জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র হামলায় চার মাসে ৬ পুলিশসহ নিহত ৫৮ পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা : অস্ত্র লুট
দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র কাডারদের পরিকল্পিত হামলা ও তা-বে গত ৪ মাসে ৬ পুলিশসহ ৫৮ জন নিহত এবং ৭শ'র বেশি পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ১ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে থানা, পুলিশ ফাঁড়িসহ রাজপথে পুলিশের ওপর হামলা করছে, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে সেই অস্ত্র দিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হচ্ছে। তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কায়দায় রেললাইন উপড়ে ফেলা থেকে শুরু করে ব্রিজ ভেঙে দেশকে অচল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের স্বৈরাচারী তা-ব ও নাশকতা ঠেকাতে দেশব্যাপী পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এরপরও তা-ব থেমে নেই। জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় দেশব্যাপী সাধারণ মানুষ খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে তারা পরিকল্পিতভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে হামলা, ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলাসহ ব্যাপক তা-ব চালিয়েছে। গেল বছরের ৫ নভেম্বর থেকে শুরু করে চলতি মার্চ মাসের গতকাল পর্যন্ত জামায়াত-শিবির হামলা, অগি্নসংযোগ, তা-ব চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের তা-বে ৫ পুলিশসহ ৩৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩শ জন। এরমধ্যে ১২৫ জন পুলিশ সদস্য। গুরুতর আহত পুলিশের এএসপি রেজাউল ডানপায়ে বোমার স্পিস্নন্টার নিয়ে এখন চিকিৎসাধীন আছেন। আগামী রোববার তার পায়ে দ্বিতীয় দফা অপারেশন করা হবে। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে হামলা ঠেকাতে গিয়ে তিনি কাঁটাবন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের রোষানলে পড়েন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর সেকশন এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয়ের এক বৃদ্ধ বোমার আঘাতে নিহত হন। সংঘর্ষের সময় চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় ১ জন, কক্সবাজারে ২ জন, নোয়াখালীতে ২ জন, মৌলভীবাজারে ১ জন, রংপুরে ৩ জন, গাইবান্ধায় ৪ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ জন, দিনাজপুরে ১ জন, রাজশাহীতে ১ জন, নাটোরে ১ জন, সিরাজগঞ্জে ২ জন সাতক্ষীরায় ৫ জন ও সর্বশেষ গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ জন নিহত হয়েছে।
সূত্র মতে, নিহত ৩৬ জনের মধ্যে ৫ জন পুলিশ, ২ জন আওয়ামী লীগ নেতা। একজন অজ্ঞাত ও ২৭ জন সশস্ত্র জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডার।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর থেকে টানা চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সাল পর্যন্ত জামায়াত-শিবির ও ইসলামী সমমনাদলগুলোর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় ১ জন পুলিশসহ কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ৮শ' জন। এর মধ্যে ৬শ' জন পুলিশ সদস্য রয়েছে। অন্যান্য আছে আরও দেড়শ জন। সংঘর্ষ চলাকালে সশস্ত্র ক্যাডাররা তা-ব চালিয়ে প্রায় ৬শ' গাড়ি ভাঙচুর ও আড়াইশ গাড়ি অগি্নসংযোগ করেছে। আগুনে উত্তরায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা পুড়ে মারা গেছে। মতিঝিলে শিবিরের হামলায় আহত ব্যাংক কর্মচারী মারা গেছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াত-শিবির ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অনেকেই। এখনো তা-ব থেমে নেই।
থানা ও ফাঁড়িতে হামলা : গত বৃহস্পতিবার জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের ওপর শুধু হামলা চালায়নি, তারা পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে সেই অস্ত্র দিয়ে সারাদেশে কমপক্ষে ৫ জন পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার পর তাদের অস্ত্রাগার, থানা ও পুলিশ, ফাঁড়িতে হামলা ও নাশকতা চালিয়ে অস্ত্র লুট করেছে। লুটকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে, শটগান, চাইনিজ রাইফেল, পিস্তল, গুলিসহ অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র। এছাড়াও হামলা চালানো ফাঁড়ি ও থানার পুলিশের ব্যবহৃত অন্যান্য মালামাল ও পোশাক, হ্যান্ডকাপ লুট হয়েছে। লুটকৃত অস্ত্রের মধ্যে কপোতাক্ষ নদ থেকে ফেলে রাখা চাইনিজ রাইফেল পুলিশ উদ্ধার করেছে। পিস্তল গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি। নাটোরে লুটকৃত শটগান ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী জামায়াত-শিবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ থেকে অস্ত্র লুট হয়েছে। এর মধ্যে শিবির ক্যাডাররা চট্টগ্রামে লোহাগাড়া পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে পিস্তল, পাইপগান ও শটগান লুট করে নিয়ে গেছে। তবে পুলিশের দাবি সংঘর্ষের সময় অস্ত্রগুলো খোয়া গেছে। কক্সবাজারের অস্ত্র খোয়া যাওয়ার খবর জানা গেলেও জেলা এসপি বলছে অভিযোগ সঠিক নয়। পুলিশ ৩টা চাইনিজ রাইফেল, শটগান উদ্ধার করেছে। অন্যগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সারাদেশের থানা ও ফাঁড়িতে হামলা হয়েছে ও অস্ত্র খোয়া গেছে তার তথ্য উদ্ঘাটনে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
ঝিনাইদহের এসপি অস্ত্র খোয়া যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ৫টার মধ্যে ৪টা উদ্ধার হয়েছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্ত্র লুট ও উদ্ধারের কথা স্বীকার করেন।
রেলপথে নাশকতা : জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সীতাকু-, ফেনী, লালমনিরহাট, কুমিরাসহ বিভিন্ন রেললাইনে হামলা ও সিস্নপার উপড়ে ফেলেছে। তারা রেললাইনের ব্রিজ ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছে। তাদের তা-বে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ১২ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। পরে কড়া নিরাপত্তায় ১২ ঘণ্টা পরে রেললাইন পুনরায় মেরামত করে চালু করা হয়। এ ঘটনার পর দেশব্যাপী রেলযাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মহাসড়ক ব্রিজ : জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের বটতলী ব্রিজ ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তারা ব্রিজের দুই পাশের রেলিং ভেঙে ফেলেছে। এই ঘটনার পর পুরো লক্ষ্মীপুরজুড়ে জামায়াত-শিবির আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি আনোয়ার হোসেন সংবাদকে জানান, জামায়াত-শিবিরের নাশকতা ও নৈরাজ্য ঠেকাতে পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই জন্য রাজধানীতে পোশাকে ও সাদা পোশাকে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবিরের নাশকতা ও তা-ব ঠেকাতে দেশব্যাপী সব রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ব্রিজ, রেলপথের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। গত দুইদিন ধরে হামলার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।
জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা : স্বচক্ষে দেখা কাঁটাবন সংঘর্ষ | |||
আনিস রায়হান |
দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব
সাঈদীর ফাঁসি, সহিংসতায় নিহত ৩৭
প্রথম আলো ডেস্ক | তারিখ: ০১-০৩-২০১৩
- See more at: http://prothom-alo.com/detail/date/2013-03-01/news/333012#sthash.3qQsKC89.dpuf নাটোরে আ'লীগ কর্মী জবাই, অস্ত্র ছিনতাই পুলিশেরজেলা প্রতিনিধি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | |
নাটোর: সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর খায়রুল বাশার নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে গলা কেটে হত্যা করেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় শিবিরের হামলায় ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মিরপুরে জামায়াত-শিবিরের হামলার চেষ্টা: |
__._,_.___