সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০১৪, ২৩ পৌষ ১৪২০
পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারার তালিকায় যোগ হলো নূর জামান
শংকর কুমার দে ॥ নির্বাচন প্রতিহতের ডাকে পেট্রোল বোমা মেরে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকা- মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন আঠারো দলীয় জোটের পেট্রোল বোমা ছুড়ে মেরে আগুনে দগ্ধ করে জীবন্ত হত্যার তালিকায় আরও একটি নাম যোগ হয়েছে। তার নাম ট্রাক চালক নূর জামান (২৬)। যেভাবে তাকে পেট্রোল বোমার আগুনে জীবন্ত দগ্ধ করা হয়েছে তার বর্ণনা শুনলে ভয়ে শরীরে কাটা দিয়ে লোমকূপ খাড়া হয়ে চোখ বুঝে আসে। ওহ! কি পৈশাচিক দৃশ্য! পশু বোঝাই ট্রাকের জানালা দিয়ে চালকের আসনে বসে থাকা ট্রাক চালক নূর জামানের শরীরের কাছে গিয়ে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে নির্বাচন প্রতিহতের সমর্থকরা। পেট্রোল বোমার আগুন ধরে যায় তার শরীরে। শরীরের জামা কাপড়ে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। জীবন্ত দগ্ধ হতে থাকে নূর জামান। 'বাঁচাও-বাঁচাও' চিৎকার। কে তাকে বাঁচাবে? যারা বাঁচাবে তারাও আগুনে দগ্ধ। আগুনে দগ্ধ তার সঙ্গে ট্রাকে থাকা ভাই মোয়াজ্জেমও। নূর জামান ও মোয়াজ্জেম এই দুই ভাইকে পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ হওয়া অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। রবিবার ভোর পাঁচটা বিশ মিনিটে পৃথিবী থেকে চির দিনের মতো বিদায় নেন নুর জামান।
পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ বেঁচে থাকা ভাই মোয়াজ্জেম বিলাপের সুরে বলছেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। জীবন জীবিকার টানে বিভিন্ন স্থান থেকে পশু সংগ্রহ করে ট্রাক বোঝাই করে হাটে হাটে বিক্রি করে বেড়াই। আমরা রাজনীতি বুঝি না। আমার পরিবারের কেউ রাজনীতি করে না। এখন নূর জামানের ছেলে মেয়েরা এতিম হয়ে গেল। তিন বছরের ছেলে সাহেল ও এক বছরের মেয়ে সোহা নামে তার দুই সন্তান রয়েছে। স্ত্রী রতœা কিভাবে এ সংসার চালাবে? হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী শোকার্ত ভাই মোয়াজ্জেম বলেন, যারা পশুবাহী ট্রাকে পেট্রোল বোমার হামলা চালিয়ে আমার ভাইকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়িয়ে মারা নূর জামানের পিতার নাম মোঃ জয়নাল আবেদীন। গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার মোড়াপাড়া গ্রামে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ট্রাক চালক নূর জামানের অকালে মর্মান্তিকভাবে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গোটা পরিবার এখন সামনে অন্ধকার দেখছে। কিভাবে তারা বেঁচে থাকবেন এখন তাদের সামনে কেবলই অনিশ্চিত ভবিষ্যত।
পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ একই ট্রাকে থাকা ভাই মোয়াজ্জেম বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন আঠারো দলীয় জোটের নির্বাচন প্রতিহতের জন্য ডাকা অবরোধ-হরতালের মধ্যে তারা টাঙ্গাইলের বিভিন্ন হাট থেকে ১৭টি গরু নিয়ে নরসিংদীতে গ্রামের বাড়ি শিবপুরে যাচ্ছিলেন। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার দিকে টাঙ্গাইল থেকে গরু বোঝাই ট্রাক নিয়ে তারা নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা দেন। ট্রাকটি রাত ৮টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার শফিপুর এলাকায় পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা জানালা দিয়ে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হন ট্রাক চালক নূর জামান (২৬)। রবিবার ভোর ৫টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া নূর জামানের ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছেন, ট্রাকে আমি, আমার বড় ভাই নূর জামানসহ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী ছিলাম। তবে অন্য গরু ব্যবসায়ীদের গায়ে আগুন লেগেছে কি না আমি বলতে পারব না। আগুনে নূর জামানের অবস্থা খারাপ হলে তাকে শফিপুরে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢামেকের বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, পেট্রোল বোমা হামলার শিকার হয়ে নূর জামানের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৪০ ভাগ পুড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার লড়াই করে রবিবার ভোরে হেরে গেছেন নূর জামান।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, কারও শরীরের ৪০ ভাগ বা তারচেয়ে বেশি পুড়ে গেলে তাকে সাধারণত বাঁচানো সম্ভবপর হয় না। যদিও ৪০ ভাগের কম পোড়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভবপর হয়। তবে যদি কোন রোগীর শ্বাসনালী পুড়ে যায় তাহলে তাকে বাঁচানো যায় না। এখনও আইসিইউ এবং আইসিইউ-এর বাইরে হাসপাতালে যারা আছেন তারা সবাই ঝুঁকিপূর্ণ। ১০-১৫ ভাগ পুরে গেলেও সুস্থ হতে কমপক্ষে দুই মাস সময় লাগে। যারা চিকিৎসাধীন আছে তাদের দগ্ধের হার তুলনামূলক অনেক বেশি। বেশিরভাগেরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। কৃত্রিম উপায়েও তারা অক্সিজেন নিতে পারছেন না।
