Banner Advertiser

Wednesday, January 1, 2014

[mukto-mona] বিরোধী দলের নেত্রীকে খোলা চিঠি



পূরবী বসু

বিরোধী দলের নেত্রীকে খোলা চিঠি

ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩

Purabi-basu--3মাননীয়া বিরোধী দলের নেত্রী, দুই দফায় দেশের সরকারপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী) খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় আমি ব্যক্তিগতভাবে বড়ই আশ্বস্ত হয়েছি। আমাকে স্বার্থপর ভাবছেন আপনারা?

ভাবুন। কিন্তু আমি প্রকৃতই খুশি এই ভেবে যে, যাক্ বাবা, বাঁচা গেল। আমার জেলার (মুন্সীগঞ্জ) নাম তাহলে বদলাচ্ছে না। প্রধানত বিক্রমপুর নিয়ে গঠিত এই জেলার নাম 'মুন্সীগঞ্জ' জেনে আসছি জন্মাবধি। আমার পিতা, তার পিতাও তাই জেনেছেন। আর তাই সারাজীবন ধরে নিজের জন্মস্থানকে যে নামে (মুন্সীগঞ্জ) জানি, সেই নামেই ভবিষ্যতেও জানব তাকে, এ কি কম স্বস্তির ব্যাপার, কম সৌভাগ্যের কথা?

বলুন! বিশেষ করে আমার মতো এমন একজনের জন্যে যাকে জীবদ্দশায় ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে নাগরিকত্বের জায়গায় একে একে তিন তিনটি দেশের নাম লিখতে হয়েছে; প্রথমে পাকিস্তান, পরে বাংলাদেশ এবং তারও অনেক পরে (আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বৈত্ব নাগরিকত্ব মেনে নেবার পরে) যুক্তরাষ্ট্র। আমার স্বামীকে (যার জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতে) তো এক জীবনে চার দেশের নাগরিকত্বের কথা লিখতে হয়েছে যদিও আমেরিকার নাগরিকত্ব সে নিয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগেই। তার মানে যখন সে প্রথম তা নিতে পারত, তার ঠিক দুই যুগ পরে।

রাজনৈতিক কারণে দেশ ভেঙে নতুন দেশের জন্ম হয়, ভৌগোলিক সীমারেখা পাল্টে যায়, সময়ের সঙ্গে পৃথিবীর ম্যাপের তারতম্য ঘটে। মানুষ এক ভূখণ্ড থেকে আরেক ভূখণ্ডে যায় উন্নততর জীবনযাপনের প্রত্যাশায়, স্বাধীনতাবোধ বা নিরাপত্তার খাতিরে কিংবা অন্য কোনো ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা মেটাতে। কিন্তু একই ক্ষুদ্র লোকালয়ে বসবাস করে ক'জন তার এলাকাকে বিভিন্ন নামে জানার সুযোগ পায়? মাননীয়া খালেদা জিয়া সে সুযোগ করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কারও কারও জন্যে। বাংলাদেশের জেলার মধ্যে গোপালগঞ্জ ছাড়া আর যে চারটি জেলার নাম বদলানোর ব্যাপারে তাঁকে হয়তো ভাবতে হবে, সেগুলোর কথাই বলছি আমি।

প্রথমত ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ওটা নিয়ে আপনার খুব অসুবিধে হবে না ম্যাডাম। জায়গাটা, এমনকি সেখানকার কলেজটা পর্যন্ত সরকারিভাবে বি. বাড়িয়া বলে পরিচিত এখন। নামের আদ্যাক্ষর 'বি' দিয়ে কী নাম ছিল মূলে, ধীরে ধীরে একসময় সকলেই হয়তো ভুলে যাবে। কেউ কেউ ভেবে স্মরণ করার চেষ্টা করে সফল হবেন; কেউ কেউ 'বি' দিয়ে ভূঁইয়া, বিলকিস ইত্যাদি কোনো নামের কথা উল্লেখ করবেন। একসময় জুৎসই কোনো নাম– একটি পছন্দের নাম– লেগে যাবে গায়ে। অন্যথায় বি. বাড়িয়া হয়েই থেকে যাবে বাংলাদেশের একটি অঞ্চল।

