মূখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের হিন্দু যুবা বাহিনীতে ঢুকতে দিনে পাঁচ হাজার আবেদন
ভারতের উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের হাতে গড়া একটি কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনে যোগদানের জন্য হঠাৎ করে আবেদনের ঢল নেমেছে।
'হিন্দু যুবা বাহিনী' নামে এই সংগঠনটি তৈরি হয়েছিল পনেরো বছর আগে - কিন্তু এখন আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর গত পনেরোদিনে সেখানে প্রায় রোজ গড়ে পাঁচ হাজার সদস্য হওয়ার আবেদন জমা পড়ছে। কট্টর হিন্দুত্বে বিশ্বাসী এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে গুন্ডামি, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো বা ভয় দেখানোর অনেক অভিযোগ আছে - তবে তারা দাবি করে থাকে এই বাহিনী শুধু হিন্দুদের মধ্যে জাতপাতের বিভেদ বা অস্পৃশ্যতা দূর করারই কাজ করে থাকে। কিন্তু উত্তর প্রদেশে হিন্দু যুবা বাহিনী নামে এই সংগঠনটির জনপ্রিয়তা আচমকা কীভাবে আর কেন ঊর্ধ্বমুখী?
২০০২ সালে উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরে গোরক্ষনাধ পীঠের অধ্যক্ষ মহন্ত অবৈদ্যনাথের নির্দেশনায় তৈরি হয়েছিল হিন্দু যুবা বাহিনী। আর লাঠিসোঁটা-মোটরবাইকে সুসজ্জিত এই সংগঠনকে নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন তার শিষ্য আদিত্যনাথ - যিনি এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। গোড়ার দিকে এই বাহিনীর প্রভাব সীমিত ছিল রাজ্যের পূর্বপ্রান্তের আট-দশটি জেলাতেই, কিন্তু এখন তাদের শাখা ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী লখনৌ থেকে শুরু করে পশ্চিমের মীরাট-আগ্রা-বুলন্দশহর সর্বত্রই।
তথাকথিত 'লাভ-জিহাদ' বা হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে প্রেম কিংবা গোহত্যা ঠেকানোর জন্য এই বাহিনীর সদস্যরা সদা সক্রিয় - এবং অযোধ্যায় রাম জন্মভূমিস্থলে মন্দির নির্মাণ করাটাও তাদের অন্যতম প্রধান শ্লোগান। কিন্তু পাশাপাশি হিন্দু যুবা বাহিনীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানো বা মুসলিমদের মধ্যে ত্রাস কায়েম করার অভিযোগও উঠেছে বহুবার।
সেই ২০০৫ সালে রাজ্যের মউ জেলায় মাফিয়া রাজনীতিক বলে পরিচিত মুখতার আনসারি ও তার দলবলের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল বাহিনীর সদস্যরা - যার জেরে প্রায় টানা এক মাস কারফিউ জারি ছিল সেখানে। শুধু সেই ঘটনাতেই নয়, এর পরেও বহুবার দাঙ্গা-খুন-অগ্নিসংযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন হিন্দু যুবা বাহিনীর নেতা-কর্মীরা। বাহিনীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক যোগী আদিত্যনাথ অবশ্য বরাবরই দাবি করে এসেছেন তারা কখনও কোনও অপরাধীকে প্রশ্রয় দেন না।
আড়াই বছর আগে এক টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, "হিন্দু বাহিনী কোনও অপরাধীকে আশ্রয় দেয় না - কিন্তু অপরাধীদের সিধে করার কাজ করে থাকে। সমাজবিরোধী ও দেশবিরোধীদের তারা শিক্ষা দিয়ে থাকে, আর সেই সঙ্গে এই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি দলিত-আদিবাসী-পশ্চাৎপদ শ্রেণী ও কুষ্ঠরোগীদের মধ্যে কাজ করে।" সমালোচকরা অবশ্য বলে থাকেন, হিন্দু যুবা বাহিনীর নেতাদের বিশেষত পূর্ব উত্তরপ্রদেশে এতটাই দাপট যে খোদ বিজেপির নেতারাও তাদের সমঝে চলেন।
আদিত্যনাথের সঙ্গে যখনই তার দলের মনোমালিন্য হয়েছে, তখনই তিনি এই বাহিনীকে বিজেপির বিরুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছেন - এমনও অভিযোগ উঠেছে অনেকবার।
তবে সম্প্রতি যে দলে দলে লোকজন এই বাহিনীর সদস্য হতে চাইছে, তার পেছনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির সাম্প্রতিক নির্বাচনী সাফল্যই দায়ী বলে মনে করছেন সংগঠনের নেতারা।
গোরখপুরে হিন্দু যুবা বাহিনীর সদর দফতরে প্রধান কর্মকর্তা প্রমোদ কুমার মল বিবিসিকে বলছিলেন, "হঠাৎ করে জনপ্রিয়তা বেড়েছে ব্যাপারটা এমন নয় - রাজ্যে আমাদের জনপ্রিয়তা আগে থেকেই ছিল। তবে বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ, খোঁজখবর করা হঠাৎ করে খুব বেড়ে গেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।" "আসলে এবারের ভোটে বিজেপি ও যুবা বাহিনী হাত মিলিয়ে যেরকম চমকপ্রদ ফল করেছে, সেটাই বোধহয় এই আগ্রহের কারণ। আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আদিত্যনাথজী মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তাতেও লোকে বাহিনী সম্পর্কে উৎসাহিত বোধ করছে। আর একটা জিনিস হতে পারে, সমাজবাদী পার্টি বা অন্য দলের অপরাধীরা এখন যুবা বাহিনীতে নাম লিখিয়ে হয়তো নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে", বলছিলেন তিনি। আগে যেখানে সদস্য হওয়ার জন্য মাসে পাঁচশো থেকে হাজার আবেদন পড়ত, এখন দিনেই সেই সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। হিন্দু যুবা বাহিনী নিজেদের ওয়েবসাইটে ও সোশ্যাল মিডিয়াতে বড় বড় করে সাবধানবাণী লিখে শাখাগুলোকে সতর্কও করে দিচ্ছে - ভাল করে যাচাই-বাছাই না-করে কাউকে যেন সদস্য না-বানানো হয়। কিন্তু রাজ্যের বহু এলাকায় এই আশঙ্কাও বাড়ছে যে নতুন বলে বলীয়ান হিন্দু যুবা বাহিনী এখন উত্তরপ্রদেশে আরও দাপটের সঙ্গে তাদের সমান্তরাল প্রশাসন চালাবে।
__._,_.___