প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি রুমী স্কোয়াডেরবিজয় না হলে মৃত্যুর পথে সাড়া নেই সরকারের নিজস্ব প্রতিবেদক
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ রুমী স্কোয়াডের সদস্যদের অনশনের পাঁচ দিন পার হলেও সরকারের পক্ষ থেকে ওই দাবির বিষয়ে কোনো সাড়া দেখা যায়নি। অনশনকারী ২২ জনের প্রায় সবাই কমবেশি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আবার তাঁরা যোগ দিচ্ছেন অনশনে। গতকাল রবিবারও দুজন অনশনকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এর আগে অনশনের ১০০ ঘণ্টা পূর্ণ হলে শনিবার রাত আড়াইটায় রুমী স্কোয়াডের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে রুমী স্কোয়াডের ফেসবুক পেজে একটি খোলা চিঠি লেখা হয়। খোলা চিঠিতে বলা হয়, 'প্রধানমন্ত্রীর এই নীরবতা আমাদের আস্থার জায়গায় ধস নামিয়েছে। আমাদের আস্থার জায়গাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।' ৫৭৮ শব্দের ওই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য কামনা করে বলা হয়, 'টানা একশ ঘণ্টা ধরে অনশনে আমাদের ছয়জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখন হাসপাতালে ভর্তি। এদের মধ্যে যে কেউ আজ চলে যেতে পারে জীবন নদীর ওপারে। মৃত্যুর সাথে লড়তে থাকা অবস্থায়ও আমরা আমাদের দাবি থেকে সরে যাইনি এক বিন্দুও। বিজয় না হলে মৃত্যু_এ পথেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।'
এই চিঠি দেওয়ার পর অসুস্থদের কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে গতকাল আবার অনশনে যোগ দেন। সেঁজুতি সেনগুপ্ত ও শুভ্রা নামের দুই তরুণী সন্ধ্যা পর্যন্ত বারডেমে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আরো তিনজন অনশনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানালেন রুমী স্কোয়াডের সমন্বয়ক সাদত হোসেন নিলয়। তিনি বলেন, 'অনেকেই অনশনে যোগ দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা তাদের পর্যবেক্ষণ করে অনশনে শরিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
গতকালও দেখা গেছে, অনশনকারীরা দুর্বল শরীর নিয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সাধারণ মানুষও কর্মসূচিতে সংহতি জানাচ্ছে। কিন্তু সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যক্তি তাঁদের দেখতেও যাননি। এ অবস্থায় অনশনকারীর সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনায় মঞ্চের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে রুমী স্কোয়াড। জাতীয় জাদুঘরের সামনে আরেকটি তাঁবু টানানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
অনশনকারী তরুণ তমাল বলেন, 'এখন বিজয় ছাড়া এই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে যাওয়া সম্ভব না। আমৃত্যু অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরব। যত দিন যাচ্ছে, আমাদের কথা বলার বিষয় সীমিত হয়ে আসছে। সবাই জানতে চাচ্ছে, আমরা কবে এর শেষ দেখব? এই আত্মঘাতী কর্মসূচি আর কত দিন চলবে? আমাদের উত্তর খুব সহজ_হয় মুক্তি অথবা মৃত্যু।' একই কথা বলেন অন্য অনশনকারীরাও।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠি হুবহু
'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আশা করি আপনি সুস্থ আছেন। দেশ ও জাতির স্বার্থে একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার সুস্থতা আমাদের সবার কাম্য। কারণ আপনি দেশের অভিভাবক। দেশের প্রতিটি নাগরিকের ভালোমন্দের চিন্তা আপনিই করেন। ঠিক তেমনি, বঙ্গবন্ধু-কন্যা হিসেবে দেশের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের লালিত স্বপ্ন দেশ ও জাতির মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার গুরুভার আজ আপনার উপর।
আপনি দেখেছেন, দেশের তরুণ প্রজন্মের মাধ্যমে আজ শুরু হয়েছে গণজাগরণ; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে আজ পুরো জাতি একত্রিত। যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি অপশক্তি জামায়াত-শিবিরের কালো হাত গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবাই আজ নেমেছে রাজপথে। দেশের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে আপনার সরকার-ই জ্বালিয়েছে এই নবজাগরণের স্ফুলিঙ্গ।
