মন্ত্রী মুহিতের আয় কমেছে ঋণ করে চলছেন নাহিদ
রেজওয়ান আহমদ, সিলেট থেকে
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি, ২০১৪
অনেক মন্ত্রী-এমপি ও তাদের স্বজনরা গত পাঁচ বছরে অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম হয়েছে সিলেটের দুই মন্ত্রীর। অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হয়েছে তাদের দু'জনেরই। তারা হচ্ছেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। দু'জনেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতিমধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন। গত পাঁচ বছর মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকলেও তার আয় কমেছে। অন্যদিকে ঋণ করে চলতে হচ্ছে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদকে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। হলফনামার তথ্য মতে, মুহিতের আয় কমেছে, যা আয় হয়েছে তার বেশিই ভাগই 'সম্মানী'। আর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে গত পাঁচ বছরে তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে ঋণ করতে হয়েছে ১০ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে আবুল মাল আবদুল মুহিত বার্ষিক আয় করতেন ২২ লাখ টাকার মতো। অথচ অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর এখন তার বার্ষিক আয় ১৯ লাখ টাকারও কম। গত পাঁচ বছরে তার সম্পদমূল্য বেড়েছে ৪৪ লাখ টাকার। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, অর্থমন্ত্রীর বার্ষিক আয় ১৮ লাখ ৫১ হাজার ১৫৮ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে ২৫ হাজার ৮৫৮, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ছয় লাখ ৫০ হাজার, চাকরির সম্মানী থেকে ১১ লাখ তিন হাজার ও অন্যান্য উৎস থেকে ৭২ হাজার ৩০০ টাকা আয় করেছেন। ২০০৮ সালে তার আয়ের পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৯৬ হাজার ৯২৮ টাকা। এ আয়ের বড় উৎস ছিল কনসালট্যান্সি। এ খাত থেকেই তিনি বছরে ১৬ লাখ ২১ হাজার টাকা আয় করতেন। এর বাইরে শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ৬৬৯ ও ব্যবসা থেকে ১২ হাজার ২৫৯ টাকা আয় করতেন। মুহিতের অস্থাবর সম্পত্তির তালিকায় এবার রয়েছে নগদ তিন লাখ, ব্যাংকে রয়েছে আট লাখ টাকা ও ১৪ হাজার ১৭৮ মার্কিন ডলার এবং বন্ড ও শেয়ারবাজারে রয়েছে ৪২ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে মুহিতের অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ছিল নগদ ২০ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৯৮ হাজার ৯০৯ টাকা ও দুই হাজার ৭০৬ ডলার, ১৯ লাখ টাকা মূল্যের দুটি গাড়ি ও দেড় লাখ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী। আর নির্ভরশীলদের নামে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২৫ তোলা স্বর্ণ।
অর্থমন্ত্রীর মতো সিলেটের আরেক মন্ত্রী হলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। নাহিদের সম্পদ কোটিরও নিচে রয়েছে। তিনি দেশের শিক্ষা খাতে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। স্বচ্ছতার প্রমাণ রেখেছেন ব্যক্তিগত আয়-উপার্জনে। এমনকি মন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে অন্যদের মতো অনেক সম্পদের মালিক হননি তার স্ত্রীও। গত পাঁচ বছরে স্বামী-স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাড়েনি। যদিও স্বামীর পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে স্ত্রীও নিয়মিত আয় করছেন। এই সময়ের ব্যবধানে কোটি টাকার মালিকও হতে পারেননি তারা। উল্টো যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ভাই ডা. নজরুল ইসলামের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নগদ ঋণ নিয়েছেন নাহিদ। ২০০৮ সালে জমা দেয়া তাদের সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে ২০১৩ সালের সম্পদ বিবরণী মিলিয়ে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনে এ বছর জমা দেয়া হলফনামার তথ্য মতে, নুরুল ইসলাম নাহিদের বার্ষিক আয় ১৭ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা। তিনি মন্ত্রী হিসেবে সম্মানী পেয়েছেন ১৭ লাখ ২২ হাজার ৩০০ টাকা। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন কৃষি খাত থেকে। ২০০৮ সালে নাহিদের বার্ষিক আয় ছিল পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ১০৯ টাকা। এর মধ্যে চাকরি থেকে দুই লাখ চার হাজার ১৭৪, মৎস্য চাষ ও লেখালেখির সম্মানী থেকে এক লাখ ৮৫ হাজার, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে এক লাখ ৫৯ হাজার ৯৩৫ ও কৃষি খাত থেকে ২৫ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে নাহিদের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৭ লাখ ৩২ হাজার ২০ টাকার। এর মধ্যে নগদ ৪৭ হাজার, ব্যাংকে সাত লাখ ৪৬ হাজার ৪৯৯, ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৪১২ টাকা, সাত ভরি স্বর্ণ ও ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। পাঁচ বছর পর নাহিদের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৫০ টাকায়। এর মধ্যে নগদ টাকা আড়াই লাখ, ব্যাংকে জমা ৫৫ লাখ ১৪ হাজার ২৫৯ টাকা, ৩২ লাখ ৯১ হাজার ২৯১ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি, তিন লাখ টাকার স্বর্ণ, দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আড়াই লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র রয়েছে। ২০০৮ সালে নাহিদের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৪০২ টাকা। এর মধ্যে নগদ ৬৫ হাজার ৪৫৮, ব্যাংকে এক লাখ ৬১ হাজার ৬৮৬, ডাক সঞ্চয়পত্রে তিন লাখ ৪৭ হাজার ২৫৮, এক লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের সোনা-রূপা ও এক লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। পাঁচ বছর পর তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ এখন ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৩ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৩ টাকা ও বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে ৪৫ লাখ টাকা রয়েছে। নুরুল ইসলাম নাহিদ ও তার নির্ভরশীলরা একক ও যৌথভাবে ২০০৮ সালে যে পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তির মালিক ছিলেন, এবারও তা-ই আছেন। পাঁচ বছর আগে দুই একর জমির ছয় ভাগের এক ভাগের ওপর বাড়ি ছিল, এবারও তা-ই। আগের সেই তিন কাঠা অকৃষি জমি ও পাঁচ একর কৃষি জমির ছয় ভাগের এক ভাগ এবারও রয়েছে। তবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে সারা দেশের মতো তার মালিকানাধীন জমির দামও বেড়েছে। সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে মনোনয়ন জমা দেয়া প্রার্থীদের মধ্যে অন্য মন্ত্রীদের হলফনামা থেকে এই দুই মন্ত্রীর হলফনামা সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ব্যতিক্রম।
__._,_.___