'গোপালী' বলে আপনার ধমক খেয়ে যেমন করে নারী পুলিশটি জানতে পেলেন (তার বাড়ি হয়তো গোপালগঞ্জের কাছাকছিই নয়) আপনার শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থানের নাম বদলে যাবে, তেমনি তিনি ছাড়াও শীঘ্রই হয়তো 'নারায়ণী (নারায়ণগঞ্জের ), 'ঠাকুরী' (ঠাকুরগাঁ), 'লক্ষ্মীপুরী' (লক্ষ্মীপুর) বলে আপনার গাল খেয়ে (এ নামগুলো সবই 'গোপালী'র মতো বিশেষ এক জনগোষ্ঠীর প্রতি আপনার বিতৃষ্ণার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়) ওখানকার কোনো সাধারণ মানুষ জানতে পারবে তাদের জায়গার নাম শীঘ্রই পাল্টে যাচ্ছে।

তবে এই প্রসঙ্গে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনাকে একটি পরামর্শ দিই। এটা একটি পুরনো স্ট্র্যাটিজিও বটে। এই পন্থাটি সার্থকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে দেশের অনেকগুলো কলেজের পুরো নাম বদলে না দিয়েও আসল নাম আড়াল করতে। আজ ক'জন জানে বি. এম কলেজ, বি. বাড়িয়া কলেজ, এম. সি কলেজ, এম. এম কলেজের প্রকৃত নাম?

তাই বলি আপনাকে, প্রথমেই পুরো নামটা বদলাবার দরকার নেই। ঠিক বি. বাড়িয়ার মতো করে আগে করুন– জি. গঞ্জ (গোপালগঞ্জ), এল. পুর (লক্ষ্মীপুর), টি. গাঁ (ঠাকুরগাঁ), এন. গঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)। তারপর আস্তে আস্তে সময় সুযোগ বুঝে এন. এর জন্যে নুরানী, গ-এর জন্যে গজনফর, এল. এ-র জন্যে লতিফা– এ ধরনের কোনো নাম চালু করে দিলেই চলবে। আমাদের স্মৃতি এত ক্ষণস্থায়ী, ততদিনে আমরা ভুলেই যাব আগে এই অঞ্চলটি কী নামে পরিচিত ছিল। মনে থাকলেও তা নিয়ে মাথা ঘামাব না। আর এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়টাতে (কেমন নির্বাচনী নির্বাচনী শোনাচ্ছে না?) যখন আদ্যাক্ষরে জায়গার নাম হবে, তখন আর যাই হোক, মালাউনদের দেবতাদের বা সেবায়েতের নামে জায়গাটির নাম উচ্চারণ করতে হবে না! এটাই কি কম স্বস্তির?

আপনি গোপালগঞ্জ নাম পাল্টে দেবেন বলে যেদিন ঘোষণা দিলেন, তার ঠিক আগের দিনই সাংবাদিক আবেদ খানের বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপনার সংবাদ উঠেছে কাগজে। নিশ্চয়ই দেখেছেন আপনি। তিনি দেখিয়েছেন, ১৯৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর সংখ্যা কী রকমভাবে দ্রুত হারে কমে যাচ্ছে। এখন তো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু রয়েছে আগের তুলনায় মাত্র এক তৃতীয়াংশ (২৯ শতাংশ থেকে ৯.৭ শতাংশ)!