আপনি দেখেছেন, আপনার উদ্যোগে নেওয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যখনই বাধাগ্রস্ত হয়েছে তখনই এই তরুণদের সম্মিলিত প্রতিবাদ আর বজ কণ্ঠই সেই বিচার প্রক্রিয়াকে সঠিক কক্ষপথে এনেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত এবং তাদের সহযোগীদের দেশব্যাপী নাশকতার কারণে দল হিসেবে তাদের নিষিদ্ধ করার উদ্যোগের জায়গা থেকে আপনার সরকারের দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তবে আমরা আশা করেছিলাম এত সহজে জনগণের এই প্রাণের দাবীকে পূরণের দিক থেকে আপনারা সরে আসবেন না। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা ছিল, গণজাগরণ মঞ্চের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার আইনি প্রক্রিয়া শুরুর দাবীকে আপনি সম্মান জানাবেন। কিন্তু ২৬ তারিখের পর আজ পার হয়ে গেছে আরো চারটি দিন; আপনার নিরবতা আমাদের আস্থার জায়গাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন, আস্থার এই জায়গাটি নড়ে যাওয়াতেই গত ১০০ ঘন্টা যাবৎ আমরণ অনশনে আছি আমরা বিশ তরুন। আমাদের ছোট্ট সংগঠন শহীদ রুমী স্কোয়াডের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে সারাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অগুনতি বাঙালি। আজ আমরা সবাই মনে করি, বিয়ালি্লশ বছর পরও আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা পাইনি; কারণ বাংলাদেশে এখনো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারকারী শ্বাপদের কালোছায়া বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে আপনার কাছে আমাদের দাবি দেশের উপর থেকে এ অশুভ ছায়া চিরতরে মুছে ফেলার।
আর এই দাবিতেই একশ ঘণ্টা ধরে টানা অনশনে আমরা সবাই। আমাদের সঙ্গে সংহতি অনশনে আরও অসংখ্য মানুষ। এরই মধ্যে আমাদের ছয়জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখন হাসপাতালে ভর্তি। এদের মধ্যে যে কেউ আজ চলে যেতে পারে জীবন নদীর ওপারে। মৃত্যুর সাথে লড়তে থাকা অবস্থায়ও আমরা আমাদের দাবী থেকে সরে যাইনি এক বিন্দুও।
ইতিহাস মনে রেখেছে, বিয়ালি্লশ বছর আগে জাতির পিতার নেতৃত্বেই এদেশে এসেছিল স্বাধীনতার নতুন সুর্য। পাকিস্তানী বাহিনীর সামরিক শক্তি অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের দৃঢ় অবস্থানের কারনে মাত্র নয় মাসেই আমরা পেয়েছিলাম বিজয়। আর তাই, আমরা জানি বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী হিসেবে একমাত্র আপনার সত্যিকারের সদিচ্ছাই পারে এদেশ থেকে যুদ্ধাপরাধী জঙ্গিদল জামায়াত-শিবিরের মূলোৎপাটন করতে।
আপনি জানেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে নাৎসি পার্টির সমস্ত রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তা বহাল আছে। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে একই উপায়ে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে বিশ্বের দরবারে আরেকটি উদাহরণ তৈরী করবে।
আপনি জানেন এবং বোঝেন, আপনি চাইলেই যে কোন বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিতে জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা সম্ভব। আপনি চাইলেই আপনার সামনে খুলে যাবে অনেকগুলো রাস্তা; যার যে কোন একটিতে গেলেই অর্জিত হবে বিজয়। আপনি চাইলেই সকল বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে আইনগতভাবে, সাংবিধানিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে অথবা স্রেফ গণতান্ত্রিকভাবেই এটি সম্ভব।
আর তাই, আমাদের আস্থার জায়গায় ধস নামলেও, একদিন আপনিই পারবেন এদেশ থেকে জামায়াত-শিবিরকে পুরোপুরি নির্মূল করতে_এই বিশ্বাস এখনও আছে আমাদের। তাই, অবিলম্বে আপনার কাছ থেকে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা এবং সুষ্পষ্ট বক্তব্য শুনতে চাই আমরা।
