রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৫ পৌষ ১৪২০
১৬ ডিসেম্বর সোমবার আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দিনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করার মধ্য দিয়ে জংলী ও বর্বর পাকিস্তান রাষ্ট্রটি '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে আবারও প্রমাণ করল '৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সুনির্দিষ্টভাবে সংঘটিত করেছে। শুধু তাই নয়, এরকম একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করার মধ্য দিয়ে বিজয়ের দিনে তারা আবারও যে ত্রিশ লাখ বাঙালীর আত্মাহুতি আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছিল তাদেরই অপমানিত করল। '৭১-এর পরাজয়ের যে যন্ত্রণা ও প্রতিশোধপরায়ণতা তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্রিয়া করছে তারই প্রমাণ গত সোমবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা নিয়ে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ। পররাষ্ট্র নীতির সকল শিষ্টাচার ভুলে গিয়ে বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মাটিতে '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় নিয়ে মন্তব্য ও নিন্দা প্রস্তাব পাস একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতি শুধু হুমকিই নয়, চরম অবমাননারও বহির্প্রকাশ। পাকিস্তান সরকার '৭১-এর যুদ্ধাপরাধের জন্য কোনদিন ক্ষমা তো চায়ইনি বরং তাদের নির্লজ্জ কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করায় এবার পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি আবারও সামনে চলে এসেছে।
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ বাঙালীর শৌর্য, বীর্য আর অহঙ্কারের প্রতীক। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানী বর্বর সামরিক বাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ পৈশাচিক বর্বরতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাঙালী মরণপণ সংগ্রাম করেছে। ত্রিশ লাখ বাঙালীর আত্মাহুতি আর আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্রের জন্ম হলো বিশ্ব মানচিত্রে। শোষণ, শাসন আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে '৪৭ সালের পর থেকে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল তার সফল পরিণতি ছিল মুক্তিসংগ্রামে বাঙালীর বিজয় এবং লাল সবুজ পতাকার দেশ বাংলাদেশের আবির্ভাব। এজন্য ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন বাঙালী জাতির জনক ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি । বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ এহেন কোন ভয়াবহ অপরাধ নেই যা তারা করেনি। খুন, ধর্ষণ, গণহত্যা, দেশান্তরিত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন থেকে শুরু করে সব ধরনের পৈশাচিকতা চালিয়েছে বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসররা। '৭১-এ সংঘটিত এই গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচার দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে বিচারের উদ্যোগ নেয়া হলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ হয় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তরা জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিপুলভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসলে তাদের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাস্তবায়নের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধীর বিচার বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে এবং ইতোমধ্যে বেশ কয়েক যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ফাঁসিসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো রায় প্রদান করা হয়েছে ও যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় গত ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদর এই বিচার শুধু এশিয়া মহাদেশে নয় সারা পৃথিবীতে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। দীর্ঘদিন পরে হলেও কলঙ্ক মোচনের দায় ঘোচাতে বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করেছে, কিন্তু পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনও শুরু করা যায়নি, এখনও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু না হলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লাখ বাঙালীর আত্মা শান্তি পাবে না ও নির্যাতিত দু'লাখ মা-বোনের ক্রন্দনও কোনদিন থামবে না এবং শহীদ ও নির্যাতিত মা-বোনের আত্মীয়স্বজনদের হৃদয়ের ক্ষতও কোনদিন শুকাবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মূলত যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়টি বিশ্ববিবেককে নাড়া দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন আর হাজার হাজার নারীর ওপর পৈশাচিকতা যা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি সামনে চলে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই জার্মানির ন্যুরেমবার্গ শহরে ১৯৪৫ সালের ২০ নবেম্বর নাৎসি জার্মানির প্রধান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয় যা ইতিহাসে ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল নামে পরিচিত। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান সাম্রাজ্যের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত হয় দূরপ্রাচ্যের আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনাল এবং টোকিওতে ১৯৪৬ সালের ৩ মে বিচার শুরু হয়। এই ট্রাইব্যুনাল বিশ্বে টোকিও ট্রাইব্যুনাল নামে পরিচিত। এভাবে যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক বিচারের বিষয়টি প্রথমবারের মতো বাস্তবতা লাভ করে। ১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট ৪টি জেনেভা কনভেনশন যা একটি মৌল নীতির ওপর ভিত্তি করে রচিত স্বাক্ষরিত হবার পর যুদ্ধের সময় কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় যা লঙ্ঘন যুদ্ধাপরাধেরই নামান্তর। সার্বিকভাবে বলা যায় এসব কনভেনশনে এমনসব বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা কোন যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও জানমালের ক্ষতিকে যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে ফেলবে। এই ৪টি কনভেনশনে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের যুদ্ধ চলাকালে দায়িত্ব, কর্তব্য ও আচরণ স্থির করে দেয়। জেনেভা কনভেনশনের পক্ষরাষ্ট্রগণ সনদের এ ধরনের মারাত্মক লঙ্ঘনের জন্য দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান করতে পারে, সেটা হতে পারে যুদ্ধাপরাধের জন্য। জেনেভা কনভেনশনের আগে ১৯৪৮ সালে জেনোসাইড কনভেনশন নামে একটি কনভেনশন গৃহীত হয়, যেখানে গণহত্যার সুনির্দিষ্ট ও ব্যাপক সংজ্ঞা দেয়া হয় যাতে এ ধরনের যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যায়। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সর্বপ্রথম সংজ্ঞায়িত করা হয় ন্যুরেমবার্গের মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের চার্টারের ৬(সি) অনুচ্ছেদে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হলো খুন, আটক, দীপান্তর এবং সিভিলিয়ানদের ওপর সংঘটিত অন্যান্য অমানবিক আচরণ। এ ধরনের অপরাধ যুদ্ধের সময় বা যুদ্ধের আগে যখনই সংঘটিত হোক না কেন যুদ্ধাপরাধ বলেই গণ্য হবে। (চলবে)
