Banner Advertiser

Thursday, April 12, 2012

[mukto-mona] Fw: যুদ্ধাপরাধী বিচার - অভিযোগপত্র ৪ ॥ মুজাহিদের নির্দেশে ধরে এনে আর্মি ক্যাম্পে নির্যাতন ও হত্যা করা হতো বাঙালীদের


----- Forwarded Message -----
From: SyedAslam <syed.aslam3@gmail.com>
To: Khobor <khabor@yahoogroups.com>
Sent: Thursday, April 12, 2012 4:26 PM
Subject: যুদ্ধাপরাধী বিচার - অভিযোগপত্র ৪ ॥ মুজাহিদের নির্দেশে ধরে এনে আর্মি ক্যাম্পে নির্যাতন ও হত্যা করা হতো বাঙালীদের

অভিযোগপত্র ৪ ॥ মুজাহিদের নির্দেশে ধরে এনে আর্মি ক্যাম্পে নির্যাতন ও হত্যা করা হতো বাঙালীদের
যুদ্ধাপরাধী বিচার


বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জমায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নির্দেশে অনেককে আটক করে হত্যার উদ্দেশে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ভাগ্যক্রমে অনেকে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন। এদের মধ্যে ফরিদপুরের রণজিৎ নাথ বাবুকে পুরনো সার্কিট হাউসে ধরে আনা হয়। পরবর্তীতে বিহারী ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। মোঃ আবু ইউসুফ প্রকাশ পাখিকে ধরে দৈহিকভাবে নির্যাতন করে বুকের ও পিঠের হাড় ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। আরও অনেককে একইভাবে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে দেয়া প্রসিকিউটরদের দেয়া অভিযোগপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ৩(২) (এ) (জি) (এইচ) এবং ৪(১) ও ৪(২) ধারায় বর্ণিত অপরাধ করে আসামি উক্ত আইনের ২০ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটন করেছে।
১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের যে কোন একদিন সকাল বেলা ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালঘাট চামটের (রথখোলা) রমেশ চন্দ্র নাথের পুত্র রণজিৎ নাথ প্রাকাশ প্রকাশ বাবু নাথকে ধরে আটক করে। বেলা অনুমান ১১টার সময় ফরিদপুর পুরনো সার্কিট হাউসে আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সামনে পাকিস্তানী সেনা অফিসার মেজর আকরাম কোরাইশীর নিকট হাজির করে। তখন মুজাহিদ উক্ত মেজরের সঙ্গে কথাবার্তা বলার পর তার ইশারায় কয়েক রাজাকার ও বিহারী তাকে আটক রেখে অমানুষিক দৈহিক নির্যাতন করে এবং একটি দাঁত ফেলে দেয়। 
নির্যাতনের পর আসামির ইশারায় তাকে হত্যা করার উদ্দেশে বিহারী ক্যাম্পের পূর্বপাশে আব্দুর রশিদ মিয়ার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাজাকাররা আটক করে রাখে। পরে রাতে রণজিৎ নাথ প্রকাশ বাবু নাথ তার আটক রাখার ঘরের জানালার শিক বাঁকা করে ঘর থেকে পালিয়ে জীবন বাঁচায়। 
একইভাবে একাত্তরের ২৬ জুলাই সকাল বেলা ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা হতে স্থানীয় রাজাকাররা আবু ইউসুফ প্রকাশ পাখি, পিতা-মৃত জয়নাল আবেদীন, সাং-পুর্ব গোয়ালচামট খোদাবক্সপুর, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-ফরিদপুরকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে আটক করা হয়। এরপর পাখিকে ফরিদপুর স্টেডিয়াম আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে আটক বন্দীদের মধ্যে আবু ইউসুফ প্রকাশ পাখিকে দেখে সঙ্গে থাকা পাক আর্মি মেজরকে কিছু একটা বলার পরই তার উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। সেখানে ১ মাস ৩ দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দেয়। নির্যাতনের ফলে আবু ইউসুফ প্রকাশ পাখির বুকের ও পিঠের হাড় ভেঙ্গে যায়। 
১৪ আগস্ট আনুমানিক বেলা ১টার সময় আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ তার সঙ্গীয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের নিয়ে ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালী থানাধীন নীলুটুলিপাড়ার একেএম হাবিবুল হক প্রকাশ মুন্নু, পিতা-মৃত রহমত আলী বিশ্বাসকে হত্যার জন্য তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। সে বাড়ির পেছন দিক দিয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। 
এ ছাড়াও আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য অনেকের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনূস এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি নূরুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকায় সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক যুক্তবিবৃতিতে জনৈক মাওলানা সাইয়েদ মাহমুদ মোস্তফা আল-মাদানীর মৃত্যুর জন্য কিছুসংখ্যক দুষ্কৃতকারীকে দায়ী করে বলেন, দুষ্কৃতকারীদের এর ফল ভোগ করতেই হবে।
উক্তরূপ বক্তব্যের মাধ্যমে আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ হানাদার দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধকারীদের দুষ্কৃতকারী উল্লেখে তাদের ফল ভোগ করতেই হবে বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকারান্তরে মুক্তিকামী বাঙালী জনগোষ্ঠীকে নির্মূলের প্ররোচনা দেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় তার নেতৃত্বে ও নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, বাহিনীর সদস্যসহ ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীরা উক্তরূপ বাহিনী গঠন করে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীদের আটক, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও গণহত্যাসহ নানান ধরনের অপরাধ ব্যাপকভাবে অব্যাহত রাখে। 