আপনি জেনে রাখুন, সেটি না শোনা পর্যন্ত অনশনের এই আমরণ অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি না কেউই। কারণ আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে আমরা জানি, বিজয় না হলে মৃত্যু_এ পথেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।
আপনার প্রতি রইল আমাদের শুভকামনা।
ইতি,
শহীদ রুমী স্কোয়াড
আমরণ অনশন এর ১০০ ঘণ্টা
৩১ মার্চ, ২০১৩'
এর আগে অনশনের ১০০ ঘণ্টা পূর্ণ হলে শনিবার রাত আড়াইটায় রুমী স্কোয়াডের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে রুমী স্কোয়াডের ফেসবুক পেজে একটি খোলা চিঠি লেখা হয়। খোলা চিঠিতে বলা হয়, 'প্রধানমন্ত্রীর এই নীরবতা আমাদের আস্থার জায়গায় ধস নামিয়েছে। আমাদের আস্থার জায়গাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।' ৫৭৮ শব্দের ওই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য কামনা করে বলা হয়, 'টানা একশ ঘণ্টা ধরে অনশনে আমাদের ছয়জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখন হাসপাতালে ভর্তি। এদের মধ্যে যে কেউ আজ চলে যেতে পারে জীবন নদীর ওপারে। মৃত্যুর সাথে লড়তে থাকা অবস্থায়ও আমরা আমাদের দাবি থেকে সরে যাইনি এক বিন্দুও। বিজয় না হলে মৃত্যু_এ পথেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।'
এই চিঠি দেওয়ার পর অসুস্থদের কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে গতকাল আবার অনশনে যোগ দেন। সেঁজুতি সেনগুপ্ত ও শুভ্রা নামের দুই তরুণী সন্ধ্যা পর্যন্ত বারডেমে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আরো তিনজন অনশনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানালেন রুমী স্কোয়াডের সমন্বয়ক সাদত হোসেন নিলয়। তিনি বলেন, 'অনেকেই অনশনে যোগ দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা তাদের পর্যবেক্ষণ করে অনশনে শরিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
গতকালও দেখা গেছে, অনশনকারীরা দুর্বল শরীর নিয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সাধারণ মানুষও কর্মসূচিতে সংহতি জানাচ্ছে। কিন্তু সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যক্তি তাঁদের দেখতেও যাননি। এ অবস্থায় অনশনকারীর সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনায় মঞ্চের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে রুমী স্কোয়াড। জাতীয় জাদুঘরের সামনে আরেকটি তাঁবু টানানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
অনশনকারী তরুণ তমাল বলেন, 'এখন বিজয় ছাড়া এই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে যাওয়া সম্ভব না। আমৃত্যু অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরব। যত দিন যাচ্ছে, আমাদের কথা বলার বিষয় সীমিত হয়ে আসছে। সবাই জানতে চাচ্ছে, আমরা কবে এর শেষ দেখব? এই আত্মঘাতী কর্মসূচি আর কত দিন চলবে? আমাদের উত্তর খুব সহজ_হয় মুক্তি অথবা মৃত্যু।' একই কথা বলেন অন্য অনশনকারীরাও।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠি হুবহু
'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আশা করি আপনি সুস্থ আছেন। দেশ ও জাতির স্বার্থে একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার সুস্থতা আমাদের সবার কাম্য। কারণ আপনি দেশের অভিভাবক। দেশের প্রতিটি নাগরিকের ভালোমন্দের চিন্তা আপনিই করেন। ঠিক তেমনি, বঙ্গবন্ধু-কন্যা হিসেবে দেশের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের লালিত স্বপ্ন দেশ ও জাতির মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার গুরুভার আজ আপনার উপর।
আপনি দেখেছেন, দেশের তরুণ প্রজন্মের মাধ্যমে আজ শুরু হয়েছে গণজাগরণ; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে আজ পুরো জাতি একত্রিত। যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি অপশক্তি জামায়াত-শিবিরের কালো হাত গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবাই আজ নেমেছে রাজপথে। দেশের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে আপনার সরকার-ই জ্বালিয়েছে এই নবজাগরণের স্ফুলিঙ্গ।