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ বাঙালীর শৌর্য, বীর্য আর অহঙ্কারের প্রতীক। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানী বর্বর সামরিক বাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ পৈশাচিক বর্বরতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাঙালী মরণপণ সংগ্রাম করেছে। ত্রিশ লাখ বাঙালীর আত্মাহুতি আর আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্রের জন্ম হলো বিশ্ব মানচিত্রে। শোষণ, শাসন আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে '৪৭ সালের পর থেকে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল তার সফল পরিণতি ছিল মুক্তিসংগ্রামে বাঙালীর বিজয় এবং লাল সবুজ পতাকার দেশ বাংলাদেশের আবির্ভাব। এজন্য ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন বাঙালী জাতির জনক ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি । বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ এহেন কোন ভয়াবহ অপরাধ নেই যা তারা করেনি। খুন, ধর্ষণ, গণহত্যা, দেশান্তরিত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন থেকে শুরু করে সব ধরনের পৈশাচিকতা চালিয়েছে বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসররা। '৭১-এ সংঘটিত এই গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচার দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে বিচারের উদ্যোগ নেয়া হলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ হয় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তরা জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিপুলভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসলে তাদের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাস্তবায়নের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধীর বিচার বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে এবং ইতোমধ্যে বেশ কয়েক যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ফাঁসিসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো রায় প্রদান করা হয়েছে ও যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় গত ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদর এই বিচার শুধু এশিয়া মহাদেশে নয় সারা পৃথিবীতে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। দীর্ঘদিন পরে হলেও কলঙ্ক মোচনের দায় ঘোচাতে বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করেছে, কিন্তু পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনও শুরু করা যায়নি, এখনও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু না হলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লাখ বাঙালীর আত্মা শান্তি পাবে না ও নির্যাতিত দু'লাখ মা-বোনের ক্রন্দনও কোনদিন থামবে না এবং শহীদ ও নির্যাতিত মা-বোনের আত্মীয়স্বজনদের হৃদয়ের ক্ষতও কোনদিন শুকাবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মূলত যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়টি বিশ্ববিবেককে নাড়া দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন আর হাজার হাজার নারীর ওপর পৈশাচিকতা যা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি সামনে চলে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই জার্মানির ন্যুরেমবার্গ শহরে ১৯৪৫ সালের ২০ নবেম্বর নাৎসি জার্মানির প্রধান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয় যা ইতিহাসে ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল নামে পরিচিত। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান সাম্রাজ্যের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত হয় দূরপ্রাচ্যের আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনাল এবং টোকিওতে ১৯৪৬ সালের ৩ মে বিচার শুরু হয়। এই ট্রাইব্যুনাল বিশ্বে টোকিও ট্রাইব্যুনাল নামে পরিচিত। এভাবে যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক বিচারের বিষয়টি প্রথমবারের মতো বাস্তবতা লাভ করে। ১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট ৪টি জেনেভা কনভেনশন যা একটি মৌল নীতির ওপর ভিত্তি করে রচিত স্বাক্ষরিত হবার পর যুদ্ধের সময় কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় যা লঙ্ঘন যুদ্ধাপরাধেরই নামান্তর। সার্বিকভাবে বলা যায় এসব কনভেনশনে এমনসব বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা কোন যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও জানমালের ক্ষতিকে যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে ফেলবে। এই ৪টি কনভেনশনে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের যুদ্ধ চলাকালে দায়িত্ব, কর্তব্য ও আচরণ স্থির করে দেয়। জেনেভা কনভেনশনের পক্ষরাষ্ট্রগণ সনদের এ ধরনের মারাত্মক লঙ্ঘনের জন্য দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান করতে পারে, সেটা হতে পারে যুদ্ধাপরাধের জন্য। জেনেভা কনভেনশনের আগে ১৯৪৮ সালে জেনোসাইড কনভেনশন নামে একটি কনভেনশন গৃহীত হয়, যেখানে গণহত্যার সুনির্দিষ্ট ও ব্যাপক সংজ্ঞা দেয়া হয় যাতে এ ধরনের যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যায়। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সর্বপ্রথম সংজ্ঞায়িত করা হয় ন্যুরেমবার্গের মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের চার্টারের ৬(সি) অনুচ্ছেদে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হলো খুন, আটক, দীপান্তর এবং সিভিলিয়ানদের ওপর সংঘটিত অন্যান্য অমানবিক আচরণ। এ ধরনের অপরাধ যুদ্ধের সময় বা যুদ্ধের আগে যখনই সংঘটিত হোক না কেন যুদ্ধাপরাধ বলেই গণ্য হবে। (চলবে)
ড. এম. হাসিবুল আলম প্রধান
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক,
আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৫ পৌষ ১৪২০
সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৬ পৌষ ১৪২০
মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩, ১৭ পৌষ ১৪২০
__._,_.___