। এতে সহযোগিতা করেছেন লন্ডনে চিকিৎসাধীন দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার গঠন করা কয়েকটি টিম গত কয়েক মাস ধরে এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য বর্তমানে রাজপথে থাকা নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
৭ বছরেও যারা পাননি এবার খালেদা জিয়ার সাথে তাদের কথা হয়েছে : ২০০৬ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর সেনানিবাসের বাসায় থাকেন বেগম খালেদা জিয়া। পরের বছরই সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন। এ সময়ের মধ্যে চেয়ারপার্সনের সাথে দেখা করতে পারেনি দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বন্দি এবং মুক্ত হওয়ার পর গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয় নেন বেগম খালেদা জিয়া। ওই সময় থেকেই খালেদা জিয়াকে ঘিরে একটি বলয় তৈরি হয়। অভিযোগ রয়েছে মাশুল নিয়ে নিজ দলের চেয়ারপার্সনের সাথে সাক্ষাৎ করাতেন বলয়ের সদস্যরা। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন গেলো কিন্তু আজ পর্যন্ত উপজেলা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ের অনেক নেতা এমনকি কয়েকজন সাবেক এমপিও খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেনি। লালমনির হাটের (আসন-২) সাবেক এমপি সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ হেলাল, পাবনার (আসন-২) সাবেক এমপি এ.কে.এম. সেলিম রেজা হাবীব দলীয় চেয়ারপার্সনের দেয়া মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনও করেছিলেন কিন্তু গুলশানের ওই বলয়টির কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। এরকম শত শত নেতা রয়েছেন, যারা কমিটিতে ছিলেন এবং এখনো আছেন অথচ তারা খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই দুই এমপির একজন ইনকিলাবকে সাক্ষাৎ না পাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা গুলশানে আসলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন চেয়ারপার্সন সাক্ষাতের সময় দিচ্ছেন না, আবার চেয়ারপার্সনকে বলেছেন তারা গুলশানেই আসেন না। তবে সুবিধার বিনিময়ে অনেকেইে সাক্ষাৎ করেছেন।
অর্জিত সফলতা ভেস্তে দিচ্ছে কয়েক আমলা নেতা : ঢাকা মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচি ভ-ুলের নেপথ্যে ছিলেন। তার সাথে ইন্দন দিয়েছে চার দলীয় জোট সরকারের আমলে কোটিপতি বনে যাওয়া, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরী, ব্যাংক মালিকসহ দুই ডজন নেতা। তারা সাবেক এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। এবার কূটনৈতিক সফলতাকে ভেস্তে দিচ্ছেন এ দায়িত্বে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও আরেক আমলা সাবিহ উদ্দিন আহম্মেদসহ কয়েকজন। ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনের সাথে গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় সাক্ষাতের পর আটক হন শমসের মবিন চৌধুরী। ডিবি অফিসে কিছুক্ষণ রাখার পর তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। এর কয়েকদিন পরই তারেক রহমানের সাথে তার কথোপকথনের তথ্য ফাঁস হয়। চাউর রয়েছে, ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে তাদের সখ্যতা রয়েছে। দেশটি সফরও করেছেন কয়েক মাস আগে। এরপরই গুলশান এলাকায় কোটি টাকার ফ্ল্যাটও কিনেছেন। এর রহস্যও খুঁজছেন তার সহকর্মীরাই। সংবাদপত্রে প্রকাশ করা যায় না, এমন মন্তব্যও করেছেন তার বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এমন দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন উপদেষ্টা বলেন, দল ও চেয়ারপার্সন এই ধরনের সর্বগ্রাসী বেঈমান মুক্ত করতে না পারলে কূটনীতিকদের যে সহযোগিতা পাওয়া গেছে তা হাতছাড়া হতে হবে। রহস্যজনক ভূমিকার কারণে সম্প্রতি শমসের মবিনকে সতর্কও করেছেন তারেক রহমান।
__._,_.___