আপনি দেখেছেন, আপনার উদ্যোগে নেওয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যখনই বাধাগ্রস্ত হয়েছে তখনই এই তরুণদের সম্মিলিত প্রতিবাদ আর বজ কণ্ঠই সেই বিচার প্রক্রিয়াকে সঠিক কক্ষপথে এনেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত এবং তাদের সহযোগীদের দেশব্যাপী নাশকতার কারণে দল হিসেবে তাদের নিষিদ্ধ করার উদ্যোগের জায়গা থেকে আপনার সরকারের দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তবে আমরা আশা করেছিলাম এত সহজে জনগণের এই প্রাণের দাবীকে পূরণের দিক থেকে আপনারা সরে আসবেন না। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা ছিল, গণজাগরণ মঞ্চের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার আইনি প্রক্রিয়া শুরুর দাবীকে আপনি সম্মান জানাবেন। কিন্তু ২৬ তারিখের পর আজ পার হয়ে গেছে আরো চারটি দিন; আপনার নিরবতা আমাদের আস্থার জায়গাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন, আস্থার এই জায়গাটি নড়ে যাওয়াতেই গত ১০০ ঘন্টা যাবৎ আমরণ অনশনে আছি আমরা বিশ তরুন। আমাদের ছোট্ট সংগঠন শহীদ রুমী স্কোয়াডের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে সারাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অগুনতি বাঙালি। আজ আমরা সবাই মনে করি, বিয়ালি্লশ বছর পরও আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা পাইনি; কারণ বাংলাদেশে এখনো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারকারী শ্বাপদের কালোছায়া বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে আপনার কাছে আমাদের দাবি দেশের উপর থেকে এ অশুভ ছায়া চিরতরে মুছে ফেলার।
আর এই দাবিতেই একশ ঘণ্টা ধরে টানা অনশনে আমরা সবাই। আমাদের সঙ্গে সংহতি অনশনে আরও অসংখ্য মানুষ। এরই মধ্যে আমাদের ছয়জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখন হাসপাতালে ভর্তি। এদের মধ্যে যে কেউ আজ চলে যেতে পারে জীবন নদীর ওপারে। মৃত্যুর সাথে লড়তে থাকা অবস্থায়ও আমরা আমাদের দাবী থেকে সরে যাইনি এক বিন্দুও।
ইতিহাস মনে রেখেছে, বিয়ালি্লশ বছর আগে জাতির পিতার নেতৃত্বেই এদেশে এসেছিল স্বাধীনতার নতুন সুর্য। পাকিস্তানী বাহিনীর সামরিক শক্তি অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের দৃঢ় অবস্থানের কারনে মাত্র নয় মাসেই আমরা পেয়েছিলাম বিজয়। আর তাই, আমরা জানি বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী হিসেবে একমাত্র আপনার সত্যিকারের সদিচ্ছাই পারে এদেশ থেকে যুদ্ধাপরাধী জঙ্গিদল জামায়াত-শিবিরের মূলোৎপাটন করতে।
আপনি জানেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে নাৎসি পার্টির সমস্ত রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তা বহাল আছে। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে একই উপায়ে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে বিশ্বের দরবারে আরেকটি উদাহরণ তৈরী করবে।
আপনি জানেন এবং বোঝেন, আপনি চাইলেই যে কোন বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিতে জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা সম্ভব। আপনি চাইলেই আপনার সামনে খুলে যাবে অনেকগুলো রাস্তা; যার যে কোন একটিতে গেলেই অর্জিত হবে বিজয়। আপনি চাইলেই সকল বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে আইনগতভাবে, সাংবিধানিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে অথবা স্রেফ গণতান্ত্রিকভাবেই এটি সম্ভব।
আর তাই, আমাদের আস্থার জায়গায় ধস নামলেও, একদিন আপনিই পারবেন এদেশ থেকে জামায়াত-শিবিরকে পুরোপুরি নির্মূল করতে_এই বিশ্বাস এখনও আছে আমাদের। তাই, অবিলম্বে আপনার কাছ থেকে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা এবং সুষ্পষ্ট বক্তব্য শুনতে চাই আমরা।
আপনি জেনে রাখুন, সেটি না শোনা পর্যন্ত অনশনের এই আমরণ অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি না কেউই। কারণ আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে আমরা জানি, বিজয় না হলে মৃত্যু_এ পথেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।
আপনার প্রতি রইল আমাদের শুভকামনা।
ইতি,
শহীদ রুমী স্কোয়াড
আমরণ অনশন এর ১০০ ঘণ্টা
৩১ মার্চ, ২০১৩'
__._,_.___