দেশের সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া দূরে থাক, যে দেশে একজন পূর্ণমন্ত্রী বা একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে রাষ্ট্রদূত হতেই সমষ্টিগতভাবে সকল সংখ্যালঘুদের জান কাবার হয়ে যাচ্ছে– যেখানে রাষ্ট্রীয় সম্মান, পুরষ্কার থেকে শুরু করে, পদমর্যাদা, সবকিছুতেই তারা অবহেলিত-উপেক্ষিত– নির্বাচন এলেই যাদের ঘরপোড়ানো, মূর্তিভাঙা, মেয়েদের ধর্ষণ করা, জায়গা-জমিন, গয়নাগাঁটি লুট করা এক রকম রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে– সেখানে আজন্মপরিচিত জায়গার নাম পরিবর্তন এমনিতেই ওদের মনোবল ভেঙে দেবে। ওদের সংখ্যা ৯ শতাংশ থেকে ৫-৬ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্যে হয়তো আর খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না (জায়গার নাম পরিবর্তন তো কিছুটা প্রতীকী ব্যাপার। সেটা কখনওই একা আসে না। সেটা ঘটবে, বলাবাহুল্য, বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সামগ্রিকভাবে; সংখ্যায় লঘু জনগণকে নিজভূমে আরও বেশি পরবাসী বলে ভাবতে বাধ্য করে)।

আবেদ খানের তথ্যে আরেকটি জিনিস ধরা পড়ে। আর সেটা হল, যেই সময়টায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর সংখ্যা এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে, সেই একই সময় ভারতে সংখ্যালঘুর পরিমাণ অনেক বেড়েছে (২০ থেকে ৩৬ শতাংশে); বেড়েছে পাকিস্তান-বাংলাদেশ থেকে এত হিন্দু উদ্বাস্তু ও দেশে গিয়ে ভিড় করার পরেও। আমেরিকা-কানাডাসহ বহু উন্নত দেশেও ইমিগ্রান্ট ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। আর সেটা বাড়ছে আমাদের মতো দেশের আমাদের মতোই অল্পবিত্তের সাধারণ মানুষদের উন্নততর জীবনের আশায় ওখানে পাড়ি জমাবার জন্যে।

অথচ 'ধর্মীয় সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত' এই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর সংখ্যা কেন দিনদিন কমে যাচ্ছে সকলের চোখের সামনে? এই একবিশ শতাব্দীতেও? এ নিয়ে ক'জন ভাবেন? আবেদ খান, শাহরিয়ার কবীর, মুনতাসীর মামুন, হায়াৎ মামুদ, কামাল ও সাগর লোহানীর মতো কিছু বিবেকবান লোক ছাড়া? ক'জন এই বিষয়টা নিয়ে ভেবে বিষণ্ন হন? দুশ্চিন্তিত হন?

সত্যি বলতে কী, বাংলাদেশের জনগণের মোট এক দশমাংশ ধর্মীয় সংখ্যলঘু ও আদিবাসীদের যদি কোনোমতে ঝেঁটিয়ে, ভয় দেখিয়ে বা মনোবল ভেঙে দিয়ে বিদায় করে দেওয়া যেত, দেশটি হত পুরো homogeneous, বৈচিত্র্যহীন ও পরিপূর্ণ মনোলিথিক। কেননা অন্যসব ব্যাপারেই তো দেশের সব লোক প্রায় একই রকম! ভাবুন তো, ও রকম একটা মনোলিথিক সমাজে বিএনপিকে কি আর চিন্তা করতে হত নির্বাচনে জেতার ব্যাপারে? ওই ৯ শতাংশ ভোটের ব্যবধান হয়তো আওয়ামী লীগকে হারাবার জন্যে তাদের নির্বাচনী প্রচারণার কাজটি অনেক সহজ করে দিত।

আর আওয়ামী লীগ? সাধারণভাবে সংখ্যালঘুদের পকেটে পুড়ে, তাদের ভোট কব্জা করে,তাদের স্বার্থে উদাসীন থেকেও নির্বাচনে জেতার যে সহজ উপায় আয়ত্ত করেছিল, তা হয়তো অবশেষে হারাতে বসত।

আপনার বুদ্ধির তারিফ করি ম্যাডাম!

ডেনভার, কলোরাডো, যুক্তরাষ্ট্র

ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩

পূরবী বসু: গল্পকার ও প্রাবন্ধিক।

http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/14237




__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___