পুলিশের সদর দফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন আঠারো দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধে পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে কেবলমাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটেই ভর্তি হন দেড় শতাধিক। রবিবার ট্রাক চালক নূর জামানকে নিয়ে ২২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। ৩২ জন এখনও ঢামেকের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। গত দুই মাসে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন আঠারো দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের সময়ে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারার আগুনে দগ্ধ হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মারা গেছেন শতাধিক লোক। এর মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের জন্য ডাকা অবরোধের সঙ্গে হরতাল ডেকে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারা আগুনে পুড়িয়ে মারার রাজনীতির বীভৎস ও কুৎসিত ঘটনায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে ট্রাক চালক নূর জামানের নাম।
পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ বেঁচে থাকা ভাই মোয়াজ্জেম বিলাপের সুরে বলছেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। জীবন জীবিকার টানে বিভিন্ন স্থান থেকে পশু সংগ্রহ করে ট্রাক বোঝাই করে হাটে হাটে বিক্রি করে বেড়াই। আমরা রাজনীতি বুঝি না। আমার পরিবারের কেউ রাজনীতি করে না। এখন নূর জামানের ছেলে মেয়েরা এতিম হয়ে গেল। তিন বছরের ছেলে সাহেল ও এক বছরের মেয়ে সোহা নামে তার দুই সন্তান রয়েছে। স্ত্রী রতœা কিভাবে এ সংসার চালাবে? হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী শোকার্ত ভাই মোয়াজ্জেম বলেন, যারা পশুবাহী ট্রাকে পেট্রোল বোমার হামলা চালিয়ে আমার ভাইকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়িয়ে মারা নূর জামানের পিতার নাম মোঃ জয়নাল আবেদীন। গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার মোড়াপাড়া গ্রামে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ট্রাক চালক নূর জামানের অকালে মর্মান্তিকভাবে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গোটা পরিবার এখন সামনে অন্ধকার দেখছে। কিভাবে তারা বেঁচে থাকবেন এখন তাদের সামনে কেবলই অনিশ্চিত ভবিষ্যত।
পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ একই ট্রাকে থাকা ভাই মোয়াজ্জেম বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন আঠারো দলীয় জোটের নির্বাচন প্রতিহতের জন্য ডাকা অবরোধ-হরতালের মধ্যে তারা টাঙ্গাইলের বিভিন্ন হাট থেকে ১৭টি গরু নিয়ে নরসিংদীতে গ্রামের বাড়ি শিবপুরে যাচ্ছিলেন। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার দিকে টাঙ্গাইল থেকে গরু বোঝাই ট্রাক নিয়ে তারা নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা দেন। ট্রাকটি রাত ৮টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার শফিপুর এলাকায় পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা জানালা দিয়ে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হন ট্রাক চালক নূর জামান (২৬)। রবিবার ভোর ৫টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া নূর জামানের ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছেন, ট্রাকে আমি, আমার বড় ভাই নূর জামানসহ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী ছিলাম। তবে অন্য গরু ব্যবসায়ীদের গায়ে আগুন লেগেছে কি না আমি বলতে পারব না। আগুনে নূর জামানের অবস্থা খারাপ হলে তাকে শফিপুরে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢামেকের বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, পেট্রোল বোমা হামলার শিকার হয়ে নূর জামানের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৪০ ভাগ পুড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকার লড়াই করে রবিবার ভোরে হেরে গেছেন নূর জামান।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, কারও শরীরের ৪০ ভাগ বা তারচেয়ে বেশি পুড়ে গেলে তাকে সাধারণত বাঁচানো সম্ভবপর হয় না। যদিও ৪০ ভাগের কম পোড়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভবপর হয়। তবে যদি কোন রোগীর শ্বাসনালী পুড়ে যায় তাহলে তাকে বাঁচানো যায় না। এখনও আইসিইউ এবং আইসিইউ-এর বাইরে হাসপাতালে যারা আছেন তারা সবাই ঝুঁকিপূর্ণ। ১০-১৫ ভাগ পুরে গেলেও সুস্থ হতে কমপক্ষে দুই মাস সময় লাগে। যারা চিকিৎসাধীন আছে তাদের দগ্ধের হার তুলনামূলক অনেক বেশি। বেশিরভাগেরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। কৃত্রিম উপায়েও তারা অক্সিজেন নিতে পারছেন না।
পুলিশের সদর দফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন আঠারো দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধে পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে কেবলমাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটেই ভর্তি হন দেড় শতাধিক। রবিবার ট্রাক চালক নূর জামানকে নিয়ে ২২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। ৩২ জন এখনও ঢামেকের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। গত দুই মাসে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন আঠারো দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের সময়ে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারার আগুনে দগ্ধ হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মারা গেছেন শতাধিক লোক। এর মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের জন্য ডাকা অবরোধের সঙ্গে হরতাল ডেকে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারা আগুনে পুড়িয়ে মারার রাজনীতির বীভৎস ও কুৎসিত ঘটনায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে ট্রাক চালক নূর জামানের নাম।
প্রকাশ : সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০১৪, ২৩ পৌষ ১৪২০
Related:
ভোট ঠেকাতে জামায়াত বিএনপির হিংস্র সন্ত্রাসের বলি ২১
প্রকাশ : সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০১৪, ২৩ পৌষ ১৪২০
__._,_.___