আসামির উপরোক্ত বক্তব্যে দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- এবং এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (অবরুদ্ধ বাংলাদেশ) তার অধীন সহযোগী বাহিনীর মাধ্যমে সহায়ক এবং সম্পূরক অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় এবং উক্তরূপ অপরাধ কার্যক্রম হতে বিরত না রাখায় আসামির ব্যক্তিগত সম্পৃক্তি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়। 
আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর জেলার ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা জেলার ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন। জুলাই মাসে প্রাদেশিক (তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান) ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত হন। (দৈনিক সংগ্রাম, ৮ জুলাই, ১৯৭১) এবং পরবর্তীতে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় আলবদর বাহিনী। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। অক্টোবর থেকে সে বাহিনীর প্রধান হন আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। ঐ সময়ে ইসলামী ছাত্রসংঘ ছিল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র শাখা। 
১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট যে কোন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘ সাধারণ সম্পাদক আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের উপস্থিতিতে নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী বলেন, 'পাকিস্তানের কোন ভূ-খ-ের নাম নয়, একটি আদর্শের নাম। এই ইসলামী আদর্শের প্রেরণাই পাকিস্তান সৃষ্টি করেছে এবং এই আদর্শই পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম।'
এ সময় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ কয়েকটি প্রস্তাব পাঠ করেন। স্বাধীনতাকামী নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীদের আটক, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞসহ নানান অপরাধ ব্যাপকভাবে অব্যাহত রাখে, আসামির উপরোক্ত বক্তব্যে দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- এবং এ লক্ষ্যে বাস্তবায়নের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (অবরুদ্ধ বাংলাদেশ) তার অধীনে সহযোগী বাহিনীর মাধ্যমে সহায়ক এবং সম্পূরক অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার এবং উক্তরূপ অপরাধ কার্যক্রম হতে বিরত না রাখায় আসামির ব্যক্তিগত সম্পৃক্তি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে। 
একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী আয়োজিত গণসমাবেশে আলবদর প্রধান ও পূর্বপাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ হিন্দুস্তানের সম্প্রসারণ বাদের প্রতি মরণ আঘাত হানার আহ্বান জানান। তিনি পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য হিন্দুস্তানকে খতম করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে জানান। 
আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে সমাবেশে প্রদত্ত বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধকে 'হিন্দুস্তানের সম্প্রসারণবাদ' হিসেবে অভিহিত করে 'পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য হিন্দুস্তানকে খতম করা অপরিহার্য' উল্লেখে প্রকারান্তরে মুক্তি সংগ্রামীদের হত্যা, গণহত্যার জন্য প্ররোচনা দেয়। যার ফলস্বরূপ আসামির কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব ধীন আলবদর বাহিনী এদেশের মুক্তিকামী বুদ্ধিজীবীদের ও নিরীহ নিরস্ত্র মুকিতকামী বাঙালীদের তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে, গণহত্যা চালায়। আসামির উপরোক্ত বক্তব্যের দখলদার পাকিস্তানী সেনাবহিনীর বিভিন্ন অপরাধমূলক কমকা-ের এবং এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (অবরুদ্ধ বাংলাদেশ) তার অধীন সহযোগী বাহিনীর মাধ্যমে সহায়ক এবং সম্পূরক অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় এবং উক্তরূপ অপরাধ কার্যক্রম হতে বিরত না রাখায় আসামির ব্যক্তিগত সম্পৃক্তি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের মানবতাবিরোধী অপরাধ। 
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় গত বছর ২১ জুলাই আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এরপর ২ অগাস্ট তাকে ট্রাইব্যুনালে গ্রেফতার দেখানো হয়। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ১ নবেম্বর মুজাহিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে। ৩৬৬ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৩৭ সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। তদন্তকারী সংস্থা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে অপরাধ আইনের ৩(২) ধারার সব ধরনের অপরাধ পেয়েছে, যার ভিত্তিতে এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আাসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিচার শুরু হয়েছে।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2012-04-13&ni=93156

Related:

অভিযোগপত্র ৩ ॥ আলতাফ মাহমুদকে হত্যা করা হয় মুজাহিদ নিজামীর নির্দেশে
যুদ্ধাপরাধী বিচার


অভিযোগপত্র ২ ॥ সিরাজউদ্দিন হোসেনকে ধরে নিয়ে যায় মুজাহিদ নিয়ন্ত্রিত অস্ত্রধারীরা
যুদ্ধাপরাধী বিচার

Related:

মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৩৪ অভিযোগ:

সেই রাজাকার' সিরিজের ২৯ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন
সাঈদীর বিরুদ্ধে আলামত